আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-) ঐযে রাস্তা দিয়া যাইতাছে মাইয়্যাডা কোন বাড়ীর রে?
ক্যা চিনো না, মুন্সীগো মাইয়্যা.....
কোন মুন্সী?
নসু মুন্সীর বড় মাইয়্যা এইডা
যায় কই ঐমিশ্যি?
মধু খাঁর বাইত্তে যায়। মধু খাঁর ভায়রাবিডি।
আমার হাসনের নিগ্যা দিবোনি মাইয়্যডারে, তুমি দেহোনা....
এত বড় বাড়ীর মাইয়্যা.....
আমার মা মরা পোলাডা, সৎ মার ঘরে ভালমন্দ কিসু খাইতে পারলোনা জীবনে। পোলাডা ইট্টু খাওয়ার পাগল। দেহো না ঐ মুন্সীরা যদি দেয় মাইয়্যাডারে।
============================
দু বছর ঘোরার পরে হাজী নসু মুন্সী রাজী হন বাছের হাজীর ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে। নাম ডাকে যেমন প্রতাপশালী ছিলেন নসু মুন্সী পয়সাও ছিলো তেমন।
সে হিসেবে নামডাক থাকলেও বাছের হাজীর পয়সা তেমন ছিলো না নসু মুন্সীর মত। খেয়ে-পড়ে স্বচ্ছল ছিলো। পাকিস্তান আমলে মেয়ের বিয়েতে নসু মুন্সী কলকাতার শহর থেকে এক কেজি পোলাওয়ের চাল এনে বর যাত্রীকে পোলাও ভাত খাইয়েছিলেন। ততকালীন আমলে তা সবার মুখে মুখে রটে গিয়েছিলো "কিপ্টা মুন্সীর মাইয়্যার বিয়াতে পোলাও ভাত খাওয়াইসে"।
=================================
এসব ই ষাট বছর আগের কথা।
জীবন সায়ান্হে এসে ত্রিশ বছরের বিধবা ধলী বিবি বাব বার ফিরে যান ষাট বছর আগের জীবনে। সেই ছোট্ট বেলায় এসেছিলেন এই বাড়ীতে। অঢেল ছিলো বাবার বাড়ীতে। অভাব কি তা কখনো বুঝতে পারেন নি। কিন্তু বিয়ের পর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন অভাব কি! প্রথমে যৌথ পরিবারে থাকলেও বছর বছর ছেলে-মেয়ে হওয়ায় সৎ শ্বাশুড়ীর বাক্যবাণে জর্জরিত হয়ে আপোসেই সরে যান সে পরিবার থেকে।
জায়গাজমি ভাগ হয়ে যায়। পরিবারে খাওয়ার মানুষ বাড়তে থাকে কিন্তু উপার্জনের মানুষ এক জনই তাই অভাব হয় নিত্য সঙ্গী। বাবা তাই যথেষ্ট দেখতেন যাতে মেয়ে সুখে থাকে। মা আলাদা করে দেখতেন মেয়ের সুখের জন্যে। এই জীবনের জন্যে কারো প্রতি কোন অভিযোগ ছিল না ধলী বিবির, না বাবা-মা, না স্বামী।
স্বামীকে দেখতেন শ্রদ্ধার চোখে। অভাব কখনো স্বামীর প্রতি ভালবাসা বা শ্রদ্ধায় বাধা হয়ে দাড়ায়নি। প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে গেছেন। মানিয়ে নিয়েছেন জীবনের সব প্রতিকুল অবস্থার সাথে নিজেকে।
এসব ভাবনায় ছেদ পড়ে ঢাকা থেকে আসা নাতনীর ডাকে...........
দাদু আপনার ঈদের শাড়ী।
= আর কাপুড়, এত কাপুড় দিয়া আমি কি করমু.......
আপনের আর কি কাজ, সারা দিন খালি কাপড় বদলাবেন।
= আ...রে দাদারে....যহন কাপুড়ের শখ আছিলো তহন পাই নাই। দুই কাপুড়ে বছর পার করছি। এটা বাকী আনছে ঐডার দাম দিতে দিতে বছ্ছর ঘুইরা আইছে।
সারা জীবন কি এক রকম যায় নাকি মানুষের, তখন পান নাই বইলা আল্লাহ এখন দিসে আপনারে।
মানুষটার প্রতি বড্ড অভিমান ধলী বিবির। তাকে ছেড়ে কি ভাবে চলে গেলো স্বার্থপরের মতন। তার যাওয়ার দিনটি এখনো ভেসে ওঠে চোখের সামনে..........
অনেক দিনের বিছানায় পরা লম্বা ছিপছিপে মানুষটি যেনো বিছানার সাথে একদম লেগে গিয়েছেন। সকাল থেকেই অবস্থা খুব একটা ভাল ছিলোনা, ধলী বিবি আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই ছেলে-বউরা সবাই রান্না ঘরে খেলেও তিনি যাননি খেতে।
এক পর্যায়ে বউরা প্রায় জোর করে তাকে খেতে পাঠান। এর মাঝেই শেষ নিশ্বাঃস ত্যাগ করেন মানুষটি। এক চিৎকার দিয়ে খাওয়া ফেলে উঠোনে এসে পড়লেন ধলীবিবি, "তরা আমারে কি করলি, আমি এতদিন মানুষটারে টানলাম শেষ কালে তার মুকে পানি দিতে পারলাম না, তার এটটা কতা হুনতে পারলাম না......." ।
স্বামী মারা যাওয়ার পরে তার খরচ দেয়া নিয়ে ছেলেদের মাঝে বিবাদ হলে সেজো ছেলে নিজে ইচ্ছা মার সমস্ত দ্বায়িত্ব নেন। ছোট ছেলে নিয়ে ধলীবিবির সংসার।
ছেলে চাকরী নিয়ে চলে যায় কর্মস্থলে। একা হয়ে পড়েন ধলীবিবি। ছেলেকে বিয়ে করালে নিজের কর্মস্থানে বউকে নিয়ে যান। ছোট বা সেজো ছেলে অনেকবার তাদের কাছে মা কে নিতে চেষ্টা করলেও পারেননি। ধলীবিবির কথা ছোট্ট বেলায় শ্বশুড় তাকে এই বাড়ীতে এনেছে, প্রান প্রিয় স্বামী এই বাড়ীতে মারা গেছেন।
তার ইচ্ছা স্বামীর ভিটাতেই মরবেন তিনি। কিন্তু বয়সের ভারে নুয্য ধলীবিবির বিছানায় পড়ে যান। বড় এবং মেজো ছেলে-বউদের নিজেদের সংসার ফেলে তার বাড়ীতে যাওয়া সম্ভব নয় বলে তাদের বাড়ীতে এনে রাখেন। এখানে যে ছেলে-ছেলের বউদের বোঝআ হয়ে আছেন তা তিনি ভাল করেই বুঝতে পারেন, কিংবা বলা যায় তাকে বোঝানো হয় মাঝে মাঝে। সব বুঝেও সহ্য করে যান ধলী বিবি।
সারাটি জীবন তো সহ্যই করে এসেছেন। সহ্য করতে করতে বুকে পাথর বেঁধে রেখেছেন।
প্রিয় মানুষটি চলে গেছেন আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে। এর পর চোখের সামনে কত মানুষ চলে গেলো। তারই ছোট দেওর যাকে সে এসে পেয়েছে একদম ছোট্ট, সে দেওর-দেওরের বউ দুজনেই মারা গেলেন।
সবারই ডাক আসে কিন্তু তার ডাক কেনো আসেনা। এক একটি দিন যেনো এক একটি বছর। কবে শেষ হবে তার এই ক্ষনস্থায়ী যাত্রা......কবে পাড়ি জমাবেন পরপারে.......দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে তার এ জীবন........ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।