হঠাৎ শুন্যতা ...................
সালাউদ্দিন করিম অফিস থেকে বের হয়ে সদর দরজার কোনে দাঁড়িয়ে আছেন। কি করবেন বুঝে পাচ্ছেন না। আজকাল বাড়ির পথটা তাকে খুব আর টানে না। বছরের পর বছর এক চক্রে ঘুরতে ঘুরতে তিনি হাপিয়ে উঠেছেন। আজকাল কোন কিছুতেই তাকে আর টানে না।
পরিবার-পরিজন-কাজ-সমাজ কিসের জন্য তিনি বাঁচবেন? করিম সাহেব শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ফুটপাতের জনস্রোতের দিকে...
সালাউদ্দিন করিম একটা বেসরকারি অফিসে এ্যাকাউন্টস-এ কাজ করেন। পঁচিশ বছরের চাকুরী জীবনে খুব বেশি অগ্রগতী করতে পারেন নি। শিক্ষার ঘাটতি তো ছিলোই সাথে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠার যে ক্যারিশমা দরকার হয় তারও ঘাটতি ছিলো বৈকি। নইলে আজ এই পঞ্চাশ বছরের জীবনে তার সঞ্চয়ের ঝুলি এতো খালি হবে কেন? তিনি এখনো সিনিয়র ক্লার্ক। বেতন এই বাজারে সাড়ে আট হাজার টাকা-সর্বোসাকুল্যে এগারো হাজার।
থাকেন মিরপুরের সাংবাদিক কলোনিতে। স্ত্রী ও দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে সংসার। তাদের নাম এই গল্পে গৌণ, যদিও তাদের কর্মকান্ড আমাদের গল্পের প্রধান ব্যাক্তি সালাউদ্দিন করিম-কে নিয়োতির দিকে পরিচালিত করবে। সে পরের কথা...দেখি তাদের অবস্থান...বড় ছেলেটি বাতিলের খাতায়। নেশা ধরেছে।
এখন নাকি রাতের বেলা স্ট্রিট লাইটের নিচে খুরের ধার পরীক্ষা করে। নাম মাত্রে সন্তান। ঔরসজাত বিধায় গনায় ধরেন। সব ছোট ছেলেটি ইউসেপ এর ট্রেনিং সেন্টারে অটোমোবাইলের কাজ শিখে। আর মেয়ে পড়াশুনার পাঠ চুকাতে পারে নি...কাজ করে একটা পার্লারে।
সংসার কিভাবে চলে কে জানে। মাস শেষে স্ত্রীর হাতে বেতন টা তুলে দেন তিনি...এই তার সাংসারিক যোগাযোগ।
মানুষ্কে খুব সহজে আলাদা করা যায় যদি সে অনেক উপরে কিংবা অনেক নিচে থাকে। করিম সাহেবের মনে হল তিনি হয়ত এই জনস্রোতে মিশে যেতে পারবেন না। তিনি এখন হেরে যাওয়া একজন মানুষ।
তিনি যদি এই জনস্রোতে নেমে যান তাহলেও সকলে তাকে আলাদা করতে পারবে।
করিম সাহেব ধীর পায়ে রাস্তায় নামেন। এখন রাস্তার ভিড় অনেকটা কম। তিনি লোকাল বাসে উঠেন। বাস চলছে মিরপুরের দিকে।
বিজয় স্বরণী পার হয়ে গেল। করিম সাহেব একবার তাকালেনও না বিধ্বস্ত দালানটার দিকে...নিজের অবয়ব দেখতে ভাল লাগেনা তার। (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।