ইদানিং হারু মাঝির পুরনো কথাগুলো খুব বেশি মনে পড়ে। কদিন আগে বউ মারা গেছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে তার। না হয় বউ তাকে বেশিই ভালবাসতো। এইতো ৫ বছর আগে যখন বিয়ে করে নিয়ে আসলো কি লাজুক ছিল জয়গন। ঠিকমতো কথাই বলতো না।
প্রতিবার শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে আসার সময় শ্বাশুড়ী জয়গনের উদ্দেশ্য বলল, জামাইয়ের সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলবি। ঠিকমতো ঘরের কামকাজ করবি। আরো অনেক উপদেশই দিত হারুমাঝির শ্বাশুড়ি তাহেরা বেওয়া। সব উপদেশই শুনতো জয়গন। শুধু ঐ যে জামাইয়ের সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলবি এইটা পালন করতেই যেন ১৭ বছরের তরুনী জয়গনের একটু কষ্ট হতো।
তবে ২৫ বছরের হারুমাঝি বুঝতো এ লজ্জা একদিন ঠিকই ভাঙবে। ভেঙ্গেও ছিল। বিয়ের বছর ঘোরার আগেই বউ যখন একরাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কথাটা বললো সেদিন যেন অনেকটাই লজ্জা ভেঙ্গেছিল জয়গনের। অদ্ভুত ব্যাপার, প্রায় ৪ বছর আগের কথা অথচ কি স্পট মনে আছে হারুমাঝির। সেদিন রাতে জোছনা ছিল।
এমনিতেই সমুদ্রের কাছে বাড়ি হওয়ায় সবসময় বাতাস খেলতো। রীতিমতো শীত লেগে যেত। আর ২ দিন পরেই সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার কথা হারুমাঝির। মহাজনের নৌকায় ওর সঙ্গে আরো প্রায় ১০/১২ জন মাঝিরও যাওয়ার কথা। বউকে ছেড়ে যেতে ওর কষ্টই হচ্ছে।
বউয়েরও মন খারাপ। বিয়ে করার পর থেকেই এই সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। ঐ করেই সংসার চলে। ঘরে বৃদ্ধ মা আর বউ।
তাদের রেখেই ২০/২৫ দিনের জন্য বাড়িছাড়া হয় সে। তারপর মাছ ধরে এনে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বেশ কিছু দিন চলে যায়। হারুমাঝি বুঝতে শেখার পর থেকে দেখে এভাবেই চলে আসছে। তার বাবা করতো। সে করে।
হয়তো তার ছেলেও করতো। উপকুলে বাড়ি হওয়ার সুবাদে মাছধরা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো কাজ জানেনা হারুমাঝি। তো সেই জোছনা রাতে ঘরের সব কাজ ছেড়ে এসে বউ যখন ঘরের মধ্যে দাড়ালো তখন সে বললো একটা পান দেও বউ। বউ পান হাতে দিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল। বৃদ্ধ শ্বাশুড়ি অনেক আগেই খেয়ে শুয়ে পড়েছে।
বউ এসে বিছানায় বসতেই কুপি নিভিয়ে দিল হারুমাঝি। স্বামীর মতলব বুঝতে পেরে একটু হাসলো জয়গন। অন্ধকারেও হাসি টের পেল মাঝি। কি-ও হাসো ক্যা? সরল প্রশ্ন হারুমাঝির। এমতেই, বাত্তি নিভাইলেন তো তাই।
শুতে শুতেই জবাব দেয় জয়গন। তারপর স্বামীর বুকের মধ্যে গিয়ে কথাটা বলে জয়গন। আমার কেমুন জানি লাগে। মনে হয় সংসারে নতুন কেউ আইবো। পেটের মধ্যে.....।
শেষ করতে পারেনা জয়গন। তার আগেই চিৎকার দিয়ে ওঠে মাঝি। কও কি বউ, সত্যেই। সে রাতে আর ঘুম হয়না দুজনের। তারপর বছর ঘুরতে ঘুরতে ছেলের বাবা হয় হারুমাঝি।
নাম রাখে সাগর।
তখন থেকেই ভেঙ্গে গিয়েছিল জয়গনের লজ্জা। তার ২ বছর পরে যখন হারুমাঝির মায়ের মৃত্যু হয় তখন তো পুরো সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার উপর। এরই মধ্যে আরো একটা মেয়ের জন্ম দেয় জয়গন।
হারুমাঝির ঘরের পাশে ছিল দুইটা নারকেল গাছ।
তার বাবার হাতে লাগানো। প্রতিবছর অনেক নারকেল ও ডাব দিত গাছ দুটো। নিজেরা খেয়ে মাঝে মাঝে বিক্রিও করতো।
এইতো কদিন আগে একটা ঝড় হলো সিডর না ফিডর কি জানি নাম। সেই ঝড়ে ভেঙ্গে পড়েছে গাছ দুটো।
একদম হারমাঝির ঘরের উপর। হারুমাঝি তখন ঘরের বাইরে। রশি দিয়ে ঘরটা বাধার চেষ্টা করছে। ঘরের মধ্যে জয়গন, সাগর আর ২ বছরের মেয়েটা। গাছটা ভেঙ্গে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে ওঠে জয়গন।
চিৎকার শুনে হারুমাঝি যাওয়ার আগেই সবশেষ। পরের দিন ৩ টা লাশ গাছের নিচ থেকে বের করতে বেশ কষ্টই হয় তার।
প্রস্তাবটা দিলো তাহেরা বেওয়া নিজেই। জয়গনের ছোট বোনের বয়স এখন প্রায় ১৮ বছর। হারুমাঝির ৩০।
বয়সের পাথর্ক্য একটু বেশিই। তবুও রাজি হলো হারমাঝি। নতুন করে আবারো লজ্জা ভাঙ্গতে হবে। খারাপ কি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।