সবকিছুতেই নির্মোক থাকছি, সবকিছুই ইদানীং অর্থহীন মনে হয়; নিজের এই নেতিবাচক প্রবণতায় নিজেই লজ্জিত । :(
কোন পোস্টই মনে হয় ধারাবাহিক করা উচিত না,যেমন এই দোহায় ঘুরাঘুরিরসবটা এক সাথে না লিখে
দিন পর্ব রাত পর্ব করায় এখন আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। এর মাঝে আরো অনেক প্রসঙ্গ ও চলে এসেছে। লালনের ভাস্কর্য ভাঙ্গার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার শেষাংশ দেখলাম ফিরে এসে। অনেকটা ঐ প্রসঙ্গটির সাথে যুক্ত বলেই এই পর্ব।
সম্পর্কিত পোস্টঃ
দোহা/কাতারের আউলা ঘুরাঘুরিঃ দিন পর্
কাতারে যে সাইকেলটা দেখে আমাদের ছবি তোলার তাড়াহুড়ো। পঁইয়তাল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আর অক্টেন আঠারো টাকা , পানি বিয়াল্লিশ টাকার শহরে যদি কেঊ সাইকেল চালায় তাহলে সে সেলেব্রেটি হতেই পারে।
কুয়াশার মত বাস্পে ভরা পারস্য উপসাগর, ভ্যাপসা আর প্রচন্ড গরম। বিকেলে। দূরে তিন আমেরিকান লেংটু আর্মি ‘সমুদ্রস্নান’ সারছে !
দোহায় একটা মার্কেট প্লাস কমন সেন্টার বানিয়েছে , নাম দিয়েছে ভেনিস ইন কাতার।
গেলাম। কনসেপ্ট হিসাবে নতুন, ভালোই। ইনডোর একটা জায়গায় ইউরোপিয়ান আদলে দোকানপাট , রেস্টুরেন্ট। কৃত্রিম আকাশটা চমৎকার। খুব ভালো জায়গা সময় কাটানোর জন্য, কিন্তু পরে ইঊরোপে গিয়ে বুঝেছিলাম মিনিয়েচার হিসাবে ওটা ছিলো একটা ব্যার্থ প্রচেষ্টা।
(আগের পোস্টের কাট-পেস্ট,ছবিগুলো নতুন। )
ইফতার করলাম কাতারে আমাদের আরেক হোস্টের বাড়ীতে , ওইদিন অনেক বাঙালীর দাওয়াত ছিলো। প্রায় সবাই চট্টগ্রামের একটা অঞ্চলের লোকজন, প্লাস কিছুটা দলীয় সমাবেশ ও মনে হলো। এখানে রাজনৈতিক দলের সমর্থনভেদে হাল্কা একটা বিভাজন আছে ধারণা হলো, নিশ্চিত নই।
ইফতারের পর দোহায় উরাধুরা ঘুরা , গাড়িতে করেই।
একটা এলাকায় দেখলাম প্রচুর এশিয়ান লোকজন, ছোট ছোট অনেক দোকান। আজ শুক্রবার , তাই লোকজন এইসব এলাকায় জড়ো হয়ে সুখ-দুঃখের আলাপ-আলোচনা করে, খোঁজ-খবর দেয়ানেয়া হয়। আমরা বাংলাদেশ স্টোর টাইপের লেখা একটা গলিতে নেমে চা-খেলাম, চারপাশে নানা আঞ্চলিক বাংলা ভাষায় কথাবার্তা শুনতে শুনতে । দুজনের সাথে হাল্কা কথাবার্তা ও হলো, একজন ফেণীর, আরেকজনের বাড়ি মতলব,চাঁদপুর। খারাপ লাগছিলো দেখে , এলাকাটা মোটামুটি নোংরা করে ফেলা।
যেখানে সেখানে কাপ, বোতল, প্লাস্টিক প্যাকেট।
সিটি সেন্টার দোহা।
মনে হয় এটাই দোহার সবচেয়ে বড় শপিং মল। শুক্র-শনিবার থাকায় ছিলো ফ্যামিলি ডে, তাই মনে হয় প্রচুর বাচ্চা-কাচ্চা আর মহিলাকে দেখা গেলো। এখানে মহিলাদের কিছু গ্রুপকে কোনো পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই দেখলাম, সৌদী আরবের তুলনায় এখানে মহিলারা অনেকটাই লিবারেটেড।
সেন্টারের মাঝে বিশাল এক স্কেটিং কোর্ট দেখে ইচ্ছে জাগলো কিন্তু সাইয়ীদ ভাই তার টিম নাকি মাথা গুনে গুনে বার্লিনে নিয়ে যেতে চায়, কাতারের পঙ্গু হাসপাতালে কাঊকে রেখে যাবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা উনার নাই, এইসব বলে আমাকে নিবৃত্ত করলেন।
এরাবিয়ানদের সাধারণত মাথা গরম (আমার আরেক কলিগ বলে মাথায় যে ৪০% পানি আছে সেটাই গরম !! উনি আবার ব্যাপক উঠাবসা করেছেন এরাবিয়ানদের সাথে , অবিশ্বাসও করতে পারি না) আর রাফ বলে খ্যাতি আছে। সিটি সেন্টারে একটা দৃশ্য দেখে ওটা অসম্ভব মনে হলো না। একটা ফুটফুটে পিচ্চি
কারিফাওরে আলাদা হয়ে গেছে মা-বাবা থেকে ,কান্নাকাটি শুরু করে আরেকটা বাচ্চার মায়ের পিছনে ঘুরাঘুরি শুরু করলো। (কারিফাওরের মত বড় সুপারস্টোরে বড়দেরই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক, বাচ্চারা তো কিছুই না।
) অবশেষে পিচ্চির মা-বাবাকে খুঁজে পাওয়া গেলো। কিন্তু এর পর যা ঘটলো তাতে আমরা একটু ধাক্কা খেলাম। পিচ্চির মা কোলে নিতেই বাবা লাগিয়ে দিলো বিশাল এক চড় আর বকতে লাগলো , পিচ্চির মুখ লাল হয়ে উঠলো।
সিটি সেন্টারের নিচেরতলায় আমাদের হোস্ট হ্যাগেন-ড্যায এর আইসক্রীম খাওয়াতে নিয়ে গেলেন। (এত মজা পেয়েছিলাম, পরে পোল্যান্ড গিয়ে সব হ্যাগেন-ড্যায খালি করে দিয়েছি )
হঠাৎ দেখলাম একটা মঞ্চের মতো সাজানো , ওখানে ভালোই আরবীতে গান-বাজনা হচ্ছে।
আরবীয় শিঙা ও দেখলাম। কিছুক্ষন পর দুইজন আরবী পোশাকে সেজে এসে ছন্দময় গানের তালে তালে নাচতে লাগলো, হাতে গোল গোল পাখা (এটাকে কি চামর বলে?)।
আমাদের হোস্ট বললেন , পুরো রমজান মাসেই নাকি মধ্যরাত পর্যন্ত এইরকম হামদ-নাত ( রাসুল(সাঃ) এর প্রশংসাবাণী ) গাওয়া হয়, সরকার থেকে প্রচুর অনুদান ও পায় এইসব বাদকদল।
সহকর্মীকে বললাম, বাংলাদেশে হলে এখনি তুমুল লঙ্কাকান্ড বেঁধে যেত, তখন তো জানতাম না এই কথাটাই মাস দুয়েক পরে সত্যি হবে লালনের ভাস্কর্য নিয়ে।
লালনের ভাস্কর্য নিয়ে অনেক ধরণের সাধারণ , তাত্ত্বিক, শ্রেণী-অর্থ-রাজনীতি-সমাজ-ধর্ম বিভিন্নরকম পোস্ট এসেছে, আমি শুধু আমার জিজ্ঞাসা করে যাই।
অল্পস্বল্প ধর্মপ্রাণ একজন মানুষ হিসাবে মাঝে মাঝেই আমার যে প্রশ্নটা জাগে সেটা হলো, পুরোপরি আকাট ইসলাম এর প্রয়োগ ক্কি আসলেই সম্ভব, ব্যাক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে? আঞ্চলিক সংস্কৃতির সাথে একেবারেই মিথস্ক্রিয়া না করে? কারণ মিথস্ক্রিয়ার পরে কিছুটা পরিবর্তিত ইসলাম ছাড়া ইসলামের প্রয়োগ বা প্রসার আমার জানামতে নেই। আমার মনে হয় আমরা যারা বাঙালী এবং মুসলিম দুটি জাতীয়তার পরিচয়ের মাঝে সংঘর্ষ আনতে না চাই , এই প্রশ্নটির উত্তরের ডাইমেনশন আমাদের ভাবতে হবে।
টানা ঘোরাঘুরিতে ক্লান্ত আমরা , রাতের বাজে প্রায় একটা । পরদিন (আসলে ঐদিনই) সাতটায় বার্লিনের ফ্লাইট । তারপরেও নিস্তার নাই।
হোস্টের কথা হলো কাতারে এসে বিখ্যাত আরবীয় শিশা (হুক্কা) না চেখেই চলে যাবো? সুতরাং যাওয়া হলো ঐরকম এক রেস্টুরেন্টে। সুবাসিত ধোঁয়ায় অন্ধকার বিশাল তাঁবুর মত রেস্টুরেন্টটিতে এমিরেকান-ফ্রেঞ্চ-কাতারি-ইন্ডিয়ান সবার মেলা বসেছে। শিশা-জ্যুস-কাবাব-নান-মাছের গ্রীল এর ফরমাশ দেয়া হলো।
কাবাব খাইয়াই মেজাজ বিলা হইলো, মোস্লেম-মুস্তাকিমের কাছে কিচ্ছু লাগে না। আফসুস, কাতারি গুলার জন্য।
অবশ্য কাবাব খামুই কি, পুরা রুমে ধুমায়া কার্ড খেলা হইতেছে , বক্ষলগ্ন না হইলেও বগললগ্ন হয়ে ‘আফা’রা ভাইদের তাল দিতাছেন, কলিগের শ্বশুর, হোস্ট আর উনার স্ত্রীর নজর এড়ায়া সবাই আমার পিছনের লাল গেঞ্জী *** ‘আফা’র দিকে চাইতে লাগলো। আমি একবার ঘাড় ঘুরাইতেই সাইয়ীদ ভাইয়ের ধমক খাইলাম, আমার নাকি বয়স হয় নাই।
জীবনে বিড়ি-সিগারেটে একটা টান ও দেই নাই, আইজকা ধরায়া দিছে হুক্কা। নিকোটিন-তামাক কিছু নাই, তাও ধোঁয়াতো। পানি , জ্যুস সব খাইয়াও একটান দেওয়া মাত্রই, পৌনঃপুনিক খক-খক-খক...।
শরমাইলাম। কারণ পূর্বোক্ত ‘আফা’ সমানে ধুম্র উদগীরণ চালায়া যাইতেছেন, আর এইসব বীর পুঙ্গবের এর দশা! সিগারেটখোররা ভালোই চালাইলো। ( ছবিতে আধাকাটাজন আমাদের পিএম, বাকিজন কাতারের বাঙালী সঙ্গীদের একজন। )
রাইত চারটা বাজলো। পারলে ওখানেই ঘুমায়ে পড়ি।
সুতরাং , হোটেলে ফেরা । বাইরে দেখি কাতারে কাতারে ল্যাম্বারগিনি-অডি আরো কি কি জানি ফেলে রাখছে । গাড়ি ফ্রেক দুইজন ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। আমি নাদান-ফকির মানুষ, আমার কাছে লেক্সাস আর তিনচাকার ভ্যান একই জিনিষ, তবে ল্যাম্বারগিনিটা দেখে আসলেই কি জানি কয়, ‘জোস’ লাগলো।
গুডবাই ফর্টি-ফাইভ ডিগ্রী সেলসিয়াস, গুডবাই দোহা।
পা বাড়ালাম হোটেলের দিকে, যেখানে থাকা হবে মাত্র আধাঘন্টা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।