আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনাস্থা-শেষ পর্ব

আমি লিখি মানুষের কথা,মানুষ পড়ে না। তারা হাসে। তাদের হাসির জন্যে আমি লিখি 'সবকিছু হাসির বিষয় নয়' তারা হাসে না! তবু আমি লিখব।

--আমি জানতাম রঙিলা,তুমি ফোন করবে। হাসিমুখে বললেন বরেন।

শুনলেন খিলখিল হাসির শব্দ। তারসাথে--জানতেন,হাত চালাতে শিখেছেন বুঝি? --আমরা জননেতা সব চালাতে জানি বলেই সবাই আমাদের পেছেনে ঘোরে,বুঝলে রঙিলা,সমাজ- সংসার সব আমরাই চালায়। এখন বলো তোমার কত টাকা দরকার? --টাকা,টাকা দিয়ে যে আমাকে কিনতে পারবেন না বরেনবাবু। --তাহলে কি নেবে বলো তোমার একটা ভোটের বিনিময়ে,যা চাও সব পাবে। --স-ব-পা--ব? --হ্যাঁ,সব,তোমার,তোমার ছেলেমেয়েদের সারা জীবনের দায়িত্ব নেব,যদি আমাকে তোমার ভোটটা দাও।

প্রধান হবার বড় শখ আমার। আবার খিলিখিলি হাসি--আর একটু বিশদ বলুন। বরেন অনেকঘাটের জল খাওয়া মানুষ,এই হাসির মর্ম বুঝতে অসুবিধা হয় না তাঁর। তিনিও হাসলেন। বললেন--কাগজে-কলমে তুমি বিধবা হয়ে থাকবে,শহরের লজে আমার।

তোমার অ্যাকাউন্ট-বই সবসময় টাকায় ছয়লাপ হবে। আবার সেই খিলখিল হাসি--সে সোজা কথায় দেহবিক্রি বরেনবাবু। --তাছাড়া তো অন্যকোন পথ দেখছি না রঙিলা,তোমার সমাজ-সংস্কার আছে,আমারও আছে,পারবে তুমি সব ছাড়তে? --নাহ,তা পারব না। আপনি? --আমি,হ্যাঁ,আমি পারব,তোমাকে পেতে আমি নিজের ধর্ম পর্যন্ত ছাড়তে রাজী আছি। --আপনারা তো জননেতা,আপনাদের আবার ধর্ম আছে নাকি? --এতদিন ছিল না,এবার হবে,আগে প্রধান হই,তারপর কলমা পড়ে মুসলমান হবো,নামাজ পড়ব,রোজা রাখব,তোমার জন্যে সব করব আমি।

আবার হাসির খিলখিলি--আমার জন্যে,না আমার ভোটের জন্যে বরেনবাবু? --ভোট,হ্যাঁ,তোমার ভোটের জন্যেই শুধু,হয় আমাকে ভোট দাও না হয় আমার ভোট নিয়ে প্রধান হও,যেমন করে হোক ওই আরিফের হাত থেকে ক্ষমতা কাড়ব আমি। --আচ্ছা,ভেবে দেখি। লাইন কেটে দিলো রঙিলা। বরেনবাবু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন,তার এতক্ষণের বায়ুর উর্দ্ধচাপ রঙিলার সাথে কথা বলার সময় বন্ধ ছিল তা,এখন,ঢেউ-ঢেউ-ঢেঁকুর হয়ে বেরিয়ে এল সব। জিশান আর জান্নাত কাঁদছে।

তারা খবর পেয়েছে তাদের মা এবার প্রধান হবে। ভয়ে স্কুল যায়নি তারা। স্নান-খাওয়া বন্ধ। সেলাই-মেশিন গুলোও চুপচাপ। কারখানার মেয়েগুলো গালে হাত রেখে ভাবছে,তারা যে রঙিলা-কে চেনে ওই মেয়ে বুঝি সে নয়।

প্রধানের চেয়ারে বসলেই তো অনর্গল মিথ্যে কথা বলতে হয়,টাকা মারতে হয়,রঙিলা কি পারবে তা? বিকেলের মরা রোদ গায়ে মেখে বাড়ি ঢুকল রঙিলা। তাকে দেখে চমকে উঠল জিশান,জান্নাত আর কারখানার মেয়েরা। উঠোনে মরা রোদ। গাছের ছায়া। কাকের হুটোপুটি।

সব যেন স্বপ্ন। ক্লান্ত-বিধ্বস্ত রঙিলার হাসিমুখ যেন সে-সবের অনুষঙ্গ। জান্নাত বলল--মা,তুমি ফিরে এলে? --কেন,তোরা কি ভেবেছিলি,আমি তোদের ফেলে পালিয়ে যাব? --না,তোমার তো প্রধান হওয়ার কথা। মিনমিনে স্বরে বলল জিশান। --না-রে প্রধান হলাম না,মেম্বারও থাকছি না,বিডিও-অফিসে রিজাইন দিয়ে এলাম।

আমি তোদের মা হয়েই বাঁচতে চাই। --তাহলে পঞ্চায়েতের কি হবে? কারখানার মেয়েদের একজনের কৌতুহল অন্যদের কন্ঠেও প্রতিধ্বণি তুলল। -- পঞ্চায়েত আমাদের নয়,আরিফউদ্দিন আর বরেন মুখুজ্জেদের। জনগণের দায়িত্ব তারা মাথায় তুলে নেয়। আমি নিয়েছি এই দুজনের দায়িত্ব,যা ওদের বাপ আমার কাঁধে চাপিয়ে চলে গেছে।

বলে জিশান আর জান্নাতকে বুকে জড়িয়ে ধরল অশ্রুসিক্ত রঙিলা,ঠিক যেমন পাখির ডানার ভেতর আঁকড়ে ধরা থাকে শাবক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।