আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..
স্যাটেলাইটের কল্যাণে দিন-রাত “১১ আনা বিনোদন তত্ত্ব” কিংবা থিয়েটারের “থরেথরে সাজানো শোধিত শিল্প” যতই আধুনিক সংস্কৃতির “precised version” হোক, বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যের আদিমন্ত্র প্রোথিত অনেকের দৃষ্টিতে “অদ্ভুতুড়ে” যাত্রাশিল্পে। আর যাত্রা মানেই কিংবদন্তী রহিম-রূপবানের অনিবার্য মঞ্চায়ন_ ১২বছরের রূপবান ১২দিন বয়সের রহিমকে বিয়ে করে নিয়েছিল বনবাস ....মাঝে ক্লাইমেক্স- এন্টিক্লাইমেক্স......অবশেষে অসমবয়সী দম্পত্তির সুখে-শান্তিতে সংসার !রাম-অযোধ্যা যেমন বিদায় নিয়েছে, যাত্রাশিল্পও তেমনি “অস্তিত্ব সংকটের” মুখোমুখি; রহিম-রূপবানের উপকথায়ও এসেছে আমূল পরিবর্তন। কারণ কোন রুচিসম্পণ্ন মানুষের ১২বছরের বড় মেয়েকে বিয়ে করার মত “ছেলেমানুষি শখ”হয়না বর্তমান জমানায়। কিন্তু রহিমরা থাকে সর্বযুগেই, শুধু সময় অনুযায়ী তাদের কাহিনী সামান্য পুনর্বিন্যস্ত হয়! বিন্যাস-সমাবেশের সেই জটিল হিসাব-নিকাশের ফলাফলে আধুনিক রূপবান ১২বছরের পরিবর্তে রহিমের চেয়ে ২-৩বছরের বড় হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে.... তারপর?
কিছুদিন আগে হয়ে গেল “দ্য গোল্ডেন অপেরা”র জমজমাট যাত্রা প্রদর্শনী এবং বলা বাহুল্য সেখানে নতুন রহিম-রূপবানদেরই ছিল জয়জয়কার !.(জীবনে একটিও “যাত্রাপালা” দেখেননি এমন পাঠকের পক্ষে এ লেখার মর্মোদ্ধার করা দুষ্কর.... কারণ, যাত্রার ভাষারীতি- উচ্চারণ-গানের সুরের সঙ্গে পরিচিতি না থাকলে পুরো লেখাটিই তাদের দৃষ্টিতে “একঘেয়ে-পানসে” প্রতিভাত হতে বাধ্য! ভেবে দেখুন পড়বেন কিনা!
($)
(মঞ্চে রহিম-রূপবানের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ; রহিমের চরিত্র রূপদানকারীর বয়স ৫০ এর কাছাকাছি হলেও ২২বছরের তরুণ হিসেবে মোটেই বেমানান লাগছে না !নেপথ্যে যন্ত্রীদের অবিরাম বাদ্যবাজনার আওয়াজ)
রহিম: না..না..না রূপবান, আমি কিছুতেই তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারিনা। রমণীর কি এতই অকাল পড়েছে যে বয়সে বড় নারীকে স্ত্রী করতে হবে! তাই যদি হয় তবে প্রয়োজনে চিরকুমার থাকব....ছিঃছিঃ বয়স্কা রমণীর পাণিগ্রহণ !এ যে ব্যভিচারের নামান্তর!
রূপবান : চুপ কর প্রিয়, চুপ কর! তুমি কি সেই কবি যার কবিতার ছন্দ ছিলাম আমি, তুমি কি সেই সুন্দরও যে আমার বেণুকার ফুল হয়ে শোভা বাড়াত, পায়েলের মত জড়িয়ে রাখত ...; তবে আজ.. আজ কেন আমায় দূরে ঠেলে দিতে চাও?
আমার কী দোষ বল... বলনা...
ও আমার...তুমি বিনে একলা লাগে; আমি সইতে... পারিনা...
রহিম: খামোশ ...নির্বোধ নারী ! আমার তামাশায় ভুলে মিছে আশা করার স্পর্ধা তুমি কোথায় পেলে? তোমায় স্রেফ ভগ্নী জ্ঞান করি বিধায়ই তোমার কেশ স্পর্শ করেছি ; রজনীগন্ধা দেয়ারও অন্য কোন হেতু নাই! তোমায় যে মহব্বতের কথা বলেছি তা শুধু মুখের জড়তা কাটানোর নিমিত্তেই; যাতে আপন প্রেয়সীকে মুগ্ধ করতে দ্বিধায় না পড়ি..... হায়রে অভাগা রমণী, নিজের ক্লাসের কোন যুবকই তোমার নজরে এল না!
কেমনে তোমায় বোঝাই....ভগ্নি গো...
আমি.. তোমার ফুলের ..মালি ..হতে পারি... ; (ভ্রমর...হবনা...//)
রূপবান : হা বিধাতা, যার কথা ভেবে প্রভাতে সূর্যোদয় দেখি সে-ই কিনা আমায় ভগ্নী বলে অসম্মান করল ! হে নিষ্ঠুর প্রিয়তম, তুমি কি জাননা তোমার প্রতিভায় অন্ধ হয়ে আমি বয়সের হিসাব ভুলে গেছি, তুমি কি জাননা আমার পরীক্ষার ফলাফল কত ভালো!পক্ষান্তরে তোমার পাশ নিয়েই টানাটানি অবস্থা ; আর কিছুদিন পরই চাকুরি পেয়ে আমি তোমার দায়িত্ব নিলে তুমি কি আরও নির্ভার হয়ে সাহিত্যচর্চা-সংগীত সাধনার অবকাশ পাবেনা ? অবুঝ পুরুষ,আমায় কাঁদিয়ে
কী সুখ তোমার?
রহিম: তুমি বিবদ্ধ-উন্মাদিনী! ওহে রমণী, তুমি কেন..বোঝনা তোমাকে ভগ্নী ভিন্ন অন্য কিছু কল্পনা করা আমার দুঃসাধ্য?তোমার মত বয়সী ঘোড়ার উপর বাজি ধরার ঝুঁকি আমি কী করে নিই ; তাছাড়া আমাকে ভ্রাতা মানতেইবা তোমার এত আপত্তি কিসে?
শোনো শোনো রূপবান... রূপবান গো
ও তুমি আমায় ভুলে... যাওগো নারী ...আমি রূপের দিওয়ানা...//
কত ধনী বণিক আছে গো.......... ও তুমি..তাদের কাউরে কর জীবনসাথী....
সুখী হবেগো.....সুখী হবেগো//
রূপবান অশ্র“সজল চোখে) তবে তাই হোক যা তুমি চাও। ছিঃ, চোখের জলকে কতই না সহজলভ্য করেছি তোমার মনের কারবালা প্রান্তরে...। আমায় ক্ষমা করো রহিম, ক্ষমা করো... ক্ষমা করো (রূপবানের দ্রুত মঞ্চত্যাগ এবং গান গাইতে গাইতে যাত্রাপালার নেপথ্য চরিত্র “বিবেকের” দৃশ্যপটে আবির্ভাবসাদা ধবধবে পোশাকে!)
বিবেক :
ওরে বেকুব করলি রে ভুল... ভেবে দেখিস মনে...
চোখের জলে তারই মাশুল .....// দিবি ক্ষণেক্ষণে...
($)
(বান্ধবী পরিবেষ্টিত হয়ে তাজেলের মঞ্চে প্রবেশ; সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে মঞ্চে)
তাজেল : সখী, জীবনের ১৯ বৈশাখ-২০চৈত্র দেখা হল , কিন্তু মনের সরাইখানায় কেউতো আতিথ্য স্বীকার করলনা; সবাই কেবল পানাহার শেষেই বিদায় নিতে চায়! আমার নিদ্রিত যৌবনের সফেদ সরোবরে নীলোৎপল প্রস্ফ’টিত করবার জন্য কি কোন সুপুরুষেরই মনোষ্কামনা হয়না? বল সখী, বল সখী...
( দর্শকসারিতে হাসির রোল)
(সখীদের সমবেত কোরাস সংগীত, মঞ্চের প্রবেশপথে স্থির দণ্ডায়মান রহিমের বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে রমণীদর্শন)
রহিম: (সশব্দ স্বগতোক্তি) হা বিধি, এ কেমন ঘোরতর অবিচার! হাতের কাছে এমন মিঠাপানির নির্ঝর থাকতেও আমায় সুদীর্ঘকাল তৃষ্ণার্ত রেখেছো! নিশ্চয়ই এ আমাদের ডিপার্টমেন্টের নবীন শিক্ষার্থিনী হবে! আহ! সৃষ্টির কী অপূর্ব কারুকার্য! (সন্তর্পণে তাজেলের সামনে আসে রহিম )
রহিম: কে তুমি লজ্জাবতী ; স্বর্গ থেকে কী হেতু অচানক মর্ত্যে অবতরণ করলে ? তোমায় দেখলে যে পিকাসো-ভিঞ্চিরা নরকে বসেও ছবি আঁকার ফরিয়াদ জানাবে, তোমার শীতলতায় এই চৈত্রের খরাতেও দেখ কেমন হিমেল হাওয়া বইছে!
তাজেল : ( লজ্জায় আরক্তিম) আমি নারী ...গা’য়ে বাড়ি ; তাজেল ..আমার নাম,
প্রিয়..ভাষী দেই কেমনে ..তোমার ভাষার দাম//
রহিম: শোনো শোনো স্বর্গের .. ললনা..
আমার...ফোনভরা...টাকা আছে...তোমার নাম্বার বল না... //
( পরস্পরের চোখে চোখ রাখার অবস্থাটি বজায় রেখেই ধীরেধীরে রহিম-তাজেলের একত্রে মঞ্চত্যাগ; হতবিহ্বল সখীদের নিজেদের মধ্যে কথোপকোথন, তালে তালে যন্ত্রীদের সুরের মূর্ছনা)
হ্যাংলামিটা দেখলে তোমরা! বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার ২সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই “প্রাণপুরুষের” সন্ধানে কেমন উদ্বাহু হয়ে উঠেছে কুমারী তাজেল ; বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর একলা থাকাটা যেন অধর্ম!....ছি:
কেন ছিঃ বলছো সখী?university স্থানটাতো universally স্বাধীন হওয়ার জন্যই ; পিতা-মাতার অগোচরে কারোও সঙ্গে কিছু মধুর প্রহর কাটানো এমন কী দূষণীয় ব্যাপার! নির্জনতা পেলেই যে যৌবন অবগুণ্ঠন মুক্ত হতে চায় ! বুকে হাত দিয়ে বল, তোমার কি এমন ইচ্ছা হয়না????....................(-চলবে)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।