আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহ আবদুল হান্নান সত্তরে পদার্পণ ---- ওমর বিশ্বাস



কিছু কিছু মানুষ জগতে জন্মে তারা এক সময় আর নিজের থাকে না। তারা হয়ে ওঠে ব্যক্তি পরিবারের অনেক উর্ধ্বে। তাদের সকল কাজ, চিন্তাচেতনা, ধ্যান-জ্ঞান সব কিছুই তখন নিজস্বতাকে ছাড়িয়ে এমন এক স্তরে উপনীত হয় যা সত্যি সবার ভাগ্যে আসে না। এরকম একজন ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব শাহ আবদুল হান্নান। ১৯৩৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ শহরে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তিনি আজ সত্তরে পা দিলেন। তিনি একজন মানবতাবাদী বুদ্ধিজীবী, একজন আদর্শবাদী, সৎ ও দেশপ্রেমিক মানুষ। এদেশের একজন অতি পরিচিত ব্যক্তিত্ব, চিন্তাবিদ এবং একজন দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী সাবেক সচিব হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত। সারা জীবন কাজের মধ্যে ডুবে থাকা এই মানুষ এখনও নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এদেশ, দেশের ভবিষ্যৎ, দেশের ভৌগলিক নিরাপত্তা, স্থিতি ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে তিনি সব সময় পজেটিভ ভূমিকা রেখেছেন এপর্যন্ত।

যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই নতুন কিছু করেছেন। পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই তিনি নিজেকে সব সময় যুগের উপযোগী করে প্রস্তুত রাখতেই পছন্দ করেন। প্রশাসনিক কাজে তার খ্যাতি ও সততা এখন পর্যন্ত উজ্জল হয়ে আছে। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার সময় তার যে ভূমিকা ছিল তা চোখে পড়ার মতো। অধুনালুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এর প্রবর্তক হিসেবে - সবখানেই তিনি আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন।

বর্তমানে তিনি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক, শিক্ষা সহ বহু প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন। তারপরও তিনি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক কাজে সময় দেন। তিনি অসম্ভব মানবিক গুণে গুণান্বিত। অত্যন্ত সাদাসিধে ও ব্যস্ত এই মানুষটিকে সাধারণত রাগতে দেখা যায় না। তবে মানুষের প্রতি মানুষের শোষণ, জুলুম, নিপীড়িন সেটা দেশীয় অঙ্গনে হোক আর বিশ্বাঙ্গনের যেখানেই হোক তাকে পীড়িত করে।

তিনি মানবতার জন্য কাজ করেন, নারীদের একজন প্রকৃত বন্ধু হিসেবেও কাজ করেন। তাকে বিচলিত থাকতে দেখা যায় দেশ, মানুষ, ইসলাম নিয়ে। বিশ্বব্যাপী মূলবোধের অবক্ষয়, সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসন, অন্যায় যুদ্ধ তার অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করে। তিনি সব সময় এসব বিষয় থেকে কিভাবে মানবতার মুক্তি সম্ভব সেসব নিয়ে চিন্তা করেন ও সে আলোকে যথোপযুক্ত কাজ করার চেষ্টাই করেন। তাকে কিভাবে মানবতার উন্নয়ন সম্ভব, দেশ-সমাজের উন্নয়ন সম্ভব তা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যর ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে তাকে নিরলস ভাবে কাজ করতে দেখা যায়। যখনই সময় ও সুযোগ পাচ্ছেন তিনি মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছেন। পড়াশুনার কথা বলছেন। কিভাবে দাওয়াহর কাজ করা যায় সেই উপদেশ দিচ্ছেন। ইসলামকে সঠিক ভাবে কি করে সব মানুষের কাছে উপস্থাপন করা যায়, ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি গুলো দূর করা যায়, মানুষকে তৌহিদের উপর প্রতিষ্ঠিত করা যায় - এই চিন্তায় তিনি সবসময় করেন এবং কেউ না করলেও নিজেই তার দায়িত্ব নিয়ে নেন এবং সাধ্যমতো প্রচেষ্টা চালান।

প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে তাকে সতর্ক দেখা যায়। তরুণদের ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিকে ক্লাসের ব্যবস্থা করেন। দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর ধরে তিনি এই কাজের মাধম্যে যে সকল ছাত্র-ছাত্রীকে গড়ে তুলেছেন তারা আজ বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ছড়িয়ে আছে। অসংখ্য মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের দরজা তিনি খুলতে সাহায্য করেছেন। রাজনীতিবীদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, আমলা যাকেই সামনে পান সুযোগ পেলে তাকে কোনো না কোনো পরামর্শ ক্ষণিক সময়ের মধ্যেই দিয়ে দেন।

এর মধ্যে তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখে থাকেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন। এখনও আছেন। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে ইসলাম (১৯৭৬), ইসলামের অর্থনীতিতে সরকারের ভূমিকা (১৯৮৫), নারী সমস্যা ও ইসলাম (১৯৮৮), Social Laws of Islam (1995), Usul-al-Fiqh (2000), ইসলামী অর্থনীতিঃ দর্শন ও কর্মকৌশল (২০০২), নারী ও বাস্তবতা (২০০২), দেশ সমাজ ও রাজনীতি (২০০৩), Law Economics History (২০০৩), বিষয়চিন্তা (২০০৪), বিশ্ব পরিস্থিতি অর্থনীতি ও ইসলাম বিষয়ক বিশ্লেষণ (২০০৬) অন্যতম। সম্প্রতি বেরিয়েছে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার কাল আমার চিন্তা’।

এছাড়াও তিনি প্রতিদিনই নিয়মিত ভাবে ইন্টারনেটে প্রচুর সময় দেন। মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে তিনি প্রথম সারির একজন। তিনি মানুষকে বদলে দিতে জানেন। যারাই তার সংস্পর্শে এসেছে তারাই স্বীকার করতে বাধ্য যে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের অন্তরকে জয় করতে পারেন। সবাইকে স্বপ্নও দেখাতে পারেন তিনি।

কাউকে তিনি শত্রু বলে মনে করেন না। মানবতার জন্য তিনি অকৃত্রিম ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার কাছে ছোট বড় কোনো ভেদাভেদ করতে দেখিনি। কারোর যোগ্যতার সন্ধান পেলে তাকে আরো উৎসাহিত করেন, সাহস দেন, আন্তুরিকতার সাথে তাকে পরামর্শ দেন। তিনি এখনো যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর।

তাকে প্রায় ১৮ ঘন্টা কাজ করতে দেখা যায়। তবু একটা অতৃপ্তি তার ভিতর কাজ করে যে, আরো কাজ বাকি এবং সবাই যদি এভাবে কাজ করতো তাহলে সমাজ পরিবর্তন কতই না সহজ হতো। তার সামগ্রিক কাজ, কাজের প্রতি আন্তরিকতা, একাগ্রতা লক্ষ্য করলে দেখা যায় তার কাজ তার পরিশ্রমের মূল্যায়নে তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায় সহজে। জটিল বিষয়কে তিনি সহজ করতে পারেন। আপাত অসম্ভব বলে মনে হলেও তার সাথে আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে যে কোনো বিষয়ে সহজ অথচ গুরুত্বপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো যায়।

চিন্তাচেতনা, মনমানসিকতা, জ্ঞান আর প্রজ্ঞায় তিনি যে ধরনের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তা দৃষ্টান্তমূলক। অনুকরণীয়। তার ব্যক্তি প্রতিভা তাকে আলোকিত করেছে। তিনি হয়ত স্বীকার করবেন কি না জানি না তবে ব্যক্তি, কর্ম, চিন্তাচেতনা, মনন বিশ্লেষণ করলে তিনি বর্তমান যুগে একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেই তার দায়িত্ব পালন করছেন, একথা বলা যায়। তিনি আজ জাতির শিক্ষক হিসেবে জাতি গঠনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলছেন।

তিনি অনেকটা নীরবেই বলা চলে জ্ঞানের আলো বিতরণ করে যাচ্ছেন। তার সম্পর্কে তার আম্মা কবি আনোয়ারা মান্নানের একটি মন্তব্য, “ছোটবেলার হান্নান আর এখনকার সময়ের হান্নান দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। বর্তমানে সে খুব শান্ত প্রকৃতির, স্বভাবে হয়েছে শান্ত। অনেক কাজ করে। ··· আমার কাছে তার কোনো তুলনা দেখি না।

” সত্যি তিনি এখন অতুলনীয়। তিনি আজ প্রজন্মের কাছে সবার শ্রদ্ধেয় ‘চাচা’ হিসেবে বটবৃক্ষের মতো। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় তার প্রতি রইল ফুলেল শুভেচ্ছা। ২১·০৯·২০০৮ ওমর বিশ্বাসঃ কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদকঃ চাঁড়ুলিয়া। ইমেলঃ



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।