আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..
(বিভ্রম-১ এর পর থেকে)
ক্লাসে নীলাদ্রীর রোল৪০, স্বর্ণালীর ৪১ ; তাই দ্বিতীয় বর্ষ থেকে শুরু হওয়া টিউটোরিয়ালে উভয়ের গ্রুপ একই;এতে করে দুর্লভ “নাইট কুইন”যেন প্রস্ফ’টিত হইল নীলাদ্রী-স্বর্ণালীর যেীথ কাননে!হৃদয়ের আকুতিকে পত্রপাঠ খারিজ করিয়া দিয়া তাহারা এতকাল নিভৃতে ছিল; টিউটরিয়ালের সেীজন্যে সেই নিভৃত বাসের সমাপনী ঘটিল! পুরো সপ্তাহ তাহারা অধীর প্রতীক্ষায় থাকে এই একটি দিনের। নীলাদ্রী বিরোধীতা বরদাশত করিতে নারাজ, আর স্বর্ণালী এই ব্যাপারটিরই সুযোগ লয়- ব্যস, নীলাদ্রী তখন সপক্ষে কয়েক সহস্র যুক্তি উপস্থাপন করিবে; স্বর্ণালী তার বিমুগ্ধ শ্রোতা। যেমন নীলাদ্রী বলে-“ প্রণয় হইল প্রকৃষ্টতম বন্ধুত্ব: এখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অধি, কিন্তু কোন ললনা যদি তদাপেক্ষাও ঘনিষ্ঠ হয় তবে সে-ই আমার প্রণয়িনী। ‘বন্ধুদের ভিতরে রিলেশন পছন্দ করিনে’-জাতীয় বাক্যকে আমার ভণ্ডামি লাগে, কারণ যাহার সহিত অনির্দিষ্ট কালব্যাপী বসিয়া রহিলাম, কথা বলিলাম, মনে মনে আন্দোলিত হইলাম অথচ দিনশেষে তাহাকে ‘তুমি আমার শুধুই বন্ধু’ বলিয়া উড়াইয়া দিলাম ইহার মত লাম্পট্য আর কী হইতে পারে!আমি হয়ত কখনই আমার প্রেয়সীকে স্পর্শ করিবনা, এমনকি তাহার নামখানিও মুখে অনুচ্চারে রহিতে পারে;কিন্তু উপলব্ধির সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠায় তাহাকে ঠিকই উন্নীত করিব, তাহার মাঝে আমার প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করিব- ইহাই আমার প্রণয়: পার্থিব আর অপার্থিবের দ্বৈত সংমিশ্রণ! নীলাদ্রীর এসব বক্তব্যে স্বর্ণালী ছন্দপতন ঘটায় বিরোধীতার স্বার্থেই-“তোমার মানসিকতা সংকীর্ণ, এইসব যুক্তি মানুষকে বহুগামীতায় উদ্বুদ্ধ করবে..ইত্যদি ইত্যদি।
অধিক উত্তেজনায় নীলাদ্রী মাঝে মাঝে তোতলাতে থাকে, আর ইত্যবসরে স্বর্ণালী তাকে অনুকরণ করে ইচ্ছাকৃতভাবে তোতলায় উত্তেজনাকে বিবর্ধিত করতে!তখন হয়ত বিরোধ থেকে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের নিমিত্তে নীলাদ্রী কোন স্বরচিত কবিতা শোনায়-“অনেক তর্ক হয়েছে, এবার তর্কের মাঝে নিচ্ছি “প্রভাতকুমার কবিতা বিরতি” শব্দরা সব মুক হয়ে বসে আছে কাব্যের জীর্ণ কুটিরে
আবেগের হিমবাহ বিগলিত তরলের সমাহিত অবয়ব-
বাক্যরা হরিলুট হয়ে গেছে ; কিলশে বহু ব্যবহারে
অশেষের একশেষ- সুললিত মননের অবারিত বৈভব
জানিনা তাই কোনকিছুই; লিখব কী নতুন খাতার উষ্ণ শরীরে
জনান্তিকে তোমার চোখেতে আমার লুকানো শৈশব!
নিয়ত টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখে সময় অপচয় করা স্বর্ণালীর কাব্যবোধ ভীষণ দুর্বল, কিন্তু নীলাদ্রীকে অনুভবের জন্যই হয়ত পূর্বেকার অপচয়কৃত মুহূর্তগুলো এখন তার গ্রন্থবেষ্টিত হইয়া কাটে, টিউটরিয়াল ক্লাসের দিন পরনে শাড়ি, কপালে টিপ, একেবারে রবীন্দ্র নায়িকা, যদিও সে নিজেকে প্রভাতকুমারের নায়িকা ভেবেই পুলকিত হয়; হয়ত অকস্মাৎ নীলাদ্রীকে প্রশ্নই করে বসে-“দেখতো চোখে শৈশব খুঁজে পাও কিনা”!তবুও ওর মনে হয় নীলাদ্রীর জগৎটা কত বর্ণিল, কত দীপাবলী তাতে সুষমা ছড়ায়; আর তার পৃথিবীতে একটিমাত্র ক্ষয়িষ্ণু মোমবাতি বহু কষ্টেশিষ্টে সামান্য আলো সরবরাহ করে! নীলাদ্রী ওকে অনুকম্পা করছে নাতো?
উপল জানে নীলাদ্রী কোন হৃদয়ে CV drop করলে সেখানে সে দ্বাদশ ব্যক্তি, তবুও স্বর্ণালীর সঙ্গে নীলাদ্রীর ঘনিষ্ঠতা তাকে কিঞ্চিৎ মর্মাহত করল; এতদিনকার রাত্রিবিহারিনী শ্রান্ত দেহে প্র¯ত্ততি নেয় সপ্তাহের একটি বিশেষ দিনের! স্বর্ণালীর ঠিকানায় উপলের এই অব্যক্ত দীর্ঘশ্বাস পৌছে গেল স্বয়ংক্রিয়ভাবেই,“শোন উপল, তোর আহ্বানেই প্রথম আমি আমার চেনা গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসেছি, এমনকি নীলাদ্রী আর তুই যদি একই সময় ফোন করিস আমি সম্ভবত তোকেই বেছে নেব, কিন্তু এতদসত্ত্বেও “ নীলাদ্রী শেখর ” এক অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা যার সবকিছুকে সুষ্ঠুভাবে ব্যাখ্যা করা আমার সাধ্যাতীত।
তুই আমার চক্ষুস্মান করেছিস, কিন্তু তাতে আলো দেয়ার পাশাপাশি তৃতীয় একটি নতুন চক্ষুর সন্ধান দিয়েছে নীলাদ্রী। তাই টার্বাইনের চাকা হয়ে কেবল নীলাদ্রী -উপলের সরোবরে ঘুর্ণায়মান আমি;পরিত্রাণ চাইছিনা বলেই হয়ত পরিত্রাতারাও ক্রমেই দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। ”
“লবঙ্গ, মন একটা নন্দিত নরক; তুই-আমি-নীলাদ্রী সকলে সেই অদ্ভুতুড়ে নরকের বিভ্রান্ত অধিপতি” উপলের এমন দার্শনিক ভাষ্যে স্বর্ণালীর মধ্যে চাপল্য ফিরে এল,“হ্যারে উপল, নীলাদ্রীর জন্মদিন ১১ মে, আমার ১৭মে , আর তোর ১১এপ্রিল; চল তিনজন একত্রে পালন করি। আমরা ৫জন, তোরা ৬জন- দারুণ মজা হবে। উপল ভ্রু কুচকায়,“আমরা তো আমরাই, কিন্তু পণ্ডিতমহাশয় তো তোদের “পুঁজিবাদী শ্রেণীকে” সহ্যই করতে পারেনা।
” স্বর্ণালীর আত্মবিশ্বাস ঠিকরে বেরোয়,“ সব বন্দোবস্ত কর; পণ্ডিতরাও কোন একসময় শিষ্য থাকে। ”
যথারীতি নীলাদ্রী বাগড়া দিলেও যেখানে আছে স্বর্ণালী, প্রতিরোধ খোজে শ্বাসনালী। উপহার কেনার দায়িত্ব পড়ল নীলাদ্রীর উপর; যতই কাব্যচর্চা করুক মেয়েদের ঠিক কী gift দিলে প্রীত হয় সেটি তাহার অজানা। সবশেষে কিনে ফেলল একজোড়া পায়েল, একজোড়া কাকন ওর বিচারে “ও”হচ্ছে স্বর্ণালীর কাকন- যা জড়িয়ে থাকে বাহুলতা আর উপল পায়েল-যার স্থান পায়ে! উপলকে এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে নিজেদের মধ্যে শিশুতোষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া! এরপর ক্লান্ত হয়ে একত্রে কফিতে চুমুক দিতে দিতে উপল বলে-“আমি অন্তত স্বর্ণালীকে এজন্য ধন্যবাদ দেব যে তার কল্যাণে হলেও ভাবগম্ভীর নীলাদ্রী শেখর ক্যাম্পাসে এমন ছুটোছুটি করে” “আর আমি স্বর্ণালীকে তিরস্কার করব তার মত ‘চিত্রা হরিণী’ কী করে একটা সাড়ে ৫ফুট খচ্চরকে সঙ্গ দেয়”- নীলাদ্রী সঙ্গেসঙ্গে প্রত্তুত্তর করে। ....“ত্রিশূলের” জন্মোৎসব পালন করতে ১১টি প্রাণবন্ত দেহ সমবেত হয়েছে রেস্তোরায়।
স্বর্ণালীর কী হেতু নীলাদ্রীর সহিত দাবা খেলিবার খেয়াল চাপিল: সে বসল উপলের পাশে, অকারণে উপলের সাথে বেশি ঘনিষ্ঠতা দেখাতে শুরু করল। অন্যদিকে নীলাদ্রী ঘোড়ার এমন চাল দিল যে স্বর্ণালীর রাজা-মন্ত্রী একইসঙ্গে ধরাশায়ী: তনুশ্রীর সঙ্গে নিটোল আলাপচারিতা জুড়ে দিল এবং সেটি এতই প্রাঞ্জল যে স্বর্ণালীর সন্দেহ হল নীলাদ্রী কখনো ওর সঙ্গে এভাবে কথা বলেছে কিনা!তৃতীয় চক্ষু দিয়ে তনুশ্রীর মাঝে স্বর্ণালী যেন নিজেকেই আবিষ্কার করল, তনুশ্রীতো এক দাবার ঘোড়ামাত্র!
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রান্তিকতা উপস্থিত; পধৎববৎ নিয়ে সামান্য হলেও চিন্তিত নীলাদ্রী- জীবনের উদ্ভট কার্যক্রম সংখ্যাতত্ত্বকে দুরূহ হিসাবের দায়িত্ব দিয়েছে, তবুও প্রতিনিয়ত তার experiment চলে ব্যক্তিজীবন-মানবিক সম্পর্ক নিয়ে। এই experiment করতে করতেই স্বর্ণালী-সুচিত্রা চলে এসেছে দৃশ্যপটে। সুচিত্রা ক্রমশ “নৈর্ব্যক্তিক নারী” হয়ে উঠছে, ওর প্রতি অমিতের পূর্বেকার অনুযোগগুলো অনুরক্তিতে রূপায়িত হয়েছে সে বহুকাল , এমনকি সপ্তাহান্তে থিয়েটার ভ্রমণেও সহযাত্রী সুচিত্রা। স্বর্ণালীর সঙ্গে ওর তুলনাটা এরকম: স্বর্ণালী যেন শেরওয়ানি- শুধু বিশেষ উপলক্ষ্যের পোষাক , আর সুচিত্রা হাফ-হাতা শার্ট- সর্বত্রই যার কদর!কিন্তু,সুচিকে স্পর্শ করা যায়, ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়, চাইলে হয়ত জড়িয়েও রাখা যায়; শুধু অনুভবের স্বর্গরাজ্যেই সে অনাহূত; সেস্থানের প্রতিইঞ্চি অনুভব স্বর্ণালীর জন্য নির্ধারিত!অতএব এবার সুচিকে বিসর্জনের অঞ্জলি দানের সময় এসেছে; কারণ ফাউস্ট গল্পের শয়তান হয়ে মার্গারেটরূপী সুচিকে প্রতারিত করার দায়ে তার ‘অকর্মণ্য বিবেক’ তাকে অভিযুক্ত করছে! তাছাড়া ইদানীং ফটোগ্রাফার হিসেবে বেশ রোজগার হচ্ছে, কিন্তু ইন্টার পরীক্ষা যেহেতু একেবারে শোবার ঘরে বসে আছে, এ মুহূর্তে পড়ানো বাদ দেয়াটা অমানবিকই বটে।
হ্যা, উপলই হবে তার উদ্ধারকর্তা! ভাবনামতই এক সন্ধ্যায় উপলকে নিয়ে সুচিত্রাদের বাড়িতে গিয়ে নিজের নানাবিধ সমস্যা-ব্যস্ততার সমান্তরালে উপলের রেজাল্ট- সদাচারের প্রগলভ বিজ্ঞাপনে ওকে তার স্থলাভিষিক্ত করে ফেলল। নীলাদ্রী এবং বাবার মধ্যকার পুরো আলোচনাটি সুচি আড়াল থেকে শুনে নিল, আর এরপরই নিজের রুমের আলো নিভিয়ে অবেলায়ই ঘুমিয়ে পড়ল। সে ঘুমের গভীরতা এতই ব্যাপক যে বিদায়বেলায় নীলাদ্রী দেখা করবে বলে অনেক ডাকাডাকি সত্ত্বেও তা আর ভাঙলনা। রিক্সাযোগে ফিরবার কালে রাস্তায় ট্রাফিকের বেশে সুচিকে দেখতে পেল নীলাদ্রী, খানিকবাদে রিক্সাওয়ালাটিও সুচি হয়ে উঠল , পাশে বসা উপলও যেন সুচিত্রারই প্রতিমূর্তি,এমনকি শার্টের পকেটেও আশ্রিত কয়েক কোটি সুচিত্রা !-“আমি এক অসম্পূর্ণ চরিত্র সুচি; তাই তোমাকে আমি উদ্দেশ্য করতে চেয়েছিলাম কিনা নিশ্চিত হওয়ার আগে অদৃষ্টই তোমায় বিধেয় করে দিল। যাযাবরবৃত্তি যার পরিতৃপ্তি তাকে তুমি যত মনোরমা গৃহই দাও, সে কি তাতে সুখ পায়?”
প্রথমদিনই উপল বুঝতে পারল ছাত্রী আর তার মধ্যে কয়েক শতাব্দী ব্যবধান রয়েছে, ছাত্রী যেন প্রকারান্তরে তাকে অবজ্ঞাই করছে।
তার আত্মসম্মানবোধ বিপ্লব ঘোষিল, সপ্তাহে ৩দিবসের স্থলে ৫দিবস পড়াইতে আরম্ভ করিল; পরীক্ষার আগে নাকি চাপ একটু বেশিই দিতে হয় ; যদিও নেপথ্য কারণ ভিন্ন: ব্যবধান মোচন!কিন্তু সে যতই আন্তরিকতা সহকারে পড়ায়, ছাত্রী আরও খোলসে ঢুকিয়া পড়ে। উপলের পঞ্চম ইন্দ্রিয় জানান দিল এই খোলসবদ্ধতার সহিত নীলাদ্রীর সংযুক্তি অনিবার্য; সুতরাং এর উপশমও হইবে নীলাদ্রী কেন্দ্রিক। একদিন পড়ার ফাকে সে গল্প জুড়িল, সুচি নিরব -“ তোমাকে প্রত্যেক ক্ষেত্রে মাত্রাজ্ঞানটা বজায় রাখতে হবে, কোনকিছু স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম করলেই স্বাভাবিকতা বর্জিত হয়ে পড়ে; যেমন, অতিরিক্ত প্রতিভাও মানুষকে অস্বাভাবিক করে দেয়। তোমার প্রাক্তন টিচারের কথাই ধর- জীবনে ওর মত প্রতিভাধর ছেলে খুব কম দেখেছি, কিন্তু তুমি যদি তার লাইফস্টাইল শোন: সকালে খেল তো একেবারে রাতে গিয়ে পুনরায় ক্ষুধা লাগে, একবার লিখতে বসলে ক্লাস-বিকেল আপন খেয়ালে চলে যায়। তুমি শুনলে আশ্চর্য হবে অনেক মেয়ের সঙ্গে ‘ও’ পাশাপাশি বসে অগণন মুহূর্ত কাটিয়ে দেয় একবারের তরেও মুখের দিকে না তাকিয়ে; কাউকেই নাকি ওর ‘নীলিমা’র মত মনে হয়না ‘নীলিমা’ ওর কল্পিত নারী চরিত্র; জীবনানন্দের বনলতা সেনের মত।
তুমিই বল, এটা কি স্বাভাবিক জীবন?এই ব্যাটাকে দিয়ে প্রেম-ভালোবাসা অসম্ভব। ” সুচি অঝোরে কাঁদতে শুরু করল-“স্যরি ভাইয়া, আজ আর পড়তে ইচ্ছে হচ্ছেনা; promise করছি কাল থেকে সিরিয়াসলি পড়ব। ” উপল সেদিনের মত ফিরে এল; বিজয়ের আনন্দ তার প্রাণে হিল্লোল তুলল। এরপর থেকে সুচি মনোযোগী ছাত্রী, উপল বিদগ্ধ মাষ্টারমশাই!পরীক্ষার আগে সর্বশেষ যেদিন উপলের ‘সুচিত্রা চরিত’ সমাপ্ত হল,পড়াশোনা-পরীক্ষা-পছন্দ-অপছন্দ অনেক বিষয়ে আলাপ হল দুজনের, উপল নিচে নেমে এলে সুচি ছাদ থেকে তাকে হাত নাড়লএবং অতি অবশ্যই পারস্পরিক সেীহার্দ্রের হাসিতে তাদের সন্ধ্যাটা রঞ্জিত হল। সেই হাসি থেকে এই প্রথম উপলের চোখে নবলোকের বিচ্ছুরণ খেলা করল: "এমন হাসি কি কোন মর্ত্যমানবীর পক্ষে আদেী সম্ভবপর,কই স্বর্ণালীর হাসিতে তো এমন প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলতরঙ্গ সৃষ্টি হয়না ! ভবঘুরে নীলাদ্রী উচ্ছন্নে যাক, ও কেবল সম্মোহিত করতেই শিখেছে, কারও মনের কাছাকাছি পেীছনোর বিদ্যে ওর অজানা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা করছো বাছা, অথচ ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূক্ষèতম দিকগুলোই এখনো অদেখা তোমার; কিভাবে-কতদূর তুমি এইসব উদভ্রান্ত ধারণা নিয়ে যেতে পার দেখার প্রতীক্ষায় রইলাম। আপাতত মুসলিম স্বর্ণালীর কানের দুল হয়ে ঝুলতে থাকো, যদি উচ্চতা আরও দু’এক ইঞ্চি বৃদ্ধি পায়!"
ছাত্র হিসেবে উপল যে নীলাদ্রীর তুলনায় বহুগুণ শ্রেষ্ঠ সেটিতো অবিসংবাদিত সত্য, তার প্রতিফলন ঘটল সুচির উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে: বাণিজ্য বিভাগ থেকে রীতিমত জিপিএ ৫ পেয়ে বসল। এ ক’মাসের মধ্যে উপল - সুচিত্রা সমবৃত্ত হতে তৃতীয় বিন্দুর প্রয়োজন পড়েনি। সুচি এখন চুড়ান্ত বাস্তববাদী; ও জানে ঘরে আগুন লাগলে নীলাদ্রী হয়ত আগুনের লাবণ্য বর্ণনা করে কাব্য লিখতে বসবে, আর উপল এক হাতে ওকে আগলে অন্যহাতে আগুন নেভাতে প্রবৃত্ত হবে! উপলের কাছে নারী মানে এখন “দাহ্য উদযান”,কেবল সুচিত্রা গুহই “বিশুদ্ধ অম্লযান”! স্বর্ণালীর সহিত এখনো ফোনালাপ হয় , তবে চেতনালোপ ঘটেনা আর; তাহাতো সুচির ওষ্ঠকে রাঙানোর কর্মে ব্যাপৃত! স্বর্ণালীও বাস্তবতা উপলব্ধি করে-“তোকে খুব ভববষ করি উপল, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সুচিত্রা গুহ না হয়ে আমি স্বর্ণালী। ” আর নীলাদ্রীর ভাষ্য-“কলেজ পড়–য়া ছাত্রী থাকলে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হওয়ার কি প্রেরণার অভাব হয়? আসলে সুচিত্রা মেয়েটা বোধকরিএকটু বেশিই ভালো; কিন্তু তুইতো জানিস আমার প্রিয় কবি রবিঠাকুর নয়, মধুসূদন।
তাই “বেশি ভালো” আমার হজমে গণ্ডগোল হয়, মধুসূদনের দৃষ্টিতে মেঘনাদই যেমন প্রকৃত নায়ক!”
উপল মুচকি হাসে-“ নীলাদ্রী বাবু, তোমার মত রমণীমোহন হতে পারাটা অবশ্যই পরম সৌভাগ্য; তবু তোমায় বলব- কোথাও স্থির হও, সবসময় উড়ন্ত থাকলে হঠাৎ নালা-নর্দমায় পতিত হওয়ার শঙ্কাই বেশি। ”
-“আমি সে নর্দমাতেই হরপ্পা নগরী পুনপ্রতিষ্ঠা করব”Ñ-নীলাদ্রী তড়িৎ উত্তর দিলেও উপলের অন্তিম বাক্যটি তাকে ভাবিত করল-
“নর্দমা তুমি যে-ই হও, নীলাদ্রী শেখর থেকে সাবধান; সে তোমাকেও কলুষিত করবে অবলীলাক্রমে!” (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।