আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড় থালায় অনেককিছুর মাঝে একটা খাবার সবচেয়ে প্রিয় ছিলো; নারকেলের নাড়ু

গলাবাজ আর সত্যিকারের লেখক এই ব্লগে টিকে থাকে, আমি কোনটাই না
আমার ছেলেবেলার পুরোটাই কেটেছে একটি বড় একটি হিন্দু পরিবারের প্রতিবেশী হিসাবে। তারও অনেক আগে একসময় সেই পরিবারের তালুক ছিলো পুরো গ্রাম টা। কোন এক পূর্ব পূরুষের নামেই নামকরণ হয়েছিলো গ্রাম এমনকি পাড়ারও। এক এক করে তারা হারাতে থাকেন তাদের ক্ষমতা। অনেকেই সবকিছু গুটিয়ে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে ভারতে চলে যান।

আমি পেয়েছি কেবল তাদের দুই ভাইকে অনেকটা বুড়ো বয়সে। ঐ পরিবারের ছেলেরা বলতে গেলে আমার আম্মার কাছেই থাকতো সারাদিন। ওদের মা রা আমার মাকে বৌমা বলতো, আবার ওরাও সেটা শুনে মাকে বৌমা বলতো। মার হাতের রান্না না খেলে ওদের ভালোই লাগতো না। আমার মা সবসময় তাদের দুটো ব্যাপারে খুব প্রশংসা করেন, একটা হলো বিদ্যার্জনের প্রতি তাদের একাগ্রতা আর মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার।

বাইরের ছেলেপেলের কাছ থেকে শিখে আসা পাকামোপূর্ণ বুলি বা আচরন ঝালাই করতে গেলেই মা এগুলো বারবার মনে করিয়ে দিতেন। যদিও মায়ের ইসলাম ধর্মের প্রতি ভালোবাসার জন্য তাদের একাধিক দেবতা এবং পূজো বিষয় টা তিনি অপছন্দ করতেন এবং আমাকেও প্রায়শই বুঝাতেন। আর এটাও বলতেন যে ওদের ধর্ম ওদের কাছে, ওদের কোনদিন যেন অসম্মান না করি। ঐ পরিবারের ছোট মেয়ের কাছে আমি পড়তাম, কখনো বাসায় এসে পড়াতেন, কখনও আমি যেতাম। বিকালে তাদের মাঠে পুরো এলাকার ছেলেপেলে খেলতে আসতো।

বিশাল পুকুরে গোছল করতো অসংখ্য মানুষ। বিভিন্ন পুজার অনুষ্ঠানে যখন আমাকে কিছু খেতে দিতো আমি কিছু আইটেম খুব মজা করে খেতাম। আমার মা আমাকে বলতো, পুজার খাবার সরাসরি না খেতে পারলে ভালো তবে যদি ইচ্ছা করে বিসমিল্লাহ বলে খাবি, কোন সমস্যা নাই। অবশ্য ঈদের দিন তারাও সবাই আমাদের বাসায় আসতো, মজা করে সিমাই পোলাউ খেতো। আমার মায়ের হাতের রান্নার খুব ভক্ত ছিলো সবগুলো ছেলেমেয়ে।

আমার সমবয়সীরা পুজা দেখতে যেতো, আমার মা আমাকে কোনদিন যেতে দেননি বন্ধুদের সাথে। আমারও কোনদিন পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়নি। তবুও বাসার খুব কাছেই বাজার পুজো মন্ডপ থাকায় ঠিকই দেখা হতো পুজোর আনন্দ। সবথেকে ভালো লাগতো রাস্তার ধারের মেলা। আমার আপা কোন কোন পুজোয় আমাকে মাটির ব্যাংক কিনে দিতো ওখান থেকে কিংবা হাতে সুতো টানা ডুগডুগি গাড়ি।

বড়ো হয়ে বোনের মেয়েকেও একই জিনিস কিনে দিয়েছি আমি। পূজো শেষে বিকালে মাঠে খেলতে খেলতে শুনতাম দূর থেকে ভেসে আসা প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলের শব্দ। ঠিক সন্ধ্যার লগ্নে পুরো মিছিলের পিছে যাওয়ার সৌভাগ্য না হলেও, চোখের বাইরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দাড়িয়ে দেখতাম। ঐ পরিবারের নিজস্ব একটা পুজোর ঘরও ছিলো। কাকীমা দুজনই নিয়ম করে পুজো করতেন।

মজার ব্যাপার হলো ছোটবেলায় কিভাবে যেন ভিতরে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিলো ভুতের। তাই গাছপালা ঘেরা ঐ ঘরটার পাশ দিয়ে একা পার হওয়ার সময় দিতাম এক দৌড়। আমাদের এক বাসা পরে আরেকটা পরিত্যক্ত ভগ্নদশা মন্দির ছিলো। অনেক পুরোনো, পুরো জংগল। খেলতে খেলতে যদি ওখানে বল চলে যেতো দুএকটা অতিসাহসী ছেলে সেটা আনতে যেতো।

অবশ্য সাপের ভয়টা পুরো জেনুইন ছিলো। পরে একজন পুরোহিত আস্তে আস্তে সেখানে বসবাস করা শুরু করলেন। ওটা বাসযোগ্য হলো, এখন নিয়মিত পূজাও হয় সেখানে। যে পরিবারের কথা শুরুতে বলছিলাম, আমি ছোট থাকতেই তারা দুই ভাই কিছুদিনের ব্যবধানের মারা যান। একটা পরিবার পুরোটাই চলে যায় ভারতে, অন্যরা দেশেই চাকরি করছে।

সেখানে এখন অন্য মালিকের নতুন বাসা। অনেক স্মৃতি ছিলো তাদের সাথে। জানিনা কেমন কাটছে তাদের এবারের পূজো। তাদেরকে সহ হিন্দু ধর্মালম্বী সকলকে পূজোর শুভেচ্ছা। সবাইকে নিয়ে উপভোগ করুন পূজোর আনন্দ।

(জানিনা কতটা দেরী করে ফেললাম সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে, আপনারা সেটার তরতাজা অনুভবটা নিলেই চলবে) ছবি কৃতজ্ঞতা
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।