::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
গতকাল দুপুরের খাবারটা খেয়েছি বিউটি বোর্ডীং এ।
নাম শুনেছিলাম অনেক। আগে একবার এক নজরে দেখেছিলাম ও। ষাটের দশকে কবি সাহিত্যিক কিংবা বাংগালী জাতীয়তাবোধ জন্ম নিচ্ছিলো যখন যেই সব প্রবাদ পুরুষদের হাত ধরে, তাদের সবার মিলন মেলা ছিল বিউটি বোর্ডিং।
(বিউটি বোর্ডিং প্রাঙ্গনে)
বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে একটূ এগিয়ে বাংলাবাজারের বই পাড়ার ভিতরের দিকে একটা খুব প্রাচিন স্টাইলের বাড়ির সামনে বিউটী বোর্ডিং।
গেট থেকে ঢুকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা উঠান। বিশাল একটা গাছের ছায়ার সাজানো গোছানো পরিপাটি একটা বাগান। বাগানের ভিতরে কবি শামসুর রাহমানের প্রতিষ্ঠিত একটা স্মৃতি স্তম্ভ। এক পাশে অফিস ঘর। আরেক পাশে খাবার ঘর ভিতরে থাকার জায়গা।
এখানেও বাধানো একটা উঠান আরেক দিকে সার বেধে ঘর গুলো। সীট ভাড়া ১২০টাকা।
(গ্যাস বাতী)
খাবার ঘরটা লম্বা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। লম্বা লম্বি অনেক গুলো টেবিল পাতা, প্রত্যেকটাতে ২টা করে চেয়ার। খাবার থালা বাটী, গ্লাস সব কিছুই আগের কার ডিজাইনের।
যদিও একটা বেসিন আছে এবং সেখানেই একবার হাত ধুয়ে আসছি তার পরেও দোকানের ছেলেটা প্লেটে হাত ধুতে বললো। প্লেটে হাত ধুয়েই ভাত খেতে বসলাম। খাওয়ার আয়োজন বিভুতীভুষনের আদর্শ হিন্দু হোটেলের কথা মনে করায় দেয়।
সমর দাস এবং তার ছোট ভাইএর সাথে কথা হলো। আমরা বড় দল নিয়ে আসছি।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখালেন। বিল্ডিংটা কত বছর জিজ্ঞেস করতেই বললেন তার জন্মের অনেক অনেক আগে তৈরি এটা নিশ্চিত। তিন ডিজিটের বয়স হবে শিওর। কিন্তু ব্যাবসাটার বয়স ৫০ বছরের বেশী। একজন হিন্দু জমিদারের সম্পত্তি ছিল এটা আগে।
কলকাতা থেকে তার বাবা এবং তার ভাই এসে বিউটি বোর্ডিং প্রতিষ্ঠা করেন। উনার স্ত্রীর নামানুসারে বিউটি বোর্ডীং, প্রহলাদ চন্দ্র একাত্তর সালে পাকিস্তানী আর্মির হাতে নিহত হলে দুই পুত্র হাল ধরেন। সমর দাশের কথা, উনার কোন উচ্চাশা নেই। তাই ৫০ বছর আগেও বিউটি বোর্ডিং এর যেই চেহারা ছিল আজও তেমন আছে। উতসাহের সাথে আমাদের দেখালেন বঙ্গবন্ধু ৬০এর দশকের উত্তাল দিন গুলোতে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে কোথায় বসতেন কিংবা কি খেতে পছন্দ করতেন।
শামসুর রাহমান, সামসুল হক কিংবা আসাদ চৌধুরী কোন কবির প্রিয় মেন্যু কি সবই তার মুখস্থ।
বিউটি বোর্ডিং এর দেয়াল লাগানো লাল ইটের অতি প্রাচিন ডিজাইনের দালানটাও ঐতিহ্যের স্মারক হিসাবে সংরক্ষনের দাবী রাখে কিন্তু ওটা একধরনের পুলিশ ব্যারাক। দালানটার বয়স হয়েছে অনেক, ব্যারাক হিসাবে প্রানের ঝুকি নিয়ে ব্যাবহার না করে প্রাচিন ঢাকার ঐতিহ্য হিসাবে সংরক্ষন করলেই পুলিশ ডিপার্টমেন্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে।
একটা বই পড়েছিলাম, জেমস হিলটনের দি লস্ট হরাইজন। কাশগড়ের গভীরে এক অচেনা ভ্যালীতে এক রহস্যময় তিব্বতি গুম্ফা শাংরি লা, সময় যেখানে স্থির।
বিশ্বযুদ্ধে অসুস্থ রাজনীতিবীদদের আচরন পৃথীবীকেও অসুস্থ করে তুলছে, শাংরি লা তখন এখনো অচেনা সময়ে বসে আছে, এগিয়ে যাচ্ছে নিজের উদ্দেশ্যের দিকে। বাইরে ২০০৮ হলেও বিউটি বোর্ডিং এর ভিতরে এখনও পঞ্চাশ কিংবা ষাটের দশক যেন আটকে আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।