আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার পথে পথে তুষার ছড়ানো



আবার এসেছে তুষার আকাশ ছেয়ে............ কবি গুরু কি দারুণ অনুভবে বলেছিলেন যে ,আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে। বাংলাদেশের আষাঢ় মাস এমনই.......। মানুষকে কবি বানিয়ে ছাড়ে। যে মানুষ কোনদিন গান গায় নি সেও জানালার ধারে দাঁড়িয়ে গুন গুন করে। প্রকৃতি এমনই।

আর আমরা বাংলাদেশের মানুষরা পৃথিবীর যে প্রান্তে পড়ে থাকি না কেনো.....ষড়্ঋতুর সেই অদ্ভুত ব্যাপারগুলো ভুলতে পারি কই...... গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহে.......গাছতলায় পথিকের বিশ্রাম। বর্ষার বৃষ্টিঝরা দিনে....কদম ফুলের সুবাস। শরতের ঝলমলে আকাশ..... সকালের শিউলী ফুল। হেমন্তের ভোরের শিশির........ধান কাটার গান। শীতের হিমেল হাওয়া......পিঠে খাওয়ার ধুম।

বসন্তের উত্তাল দিনে.......গাছে গাছে ফুল আর ফুল। এইতো আমাদের বাংলাদেশ। অনেক গুলো বছর পার হয়ে গেলো.....সেই ষড়ঋতু শুধু অনুভবের আঙিনায় ঘুরে বেড়ায়। কখনো আনমনে সিক্ত করে চোখ...... চারটা ঋতুর এই দেশ কানাডাটাতে অনেক দিন হয়ে গেলো.... Fall Winter Spring Summer ক্যালন্ডারে শীত আসার অনেক দেরী থাকলেও এবার শীত খুব তাড়াতাড়ি পড়ে গেলো মনে হয়। সবারই মন খারাপ........এবার সামারটা কেমন বৃষ্টিতে কেটে গেলো।

অটোয়াতে খুব বৃষ্টি হয়েছে এবার। সামারে ছেলেদের দুই মাসের ছুটিতে প্রতি উইকেন্ডে কোথাও না কোথাও ঘুরতে গেলাম.........কিন্তু সবখানেই ঠান্ডা আর মেঘলা দিন ছিলো। কাল সকাল থেকেই সবাই বলছিলো স্নো পড়বে.....বিশ্বাস হচ্ছিল না......গাছে গাছে পাতারা এখনো দুলছে....পথে বের হলেই পাথা ঝরা দেখি......গাছেদের উদাস ভংগীতে দাঁড়িয়ে থাকা দেখি.....আর ভাবি গাছেদের মত হওয়া দরকার......কেমন যুদ্ধ করে বাঁচছে প্রকৃতির সাথে............ কাল আবহাওয়া চ্যানেল গুলো বারবার বলছিলো রাত থেকে স্নো পড়া শুরু হবে। ২৫ সেন্টিমিটার। .......পড়বে সকাল পর্যন্ত........ বাসায় তখন দেশ থেকে আসা মামাতো বোন রুনীর হাজবেন্ড আহসান......।

ও এয়ারফোর্সের একটা কোর্সে এসেছে.....। ওর চোখে মুখে কি যে আনন্দ। তুষার পাত দেখবে.......আমরা বলি বরফ ...... ওর মুখে তুষার শুনে কি ভালো যে লাগলো.... ছোটবেলায় টিভিতে ম্যুভি অফ দ্য উইক ইংরেজী ছবিতে তুষার পাত দেখে কেমন আপ্লুত হতাম। অনেক দিন পর্যন্ত খুব ইচ্ছে করতো ছুঁয়ে দেখতে সেই তুষার......। আজ অনেকদিন পর সেই রকম খুব উদ্ভসিত একটা মুখ দেখলাম......ও কে বললাম যখন আকাশটা লাল হয়ে উঠবে তখন শুরু হবে তুষার পাত.....ও বার বার জানালার কাছে যাচ্ছে.....।

এক ফাঁকে আমাদের ভিডিও করলো........দেশে গিয়ে রুনীকে দেখাবে.....। আমরা কিভাবে থাকি........। ওর জন্য কর্ন স্যুপ আর নুডলস করেছিলাম বিকালে । মুড়ি আর চানাচুর মাখলাম পিঁয়াজ ,মরিচ ,টমাটো দিয়ে। .....চা মুড়ি খেতে খেতে দেশের গল্প।

বারবার জানালার কাছে গিয়ে দেখছে......আমি বললাম ,"তুমি ভাগ্য নিয়ে আসছো আহসান। তুষারপাতকে এই দেশীরা খুব পছন্দ করে। " আমাদের দেশে যেমন বৃষ্টি আসাকে শুভ ধরা হয় ,এখানে তুষারপাতকে...। আমাদের আলোচনার মধ্যে একজনের আবার টেনশন.......গাড়ীর উইন্টার টায়ার লাগানো হয়নি.....। কি দরকার এত তাড়াতাড়ি বরফ আসার... যাই হোক ওরা বাইরে গেলো ......টিম হর্টনে আড্ডা দিতে আর কফি খেতে আর আমি ব্লগে বসলাম... রাশীক ঘুমাতে গেলো টেনশন নিয়ে..ওকে সকালে পাবলিক বাস ধরে স্কুলে যেতে হবে.....ছোটটার স্কুল বাস আসে..দেখা যাক......।

মনে মনে ভাবলাম বেশী স্নো পড়লে কাল আর স্কুলে দেবো না.....। ব্লগে বসে লেখা পড়ছিলাম....। আর একটু পর পর জানালার কাছে দাঁড়াচ্ছিলাম...... সবসময়ই এই সময়টা দারুন লাগে......আকাশ থেকে ঝিরঝির করে সাদা সাদা তুলার মত তুষার গুলো পড়ছে........ রাশীকের বাবাকে ফোন করলাম। ও বললো আহসান ছবি তুলছে মোবাইল দিয়ে....। ওরা বাসায় আসলো।

খেতে বসে একই গল্প। রাশীকের বাবার রান্না করা গরুর মাংস আর ডাল খেয়ে ও তো মুগ্ধ। রাত বারোটার দিকে নাসিমার ফোন মন্ট্রিয়ল থেকে....... বলে ,অভিনন্দন.......সেকেন্ডের মধ্যে বুঝলাম কেনো......... বললাম কি স্নো ফল দেখলা এখন?? হেসে বলে হ্যা। জানতোই না....। একটু আগে জানালার কাছে যেয়ে অবাক হয়ে গেছে..।

চারিদিক সাদা......সাথে সাথে আমাকে ফোন। বন্ধুত্ব একেই বলে....... সকালে রাশীক স্কুলে যাবার পড়েই.....। রাইয়ান উঠলো। আস্তে ধীরে নাশতা দিলাম....। স্কুলে দিচ্ছি না ওকে....বাস চলে যাবার টাইমের ১০ মিনিট না যেতেই চিৎকার সে স্কুলে যাবে......কি আর করা.....রেডী হয়ে রাখতে গেলাম..... পথে গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে কেমন যে লাগলো....... গুন গুন করলাম আমার পথে পথে তুষার ছড়ানো..... তাইতো তোমার বানী বাজে ঝর্ণা ঝরানো।

। ......কবি গুরু সবখানেই এমন মনে পড়ে যায়........উনি এমন তুষার দেখলে আমার পথে পথে পাথর ছড়ানো না গেয়ে আমার মত করেই বলতেন..............আমার পথে পথে তুষার ছড়ানো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।