আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই আইনজীবী মেয়েটি (অসহায় মেয়ে-২)

ভোরের তারা হয়ে একাকি পথ খুজি
অনেকেই হয়ত ভুলে গেছে মেয়েটিকে। কিন্তু অদেখা সেই মেয়েকে আমি এখনও ভুলতে পারছি না। কারন সে যে আমার সামনের বাড়ির তিন তলায় থাকতো। আমার রুম থেকেই বাড়িটা দেখা যায়। মাঝখানে অন্য একটা বাড়ি হওয়াতে ওদের ফ্ল্যাটটা ভালমত দেখা যায় না।

পরে পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি, সে মফস্বলের মেয়ে। আইনজীবী হবার অনেক স্বপ্ন নিয়ে সে ঢাকায় পাড়ি দিয়েছিল। ঢাকার মহাখালীতে মামার বাসায় থেকে, স্হানীয় একটি কলেজ থেকে ল পাশ করেছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর অধীনে কাজ করতো। দূরত্বের কারনে সে মহাখালী থেকে শিফট করে এবং অন্য একটি পরিবারের সাথে তোপখানা রোডে সাবলেট থাকতো।

এখন বুঝি মৃত্যুই তাকে টেনে এনেছিল। তা না হলে কি আর ওই পরিবারের কর্তা নর পিশাচটার চোখ পড়তো ওর উপর। যে কিনা ঝগড়া করা আর বউ পিটানো ছাড়া কোন কাজ করতো না। গর্ভবতী স্ত্রীর সামনে ইবলিশটা বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসল ওকে। স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েটি না করে দিল।

সেই থেকেই পিশাচটার ওর উপর আক্রোশ। এর সাথে যোগ হয়েছিল, তার বউয়ের উপর অত্যাচার করার সময়, মেয়েটি কেন বাধা হয়ে দাঁড়ায়, প্রতিবাদ করে। ঘটনার দিন পিশাচটা বউয়ের সাথে ঝগড়া করে। আর মোড়ের ডাবওয়ালার দাও কেড়ে নিয়ে আসে, উদ্দেশ্য বউকে খুন করবে। বউকে সামনে না পেয়ে অসহায় মেয়েটিকেই শেষ করে দিল।

তখন হয়ত অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠেছিল মায়ের মন "আমার বাচ্চাটা ভাল আছেতো"। বাবা হয়তো ভাবছিলেন "মেয়েটা অনেক দিন হল বাড়ী আসে না"। সেই সাথে শেষ হয়ে গেল একটি সম্ভাবনাময় আইনজিবীর জীবন। যে কিনা অনেক অসহায় মেয়েকে ন্যায় বিচার দিতে পারতো। এরকম পিশাচদের সাজা দিয়ে সমাজকে করতে পারতো কালিমা মুক্ত।

সে প্রতিবাদ করেছিল এটাই তার অপরাধ? পিশাচটা শুধু মেরেই ক্ষান্ত হয়নি। কুপিয়ে কুপিয়ে ওর মাথাটা শরীর থেকে আলাদা করেছে। তারপর কাটা মাথাটা নিয়ে নারকীয় উল্লাসে মেতে উঠে। মাথাটা নিয়ে এলাকা প্রদক্ষিন করে। প্রেসক্লাবের সামনে যেয়ে তারপর গণধোলাই খায়।

এসবই ছিল পিশাচটার পাগলের অভিনয়। পাগলের নাকি কোন সাজা হয় না। সে এই থিওরী কোন এক সিনেমা থেকে নাকি নিয়েছে। সেই সময় আমি বাসায় ছিলাম না। পরে এসে সব শুনেছি।

অনেকেই তাকে রাস্তায় দেখেছে। ঘর থেকে প্রায়ই ঝগড়ার শব্দ পেতাম। কিন্তু কখনও তাকে দেখিনি। ভোরের রোদ এসে যখন আমার বারান্দা ভরে যায়, মনে হয় সে হয়তো এখন কোর্টের দিকে রওনা হোত,চোখে থাকতো হয়তো আগামী দিনের সুখী স্বচ্ছল একটি পরিবারের স্বপ্ন। আর কোন মেয়ের জীবনে যেন এমন বিভৎস সমাপ্তি না হয় সেই প্রার্থনা করি।

আর পিশাচগুলোকে যেন তাদের কৃত পদ্ধতিতেই শাস্তি দেয়া হয় সেই আবেদন করছি।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।