আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক যে ছিল ব্যাংকার!

বন্ধুত্বের আহবান... সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতেই মনটা খারাপ হলে গেল – সাত সকালে কে যেন নাম ধরে জোরে জোরে ডাকছে। মেজাজটা একটানা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে যত না খারাপ হয় তার চেয়ে বেশি খারাপ হয়ে গেল। কোন মতে মুখে পানির কয়েকটা ঝাপটা দিয়ে গেলাম গেট খুলতে। ঘটক ব্যাটা দাড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে। তার হাসি হাসি মুখ দেখে আমার অন্তর আরও শুকিয়ে গেল- বুঝলাম আজকের ছুটিটা পুরা শেষ ! কোন কিছু বুঝার আগে ঘটক বলে উঠল- আপনার বায়োডাটাটা এক্ষুনই নিয়ে আসেন তো।

‘কেন কোন ভাল চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে হবে নাকি?’ -ভাইজান আমি কি কাজ করি আপনি তো জানেনই, তাহলে কেন শুধু শুধু.... -বিয়ে করতে আবার বায়োডাটা কেন? -মেয়ে খুবই সুন্দরী একেবারে পরী -কি পরী- নীল বা লাল ? -আপনার না সবকিছুতেই ফাজলামী! - কেন কি ফাজলামী করলাম? - এই যে জানতে চাচ্ছেন লাল না নীল পরী ...এটা কি? - কেন আপনিই না বললেন ...একে বারে পরী....তাই তো.... -হইছে রাখেন.. -মেয়ের ডিটেলস্ বলেন! -আরে ভাই সেজন্যই তো আপনার বায়োডাটা চাচ্ছি! -মানে? -মানে আপনার টা না হলে তাদেরটা পাওয়া যাবে না.... -হ! -যান আপনার বায়োডাটাটা নিয়ে আসেন। -আচ্ছা আমিও যদি তাদের মত গো ধরি যে....তাদেরটা না পেলে আমারটা দেব না....তাহলে কি হবে বলেন তো? দেখলাম ঘটক বাবাজি রাগতে রাগতে একেবারে চুড়ান্ত পযার্য় পৌচ্ছে গেছে ....এই ফাটল বুঝি! একেবারে চিৎকার করে উঠলেন- আরে মিয়া যদি বিয়ে করতে চান তো বলেন না হলে কেটে পরি...খামোখা সময় নষ্ট করে লাভ আছে। দেখলাম ঘটকে আর ক্ষেপিয়ে কাজ নেই তাই আর কথা না বাড়িয়ে বাসা হতে বায়োডাটাটি এনে দিলাম। কি যে দিনকাল পড়েছে - বিয়ে করতেও আজকাল বায়োডাটা লাগে? সে যাকগে ঘটক বাবাজিকে তাড়াতাড়ি বিদায় করা গেছে তাই ভাল। ।

এখন সকাল বেলার কাচা ঘুমটা আরেকটু ঝালিয়ে নেয়া যাক। ------------------------------------------------------------------ -তাজুল ইসলাম! আ পনার বায়োডাটায় দেখছি আপনি এখন মাস্টার্স করেনি? কেন? -স্যার সরকার তো চার বছর মেয়াদী অনার্সকে মাস্টার্সের সমমান দিয়েছে.. -সমমান দিলেই হবে...আমার বেটি মাস্টার্স পাস আর আপনি শুধু অনার্স পাস....কি করে আপ নি এই দুঃসাহস দেখালেন? -স্যার আমার কোন দোষ নেই সব দোষ ঔ ঘটক বাবাজির... -খামোশ! বল তোকে এত বড় অপরাধের কি শাস্তি দেব? আমার যে ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমাকে ধরে খুব জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলেন ---বল বল বল! ------------------------------------------------------------------- গেল ঘুমটা ভাঙ্গে! দেখি রূমমেট ডাকছে এই তাজুল! উঠ চল চল ...উঠ। -হ্যা হ্যা...ভূল হয়ে গেছে স্যার...এবারকার মত মাপ করে দেন.....আর কক্ষন হবে না স্যার! ধরমর করে বিছানা থেকে উঠে বসলাম। -কি কি হয়ছে? এমন করছিলি কেন?......আর কি ভূল করেছিস যে তোকে মাফ চাইতে হবে....? বুঝতে পারলাম স্বপ্ন দেখছিলাম। -না একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম তো তাই।

- সে যাক গিয়ে! নে জলদি রেড়ি হয়ে নে। অফিস যেতে হবে না? -হ! গোসল-খাওয়া সারতে সারতে ব্যাংকে যেতে যেতে একটু দেরীই হয়ে গেল। অফিস ঢুকতেই আক্তার সাহেবের সাথে দেখা- কি তাজুল সাহেব দেরী কেন? -এই একটু হয়ে গেল আরকি! -দেরি যে হয়েছে তা তো বুঝতেই পারছি..কিন্তু কারন? -(কারন তো কইতে হবে বেটা!) কারন টা একটু দেরী করেই ম্যানেজার কে বলি কেমন? -বুঝলাম ব্যাটার আতে ঘা লাগছে। লাগুক! একটু আধটু না লাগলে বেটা ঘাড়ে চপে বসবে। ব্যাংক শুরু হয় ১০.০০ টায় আসছি ৯.৫০ তাও হয় না! বেটা সারাদিন কাজ না করে বসে বসে থাকে আর এর অর খুত খুজে বের করে।

সব অফিসেই একজন দুইজন ঘাড়ত্যাড়া টাইপের লোক থাকবেই কি আর করা। নিজ টেবিল বসতে না বসতেই কাজের চাপ শুরু হয়ে গেল। ব্যাংকের চাকরীর এই এক ঝামেলা-গ্রাহক সামলাতেই হিমসিম খেতে হয় তার উপর আবার উপর ওয়ালার চাপ - মাথা খারাপ অবস্থা। আর গ্রাহকরাও একেকটা এক চিস। একবার তো এক মালদার বিনিয়োগ গ্রাহককে নিজের চেক নিজেকে লিখতে বলায় সে যে আমাকে উত্তর দেয় তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম! -স্যার আপনে জানেন না আমি লিখা পড়া শিকি নাই! -কি করে জানব! সেটা যে আমাদের সিলেবাসে ছিল না! -তাইনি? -হ! (পড়া শোনা শিখ নাই তো কি শিখছ সোনাচাঁদ, ব্যাংকে এসে বাদাম চিবুনো?) আরেক দিন তো এক বয়স্ক মহিলাকে তার স্বামীর নাম জিজ্ঞাসা করতেই একবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন, -জানেন না কোন অবিবাহিত মহিলাকে তার স্বামী নয় বাবার নাম জিজ্ঞাসা করতে হয়।

(আমার তো মহিলাকে আরেকটু রাগিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল-জিজ্ঞাসার করতে ইচ্ছা করছিল স্বামীর নাম না বলেন অনন্ত ছেলে মেয়ে কয়টা তা তো বলুন) আমি তো দেখি অবস্থা বেগতিক! তাই অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে বললাম -আসলে আপনার মত সুন্দরীর যোগ্য স্বামী পেতে যে একটু দেরিই হবে তা আমার মত অধম বুঝবে কি করে বলুন? আরেকদিন আরেকজন গ্রাহককে স্ত্রীর নাম জিজ্ঞাসা করতেই বিপত্তি -আরে মিয়া রাহেন! বাপের নাম কইছি, মায়েরও ভি নাম কইছি আবার বউরে নিয়া টানেন কিল্লাই! -বউয়ের নাম কইলে কি বউরে লইয়া মানুষ ভাগন দেয়নি? -বউয়ের নাম কবার পারুম না , চাইলে ট্যাহা দেন ছে নাই দেন। কি আর করা সরকার তো শুধু মায়ের নামই বাধ্যতামূলক করেছে। কবে যে আবার বউয়ের নামও বাধ্যতামূলক করে ফেলে! তখন না হয় বেটাকে জব্দ করা যাবে। যাই হোক সেদিনকার মত বেচারাকে বিনিয়োগ দিয়ে দেওয়া হল। পরে একদিন সেই লোক ব্যাংকে আসায় জিজ্ঞাসা করলাম -সেদিন তো স্ত্রীর নাম বললেন না ...আজ না হয় ছেলে মেয়ে কয়জন সেটা বলেন।

-দূর মিয়া! আপনে মানুষটা আসলেই সুবিধার না... -কেন? -আমি কি বিয়া করছিনি, যে পোলা মাইয়া থাকব..... আমার তো আক্কেল গুড়ুম। যাই হোক আজ আবার হাবিব ভাই না আসায় এ্যাকাউন্ট ওপেনিং ডেক্সে বসতে হল। মোটামুটি সকাল সকাল বেশ কয়েকটি এ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেল। তবে আসল ভীড় শুরু হল ঠিক যোহরের নামাজের আগে আগে। আর ঠিক সেই সময় পকেটের মোবাইলটা বেজে উঠল।

স্ক্রীনে দেখি ঘটক বাবাজির নাম ভেসে উঠেছে। একবার মনে করলাম ধরব না। কিন্তু পরীর বাবা বা মামা-চাচা কাউকে নিয়ে সোজা ব্যাংকে হাজির হয় নাকি সেই ভয়ে কল রিসিভ করলাম। -হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। -ফা ফা ফাজলামির একটা সীমা থাকা উচিৎ..... -কেন কি ফাজলামি করলাম আবার? -আপনা কি বিয়ে সাদী করার ইচ্ছা আছে কি নাই? -আরে আছে বলেই তো আমার বায়োডাটাটা দিলাম- নাকি? -বায়োডাটার মধ্যে বৈবাহিক অব্স্থা - 'বিবাহিত' লিখছেন কেন? -তাই? (বেশ একটু বোকা সাজতে চাইলাম) -তাই? আর একদিকে মেয়ে বাবা আমাকে পারলে তখনই পুলিশে দেয় আরকি! -কেন আইনে তো দুইটা বিয়ে বৈধ.... -আবার আপনি ফাজলামি শুরু করলেন.....রাখেন! আপনার মেয়ে আপনি নিজে দেখন আমাকে আর বিরক্ত কইরেন না! বুঝলাম ঘটক মিয়া কাইটা পড়ছে।

যাক বাঁচা গেল....আসলে কম্পিউটারে টাইপ করার সময় ভূল করে m arried এর পূর্বে Un কথাটি লিখতে ভূলে গেছি। এই ভূল যে সাপে বর হবে তা কে জানত! বিকালের দিকে ভীড় একটু কম হল। এ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরম গুলো একটু গোছগাছ করছিলাম হঠাৎ দেখি সামনে এক পরীর উদয়! -জি বলুন! -একটা এ্যাকাউন্ট খুলব! -বসুন! বসতেই একটি ফরম ধরিয়ে দিয়ে বললাম- পূরণ করুণ। পরী দেখলাম বেশ চটচটি। খুব দ্রুত ফরম পূরণ করে ফেলল! নাম দেখলাম-সমাপ্তি বেগম, পিতা সিরাজুল হক মাতা রজিফা বেগম ঠিকানা.....।

স্বামীর নামের ঘরের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালাম দেখি -ফাকা! তারপরও স্বামীর নাম জিজ্ঞাসা করতে সাহস পেলাম না। কিন্তু মোবাইল নম্বরটা নিতে ভূল করলাম না। যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য আমার নম্বরটাও দিতে ভূল করলাম। ব্যাংকারদের আসার সময় আছে কিন্তু যাওয়ার সময় নেই। তবু আজ কেমন কেমন করে যেন দ্রুত হিসাব মিলে গেল...তাড়াতাড়ি বাসা গিয়ে সোজা বিছানা গেলাম।

পেপারটা নিয়ে একটু নাড়া চাড়া করছি কিন্তু মনে কেন যেন সেই পরীর ছবি ভেসে উঠছে। মোবাইলটা হাতে নিতেই মোবাইল নম্বরটা মনে পড়ে গেল। যদি আমি একটু আধটু বেয়াড়া টাইপের তবুও কখনও মেয়েদের সাথে মোবাইলে কথা বলার অভিজ্ঞতা নেই। চিন্তা করলাম সেই অভিজ্ঞতা নেবার আজ সুবর্ণ সুযোগ, এই সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই উচিৎ হবে না। -হ্যালো! সমাপ্তি বেগম বলছেন! -জি বলছি....কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে.... -আমি তাজুল ইসলাম..ঐযে আজ ব্যাংকে.... -ও! এইবার চিনতে পেরেছি......জি বলুন... -আসলে কি বলব বুঝতে পারছি না.... -ঠিক আছে তাহলে ফোন রেখে দিই কেমন...? -না মানে..।

-না মানে...কি? -আচ্ছা আপনার নাম তো সমাপ্তি আপনি কি আমাকে একটা বিষয়ের সমাপ্তি টানতে সাহায্য করবেন? -কি সেটা বলুন...। সাহায্য করার মত হলে অবশ্যই করব কেন করব না? -আমার ব্যাচেলর জীবন! -মানে? -মানে বুঝলেন না? -না! -মানে আপনি কি সমাপ্তি বেগম হতে সমাপ্তি ইসলাম হতে রাজি আছেন? -আমি তো আছি কিন্তু আপনি কি জানেন আমার মা-বাবা কেন সমাপ্তি রেখেছে? -জানতে চান না? -না! -জানার পর আবার মত পাল্টাবেন না তো! - আচ্ছা বলুন তাহলে! -আমার আগে আমার তের ভাই বোন জন্ম নেয়, আমি হবার পর বাবা মা সিদ্ধান্ত নেন যে আর না!....তাই বুঝতেই পারছেন আমাকে বিয়ে করলে আপনার ব্যাংকের সব টাকা আমার ভাইবোনদের পেছনেই চলে যাবে! এখন বলুন আপনা আগের সিদ্ধান্ত-এ কি অটল আছেন? -না অটল নেই! -তাহলে? -তাহলে আবার কি? আগামী ঈদের ছুটিতে আমাদের বিয়ে হচ্ছে। -আমার পরিবারের এই অবস্থা জানার পরও....? -হ্যা তারপরও ! -কিন্তু কেন? -কারন টা সত্যিই জানা দরকার! -হ্যা! -কারন আমি জানি আপনি সত্যিই বলেননি! -কিভাবে বুঝলেন? -ব্যাংকাররা সব বুঝতে পারে। যার সংসারে এত জন সদস্য সে কখনও ব্যাংকে এসে এত টাকা দিয়ে এ্যাকাউন্ট খুলে না! -শুধু কি এই কারনেই আমাকে বিয়ে করতে চান? -না! -নাহ! ------------------------------------------------------------------ তারপর? পরীর সাথে মিলিয়া ব্যাংকার পাতিল সুখের সংসার! ঠসকালবেলা ঘুম থেকে উঠতেই মনটা খারাপ হলে গেল – সাত সকালে কে যেন নাম ধরে জোরে জোরে ডাকছে। মেজাজটা একটানা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে যত না খারাপ হয় তার চেয়ে বেশি খারাপ হয়ে গেল।

কোন মতে মুখে পানির কয়েকটা ঝাপটা দিয়ে গেলাম গেট খুলতে। ঘটক ব্যাটা দাড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে। তার হাসি হাসি মুখ দেখে আমার অন্তর আরও শুকিয়ে গেল- বুঝলাম আজকের ছুটিটা পুরা শেষ ! কোন কিছু বুঝার আগে ঘটক বলে উঠল- আপনার বায়োডাটাটা এক্ষুনই নিয়ে আসেন তো। ‘কেন কোন ভাল চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে হবে নাকি?’ -ভাইজান আমি কি কাজ করি আপনি তো জানেনই, তাহলে কেন শুধু শুধু.... -বিয়ে করতে আবার বায়োডাটা কেন? -মেয়ে খুবই সুন্দরী একেবারে পরী -কি পরী- নীল বা লাল ? -আপনার না সবকিছুতেই ফাজলামী! - কেন কি ফাজলামী করলাম? - এই যে জানতে চাচ্ছেন লাল না নীল পরী ...এটা কি? - কেন আপনিই না বললেন ...একে বারে পরী....তাই তো.... -হইছে রাখেন.. -মেয়ের ডিটেলস্ বলেন! -আরে ভাই সেজন্যই তো আপনার বায়োডাটা চাচ্ছি! -মানে? -মানে আপনার টা না হলে তাদেরটা পাওয়া যাবে না.... -হ! -যান আপনার বায়োডাটাটা নিয়ে আসেন। -আচ্ছা আমিও যদি তাদের মত গো ধরি যে....তাদেরটা না পেলে আমারটা দেব না....তাহলে কি হবে বলেন তো? দেখলাম ঘটক বাবাজি রাগতে রাগতে একেবারে চুড়ান্ত পযার্য় পৌচ্ছে গেছে ....এই ফাটল বুঝি! একেবারে চিৎকার করে উঠলেন- আরে মিয়া যদি বিয়ে করতে চান তো বলেন না হলে কেটে পরি...খামোখা সময় নষ্ট করে লাভ আছে।

দেখলাম ঘটকে আর ক্ষেপিয়ে কাজ নেই তাই আর কথা না বাড়িয়ে বাসা হতে বায়োডাটাটি এনে দিলাম। কি যে দিনকাল পড়েছে - বিয়ে করতেও আজকাল বায়োডাটা লাগে? সে যাকগে ঘটক বাবাজিকে তাড়াতাড়ি বিদায় করা গেছে তাই ভাল। । এখন সকাল বেলার কাচা ঘুমটা আরেকটু ঝালিয়ে নেয়া যাক। ------------------------------------------------------------------ -তাজুল ইসলাম! আ পনার বায়োডাটায় দেখছি আপনি এখন মাস্টার্স করেনি? কেন? -স্যার সরকার তো চার বছর মেয়াদী অনার্সকে মাস্টার্সের সমমান দিয়েছে.. -সমমান দিলেই হবে...আমার বেটি মাস্টার্স পাস আর আপনি শুধু অনার্স পাস....কি করে আপ নি এই দুঃসাহস দেখালেন? -স্যার আমার কোন দোষ নেই সব দোষ ঔ ঘটক বাবাজির... -খামোশ! বল তোকে এত বড় অপরাধের কি শাস্তি দেব? আমার যে ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমাকে ধরে খুব জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলেন ---বল বল বল! ------------------------------------------------------------------- গেল ঘুমটা ভাঙ্গে! দেখি রূমমেট ডাকছে এই তাজুল! উঠ চল চল ...উঠ।

-হ্যা হ্যা...ভূল হয়ে গেছে স্যার...এবারকার মত মাপ করে দেন.....আর কক্ষন হবে না স্যার! ধরমর করে বিছানা থেকে উঠে বসলাম। -কি কি হয়ছে? এমন করছিলি কেন?......আর কি ভূল করেছিস যে তোকে মাফ চাইতে হবে....? বুঝতে পারলাম স্বপ্ন দেখছিলাম। -না একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম তো তাই। - সে যাক গিয়ে! নে জলদি রেড়ি হয়ে নে। অফিস যেতে হবে না? -হ! গোসল-খাওয়া সারতে সারতে ব্যাংকে যেতে যেতে একটু দেরীই হয়ে গেল।

অফিস ঢুকতেই আক্তার সাহেবের সাথে দেখা- কি তাজুল সাহেব দেরী কেন? -এই একটু হয়ে গেল আরকি! -দেরি যে হয়েছে তা তো বুঝতেই পারছি..কিন্তু কারন? -(কারন তো কইতে হবে বেটা!) কারন টা একটু দেরী করেই ম্যানেজার কে বলি কেমন? -বুঝলাম ব্যাটার আতে ঘা লাগছে। লাগুক! একটু আধটু না লাগলে বেটা ঘাড়ে চপে বসবে। ব্যাংক শুরু হয় ১০.০০ টায় আসছি ৯.৫০ তাও হয় না! বেটা সারাদিন কাজ না করে বসে বসে থাকে আর এর অর খুত খুজে বের করে। সব অফিসেই একজন দুইজন ঘাড়ত্যাড়া টাইপের লোক থাকবেই কি আর করা। নিজ টেবিল বসতে না বসতেই কাজের চাপ শুরু হয়ে গেল।

ব্যাংকের চাকরীর এই এক ঝামেলা-গ্রাহক সামলাতেই হিমসিম খেতে হয় তার উপর আবার উপর ওয়ালার চাপ - মাথা খারাপ অবস্থা। আর গ্রাহকরাও একেকটা এক চিস। একবার তো এক মালদার বিনিয়োগ গ্রাহককে নিজের চেক নিজেকে লিখতে বলায় সে যে আমাকে উত্তর দেয় তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম! -স্যার আপনে জানেন না আমি লিখা পড়া শিকি নাই! -কি করে জানব! সেটা যে আমাদের সিলেবাসে ছিল না! -তাইনি? -হ! (পড়া শোনা শিখ নাই তো কি শিখছ সোনাচাঁদ, ব্যাংকে এসে বাদাম চিবুনো?) আরেক দিন তো এক বয়স্ক মহিলাকে তার স্বামীর নাম জিজ্ঞাসা করতেই একবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন, -জানেন না কোন অবিবাহিত মহিলাকে তার স্বামী নয় বাবার নাম জিজ্ঞাসা করতে হয়। (আমার তো মহিলাকে আরেকটু রাগিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল-জিজ্ঞাসার করতে ইচ্ছা করছিল স্বামীর নাম না বলেন অনন্ত ছেলে মেয়ে কয়টা তা তো বলুন) আমি তো দেখি অবস্থা বেগতিক! তাই অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে বললাম -আসলে আপনার মত সুন্দরীর যোগ্য স্বামী পেতে যে একটু দেরিই হবে তা আমার মত অধম বুঝবে কি করে বলুন? আরেকদিন আরেকজন গ্রাহককে স্ত্রীর নাম জিজ্ঞাসা করতেই বিপত্তি -আরে মিয়া রাহেন! বাপের নাম কইছি, মায়েরও ভি নাম কইছি আবার বউরে নিয়া টানেন কিল্লাই! -বউয়ের নাম কইলে কি বউরে লইয়া মানুষ ভাগন দেয়নি? -বউয়ের নাম কবার পারুম না , চাইলে ট্যাহা দেন ছে নাই দেন। কি আর করা সরকার তো শুধু মায়ের নামই বাধ্যতামূলক করেছে।

কবে যে আবার বউয়ের নামও বাধ্যতামূলক করে ফেলে! তখন না হয় বেটাকে জব্দ করা যাবে। যাই হোক সেদিনকার মত বেচারাকে বিনিয়োগ দিয়ে দেওয়া হল। পরে একদিন সেই লোক ব্যাংকে আসায় জিজ্ঞাসা করলাম -সেদিন তো স্ত্রীর নাম বললেন না ...আজ না হয় ছেলে মেয়ে কয়জন সেটা বলেন। -দূর মিয়া! আপনে মানুষটা আসলেই সুবিধার না... -কেন? -আমি কি বিয়া করছিনি, যে পোলা মাইয়া থাকব..... আমার তো আক্কেল গুড়ুম। যাই হোক আজ আবার হাবিব ভাই না আসায় এ্যাকাউন্ট ওপেনিং ডেক্সে বসতে হল।

মোটামুটি সকাল সকাল বেশ কয়েকটি এ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেল। তবে আসল ভীড় শুরু হল ঠিক যোহরের নামাজের আগে আগে। আর ঠিক সেই সময় পকেটের মোবাইলটা বেজে উঠল। স্ক্রীনে দেখি ঘটক বাবাজির নাম ভেসে উঠেছে। একবার মনে করলাম ধরব না।

কিন্তু পরীর বাবা বা মামা-চাচা কাউকে নিয়ে সোজা ব্যাংকে হাজির হয় নাকি সেই ভয়ে কল রিসিভ করলাম। -হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। -ফা ফা ফাজলামির একটা সীমা থাকা উচিৎ..... -কেন কি ফাজলামি করলাম আবার? -আপনা কি বিয়ে সাদী করার ইচ্ছা আছে কি নাই? -আরে আছে বলেই তো আমার বায়োডাটাটা দিলাম- নাকি? -বায়োডাটার মধ্যে বৈবাহিক অব্স্থা - 'বিবাহিত' লিখছেন কেন? -তাই? (বেশ একটু বোকা সাজতে চাইলাম) -তাই? আর একদিকে মেয়ে বাবা আমাকে পারলে তখনই পুলিশে দেয় আরকি! -কেন আইনে তো দুইটা বিয়ে বৈধ.... -আবার আপনি ফাজলামি শুরু করলেন.....রাখেন! আপনার মেয়ে আপনি নিজে দেখন আমাকে আর বিরক্ত কইরেন না! বুঝলাম ঘটক মিয়া কাইটা পড়ছে। যাক বাঁচা গেল....আসলে কম্পিউটারে টাইপ করার সময় ভূল করে married এর পূর্বে Un কথাটি লিখতে ভূলে গেছি। এই ভূল যে সাপে বর হবে তা কে জানত! বিকালের দিকে ভীড় একটু কম হল।

এ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরম গুলো একটু গোছগাছ করছিলাম হঠাৎ দেখি সামনে এক পরীর উদয়! -জি বলুন! -একটা এ্যাকাউন্ট খুলব! -বসুন! বসতেই একটি ফরম ধরিয়ে দিয়ে বললাম- পূরণ করুণ। পরী দেখলাম বেশ চটচটি। খুব দ্রুত ফরম পূরণ করে ফেলল! নাম দেখলাম-সমাপ্তি বেগম, পিতা সিরাজুল হক মাতা রজিফা বেগম ঠিকানা.....। স্বামীর নামের ঘরের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালাম দেখি -ফাকা! তারপরও স্বামীর নাম জিজ্ঞাসা করতে সাহস পেলাম না। কিন্তু মোবাইল নম্বরটা নিতে ভূল করলাম না।

যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য আমার নম্বরটাও দিতে ভূল করলাম। ব্যাংকারদের আসার সময় আছে কিন্তু যাওয়ার সময় নেই। তবু আজ কেমন কেমন করে যেন দ্রুত হিসাব মিলে গেল...তাড়াতাড়ি বাসা গিয়ে সোজা বিছানা গেলাম। পেপারটা নিয়ে একটু নাড়া চাড়া করছি কিন্তু মনে কেন যেন সেই পরীর ছবি ভেসে উঠছে। মোবাইলটা হাতে নিতেই মোবাইল নম্বরটা মনে পড়ে গেল।

যদি আমি একটু আধটু বেয়াড়া টাইপের তবুও কখনও মেয়েদের সাথে মোবাইলে কথা বলার অভিজ্ঞতা নেই। চিন্তা করলাম সেই অভিজ্ঞতা নেবার আজ সুবর্ণ সুযোগ, এই সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই উচিৎ হবে না। -হ্যালো! সমাপ্তি বেগম বলছেন! -জি বলছি....কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে.... -আমি তাজুল ইসলাম..ঐযে আজ ব্যাংকে.... -ও! এইবার চিনতে পেরেছি......জি বলুন... -আসলে কি বলব বুঝতে পারছি না.... -ঠিক আছে তাহলে ফোন রেখে দিই কেমন...? -না মানে..। -না মানে...কি? -আচ্ছা আপনার নাম তো সমাপ্তি আপনি কি আমাকে একটা বিষয়ের সমাপ্তি টানতে সাহায্য করবেন? -কি সেটা বলুন...। সাহায্য করার মত হলে অবশ্যই করব কেন করব না? -আমার ব্যাচেলর জীবন! -মানে? -মানে বুঝলেন না? -না! -মানে আপনি কি সমাপ্তি বেগম হতে সমাপ্তি ইসলাম হতে রাজি আছেন? -আমি তো আছি কিন্তু আপনি কি জানেন আমার মা-বাবা কেন সমাপ্তি রেখেছে? -জানতে চান না? -না! -জানার পর আবার মত পাল্টাবেন না তো! - আচ্ছা বলুন তাহলে! -আমার আগে আমার তের ভাই বোন জন্ম নেয়, আমি হবার পর বাবা মা সিদ্ধান্ত নেন যে আর না!....তাই বুঝতেই পারছেন আমাকে বিয়ে করলে আপনার ব্যাংকের সব টাকা আমার ভাইবোনদের পেছনেই চলে যাবে! এখন বলুন আপনা আগের সিদ্ধান্ত-এ কি অটল আছেন? -না অটল নেই! -তাহলে? -তাহলে আবার কি? আগামী ঈদের ছুটিতে আমাদের বিয়ে হচ্ছে।

-আমার পরিবারের এই অবস্থা জানার পরও....? -হ্যা তারপরও ! -কিন্তু কেন? -কারন টা সত্যিই জানা দরকার! -হ্যা! -কারন আমি জানি আপনি সত্যিই বলেননি! -কিভাবে বুঝলেন? -ব্যাংকাররা সব বুঝতে পারে। যার সংসারে এত জন সদস্য সে কখনও ব্যাংকে এসে এত টাকা দিয়ে এ্যাকাউন্ট খুলে না! -শুধু কি এই কারনেই আমাকে বিয়ে করতে চান? -না! -নাহ! ------------------------------------------------------------------ তারপর? পরীর সাথে মিলিয়া ব্যাংকার পাতিল সুখের সংসার! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।