আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তবে একটা ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ তা হল নিজেরা যে পথে হেঁটে কষ্ট পেয়েছি, আমার পরে অন্যরা যখন এই পথেই আবার হাটতে আসবে তাদের বলে দেয়া যে কোথায় উঁচু,নিচু আর কোথায় পরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে । তবেই না পরবর্তীজন সে পথ সহজে অতিক্রম করতে পারবে। বেশির ভাগ মানুষই আমরা ভেবে থাকি কি দরকার বলার শিখুক না ঠেকে, যা আমার কাছে মনে হয় ঠিক না।
তেমনি অনেক ঘটনার মাঝে আমার এবং আমার কাছের বন্ধুদের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা শেয়ার করি। আপনাদের মাঝেও হয়তো অনেকেই আছেন যারা কিনা এই ঘটনার শিকার কিন্তু কাওকে বলেননি।
আর যারা এখন ও এই ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়নি তাদের বলছি সতর্ক থাকবেন।
তখন ইন্টার্নই করছি নাসা তাইপেই স্পিনার্স লিমিটেডে আর পাশাপাশি বাংলাদেশে চাকরির যত ওয়েব সাইট আছে সে গুলোতে ঢুঁ মারছি আর এপ্লাই করছি। একদিন সকাল বেলা আমার সেলফোনে একজন মেয়ে ফোন করে ইংরাজিতে বলল আপনার তো দুবাইতে এর একটি খ্যাতনামা কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে, আর আপনাকে আপনার মেইল এড্রেসে অফার লেটার পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, আপনি খুব তাড়াতাড়ি মেডিক্যাল চেকআপ করিয়ে রিপোর্ট আমাদের পাঠিয়ে দিন, আমার বাংলাদেশী কলিগ আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করবেন। ঘটনার বিহব্বলাতায় আমি থ খেয়ে গেলাম কারন আমার কিছুই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কখন কোথায় এপ্লাই করলাম আর জব অফার লেটার পেয়ে গেলাম বোধগম্য হচ্ছিল না।
যাই হোক মেইল চেক করে দেখলাম যে আসলেই তাই কিন্তু জব অফার আমার সাবজেক্ট এর সাথে মিল নেই,অফার লেটার যেমন হওয়া উচিৎ তেমন স্ট্যান্ডার্ড ও না, যদিও অফার ছিল ভীষণ আকর্ষণীয় । আমি মেইলটা আমার চাচাতো ভাইকে ফরওয়ার্ড করি চেক করে দেখার জন্য যে অফার লেটার কি এমন হতে পারে কিনা, উনি দেখে বললেন যে কেমন যেন লাগছে কিন্তু যদি শুধু মেডিকেল এর টাকা ছাড়া অন্য কিছু করা না লাগে তাহলে করা যেতে পারে।
ইতিমধ্যে আমার সাথে আবারও যোগাযোগ করা হল, এবার এক ভদ্রলোক ফোন করে জানতে চাইল আমি কি মেডিকেল চেকআপ করিয়েছি কিনা, আমি করিনাই শুনে উনি বলতে লাগলেন বাংলাদেশ থেকে খুব অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ এই অফার লেটার পেয়েছে আমি কেন এখন ও মেডিকেল চেকআপ করাচ্ছি না। উনি আর ও বললেন ওনাদের অফিস সিলেটে এবং ভিসা পাওয়ার পরে শুধু ওনাদের ১৫০০০ হাজার টাকা দেয়া লাগবে তার আগে কিছু দেয়া লাগবে না, আমার শুধু বিমান ভাড়া দিলেই হবে।
কি করবো শুধু তাই ভাবছি এর সাথে ওর সাথে কথা বলি সবাই শুধু বলে যেহেতু শুধু ৩০০০ হাজার টাকা লাগবে মেডিকেল চেকআপ করানর জন্য তবে করেই দেখো না।
বাসায় আম্মু, বাপীর সাথে কথা বললাম ওনারাও তাই বললেন। আমি আমাদের এক বন্ধু দুবাই থাকে তার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করলাম তাকে বললাম বিস্তারিত। শুনে ও বলল আমাকে যে কোম্পানির অফার লেটার পাঠিয়েছে সেও ওই কোম্পানিতে চাকরি করে, কিন্তু এই ভাবে লোক নেয়ার কথা ও জানেনা। সব মিলিয়ে আমার কেন জানি সন্দেহ হল এর মাঝে আমাকে তো ফোনের পর ফোন করেই যাচ্ছে ভাবখানা এমন যে আমার চেয়ে তাদের চিন্তাটাই বেশি।
শেষ পর্যন্ত অফার লেটার এর শর্ত মত তিন বছরের চুক্তি, ৩০০০ হাজার টাকা,হেড অফিস সিলেট,আমার সাবজেক্ট এর বাইরে চাকরি আর সন্দেহের কারনে মেডিকেল চেকআপ করা আর হল না।
তার কিছুদিন পর আমার এলাকার এক বড় ভাইয়ের বাসায় গেলে আমি কথায় কথায় এই ঘটনা বলার পর উনি বলল যে তুমি বেঁচে গিয়েছ এটা আমারও হয়েছিল আর আমি মেডিকেল চেকআপ করিয়েও ছিলাম এবং অবশেষে ধরা খেয়েছি। ওদের আসল ব্যাবসা হল ডায়াগনসটীক সেন্টার গুলোর ভাঁওতাবাজি। আমার মনে হয় মেডিকেল রিপোর্ট যেটা দেয়া হয় সেটা ও মিথ্যে।
কিছুদিন পর আমার এক ভার্সিটি এর বন্ধু একই জিনিসের কথা বললে আমি সব বলি ঘটনা, এটা শুনে সেও বুঝতে পারে যে এই গুলো ভুয়া। আমার ওই বন্ধু বলে যে চল দুজনে রেব এর কাছে ব্যাপারটা বলি কিন্তু কে যাবে রেব এর কাছে ? দেখা যাবে যে আমাদেরই শেষমেশ না জানি কোন বিপদে পড়তে হয়।
তারপর প্রায় বছর খানেক পর আবারও একদিন আমার কাছে ফোন করে এক মেয়ে বলতে শুরু করলো তখন মাই তাকে কথার মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললাম যে আপনার নাম্বারটা আমি এখনি পুলিশকে দিচ্ছি। এই কথা শুনে মেয়েটি ফোন কেটে দিল, আমি ফোন করলাম কিন্তু দেখি যে বন্ধ।
এবার আপনাদের বলব এই বিষয়ক মজার ঘটনা যা ঘটেছিল আমার খুব কাছের এক বন্ধুর সাথে। সঙ্গত কারনেই তার নাম বলছি না যদিও হাত নিশপিশ করছে।
গত বছরের ঘটনা আমি তখন চিটাগাং চাকরি করছি আর আমার ওই ফ্রেন্ড চাকরি ছেঁড়ে দিয়ে নতুন চাকরির তালাশ করছে।
একদিন হঠাৎ ফোন করে বলল যে ও চিটাগাং আসছে বিশেষ একটা কাজে, আমি যতই জিজ্ঞেস করি বলেনা শুধু বলে যে একটা কিছু হয়ে গেছে যা বিশাল কিছু। আমি ভাবলাম মনে হয় চিটাগাং ভালো কোথাও মনে হয় চাকরি পেয়েছে। রাত ১২ টায় চিটাগাং আসলো আমার রুমে আমি যতই জিজ্ঞেস করি বলে না শেষমেশ যা বলল টা হল তাকেও অফার লেটার পাঠিয়েছে আর বলেছে হেড অফিস চিটাগাং তাই ও চলে এসেছে সরাসরি কথা বলতে। এইবার তো আমি শুধু হাসছি আর হাসছি মনে মনে আমি কি করলাম মেইল থেকে আমার অফার লেটারটা বের করে দেখালাম আর ঘটনা বললাম। বুদ্ধিমান ছেলে যা বুঝার বুঝে নিল আর ব্যাপক কষ্ট পেল মনে অনেক উচ্ছ্বাস নিয়ে চিটাগাং এসেছিল কিন্তু আমার কথা শুনে ওই ঠিকানায়ই আর যেতে চায় নাই।
কারন জানা কথা ওখানে গিয়েও কিছু পাওয়া যাবে না হয়তো ভুয়া কোন ঠিকানা দিয়ে রেখেছে।
পরিশেষে বলব যারা এমন কিছুর অফার অথবা এমন ভুয়া কিছুর শিকার হয়েছেন তারা এটা অন্যদের বলবেন যাতে করে অন্যরা এটা থেকে বেঁচে যায় কারন আমার জানামতে এই ধরনের ঘটনা এখন ও চলছে যারা মফঃস্বল থেকে শহরে প্রথমবারের মত চাকরির জন্য আসছে তারা সহ অনেকেই এখনও প্রতিদিন এই দুষ্ট চক্রের শিকার হচ্ছে। কিচ্ছু না শুধু কয়েকটা মোবাইল সিম দিয়েই এত বড় জোচ্চুরি করে যাচ্ছে কিছু মানুষ, তাই আসুন আমরা মানুষকে সচেতন করি যারা আমার এই লেখাটি কষ্ট করে পড়েছেন তারা অন্যদের সাথে শেয়ার করিয়েন তাতে করে যদি যদি কোন ভাই বেঁচে যায় তবে ভালো লাগবে।
০৪। ০২।
২০১৩ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।