ক্যাচালমুক্ত ব্লগ চাই
বিষয়টা হল তরুণরা কোথায় যাচ্ছে... কী তাদের নিয়তি.. তাদের চিন্তাধারা কোন পথে ধাবিত হচ্ছে... অথবা ছোট করে বলতে গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী?
তরুণ-যুবক বলতে আমরা শুধু ধরে নিচ্ছি তারাই, যারা বয়সে ১৮-৩০ এর মধ্যে... মূলত ছাত্ররা... যারা কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাদের ভূমিকা কী?
আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের কী সুতীব্র শক্তি। সেই ৫২ থেকে শুরু, ৬৯, ৭১, ৯১... দেশে আসছে বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু এখনকার অবস্থাদৃষ্টে তাই কী মনে হচ্ছে না যে তারা তাদের অতীতের সুদীর্ঘ ইতিহাস, বিপ্লবী চেতনা ভূলে গিয়ে স্বার্থ নিয়ে মারামারি কাটাকাটিতে লিপ্ত? কারণ কী? কেন বাংলাদেশের তরুণসমাজ হিংস্র রাজনীতিতে তার সময় অপচয় করছে? কেন মেধা আসছে না রাজনীতিতে???
মানুষের মনস্তাত্বিক গঠন দুইভাবে আসে ,বংশগত আর সামাজিক । একটা মানব শিশুকে যদি জন্মের পর কুকুরের কাছে রেখে আসা হয় ,শারীরিকভাবে মানুষ হলেও সে আচরনগত আর বৈশিষ্টগত ভাবে কুকুর হবে ।
একইভাবে সিংহ বা বানর বা ছাগল হবে। সেটাই কী হচ্ছে না বাংলাদেশে?
ভন গ্যেতে নামের একজন দার্শনিক বলেছিলেন, we live to adapt! আমাদের নিকটতম পূর্বপুরুষরা সমঝোতা করে গেছেন, নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, সেটাই আমরা ধারণ করছি। সুতরাং আদর্শগত রাজনীতি বলে যা ছিল তা আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে। এখন আমরা স্রোতে গা ভাসিয়ে চলছি।
ইভ্যুলশনারি সাইকোলজিতে Altruism বলে একটা কথা আছে, তার মানে সহযোগীতা, পরার্থবাদীতা।
জেনেটিকালি আমাদের মাঝে তা থাকার কথা। আমাদের আদিম পূর্বপুরুষরা ছিল প্রকৃতির কাছে অসহায়.. তাই তাদেরকে বেঁচে থাকতে হলে পরষ্পরের উপর নির্ভর করতে হত.. সেই জিনটি বস্তুগতভাবে আমাদের থাকার কথা। কিন্তু মার্কসের থীউরি অনুসারে আমরা যতটা আধুনিক হচ্ছি, ক্যাপিটালিস্ট ভাবধারার হচ্ছি, ততটাই আমাদের অপরের সাহায্য করার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। "আমিত্ব" ব্যাপারটা উঠে আসছে। স্যোশাল ক্লাসিফিকেশনের সর্বোচ্চ ধাপে উঠার চেস্টারত তরুণরা নিজেই জানে না বলির পাঠা তারাই হচ্ছে।
"আমিই সব, আমিই সেরা, আমিই লিডার" এই ভাবধারার কারণে কম্যুনিজম টিকেনি, সেই ইউটোপিয়ান সমাজব্যবস্থাও আসেনি। আর এখন সেই চিন্তাধারা তীব্র রুপ নিচ্ছে। তরুনসমাজের কিছু অংশ তার পরিবেশের উপর নিয়ন্ত্রন নিতে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে.... অথচ তারা যে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা তাদের বোধের অগম্য। আর মেধাবী ছাত্ররা সেই কলুষিত রাজনীতিতে অংশ নিতে চাইছে না। তাই ৭৪% তরুনের রাজনীতি বিমুখ।
আচ্ছা তরুনদের এই মানষিকতার মূল কী? চ্যারিটি বিগিনস এট হোম... বর্তমানের তরুনরা তো একসময় শিশু ছিল। তাদের সোশ্যালাইজেশন কী হচ্ছে ঠিকভাবে? ফ্যামিলি কী ঠিকভাবে তাদের বড় করছে? এই প্রসঙ্গে আসে নৈতিক শিক্ষা ব্যাপারটা। শিশুরা শেখে বড়দের দেখে... আর বাংলাদেশে শিশুদের ধর্মশিক্ষা দিয়েই পিতামাতা ভাবেন কাজ শেষ, নৈতিক শিক্ষা দিয়ে দিলাম। ধর্ম যে নৈতিকতার একমাত্র বাহন নয় তা সবাই জানে। আর স্কুল কলেজ ছাত্রকে তৈরী করে কাজের জন্য, মানুষ হওয়ার জন্য নয়।
আর সেক্স এডুকেশনের কথা বাদ ই দিলাম। ফ্রয়েড বলেছিলেন, কোন প্রবৃত্তি দমিয়ে রাখলে তা পরর্বতীতে বিকৃত হিসেবে দেখা দেয়। ফ্রয়েড সহ অন্যান্যরা এটাই প্রমান করে গেছেন যে যৌনতা একটি শাশ্বত জিনিস যা নারী-পুরুষ-হিজড়া সকলের মধ্যেই বিদ্যমান। তাই যৌনতাকে দমনের চেষ্টা না করে যৌনতার প্রকাশকে সভ্যভাবে করার দিকে মনোযোগ দেওয়াটাই বিজ্ঞানসম্মত। তা যে বাংলাদেশে কতটা হয় তা তো সবাই জানে।
তাই আধুনিক প্রজন্ম সেক্স ফ্রীকএ পরিণত হচ্ছে, রেপ কেস বেড়ে গেছে শতগুণে।
ইভ্যুলশন বলে সারভাইভালের ফলে আমরা একটা Homo superior জেনারেশন পাবো। অথচ পাচ্ছি একটা প্রতিবন্ধী প্রজন্ম যারা প্রতিবাদের জন্য মাঠে নামার সাহস পায় না। আর কিছু শৃগাল এই পালকে খেদিয়ে চলে... ছাত্ররাজনীতির নামে। ক্রমান্বয়ে আমরা কী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি না।
একজন পরিণতবয়স্ক যুবকেরর রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে, কিন্তু তাতে কেন হিংস্রতা প্রবেশ করবে। স্বৈরাচারী এরশাদের সময় একটা ভালো পদক্ষেপ ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল,, সেগুলো কোথায় গেল? রাজনীতি মানেই কী প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা??
আমরা যে ট্রু অলট্রুইজম ছাড়া বাঁচতে পারব না তা the Prisoner's dilemma উদাহরণ দ্বারাই জানা যায়। আর ভয়ের কথা হল বর্তমান তরুনসমাজ চিরন্তন পরার্থবাদীতা ছেড়ে প্রচন্ডভাবে স্বার্থপর হয়ে গেছে। এর সমাধান কী আমি জানি না।
আমরা জানিনা আমাদের ভবিষ্যৎ কী।
যখন দেখি সামান্য স্বার্থের কারণে বিশ্বজিৎ বলি হয় তখন আসলেই মনে হয় আমাদের ধ্বংস স্বয়ং ভগবানও ঠেকাতে পারবেন না। তখন হয়তো হঠাৎ চোখ পড়ে কোথাও কোন ভার্সিটিপড়ুয়া ছাত্র গাঁটের পয়সা খরচ করে স্কুল চালাচ্ছে,,, তখন ভাবি... নাহ, এখনো আশা শেষ হয়নি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।