আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

" ভালোবাসা বহুরুপী "- কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরী থেকে

আমি আজ এসেছি এইখানে..মানব হয়ে

বৃষ্টি জিজ্ঞেস করেছিলো - আমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছি কিনা? প্রত্যুত্তরে আমি আমার বিখ্যাত হাসি ঝেড়ে দিয়েছিলাম। মুখে তাকে কিছু বলার অবকাশ ছিলোনা। কারন বললে সে বুঝতোনা। আমি ছয় নয় করে এড়িয়ে গিয়েছিলাম। বৃষ্টি কিছু না বুঝেই আমাকে কাওয়ার্ড বলেছিলো।

তোমাদের কিভাবে বোঝাই, ভালোবাসার ব্যাপারে আমার কিছু নিজস্ব দৃষ্টিভংগী রয়েছে। বলতে পারো ব্যাপারটা আমার কাছে তুচ্ছ কোনো বিষয় নয়। কাশেমীয় থিয়োরী অনুযায়ী ভালোবাসার তিনটি গতি আছে; নদীর মতন। একটা নিম্নগতি, একটা মধ্যগতি, আর একটা উচ্চ গতি। নদীর মতন তিনটি গতি ঠিক কথা, কিন্তু তার প্রবাহ উলটো দিকে।

নদী যায় নিচে, ভালোবাসা উঠে উপরে। সেই দিকেই তার বিস্তার ও গভীরতা। দেহের তিনটি ভাগ। নিচের ভাগে থাকে নিম্নগতির ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা নদীর পার্বত্য গতির মতন উগ্র।

সেক্স থেকেই ভালোবাসার উৎপত্তি। কিন্তু সেই উৎপত্তি স্থল থেকে ভালোবাসাকে অনেকদুর, এই বুক অবধি; মধ্যগতির কল্যাণের দিকে পৌছুতে হয়। সেখানে নদীর উভয় তীরে মানুষের সভ্যতা, বসবাস, সমাজ। তারই মাঝ দিয়ে বুকের মাটি ভিজিয়ে, পলি ফেলে ফেলে ফসল ফলিয়ে, সমাজ আর সভ্যতাকে উর্বর আর সবুজ এবং সুখী করে দিয়ে, ভালোবাসা এগিয়ে যায়। ঠিক নদীর মতন।

পলি জলের সোহাগ,সবুজের স্নিগ্ধ সমারোহ, আবেগ,ছলছলানো আদর তার সম্বল। এরই নাম মধ্যগতির ভালোবাসা। মাঝারি আর সাধারন মানুষের কল্যাণকর ভালোবাসা। সেক্স আছে,কিন্তু সেক্সের সাথে আরো অনেক কিছু আছে। তিনটি গতিই বিচ্ছিন্ন কিছু নয়; আবার তিনটি গতিই আলাদা।

স্বরুপে স্বতন্ত্র তারা। কোথায় কিভাবে বদলে যাচ্ছে সীমারেখা,দেখানো মুশকিল। অনেকটা আধুনিক গদ্য কবিতার মতন। জিনিষটা অনুভব করলে পাওয়া যায়,চোখ থাকলে দেখাও যায়। তা,তার পরও আরো একটা গতি আছে।

সেখানে পৌছুলে মহাসমূদ্রের ডাক শুনতে পাওয়া যায়। সেটা খুব বিপুল,ব্যপ্ত, খুবই গভীর। মাঝারি ভালোবাসায় আবেগ,স্নেহ আর আদরই প্রবল। যুক্তি কম। তৃতীয় ভালোবাসা যুক্তি আর মনন নির্ভর।

আবেগ অতিশয় সুক্ষ্ম। সেক্স সেখানে দূরবর্তী, আরো পরিশীলিত ও শান্ত হয়ে আসে। আসলে ভালোবাসা মুলতঃ আকস্মিক,অস্বাভাবিক,তীব্র গতিশীল এবং দুঃসহ বেমানান। যেমন যুক্তিযুক্ত আবার তেমনি যুক্তিহীন। আবার কোনো কোনো ভালোবাসার তিনটি গতিই থাকে।

দেহের তিনভাগে তিন ধরনের ভালোবাসা থাকে। বুক ছাড়িয়ে মস্তিষ্কের দিকে প্রসারিত ভালোবাসা অন্যকথা। কিন্তু নীচু স্তরের দূষিত ভালোবাসা মরবার আগে, পৃথিবীর শুদ্ধ মানুষ কে মেরে দিয়ে যায়। সেই ভালোবাসা নারীর কর্দমাক্ত যোনীদেশ থেকে, পৃথিবীর তীব্র গাঢ় অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ে। আবার প্রকৃত শুদ্ধ ভালোবাসার শক্তি,পৃথিবীর তাবৎ মানুষের ঘৃনার শক্তির চেয়ে,অনেক বেশী শক্তিশালী।

আসলে মানুষের ভালোবাসা মাত্রই অদ্ভূত। অদ্ভূত একটা মাদক। কারো কাছে কেবলই মদিরা। আবার অনেকের ক্ষেত্রে সু্যোগ না থাকলেও, মনের নিভৃতে রোমান্স লুকিয়ে থাকে। বৃদ্ধ শতাব্দী সেই মনের পৃথিবীকে কখনো চিনতে পারেনা।

অবহেলা করতে থাকে। ভালোবাসা পেলে রক্তে একটি অদ্ভুত উৎসব জেগে উঠে। মাটি ফুঁড়ে নিঃসীম অন্ধকার থেকে,একটি আলোকিত শহর জেগে উঠতে থাকে সহসা। ভেতরটা চমকে উঠে;থরথর করে কেঁপে উঠে তাবৎ পটভূমি। ছলাৎ করে বুকের তলায় রক্ত দৌড়ে যায়।

কোনও পাথর চাপা জলরাশি যেভাবে উদ্গত,উৎসারিত হয়ে, কোনো ছিদ্র পথে পাথরের পাশ বেয়ে, গা বেয়ে ছড়িয়ে পড়ে, উচ্চকিত লাফিয়ে উঠে। মনের মধ্যে তেমনি কোনো তৃষ্ণা হঠাৎ উল্লসিত হয়। জলের মিহিন শব্দ তার হৃদয়ে পুঞ্জিত হয়ে ঝরতে থাকে। এক মগ্ন শীতলতায় ডুবে যায় পৃথিবী। অন্তত একবার ভালোবাসতে হয় এই জীবনে।

এই ক্ষুদ্র জীবনে যা পাওয়ার আদায় করে নিতে হয়। যত পাপ, যত পূণ্য একখানা ক্ষুদ্র জীবনের জন্য। আবার এই মাটির পৃথিবীতে ফিরে আসার কোনো বিধান নেই। বেহেস্তের ভালোবাসা আমি কি করবো? পৃথিবীর ভালোবাসা পৃথিবীতেই রেখে যেতে হবে। বেহেস্ত কখনো পৃথিবীকে ফিরিয়ে দিতে পারেনা।

এ দুনিয়ার ভালোবাসার শক্তি বেহেস্ত অবধি পৌছায়না। কারন বেহেস্তে গিয়ে মানুষ এই মাটির পৃথিবীকে ভুলে যায়। এখানকার ভালোবাসার পাপে মানুষের দোযখ হবে। কিন্তু সেই পাপ করতে আরেকবার যদি মন চায়; মন সেই সুযোগ পাবেনা। এখানকার মতন সেখানকার জীবনও অসহায়।

মানুষ এত বোকা যে, বেহেস্তে পৌছে একবারও এই পৃথিবীর জন্য কাঁদেনা। পরিশেষে তোমাকে সত্য কথাটা বলি। ভালোবাসাকে এভাবে বুঝেছিলাম বলেই, যেমন তেমন করে ভালোবাসতে পারিনি। নইলে নিম্নগতির ভালোবাসার সুযোগ সব জীবনেই থাকে। অশ্বের মতন দিশেহারা,ক্ষ্যাপা,ছুটন্ত লক্ষ্যহীন ভালোবাসা পাওয়া কি যায়না? সেটা নিচেয় নামায়,উপরে তোলেনা।

কতো গংগোত্রী পৃথিবীতে শুকিয়ে গেছে,হিমবাহ অতিক্রম করেনি। পাহাড়ের ফাটলে ঢুকে গেছে। গুমরে গুমরে শেষ হয়ে গিয়েছে। কে তার খবর রেখেছে কবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।