হুদা সাহেবের ছোট ছেলে মাঝে মাঝে এমন সব শব্দ উচ্চারণ করে যার আগা মাথা কোনটাই আসলে হুদা সাহেব বুঝতে পারেন না। আজকালকার ছেলে মেয়েরা একটু বেয়াদপই হয় জানতেন তবে এমন উচ্চমর্গীয় আঁতেল হয় এই ব্যপারটা ইদানিং হুদা সাহেব উপলদ্ধি করতে পারছেন।
আজ সকালে হুদা সাহেব ছোট মেয়ের একটা অংক কষে দিতে বসেই বুঝতে পারলেন আজ তার খবরই আছে। অনেক চেষ্টা করেও যখন অংকটার সমাধান দিতে পারলেন না তখন অযথাই বউয়ের সাথে ক্যাচাল লাগিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন। গলির মুখে আসতেই ছোট ছেলে নান্টুর গলার আওয়াজ।
বন্ধুদের সাথে কথা বলছে সে।
- নয়ন জটিল একটা ছবি দেখলামরে দোস্ত কাল রাতে।
- তাই নাকি? নামটা বল আমিও দেখবো। কঠিন হবে।
হুদা সাহেবের মেজাজ চরমে উঠতে আর বাকি রইলোনা।
এমনিতেই সকাল সকাল জটিল বল আর কঠিনই বল তবে অবশ্যই সরল নয় এমন একটা অংক কষতে গিয়ে ইজ্জত যায় যায় অবস্থা। মাথার থেকে চিন্তাটা বাদ দিবে সে তার মধ্যে বাসা থেকে বের হয়েই বেয়াদবগুলোর মুখে জটিল আর কঠিন কথা শুনে অংকটার কথা মনে পড়ে গেলো। কিন্তু নান্টু জটিল ছবি দেখেছে এটা ভাবতেই হুদা সাহেব সব কিছু গুলিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। ছবিটা জটিল, মানে আগামাথা কিছুই বোঝা যায়নি। তা আবার বন্ধুর কাছে কেন বলতে হবে? বজ্জাত কোথাকার।
নয়নও কম যায়না। সে আরো কঠিন করে ছবিটা দেখতে চায়। তার মানে কি?
না না হুদা সাহেবের এখন এক কাপ গরম চা লাগবে। তা নাহলে মাথাটা পরিস্কার হবেনা। হুদা সাহেব রাস্তার উপারে মানিক মিয়ার টং বরাবর হাটা শুরু করলেন।
ইদানিং মানিক মিয়াও কিভাবে যেন তাকায়। মুখে বলতে না পারলেও হুদা সাহেব বুঝতে পারেন হুদা সাহেবকে মানিক মিয়া তেমন একটা পছন্দ করতে পারছে না। আজ মানিককে জিজ্ঞেস করবেন কি কারনে তাকে পছন্দ নয় মানিকের।
- "কি মানিক মিয়া, কেমন আছো"। হুদা সাহেব টুলটা টেনে বসলেন।
- "চা দিমু?" মানিক হুদা সাহেবের প্রশ্নের ধারেকাছে দিয়েই গেলো না।
- "দাও, তবে একটা কথা বলবা?" মানিক একটু তাকালো হুদা সাহেবের দিকে, "মানে বলতে চাইছি ইদানিং তোমার আচরনটা আমার কাছে কেমন যেন লাগছে। আমার আসাটা বুঝি পছন্দ নয় তোমার?"
- "দেখেন আপনি মুরুব্বি মানুষ। কি বলমু। পোলাপান আপনারে দেখলে এইদিকে আসতে চায়না।
ওরা যোদি না আসে তাইলে কাষ্টমার পামু কই?"
- "কেন আমরা বুইড়ারা কি তোমার কাষ্টমার না?
- "হ তয় আপনারা খান কম পেচাল পারেন বেশি। " মানিক চায়ের কাপটা এগিয়ে দিল, "এহন চা টা শেষ কইরা একটু মাফ করেন। "
হুদা সাহেব কি বলবেন। চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই বড় করে একটা চুমুক দিলেন। জ্বিহ্বাটা পুড়তে আর সময় লাগলো না।
ওয়াক থু করে মুখের চা টা মাটিতে ফেলেই চায়ের দাম চুকিয়ে দিলেন। কিন্তু ওঠে গেলেন না। এমন সময় কলেজ পড়ুয়া রাজু এসে হাজির। হুদা সাহেবকে দেখেই আড়ালে দাড়ালো সে। শুনিয়ে শুনিয়েই মানিকের কাছে সিগারেট চাইলো সে।
- "মানিক, বিড়ি দে। সবাই পেইন খাওয়াইতেছে। কই যামু কুল পাইনা। "
হুদা সাহেব বুঝলেন না পেইন কি ভাবে খাওয়া যায়। ছোট বেলায় পেইনের বাংলা অর্থ না বলতে পারায় স্কুলের স্যার বেত আর পাছা এক করে দিতে দিতে জানতে চেয়েছিলো,
- "এখন কেমন লাগতেছে।
" বলেই আরেকটা বারি দিয়েছিলেন স্যার।
- "ব্যাথা স্যার"।
- "আর এইটাই হইল পেইনের মানে, বুঝছস?"
- "হ স্যার। "
পেইন কিলার খান মাঝে মাঝে কিন্তু পেইন কি করে খায় তা মাথায় ঢুকলো না। ভাবলেন রাজুর কাছে জেনে নিলেই হয়।
কিন্তু ওতো বিড়ি ফুকছে। এখন এখানে থাকাটাই বোকামি। হুদা সাহেব উঠে চলে এলেন মানিকের টং ছেড়ে।
বাসায় এলেন। সোজা রান্না ঘরে গিয়ে বৌয়ের কাছে দাড়ালেন তিনি।
বৌ মানে নুরুন নাহার বেশ দেমাগ দেখিয়ে একটা ঝাটকা মারলো হুদার সাহেবকে।
- "এমন করো কেন। আমিতো তোমার সাথে সকাল সকাল একটু মস্করা করলাম। " হুদা সাহেব সকালের ঘটনাটাকে ঠান্ডা করতে চেষ্টা করলেন।
- "কিছু বলবা? না বললে ভাগো।
কাজ করতে দাও। "
- "খালি বল পেইন কি ভাবে খায় মানুষ। আমিতো জানি পেইন দেয়া যায়। "
- "কিভাবে পেইন খায়? কি ভাবে?"
- "হ্যা। "
নুরুন নাহার চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,
- "রাত হোক দেখাবো কি ভাবে পেইন খাওয়া যায়, এখন ভাগো।
"
হুদা সাহেব কিছুই বুঝলেন না। তবে এর উত্তর জানতে তাকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ..........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।