যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
ঝাঁ চকচকে জাঁক জেল্লা জবড়জং শহরে
সর্পিল একে বেঁকে হাঁস হয়ে চলা পিংক ক্যাডিলাক
ফুলেল মৌতাতে ভরা আগাম বসন্তমাখা
আদুরে ঠোঁটে গাঢ় করে মাখা আভিজাত্যের রং .....
এসবের পাশে সময়ের ফেরে হেঁটে চলেছে সেই কালো মেয়েটি।
হাতে তার পাংশুটে যৌবন
বহু ব্যবহারে ক্ষয়ে যাওয়া মলিন ঠোঁট,
বৈরি সময়ের আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত শরীর
তবুও বিকিকিনির হাটে আজও ভরসা দেয়,
কালান্তরের খিদে হয়ত মিটবে কেউ ডাক দিলে......
সামান্য এই আশাটুকু নিয়ে হেঁটে চলেছে সেই কালো মেয়েটি।
চোট পাওয়া কুকুর,ডানাভাঙ্গা কাক
ফেলে দেওয়া বেড়াল ছানা,আধ খাওয়া সিগারেট
মৃত ইঁদুরের কদাকার নাড়িভুঁড়ি
উধাও গ্রামের কুপিবাতি,শহুরে নিয়ন,
তাকে কুরে কুরে খাওয়া মানুষের দল,বেহদ্দ সময়ে
তবুও হেঁটে চলেছে সেই কালো মেয়েটি।
কবেকার শৈশব,বাড়ন্ত বালিকাবেলা
হারানো পুতুল খেলা,লাল পেড়ে খাট শাড়ির
বুনো বুনো গন্ধ,আলতা রাঙানো পায়ে
নুপূরের ছন্দ,ফেলে আসা হাড়িকুড়ি,
ভাঙ্গা চুড়ি,বাঁশের কুলপিতে জমানো পয়সা
সব তুলে রাখা বেজন্মা সময়ের সিন্দুকে....
সে সব পেছনে ফেলে কামার্ত পুরুষের সাথে
হেঁটে চলেছে সেই কালো মেয়েটি।
শীর্ণ শরীরে উন্মত্ত আঁচড়,জন্মান্তরের ভালবাসা
কষা বেয়ে রক্তনালি,দিগন্তজোড়া বজ্রপাত, আদিম টর্ণেডো।
গলা বেয়ে রক্ত নামা আর ভাত নামার মধ্যিখানে
কি আছে কেউ জানে না।জানে শুধু মেয়েটি,
সেই কালো মেয়েটি,কাল যার খদ্দের জোটেনি,
হাড়ি চড়েনি,পাখি ডাকেনি,রোদ ওঠেনি,হাওয়া আসেনি.....
আজ তাই সয়ে চলেছে সভ্যতার আদর, নাগরিক ভালবাসা!
দুধসাদা নিয়ন আলোয় সেই কালো মেয়েটি।
ওই যে লৌহ তোরণের পেছনে,দেয়াল ঘেসে দাঁড়ানো
দুপাশে যে বদ্ধ দালান,ওই যে সোজা তার কাছে হেঁটে যাওয়া পথ।
ওখানে ঠাঁয় দাঁড়ানো সেই মেয়েটি।কত হবে বয়স ?
পনের? কিংবা ষোল ? যখন পাঁচ কি ছয়, একদিন
কোন এক রাজপুত্তুর কাগজ-পেন্সিল হাতে দিয়েছিল,
আশ্চর্য্য এক ছবি এঁকেছিল,জগতের ভয়ংকরতম সুন্দর সে ছবি,
দুধসাদা নিয়ন আলোয় সেই কালো মেয়েটি
এঁকেছিল একটি ঘরের ছবি,যা তার নাই,ছিল না কোনও কালে.....
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।