আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকের বই: ইমদাদুল হক মিলন-এর ‘প্রেমে পড়ার সময়।’

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

আসলে গল্প লিখিয়েরা সব সমাজেই অসম্ভব জনপ্রিয়। বাংলায় ইমদাদুল হক মিলন তেমনি ... তখন স্কুলে পড়ি। এই ক্লাশ নাইন কি টেন।

সে সময়টায় একটা বই ভীষন হইচই ফেলে দিয়েছিল। ‘ও রাধা ও কৃষ্ণ’। ভীষন নাকি 'ইরোটি'। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে পড়তাম, ইরোটিক শব্দের মানে ঠিকই বুঝতাম। তো, আমাদের বাসায় বই পড়ার চল ছিল।

খবরের কাগজে মুড়িয়ে সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’ পড়তেন মা। মা স্কুলে পড়াতে গেলে আমি লুকিয়ে সেটা পড়ে ফেলতাম। পড়ার সময় বুক ঢিপ ঢিপ করত। সে ভাবেই ‘ও রাধা ও কৃষ্ণ’ বইটা পড়ে শেষ করলাম। হ্যাঁ।

আ বিট ইরোটিকই বটে। ওই বয়েসে দারুন উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। পড়তে পড়তে বুক ঢিপ ঢিপ করছিল। আরও পরে বুঝেছিলাম- এমন কিছু না । তবে লেখকের নামটা মনে গেঁথে গিয়েছিল।

ইমদাদুল হক মিলন। মিলনের জন্ম ১৯৫৫। সেপ্টেম্বর ৮। বাংলার অতি বিখ্যাত স্থান- বিক্রমপুরে। মুনশীগঞ্জ আর লিখলাম না।

কেননা, স্বয়ং মিলন মনে করেন যে বিক্রমপুর শব্দটায় কেমন একটা পুরনো ঐতিহ্যবাহী ব্যঞ্জনা রয়েছে যেটা মুনশীগঞ্জ শব্দটায় নেই। মিলন যে কারণে মুনশীগঞ্জের বদলে বিক্রমপুর বলার পক্ষপাতি। এমনই প্রখর ইতিহাসবোধ এ লেখকের। ছেলেবেলা কেটেছে নদীনালাখালবিলময় নিভৃত সবুজ গ্রামেই। সেসব শৈশব দিনের কথা অনিবার্যভাবে উঠে এসেছে লেখায়।

আজ থেকে বহুদিন আগে বিক্রমপুরের এক গ্রামের খালপাড়ের ডুমুর গাছের তলায় দাঁড়িয়ে এক বালক নিজের কাছে শপথ করেছিল-আমি যা যা দেখছি; অবিকল তাইই একদিন লিখব বড় হয়ে। মিলনের ‘ভূমিপুত্র’ উপন্যাসটি তাঁর শ্রেষ্ট লেখার একটি। সে উপন্যাসের একটি অনুচ্ছেদ এইরকম- নাওয়ের পাছায় পা ছড়িয়ে বসেছিল বাদলা। খালি গা, পরনে তাঁতীবাড়ির ত্যানাত্যানা একখান লুঙ্গি। লিকলিকে পা দুটো জিংলার পালার মত পড়ে আছে।

দু’পায়ের তলা হা করে তাকিয়েছিল কাদেরের দিকে। কী সাদা! জল-কাদায় পায়ের তলার চামড়া খুব খেয়েছে। আঙুলের ফাঁকগুলো থিকথিক করছে। মানুষের পাড়ায়-পাড়ায় কাদা শুকিয়ে যেমন দাদরা-খাদরা হয় তেমন দেখতে পায়ের তলা বাদলার। হ্যাজা।

দেখে লগি মারা ভুলে খেঁকিয়ে ওঠে। কাদের। ঐ ব্যাডা, তরে না কইছি পায়ে কেরাসিন তেল দিতে। দুইদিন দিলে হ্যাজা কইম্মা যাইবো। তাই বলছিলাম, গ্রামীন শৈশব দিনের কথা উঠে এসেছে তাঁর লেখায়।

অজস্র আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করেছেন মিলন। উঠে এসেছে লোকজ সংস্কৃতি। তাঁর একটি লেখায় গরু দৌড়ের বর্ননা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। বিক্রমপুরের মানুষ এ লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন। ছেলেবেলা থেকেই বাড়িতে পড়ার পরিবেশ ছিল ভাগ্যিস।

বাড়িতে বই ছিল। সমরেশ বসুর লেখা ভালো লাগত। আর শরৎচন্দ্র। গল্প বলার কৌশল তাঁর কাছ থেকেই তো শিখেছিলেন মিলন। তো, যথাসময়ে ঢাকায় এলেন পড়তে।

গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলেন জগন্নাথ কলেজ থেকে । লিখছেন অবশ্য তারও আরও আগে থেকেই। কৈশরেই আবিস্কার করেছিলেন লেখালেখির এক মহাসূত্র। লেখায় সে মহাসূত্র প্রয়োগ করতে লাগলেন। মহাসূত্রটি এই রকম: উপন্যাস আর জীবন আলাদা না।

গল্পের চরিত্ররা হবে আমি যাকে যাকে চিনি-তারাই। সাহিত্যকে কাল্পনিক স্তর থেকে নামিয়ে সকালবেলার চায়ে কাপে আর বাজারের থলেতে এনে ঠেকাতে হবে। মিলনের মহাসূত্রটি ভীষন কাজে লেগেছিল। আমি তখন স্কুলে পড়ি। সে সময়টায় একটা বই ভীষন হইচই ফেলে দিয়েছিল ওই সূত্রের বলেই।

আর ... নাওয়ের পাছায় পা ছড়িয়ে বসেছিল বাদলা। খালি গা, পরনে তাঁতীবাড়ির ত্যানাত্যানা একখান লুঙ্গি। লিকলিকে পা দুটো জিংলার পালার মত পড়ে আছে। দু’পায়ের তলা হা করে তাকিয়েছিল কাদেরের দিকে। কী সাদা! ... আজ থেকে বহুদিন আগে বিক্রমপুরের এক গ্রামের খালপাড়ের ডুমুর গাছের তলায় দাঁড়িয়ে এক বালক নিজের কাছে শপথ করেছিল-আমি যা যা দেখছি; অবিকল তাইই একদিন লিখব বড় হয়ে।

মিলনের প্রথম উপন্যাস ‘ভূমিপুত্র’ নয়। মিলনের প্রথম উপন্যাস ‘যাবজ্জীবন’ গ্রামজীবন নিয়েই । সম্ভবত ’৭৫ এর দিকে লেখা। ২১ বছর বয়েস। ওই বয়েসেই অসম্ভব পাঠক টেনেছিল বইটায়।

আসলে গল্প লিখিয়েরা সব সমাজেই আদরনীয়। ইমদাদুল হক মিলন তেমনি বাংলাদেশে। মানুষের মন তো বিচিত্রমূখী। সে এক জীবনেই নানা জীবনের স্বাদ নিতে চায়। কাজেই, মিলনকে টানছিল বিদেশ; ঢাকা আর ভাল লাগছিল না।

জার্মানি যাওয়ার সুযোগ এলো। গেলেনও। না এলেই ভালো লাগত। সে কী দুঃসহ অভিজ্ঞতা! পরে সে দুঃস্বপ্ন লেখায় উঠে এসেছিল ‘পরাধীনতা’ নামক উপন্যাসে। তারপর থেকে আর লেখার বাইরে যাননি কখনও।

যদিও বহুবার বিদেশ গিয়েছেন। আজ অবধি একটানা লিখে যাচ্ছেন মিলন। প্রায় দুশোর ওপর বই লিখেছেন। ১৯৭১ নিয়ে লিখেছেন-‘কালো ঘোড়া। ’ ৮ বার পদক লাভ করেছেন।

প্রথমবার ১৯৮৬ সালে; সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে। আজকাল মিডিয়ায় উপস্থাপা করছেন মিলন। ‘কী কথা তাহার সনে’- সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; তার প্রধান কারণ- মিলনের কথা বলার আন্তরিক ঢং। নবীন লেখকদের জন্য মিলনের উপদেশ-লিখতে হলে শরৎচন্দ্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হবে। http://www.mediafire.com/?utmmvzy4myq


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।