আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী অধিকার লংঘন ও প্রতিকার: ফতোয়া



ইসলামের ইতিহাস প্রথম হযরত ওসমান (রা.)-এর খেলাফত আমলে মাজাল্লাতু আহকামিল-আদালিয়া নামক গ্রন্থের সংকলন ফতোয়ার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি৷কেননা, ১৩৮৬ হিজরি সনে চার মাযহাবের তাকলিদের গন্ডির ভেতর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ইবন শুবরূমা-এর মতবাদের আলোকে ফতোয়া প্রদানের এটাই সর্বপ্রথম ঘটনা৷অতঃপর ১ঌ২ঌ খৃ. ও ১ঌ৩৬ খৃ. মিসরে তাকলিদের বন্ধনমুক্ত হওয়ার প্রয়াসে চালানো হয় এবং তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মাসালিহ-ই মুরসালা অর্থাত্‍ জনকল্যাণ মূলক বিধান ও প্রগতিশীল ইসলামি জীবনযাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে সকল মুসলিম ফিকহ শাস্ত্র পন্ডিতের অভিমতকেই ফতোয়া প্রদানের ভিত্তিরূপে গ্রহণ করা উচিত৷ উপমহাদেশে প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ধর্মীয় বিধানাবলির আলোকে যে ফতোয়া প্রদান করা হয়েছিল তা সিদ্ধান্তটি ছিল নারী-সমাজের জন্য৷একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল যে অনেক স্ত্রীর স্বামীই অনেক সময় বছরের পর বছর নিরুদ্দেশ থাকেন, তাদের আর হদিশ পাওয়া যায় না৷ সে ক্ষেত্রে ঘরে স্ত্রীগণ বছরের পর, বছর কষ্ট করতে থাকেন৷এটা এক ধরনের নারী-নির্যাতন৷এই অবস্থায় নারীরা ছিল খুবই অসহায়৷ পুরুষরা বাধ্য করেছিল নারীদের এ অবস্থা মেনে নিতে৷ তারা অন্যত্র বিয়ে করতে পারতেন না৷উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শাফী দেওবন্দী তাঁর রচিত কিতাব 'আল-হীলাতুন-নাজিয়া' (করাচী) ফতোয়া গ্রন্থে সিদ্ধান্ত দেন যে, "যে স্ত্রীর স্বামী লাপাত্তা-নিরুদ্দেশ, সেই স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে৷" স্বাভাবিকভাবেই যুগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত পুরুষদের মনোবেদনার কারণ হয়েছিল৷ পুরুষদের ধারণা ছিল, তারা লাপাত্তা বা নিরুদ্দেশ যা-ই থাকুন, ঘরে তাদের স্ত্রী অটুট থাকবে৷ উপরিউক্ত ফতোয়ায় সামাজিক এই ধারণায় ছেদ ঘটায়৷ বাঙ্গালীর ইতিহাসে প্রথম "ফতোয়া" বিষয়টি মুসলমানদের মনে হলেও ফতোয়াবাজির বিষয়টি শুধু মুসলমান সমাজে নয়৷আধিপত্য বিস্তার অথবা যে কোন রকম নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্ষমতালিপ্সুরা যুগে যুগে ধর্মের আবরণকে ব্যবহার করেছে৷ বাঙ্গালীর সমাজে ফতোয়াবাজির প্রথম ঘটনা ঘটে ৬০০ থেকে ৮০০ সালের দিকে, যখন সেই প্রাচীনকালে সেন বংশের রাজত্ব চলছিল এই বাংলায়৷সেনরা ছিল প্রবল মৌলবাদী৷ বর্ণবাদ প্রথাও বাংলার সমাজে চালু করেছিল সেন শাসকরাই৷সেনরা বাঙ্গালি জাতিকে জাত-পাতের ফতোয়া দিয়ে কম করে হলেও ছত্রিশটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছিল৷বিভিন্ন ছোঁয়া ও স্পর্শ এবং নিয়মের নামে সামাজিক জীবনে ধর্মীয় তত্ত্বকে সেন রাজারা ব্যবহার করে ঐক্যবদ্ধ বাঙ্গালি জাতিকে প্রথমবারের মতো বিভক্ত করে৷ প্রবল মৌলবাদী শক্তি সেন-ব্রাহ্মণরা ধর্মীয় তত্ত্বকে সামনে এনে তারা সৃষ্টিকর্তার মুখপাত্র হিসেবে নিজেদের জাহির করা শুরু করে৷ ঋকবেদ থেকে উদ্ধৃত করে তারা ফতোয়া প্রচার করে যে, তাঁরা দেবতার হয়ে কথা বলতে পারেন৷ মুসলমান সমাজের পীরবাদ এই তত্ত্ব দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছিল৷ একদল পীর এই ধারণার সৃষ্টি করে যে তাঁদের মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর সাথে যোগাযোগ সম্ভব৷ প্রাচীন আমলে ব্রাহ্মণবাদী মৌলবাদ বাঙালির প্রাক-স্বাধীনতাতেও হস্তক্ষেপ করে৷বাংলাভাষা, যা ছিল সাধারণ প্রাকৃতজনের ভাষা সে ভাষাও কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷বাংলাভাষাকে তাঁরা মনে করেছিলেন অপাঙক্তেয়, তাঁরা এই ভাষায় ধর্মকথা শোনাও মহাপাপ বলে ঘোষণা করেন৷এখানেই তারা থেমে থাকেননি৷সকল শ্রেণীর নাগরিকের জন্যেই বাংলা চর্চা ফতোয়া দ্বারা নিষিদ্ধ করে বলা হয়, যে এই ভাষায় ধর্ম-কথা শুনবে সে-ই "রৌরব" নামক নরকে (সবচেয়ে কঠিন দোজখে) যাবে৷বাঙালির জীবনে ফতোয়া-বাজদের প্রথম ফতোয়াটি হুবহু নিম্নরূপ: অষ্টাদশ পুরাণানি রামস্য চরিতানি চ ৷ ভাষায়াং মানব; শ্রুত্বা রৌরবং নরকিং ব্রজেত্‍ ৷ পাকিস্তানের প্রথম ২৮ আগষ্ট ১ঌ৭০ মাওলানা মওদুদী বলেন, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাদের কখনো ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের অভিপ্রায় ছিল না৷ তাঁরা হিন্দুদের সম্পত্তি এবং এমনকি পাকিস্তানে যেসব মেয়েদের ফেলে যাওয়া হয়েছে তাদের লুট করার কাজে নিয়োজিত ছিল৷তিনি বলেন, ১ঌ৪১ সালেই তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানের ইসলামি রাষ্ট্র হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷পাকিস্তানের কাফিরানা সরকারের মোকাবেলা করাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত৷ মাওলানা মওদুদীর ধর্মরাজ্য ও ধনী-দরিদ্র ৩০ অক্টোবর ১ঌ৭০ মাওলানা মওদুদী লাহোরে ফতোয়া দেন, আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারেই দুনিয়ায় ধনী-দরিদ্র আছে৷সরকারি দৈনিক পাকিস্তান মাওলানা মওদুদীর উপরিউক্ত বক্তব্যের আলোকে "মাওলানা মওদুদীর ধর্মরাজ্য বনাম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তান" শীর্ষক এক উপসম্পাদকীয় লেখে৷ এতে বলা হয় : মাওলানা মওদুদীর প্রস্তাবিত ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই সীমিত৷কিন্তু তাদের কথাবার্তা এবং আচরণে মনে হয় মধ্যযুগীয় থিয়োক্র্যাসীই জামায়াত ইসলামীর সকল স্লোগানের সারকথা৷পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্যে একটি স্বতন্ত্র বাসভূমি প্রতিষ্ঠাই ছিল জিন্নাহর স্বপ্ন৷ এই সত্য তার অগোচরে ছিল না যে বিংশ শতাব্দীতে পুরোহিততন্ত্র বা মোল্লাতন্ত্র একেবারেই অচল৷ মাওলানা মওদুদীর ধর্মচিন্তা অথবা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে একমত না হলেই তা ইসলামের খেলাপ হয়ে যাবে এই জবরদস্তি জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি৷ মুক্তিযুদ্ধে ফতোয়াবাজি ১ঌ৭১ সালে ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুরের জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন বাঙালী মাওলানা লোকমান আহমেদ আমীমী৷ অকারণে আবেগে আজ অনেক আলেমই পাকিস্তানের প্রতি মোহগ্রস্ত৷ কিন্তু পাকিস্তানিরা এই বাঙালি আলেমদের সেদিন মুসলমান তো নয়ই, মানুষও মনে করেনি৷ঢাকার মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ বাঙালি ইমামের পিছনে নামাজ নাজায়েজ বলে ফতোয়া দেয়া হয়েছিল৷ আলবদর হচ্ছে সাক্ষাত্‍ আজরাইল আজরাইল আল্লাহর একজন ফেরেস্তা৷ তার কাজ-মানুষের প্রাণ সংহার এবং একমাত্র আল্লাহর নির্দেশেই তা ঘটানো হয়৷কিন্তু ১ঌ৭১ সালে জামায়াতে ইসলামের আলেমরা তাদের প্রতিষ্ঠিত আলবদল বাহিনীকে নিজেরাই আল্লাহর ফেরেস্তার সাথে তুলনা করে ফতোয়া দেয়৷এটা ছিল নিশ্চিত এক 'শেরেক' যা নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দাঁড় করায়৷ বাংলাদেশ আমল ফতোয়াবাজদের উত্থান ১ঌ৭৫ সালের মার্চ মাসে 'দৈনিক সংবাদ' পত্রিকার সাহিত্য পাতায় কবি দাউদ হায়দার-এর 'কালো সূর্যের কালো জ্যোত্স্নায় কালো বন্যায়' নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়৷ কবিতাটির বিষয়-ছিল ধর্মীয় মূল্যবোধ বিরোধী৷ এই ইস্যুকে সামনে এনে এই প্রথম সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে দেশে তাদের শক্তি প্রদর্শন করে এবং বায়তুল মোকররম মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়৷কবি দাউদ হায়দার মোল্লাবাদী ফতোয়াবাজদের দ্বারা 'মুরতাদ' ঘোষিত হন৷সেই থেকে অদ্যবধি কবি দেশ ছাড়া৷ সামরিক শাসন আমল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বাংলাদেশে সামরিক শাসকরা পাকিস্তানি কায়দায় ক্ষমতা দখলের পর সর্বপ্রথম তারা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সিরাত মাহফিল আয়োজনের নামে বাংলাদেশকে মোল্লাবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার শপথ নেয়৷ বিমান বাহিনীর তত্কালীন প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি তাওয়াব এত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মৌলবাদীদের প্রতি রাষ্ট্রের প্রকাশ্য সমর্থন দেন৷এরপর একের পর এক বিভিন্ন সামরিক অধ্যাদেশ জারি করে জেনারেলরা বাংলাদেশকে সামরিক-ফতোয়ার দেশে পরিণত করেন৷দেশের দীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংগ্রামী পটভূমির সঙ্গে সম্পর্কহীন এই সামরিক শাসকরা দেশকে ফতোয়াবাজদের আস্তানায় পরিণত করতে অপচেষ্টা চালায়৷ শহীদ মিনারে আল্পনা আঁকা ইসলাম বিরোধী ১৪ জানুয়ারী ১ঌ৮৫ ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা বলে, শহীদ মিনারে আল্পনা অাঁকা ও ফুল দেওয়া মুসলমানের জন্য নাজায়েজ৷মৌলবাদী গোষ্ঠীরা এই ফতোয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়৷ নব্বই দশক নব্বই দশকের শুরুতে ফতোয়ার রাজনীতি ঘুরপাক খায় যেসব বিষয় নিয়ে তার মধ্যে প্রধান প্রধান ঘটনা ছিল: * জামায়াত নেতা গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রশ্ন৷ *সমন্বয় কমিটি ও ঘাতক-দালাল নির্মূল আন্দোলত প্রশ্ন৷ * মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধ-অপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ৷ * ড. আহমদ শরীফ ও প্রফেসর কবীর চৌধুরীর দুটি মন্তব্য৷ * ভারতের বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনা৷ *ড. আহমদ শরীফ ও কবীর চৌধুরী মুরতাদ ঘোষিত ড. আহমদ শরীফের একটি বক্তব্য নিয়ে নব্বই দশকের প্রথম দিকের সময়টায় বেশ বিতর্কের উত্তাপ থাকে৷ ধর্মপন্থী উগ্র দলগুলো দাবি করে ড. শরীফ একটি সেমিনারে বলেছেন, "আস্তিকের চেয়ে নাস্তিক ভালো"৷ এই কথা নিয়ে সারাদেশে তুলকালাম কান্ড ঘটে যায়৷ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিন মিছিল, সভা চলতেই থাকে৷ এক ধরনের ধর্মীয় উণ্মাদনায় সমগ্র দেশ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে৷ বায়তুল মোকাররমের খতিবও এই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন৷ জামায়তকে ইসলামি ও অন্যান্য দলের ধর্মপন্থীরা ড. আহমদ শরীফকে "মুরতাদ" ঘোষণা করে তাকে মৃতু্যদন্ডও দেয়৷ এর আগে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করেও অনুরূপ "মুরতাদ" ফতোয়া দেওয়া হয়৷ ধর্মীয় রাজনীতিকরা দাবি করেন, "কবীর চৌধুরী বলেছেন, আজানের শব্দ ভালো লাগে না"৷ এরপর একে একে কবি সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রাহমান, তসলিমা নাসরিনকেও মুরতাদ আখ্যায়িত করা হয়৷ লেখক হুমায়ুন আহমদও মুরতাদ ঘোষিত জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমদও ১০ ডিসেম্বর ১ঌঌ৪ মোল্লাবাদী ফতোয়াবাজদের দ্বারা মুরতাদ ঘোষিত৷ হুমায়ন তাঁর "শ্রাবন মেঘের দিন" নামক উপস্যাসে উল্লিখিত একটি বক্তব্যের কারণে এই ফতোয়ার শিকার হন৷ ফতোয়ার কবলে বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নানারকম আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত হলেও এই প্রথম তারা দেশের রাজনীতি-নির্ভর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বাধার সম্মুখীন হয়৷সুনির্দিষ্ট কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ না আনতে পারলেও ধর্মান্ধ একটি গোষ্ঠী ব্রাক ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকল্পে বাধার সৃষ্টি করে নানারকম ফতোয়া দেয়৷ এনজিও বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিতে তারা সরাসরি মসজিদকেও ব্যবহার করেন৷ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে খুত্‍বা পড়ানোর সময় খতিব তাঁর ভাষায়, জাতিদ্রোহী এনজিওদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান, জানিয়ে বলেন, নীরব থাকলে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার মতো এদেশের মুসলমানদেরও ধ্বংস করা হবে৷ তখন আর কিছুই করার থাকবে না৷ সর্বশেষ নওগাঁ জেলার কীর্তিপুর ইউনিয়নের আতিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সহিদা বেগম৷একবার সাইফুল সহিদাকে উদ্দেশ্য করে রাগের মাথায় তালাক শব্দটি উচ্চারণ করে৷এরপর গ্রাম্য মাতব্বর হাজী আজিজুল হক ফতোয়া দেন, সাইফুল-সহিদার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে৷তিনি সাইফুলের মামাতো ভাই শাসসুলের সঙ্গে জোর করে সহিদার বিয়েও দিয়ে দেন৷ কিন্তু সাইফুল বা সহিদা কেউই বিচ্ছেদে আগ্রহী নয়৷ খবরটি সংবাদটি প্রকাশিত হলে বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী এবং বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে এই ফতোয়ার সম্পর্কে মামলা হয়৷ গত ১৪ ও ৩১ ডিসেম্বর ২০০০ মামলার শুনানীর পর গত ১ জানুয়ারী ২০০১ রায়ে ফতোয়ার ক্ষতিগ্রস্তদের দাম্পত্য জীবন অক্ষুণ্ন রাখা ও ফতোয়াদানকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়৷বিরুদ্ধে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মধ্যস্থতায় ডঃ কামাল হোসেন ও ব্যারিষ্টার তানিয়া আমির মামলা পরিচালনা করেন৷ পীরবাদ বাংলাদেশে ফতোয়াবাজদের পাশাপাশি পীরদের একটি ঐতিহাসিক অবস্থান ছিল৷ মধ্যযুগে লোকজ মানুষের সংস্কৃতিতে "সত্যপীর" (হিন্দুদের মধ্যে সত্য নারায়ন) বলে একটা বিষয় বেশ জনপ্রিয় ছিল৷ কিন্তু উনিশতম আশির দশকে বাংলাদেশে পীরবাদ একটি ব্যবসায় পরিণত হয়৷ দেশের একজন বিশিষ্ট গবেষক এই সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছেন: ইসলামে পীর বলে কিছু নেই, তবুও এদের উদ্ভব ঘটেছিল এবং এরা একসময় শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিল দারিদ্রজনের, কিন্তু এখন পীরেরা সবাই ধনপতিও তাদের উত্তরাধিকারীরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, পাজেরোবাহিত৷ এদের সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই৷অধিকাংশ পীরের জীবনী সংগ্রহ করলে দেখা যাবে, তাদের অতীত ও বর্তমান জীবন কুত্‍সিত, কলন্কিত; কিন্তু তারা চাতুরিপূর্ণ প্রতারণাশক্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছে নিজেদের৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।