munirshamim@gmail.com
হাসিনা-খালেদার কথিত সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে আমার দেখা একজন নাগরিকের আশাবাদ আমার ধারণা আমার মতো অন্য সবাইকেও বিশ্মিত করবে, হাসাবে এবং হয়তো হতাশও করবে। তবু তার আশাবাদের যুক্তিগুলো একেবারে ফেলনা মনে হয় নি। অন্তত স্বপ্ন দেখার দিক থেকে। আবেগ-অনুভূতির দিকে থেকে। রাস্তার পাশে চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চের ওপর বসেই তিনি কথাটা পাড়লেন।
গতকাল সন্ধায়। আস্তে করে বললেন, আমি আশাবাদী! চারিদেকে যখন হতাশার বর্ণীল মিছিল ঠিক তখন এ রকম আশাবাদের উচ্চারণে অন্য সবার মতো আমারও দৃষ্টি যায় তাঁর দিকে এবং সবিনিময়ে জিজ্ঞেস করি তার আশাবাদের কারণ। তিনি সরাসরি উত্তর দেন, কেন জানেন না, উপদেষ্টা পরিষদ হাসিনা-খালেদাকে এক টেবিলে বসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা সমস্বরে বলি, তাতে কী হয়েছে? তিনি আবারও বলেন, এবার একটা কিছু হবে। আমরা বলি কি হবে? এমন ঘটনাতো আর নুতন নয়।
আগেও তাঁদের দু'একবার দেখা হয়েছে। এক টেবিলে তারা কথাও বলেছেন। কিন্তু জনগণের প্রাপ্তির দিক থেকে ফলাফলতো 'জিরো'। তিনি দমে যাবার পাত্র নন, পাল্টা যুক্তি ছাড়েন। এবং বলে যান:
এটা প্রমাণিত যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমরা চাই বা না চাই হাসিনা-খালেদা দুজনই অনিবার্য।
দু'জনরেই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। যে কারণে গত দু'বছরে সর্বাধিক আলোচিত 'মাইনাস টু' নামের রাজনৈতিক ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। ছবির প্রযোজক, কাহিনী নির্মাতা সকল কলাকুশলী রণে ভঙ্গ দিয়েছেন এবং দেরিতে হলেও এ উপলব্দী তৈরি হয়েছে যে, আরোপিত ফর্মূলায় গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই খুজে পেতে হবে। সে ক্ষেত্রে এ দু'নেত্রীর অর্থপূর্ণ আলোচনা ও অংশগ্রহণ জরুরি।
এবং এটাও স্পষ্ট যে, নিরপক্ষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অন্তত আরও দু'একটি টার্ম এ দু'জনের একজন হয়তো নির্বাহী প্রধান হবেন এবং অন্য জন বিরুধী দলে থাকবেন।
তা হলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল, সব তো আগের মতোই থাকলো, বাক্যবানে জর্জরিত করা, বিবৃতিবাজদের উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন, সংবাদপত্রের পক্ষপাত, দালালীপনা, কাদা ছোঁড়াছুড়ি সবইতো থাকলো...
না থাকলো না- বলে তিনি আবার শুরু করেন......
-ঐ যে বললাম নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের একজন হবেন নির্বাহী প্রধান আর অন্যজন হবেন বিরুধী দলের প্রধান। সম্ভবানাটা এখানেই। এ সত্য এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটাকে তাদের ভেতর থেকে বুঝতে হবে। উপলব্দী করতে হবে।
মেনে নিতে হবে এবং মনেও নিতে হবে। তারপর কতগুলো অমীমাংসিত বিষয়ে একমত হতে হবে। যেমন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়া, হরতালের অপব্যবহার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইত্যাদি......
বললাম, প্রথমগুলো না হয় ঠিক আছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে খালেদা হাসিনার সাথে একমত হবারতো কোন কারণ দেখি না। এ বিষয়ে একমত হলে বিএনপিকে জামাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আর জামাত তাদের দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত রাজনৈতিক বন্ধু। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে আ'লীরগর আন্তরিকতা নিয়েও জনমনে সন্দেহ আছে।
আবারও তিনি বলা শুরু করলেন................
রাজনীতির অংকের হিসবেটা এখানেই ভুল। জামাত কোনভাবে বিএনপির বন্ধু নয়। এর প্রমাণ, ১/১১ এর পর জোট সরকারের আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জনের প্রমাণিত ঘটনাসমূহ এবং অভিযোগসমূহের কোন দায়-দায়িত্ব জামাত নেয়নি।
খুব সাবধানে দুরে থেকেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায় বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়েছে। আর পর্যবেক্ষণ করেছে। রাজনৈতিক পরিস্থতি অনুকূল হওয়া শুরু করলে আবার জামাত তার বোল পাল্টাতে শুরু করে। বিগত পাঁচ বছরে বিএনপি যে সকল রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কার প্রশ্নে, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেছন থেকে কলকব্জা নেড়েছে জামাত।
বিএনপি শুধু জামাতের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। তাছাড়া, একজন সেক্টর কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবেও খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীর বিচার সংক্রান্ত ইস্যুটিকে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষয়টি নতুনভাবে বিবেচনা করাবেন এ সম্ভাবনার কথা আমরা এখনও ভাবতে পারি। সুতরাং রাজনীতির ময়দানের চিরপ্রতিদ্বন্ধী হিসেবে দু'দলকেই মানে দু'নেত্রীকে এ অমিমাংসিত ইস্যুতে একমত হতে হবে। এবং হতে হতে পারলে তাদের মাঝে অনেক দুরুত্ব কমে যাবে। কোন পরাজিত শক্তিও তাদের নিয়ে খেলতে পারবে না।
সময় গড়িয়ে যায়। সাথে তার আলোচনাও। আমি আর কথা বাড়াই না। শুধু ভাবি 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে দেশের প্রধান দু'দল একমত হয়েছেন' এটি এ নগণ্য নাগরিকের স্বপ্ন নাকি এর নাম 'স্বপ্নদোষ'!!!!! অতীতের সকল পর্যবেক্ষণকে বাদ দিয়ে বলতে হয় নিকট ভবিষ্যতই বলে দেবে এর উত্তর..................!!!!!!
(গতকাল সন্ধ্যায় এ মানুষটির সাথে দেখা না হলে এ সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়াটিই হয়তো আমার তৈরি হতো না। সুতরাং এ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াটি ব্লগে শেয়ার করতে পারার জন্য সে অচেনা মানুষটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি....)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।