আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ ১৩ নভেম্বর এক জাদুকরের জন্মদিন (রিপোষ্ট)



১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি কোন এক সময়। এক বইয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় এক জাদুকরের সঙ্গে। পাঠ্য বইয়ের বাইরে প্রথম কোন বই হাতে নিই তখন। এক দু পাতা করে পড়ে পড়ে দিনের পুরোটা সময় পার করে দিলাম। শেষ করতে পারলাম না।

শুরু হলো অদ্ভুত এক যন্ত্রণা। অবাক ব্যাপার বইয়য়র চরিত্রগুলো আমাকে নানাবিধ সমস্যা করা শুরু করল। চরিত্রগুলো আরো কথা বলতে চায়। জানাতে চায়, নিজেদের আদ্যপান্ত। আমি সেই রাত করেই আবার বই হাতে নিলাম।

পুরোটা পড়ে শেষ করলাম। তারপর আবার নতুন সমস্যা শুরু হলো। বইয়ের চরিত্রগুলো আমাকে ছেড়ে দিলেও ওই জাদুকর আমাকে ছাড়েনী। জাদুকর তার জালে ফেলে আমাকে নিঃস্ব করে দিল। বই কিনতে কিনতে তখন আমার প্রায় দেউলিয়া হবার যোগাড়।

আমি ছাত্র মানুষ। বই কিনে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। কারন জাদুকরের বইয়ের সংখ্যা অনেক। বিকল্প পথ খুঁজে বের করলাম। একটা ভালো পরিমান টাকা দিয়ে একটা লাইব্রেরির সদস্য হলাম।

পুরনো বইগুলো সেখান থেকে পড়া শুরু করলাম। আর নতুন বই বের হলে পাঠ্য বই কেনার কথা বলে বাসা থেকে টাকা নিয়ে কিনতাম। অত্যন্ত অবাক বিষয় জাদুকরের সেই জাল থেকে এখনো বের হতে পারিনি। আজকেও তার একটা আত্মজীবনীমূলক লেখা পড়লাম,নাম বলপয়েন্ট। ধারাবাহিকভাবে পড়ছিও।

জাদুকরের নাম হুমায়ূন আহমেদ। ২. জাদুকরের বই যখন আমাকে পুরোপুরিই আচ্ছন্ন করে ফেলেছে তখন আজগুবি একটা সাধ হলো। যে হাতে তিনি এই সব বইগুলো লিখেন সে হাত ছুঁয়ে দেখতে হবে। আমি ওই হাত ধরতে চাই। শুরু হলো নতুন মিশন।

বাড়ীর ঠিকানা যোগাড়,বাড়ীর সামনে ধরণা দেয়া সবই চলল। আমি আর আমার এক বন্ধু নারায়ণগঞ্জ থেকে মাসে দুবার সে বাড়ীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তাকে পাওয়া যেতনা। জানানো হতো,বাড়ী নেই। শ্যুটিংয়ে গেছেন।

সেন্টমার্টিনে আছেন...। এতে আমরা মোটেও বিরক্ত হতাম না। আবার কবে আসবো সে তারিখ ঠিক করে ফিরে আসতাম। বুঝতে পারলাম, এই না পাওয়াটাও ভালোবাসার অংশ হয়ে গিয়েছিল। একদিন রূটিন অনুযায়ি দেখা হবে না ভেবে দাড়িয়ে আছি।

হঠাত আমাদের অবাক করে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো বাড়ীর ভেতর। জাদুকর আসলেন। জাদুকরি কোন পোশাকে না। সাধারণ লুঙ্গি পড়ে। লুঙ্গিটা বুক অবধি বাধা।

আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। তিনি হাত বাড়ালেন। আমি সেই কাঙ্খিত হাত ধরলাম। হাতটা ধরে আমার কি যে হলো বুঝতে পারলাম না।

আজ ১৩ নভেম্বর। প্রিয় হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। এদেশের মানুষকে বইমুখী করার অসামান্য সেই জাদুকরের জন্মদিন আজ। আজ প্রত্যাশা করি হুমায়ূন আহমেদ আপনি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন। অনেক অনেক দিন বেঁচে থাকুন।

বেঁচে থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে উঠুন। পুনশ্চঃ সেদিন সেই হাত ধরে আমার কি হয়েছিল সেটা তখন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারি। ভেবে অবাকও হই। আমি আসলে অল্প অল্প করে লিখতে শিখে গেছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।