অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
টিউশনি করাইবা?
ঘুমটা প্রায় চলেই এসেছিলো এমন সময় রকিবের ঠেলায় ভেঙে গেলো।
ঘুমঘুম চোখেই তাকালাম ওর দিকে। মিটিমিটি হাসছে।
বলোই না টিউশনি করাইবা?
আমি ওর গাল টিপে বললাম তুমি বললে আমি পাহাড় ডিঙাতে পারি, টিউশনি করানো কোনো ব্যাপারস না।
আমার হোস্টেলের ছেলেদের দেখি সবাই ইংরেজি মিডিয়ামের ডবকা মেয়েদের টিউশনি করায় , একেকজন কয়েক হাজার টাকা করে কামায়।
এমনিতেই আমার পয়সার সমস্যা নাই। শপথের কর্মী হিসেবে পড়াশোনার খরচ, হোস্টেল খরচ আর হাতখরচ আসে সৌদি থেকে। সেখানের অনুদানেই আমাদের পড়াশোনা চলে।
বাবা বলেছে তোমার দায়িত্ব একটাই তুমি দাওয়াত দিবে শুধু, শপথের কর্মী হলে কত সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়, শপথের কর্মীদের কত নিশ্চিত জীবন এইসব বলে তুমি সবাইকে শপথের কর্মী বানাবে। অন্য কোনো ফাজলামি চিন্তা মাথায় আনবে না।
তবে রকিব বললে বাবার রক্তচক্ষুকেও অগ্রাহ্য করবো আমি।
রকিবের সাথে আমার পরিচয়টা অদ্ভুত উপায়ে। ও এখনও শপথের কর্মী হয়ে উঠতে পারে নি, শুধুই কর্মী। হোস্টেলে আমি একা সিঙ্গেল রুম নিয়ে থাকি শুনে মাঝে মাঝে আমার ঘরে ঘুমাতে আসতো। আমিও কিছু মনে করতাম না।
এক দিন হোস্টেলে ফিরে দেখি ও দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু বলবে?
ভেতরে চলেন কথা আছে।
ঠিক আছে চলো ভেতরে চলো। আমি ফ্রেশ হয়ে নিই।
আমি শার্ট খুললাম, ও দেখি তাকিয়ে আছে মুগ্ধ হয়ে।
আমার ধবধবে গেঞ্জীটাতে হাত রেখে বললো আপনার গেঞ্জীটা খুব সুন্দর।
আপনার বাইসেপ ট্রাইসেপের শেপও সুন্দর।
আমি প্রশংসায় গলে গেলাম। হাত সরিয়ে দিলাম গা থেকে। ওর চোখে ক্যামোন যেনো দৃষ্টি।
বললো আমার কাছে আরবি পড়তে চায়। আমারও আপত্তি করার কারণ নেই। আরবী ভাষাটার চর্চা হওয়া প্রয়োজন।
বললাম এই তোমার কথা? ঠিক আছে আগামী কাল বিকেলে এসো।
আমাকে হুজুরের মতো করে আরবি পড়াতে হবে।
ঠিক আছে হুজুরের মতো করেই আরবি পড়াবো।
কথা দিলেন তো?
বললাম শপথের কর্মীরা যখন কথা দেয় তখন সেটার বরখেলাপ হয় না।
পরদিন বিকেলে ও আসলো আরবি পড়তে। আবরি পড়া বাদ দিয়ে বলে আলিফ দেখবো- নোক্তাওয়ালা আলিফ।
হুজুর না কি এভাবেই আরবি বর্ণমালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।
কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝলাম না, তবে ভালো লাগলো খুব। শরীরটা জুড়িয়ে গেলো।
তারপর থেকেই ও প্রতি দিন না হলেও সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন আসে আরবি পড়তে। আজও এসেছিলো।
মেজাজটা খুব চড়ে ছিলো, সামনে ইনকোর্স পরীক্ষা গত দুই মাসে একরত্তি পড়া হয় নি।
আজ আরবি পড়াতে পারবো না, নোক্তা খুলে যাচ্ছে।
ও বিষন্ন হয়ে তাকালো আমার দিকে। আমার ভেতরে ওলোটপালোট হয়ে গেলো। শালার ইনকোর্স কমপ্লিট করবো না ইন্টারকোর্স করবো?
-----------------------------
শরীরটা অবসন্ন, বললাম কিসের টিউশনি?
একটা মেয়েকে আরবি পড়াতে হবে। ও কয়েকদিন পরেই আমেরিকা চলে যাবে।
অবশ্য মেয়ে বিবাহিত। একটা ছেলেও আছে। নাম আব্দুল্লাহ।
মনে করছে আমেরিকা গেলে আর আরবি পড়া হবে না। এখানেই শিখে যেতে চায়।
ঠিক আছে সন্ধ্যায় যাবো দেখা করতে।
মেয়েকে আরবি পড়াবো ভাবতেই মনটা উৎফুল্ল হয়ে যায়। ঠিকমতো লুঙ্গিটা গুছিয়ে রকিবের দিকে তাকালাম। ও তখনও লুঙ্গি তুলেই শুয়ে আছে।
শালা এইরকম ছেতরে শুয়ে না থেকে ঠিকভাবে শোও।
রকিব আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ, তারপর কিছু না বলে চলে গেলো।
-------------------------------------------
সন্ধ্যায় যখন মেয়েটার বাসার দিকে যাচ্ছি তখনও রকিবের কান্নাভেজা চোখ মনে পড়ছে। তারপরও মেয়েটার বাসায় গেলাম। মেয়েটার শ্বশুর দরজা খুলে দিলো?
কাকে চাই?
নাহ আমি আরবি পড়াতে আসছিলাম।
ও বাবা বসো।
আমি ড্রইং রুমে বসে থাকলাম, আব্দুল্লাহ আসলো। ফুটফুটে ছেলে। কোন ক্লাশে পড় তুমি বাবু?
স্ট্যান্ডার্ড ওয়ান।
তোমার বন্ধু আছে?
অনেক।
বান্ধবী আছে?
নাহ আমাদের সাথে কোনো মেয়েরা পড়ে না।
কিছুটা দমে গেলাম।
একটু পরেই আব্দুল্লাহ মা আসলো, স্যার আপনাকে আমি কিন্তু আপনি বলতে পারবো না, তুমি করে বলবো। আপনি বোধ হয় বয়েসে আমার চেয়ে ছোটোই হবেন।
কি যে বলেন না, অবশ্যই তুমি করে বলবেন।
আপনি কখন শুরু করতে পারবেন?
আপনি চাইলে আজকেই।
ঠিক আছে আমি আসতেছি, আপনি বসেন।
আমি কিছুটা দমে গেলাম।
বললাম আপনি এখানেই আরবি পড়বেন? সবার সামনে?
কেনো? আপনার আপত্তি আছে? তাহলে আপনি স্টাডি রুমে চলেন, সেখানে নিরিবিলি আছে।
ঠিক আছে চলেন। আমি তাকে অনুসরণ করলাম।
স্টাডিতে বসেই মেয়েটি কোরান হাতে নিয়ে বললো একেবারে বাকারা থেকেই শুরু করি।
সুরা ফাতিহা উচ্চারণ করে পড়লো মেয়েটি। এমনিতে তার উচ্চারণ খারাপ না, চমৎকার কণ্ঠে ৌললিত কোরানের বানী শুনেই ভালো লাগলো না। মন বিক্ষিপ্ত থাকলে কোকিলের ডাকও কাকের মতো কর্কশ শোনায় কথাটা শুনেছিলাম আগে, তবে এমনভাবে উপলব্ধি করি নি কখনই।
বুকের ভেতরে সবকিছু ভেঙে ধ্বসে গেলো।
মেয়েটা সত্যি সত্যিই আরবি পড়তে ডেকেছিলো আমাকে।
একঘন্টা কোনো মতে কাটিয়ে ফিরে আসলাম হোস্টেলে।
ঘরের সামনে অন্ধকারে রকিব দাঁড়িয়ে আছে। ওর চেহারা অন্ধকার। বিকলের ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত হলাম।
ওকে বুকে টেনে নিলাম। অবশ্য এমন কোলাকুলি হরহামেশাই প্রকাশ্যে করা যায়। ছেলে ছেলে আলিঙ্গনে তেমন দোষণীয় কিছু নেই।
পরদিন সকালে দেখা করলাম শপথের কর্মী হলসভাপতির সাথে। তাকে বললাম একটা টিউশনি করাতে হবে ভাইয়া।
কালকে গিয়েছিলাম ঐ বাসায়।
কোন বাসায় বলো তো।
নাম বললাম, সভাপতি ভাই একনামেই চিনলো। ও ঐ বাসায় যেই মহিলা কোরাণ পড়া শিখতে চায়?
আপনিও চিনেন?
আর বোলো না ভাই, আমিও একদিন গিয়েছিলাম, ওই মহিলা আরবি শিখতে চায় না, সত্যি সত্যিই কোরান পরতে চায়।
আমিও আজকে গিয়েছিলাম।
আমার কাছেও কোরান শিখতে চাইলো।
তুমি কি সিদ্ধান্ত নিলে?
ভাইয়া আমারও পড়ানোর আগ্রহ নেই।
ঠিকই সিদ্ধান্ত নিয়েছো। শপথের কর্মীদের সংবিধানে শুধু বালেগ মেয়েদের আরবি পড়ানোর অনুমোদন আছে। যারা কোরাণ পড়তে চায় তাদের নির্জনে কোরান পড়ানোর অনুমোদন নেই শপথের কর্মীদের।
আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মনটা কিছুটা খারাপ হলো, এমনিতে পরিস্কার দেখতে পাই নি বোর্খার আড়াল ছিলো, তবে যতটুকু বুঝলাম, কড়া মাল। কিন্তু কোনো লাভ নেই আরবি পড়বে না। বাধ্য হয়েই মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিতে হলো।
অবশ্য ক্ষতি নেই, আসবার সময় নীলক্ষেতের চিপা থেকে জটিল জিনিষ নিয়ে এসেছি, আজ ইনকোর্স বাদ দিয়ে শুধু ইন্টারকোর্সই দেখবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।