আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দি ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড।

::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের অনন্যসাধারন শুটিং যারা ডিসকভারী চ্যানেল দেখতে পছন্দ করেন তাদের অনেকেরেই হয়তো এতদিনে ফেভারিট শোয়ের তালিকায় প্রথমের দিকে চলে এসেছে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড। আজকে রাতে সীজন ২ এর মেক্সীকোর ভয়ঙ্কর এক ক্যানিয়ন দেখাচ্ছিল। যারা এখনো ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের একটা পর্বও দেখেননি তাদের জন্যে একটু বলি। ২০০৬ সালের থেকে ডিসকভারী চ্যানেল এবং ইংল্যান্ডের চ্যানেল ৪ একসাথে দি ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড শুরু করে। ক্রোকডাইল ম্যান বলে বিখ্যাত প্রানীবীদ অস্ট্রেলিয়ার প্রয়াত স্টিভ আরউইনের শো এর সাথে টেক্কা দেওয়া সে সময় খুব কঠিন ছিল।

কিন্তু ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড নন ফিকশন একটা ডকু ধর্মী সিরিজ টিভিতে যেকোন ফিকশন কিংবা নন ফিকশন শো-কে টেক্কা দিতে পারে। ব্রিটিশ লেখক এবং অভিযাত্রি বিয়ার গ্রীলস সিরিজের কথক কাম এডভেঞ্চারাস। বিয়ার প্রয়াত ব্রিটিশ রাজনীতি বীদ স্যার মাইকেল গ্রীলের পুত্র। আধুনিক সাহিত্যে গ্রাজুয়েশন করার পাশে পাশে মার্শাল আর্টে নিজেকে পোক্ত করে নেয় বিয়ার। হিমালয় অভিযানের স্বপ্ন থেকে বিয়ার ব্রিটিশ আর্মিতে জয়েন করে।

এসময় সার্ভাইবল কোর্সের হাতে খড়ি। পরে কেনীয়াতে একটা প্যারাট্রুপিং কোর্সে দুর্ঘটনায় মেরুদন্ডে হাড় ভেঙ্গে একটানা দেড় বছর হাসপাতালে পঙ্গু হয়ে পড়ে থাকেন। কিন্তু কিছুতেই দমাতে পারে নি তাকে। এডভেঞ্চারের নেশায় আবার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যান তিনি, এবং সুস্থ হবার সাথে সাথে শুরু করে তার আজন্মের স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট অভিযান। ব্রিটিশ রয়াল নেভী এই প্রকৃতীপ্রেমীকে সম্মান সুচক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (আর্মির মেজর সমতুল্য) উপাধী দেয়।

দক্ষিন আমেরিকার রেইন ফরেস্টে লতার আশ শুকিয়ে ধনুকের জন্যে দড়ি বানাতে ব্যাস্ট বিয়ার গ্রেইল। এরপরে একটা ডিওডেরেন্টের এডভেঞ্চার টাইপ এড দিয়ে মডেলিং এর মাধ্যামে মিডিয়াতে বিয়ারের আগমন। কিন্তু শিঘ্রি এডভেঞ্চার ধর্মী বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিয়ার নিয়মিত মুখ হয়ে যায়। পড়ে তাঁর ২৩ বছর বয়সে এভারেস্ট অভিযান (হিমালয়ের কুখ্যাত ডেথ জোনে অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ায় মরতে বসার কাহিনী) নিয়ে বই লিখলেন “দি কিড হু ক্লাইম্বড এভারেস্ট”। ১৯৮৮সালে সবচেয়ে কম বয়সী এভারেস্ট বিজয়ী (২৩ বছর) হিসাবে গিনেজ রেকর্ডে নাম তুলেছিলেন।

তিন বছর পরে ৫ জনের একটা দলের নেতা হিসাবে একটা ছোট্ট ভেলায় আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আবার আলোচনায় আসেন। ২০০৫ এ প্যারামোটর নিয়ে ভেনিজয়েলার দুর্গম এক পর্বতে উড়ে যান। এর পরে রয়াল নেভীর প্যারাট্রুপারদের সাথে নিয়ে ২৫০০ ফুট উপরে ২০০ প্যারাট্রুপারের সাথে ফর্মাল ডিনার পার্টি করেন। এর পরে শিশুদের জন্যে আয়োজিত এক চ্যারিটিতে ২ মিলিয়ন পাউন্ড যোগার করতে মোটর গ্লাইডারে করে এভারেস্ট অতিক্রম করে বিশ্বরেকর্ড করেন। মেক্সিকোতে কাচা মাছ ভক্ষন কিন্তু বিয়ার গ্রীল সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা পান ডিসকভারী চ্যানেলে দি ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড শো এর মাধ্যমে।

সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও শোটা অনেকের নজর কেড়েছে। মুলত এখানে গ্রীল একটা প্যারাজাম্প করে দক্ষিন আমেরিকার রেইনফরেস্ট, গ্রান্ড ক্যানিয়নের মরুময় প্রান্তর কিংবা আলাস্কার ভয়ঙ্কর কোন শীতল চুড়ায় নেমে যায়। সাথে কোন অতিরিক্ত পোষাক কিংবা খাবার দাবার অথবা আগুন জ্বালানোর কিছু থাকেনা। একমাত্র অস্ত্র ছোট্ট একটা সুইস নাইফ। কিভাবে এটাকে সম্বল করে জঙ্গলের প্রকৃতির ভয়ঙ্কর প্রতিকুলতার মাঝে বেঁচে থাকা যায় এটা নিয়েই সার্ভাইভল শো ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড।

আলাস্কাতে হাইপোথার্মিয়া থেকে বেঁচে থাকার প্রানপন চেষ্টা। তবে এই শো টা বিরুদ্ধেও কম কথা হয় না। মোটামুটি সব পর্বেই বিভন্ন পোকা মাকড় কিংবা কাঁচা মাছ অথবা কাঁচা মাংস খেয়ে সার্ভাইভ করা নিয়ে নিন্দা কম হয়নি। অনেকেই তার মাথার সুস্থতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে। বিশেষ করে মেক্সিকোতে লেক থেকে কাঁচা পাইক মাছ, আফ্রিকাতে হাতির বর্জ্য, এবং ডি হাইড্রেশন থেকে বাঁচার জন্যে অস্ট্রেলিয়ার মরুভুমীতে নিজের ইউরিন্যাল ইউটিলাইজ করা, এসব ইতিমধ্যে অনেক রুচিবান দর্শকদের বেশ আহত করে।

(যেমন আমার মা এই প্রোগ্রাম আমাকে কাঁচা মাছ খাওয়া দেখার পর থেকে কখনোই দেখতে দেয় না) ভেনিজুয়েলাতে ভেলায় ভেসে ভেসে যাচ্ছেন বিয়ার। নদীর ধারে জনবসতী থাকে। হয়তো এই নদীর ধারে কোন গ্রাম পাওয়া যাবে, তাহলে হয়তো পোকা মাকড় খাবার দিন শেষ হবে অনেক দুর্নাম, সুনাম এবং এডভেঞ্চার নিয়ে এখনো ডিসকভারের সৌজন্যে কোটি কোটি বিশ্ব দর্শকের সাথে আমরাও উপভোগ করছি ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড। এই প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে নিন্দিত এবং নন্দিত বিয়ার গ্রীল এর মাঝেই সার্ভাইভাল ম্যান হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়ে গেছেন।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।