আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনাস্থা-২

আমি লিখি মানুষের কথা,মানুষ পড়ে না। তারা হাসে। তাদের হাসির জন্যে আমি লিখি 'সবকিছু হাসির বিষয় নয়' তারা হাসে না! তবু আমি লিখব।

বুকের উদ্বেগ আর পেটের বায়ু দুটোকেই কষ্টে-সৃষ্টে চেপে প্রধান-সাহেব বললেন--হ্যালো,কে, রঙিলা? --চিনতে পারছেন না? --না,না,চিনতে পারব না কেন,তবে তোমার গলার আওয়াজ কেমন বদলে গেছে। --চোরের মত লুকিয়ে বেড়াচ্ছি তো,তাই গলার আওয়াজও লুকিয়ে ফেলেছি।

আপনারাই তো বলেন,চোরের মায়ের বড় গলা,আমার ছেলেকে চোর হতে দেব না আর নিজেও চুরি করব না,তাই গলার আওয়াজ বদলে দিয়েছি। --বেশ করেছো,ভাল করেছো,এবার আমার একটা কথা মন দিয়ে শোন। --কি কথা,ভোট দিতে হবে এই-তো? --আরে ভোটের মুখে মারো গুলি,তোমাকে আমি নিকা করব ভাবছি,জানোই তো গত বর্ষায় আমার বিবি জান্নাতবাসী হয়েছে। --কিন্তু আমি যে আপনাকে নিকা করব না প্রধান-সাহেব। টেলিফোনের তারে খিলিখিলি হাসি ভাসিয়ে বলল রঙিলা।

--কেন আমার বিবি আগুনে পুড়ে মরেছে বলে,জানো ও আমাকে সারাজীবন মিছিমিছি সন্দেহ করে এসেছে,বলে কিনা শরীফ-স্বপনের বাপ আলিম খান নয়,আমি। আরে বাবা আলিম খান আমার বাঁধা-মুনিষ ছিল,সেই সুবাদে ওর বিবি আমার ভাবী,ওই ছেলেদুটো কত যত্ন করে আমার চাষের সব কাজ তুলে দেয়,নিজের বাপের জোতেও কেউ অত খাটে না,তাকে নিয়ে সন্দেহ,অশান্তি,রাতদিন। শেষে নিজের জ্বলনে নিজেই মলো। আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না প্রধান-সাহেব,প্রচন্ড শব্দে বায়ু নিঃস্বরিত হয়ে গেল তাঁর। কাজটা গর্হিত ভেবে জ্বিভ কাটলেন তিনি।

তারপর বললেন--শোন রঙিলা মাথা ঠান্ডা করে শোন,আমকে নিকা না কর তাই সয়,আমার বড়-ছেলেকে নিকা কর,হ্যাঁ,আমার বড় ছেলে পলাশের কথা বলছি,করবে নিকা? রঙিলা জবাব দেয় না। অধৈর্য প্রধান যেন খিলিখিলি হাসি শুনছেন শুধু। বললেন--ও,বুঝতে পেরেছি,পলাশের বউ আছে,তাই তোমার মত নাই,ঠিকাছে তুমি আমার ছোটছেলে শিমুলকে বিয়ে কর। হতচ্ছাড়া রাতদিন মাঝিপাড়ায় পড়ে থাকে,তোমার মত বউ এলে তবেই জব্দ হবে বাছাধন। কি বল,রাজী কিনা? --তারমানে যেমন করেই হোক আমার ভোটটা আপনার চায়? --হ্যাঁ,ঠিক তাই,আমাকে ভোট দাও,নইলে আমার ভোট নাও,তোমাকেই প্রধান করে দেব আমি, তবু ওই বরেন মুখুজ্জের হাতে ক্ষমতা যেতে দেব না।

--আচ্ছা ভেবে দেখি কি করব। বলেই লাইন কেটে দিলো রঙিলা। বিরক্ত ও হতাশ প্রধান এবার পারিষদদের বললেন--শালীর নখরামী কত,ঠিক আছে আমিও যেদিন দিন পাব সেদিন তোকে বুঝিয়ে দেব,কত ধানে কত চাল। একটু থেমে আবার বললেন--আসতেই হবে তোকে আমার দলে,হুঁ-হুঁ-যে টোপ দিয়েছি, বোয়াল মাছেই গিলে খাবে,তা তু-তো একটা বেওয়া। প্রধান-সাহেবের বিরোধী দলনেতা বরেন মুখার্জীরও বয়স ষাটের কাছাকাছি।

তাঁরও বায়ুর দোষ। তবে সেটা প্রধান-সাহেবের মত নিম্নগামী নয়,উর্দ্ধমুখী। বারম্বার ঢেঁকুর উঠছে তাঁর। সামাল দিতে গঙ্গায় গলা ডুবিয়ে বসে আছেন তিনি। বারম্বার মা-গঙ্গাকে স্মরণ করছেন তিনি।

মনেমনে বলছেন--মা,মা-গো,পতিত-নাশিনী,তুমি সহায় হও,নইলে এবারও প্রধান হতে পারব না। বলছেন বরেন কিন্তু তাঁর চোখ আর কান রয়েছে পাড়ে। ওখানেই রাখা আছে মোবাইল-ফোন। তাঁর ইচ্ছে,একবার ওটা বেজে উঠুক,কথা বলুক রঙিলা। বরেনও আজ স্বপ্ন দেখেছেন,তিনি গঙ্গাস্নান করছেন ঠিক তখনই বেজে উঠেছে রিংটোন,আমার স্বপ্ন যে সত্যি হলো আজ।

অচেনা নম্বর। চেনা গলা। রঙিলা। সেই স্বপ্নকে সাকার করতে সকাল থেকে গঙ্গাজলে গলা ডুবিয়ে বসে আছেন বরেন। বিড়বিড় করছেন--মা,মা-গো বিপদতারিণী,মেয়েটার সুমতি দাও।

পাড়ে এসে দু-বার খোঁজ নিয়ে গেছে কমলীর মা--মুরগীর ঝোল হয়ে গেছে,গরম-গরম খাবেন তো আসেন। কমলীর মায়ের শরীরে এখন আর কিছু নেই কিন্তু মনটা ভাল। তাই তাকে এখনও ভালবাসেন বরেন। মাঝেমধ্যে আসেন। মুরগী কাটার ফরমাশ দেন।

রান্নার হাতটিও তোফা বুড়ির। শুধু সেই রান্নার লোভেই বুঝি,বরেন ছুটে আসেন এখানে। বাগদী-পাড়ার ছুঁড়িগুলো অন্যদিকে ভাল হলে কি-হবে,মাংস রান্না করে যেন বেগুনের ঝোল!মদের কোন স্বাদ থাকে না। মাঝে-মাঝে রাগ ধরে যায় বরেনের,মনে হয় আগের মত খুন খারাপী শুরু করে দিতে। রাঁধতেই যদি না জানিস,তবে আর মেয়েছেলে হয়ে বেচেঁ থাকা কেন?পরক্ষণেই নিজেকে সংযত করেন, বয়সকালে ও-সব রক্তের তেজে হয়েছে।

এখন তিনি একজন দায়িত্বশীল পিতা। যার জামাই কিনা জেলার প্রধান বিচারক,সে যাবে খুনের দায়ে জেলে। বউ-ছেলে-মেয়ে-জামাইয়ের মুখ চেয়ে নিয়মিত গঙ্গাস্নান করেন তিনি। পুজো-আহ্নিকও। তবেই তো রোজ সকালে বউ গড় হয়ে প্রণাম করবে আর বলবে--তুমিই আমার দেবতা।

ছুটিছাটাতে জামাই বাবাজীবন দেশের বাড়ি যায় না,এখানে আসে। বলে--আপনাকে দেখে আমি আমার বাবার শোক ভুলি বাবা। আপনার ওই মামলা গুলোর জন্যে একদম চিন্তা করবেন না। আমি ট্রান্সফার হয়ে গেলেও সব ব্যবস্থা করে দিয়ে যাব,কেউ বুঝুক আর না-ই বুঝুক আমি তো বুঝি,রাজনীতির চক্রান্তের শিকার আপনি। ছেলের দাবী--এবার যেমন করেই হোক প্রধান হোন,তারপর রাজনীতি থেকে অবসর নিন।

বরেন কথা দিয়েছেন। মায়ের ইচ্ছায় দেখা যাক,মেয়েটার মন এদিকে গড়ায় কিনা। তাই ডাকছেন--মা,মা-গো,মেয়েটার সুমতি দাও মা। রিংটোন বাজাক। সত্যিই রিংটোন বাজলো।

পড়িমরি করে পাড়ে উঠলেন বরেন। ভিজে হাতে মোবাইল ধরলেন। নষ্ট হলেও ভয় নেই। টাকার অভাব নেই তাঁর,তবু জামাই কিনে দেবে। বললেন--হ্যা-হ্যালো।

শুনলেন--বরেনবাবু,আমি রঙিলা বলছি। (শেষাংশ আগামী পোস্টে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।