আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপ এইমাত্র কায়া

আমার মৃত্যু যেন আমার সকল ইচ্ছা পূরণের পর হয়

এ বছরের শুরুর দিকের কথা কাজের আশায় ঘুরছিলাম এর কাছে তো ওর কাছে। মনে হচ্ছে কাজ নামের কোনো কিছুই নাই আমার জন্য। ওনেক কষ্টে মনকে বুঝিয়ে রেষ্টুরেন্ট এ কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। শাহীন ভাই ওনেক দিন এই দেশে বলতে গেলে বিদেশের সবটুকু সময়ই তিনি কাটিয়েছেন রেষ্টুরেন্ট এ কাজ করে। ওনাকে ফোন করতেই বললেন চলে আসো কিছু একটা হয়ে যাবে।

রেষ্টুরেন্টে কাজ করার ইচ্ছে আমার কোনো কালেই ছিলো না, এইসব লোকদের মধ্য না থাকে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকে কোনো ভদ্রতা। যাই হোক কোনো কাজ যেহেতু নাই তাই এই কাজটাই সই। কাজে লেগে গেলাম কিচেন পটার। যে কাজ জীবনে কোনো দিন কল্পনা করি নাই তাই করতে হচ্ছে। শাহীন ভাই বললেন কিছু দিন চেপে যাও তার পর তোমাকে ওয়েটার বানিয়ে দেবো।

কাজ করতে করতে সবার সাথে পরিচয় হলো, শেফ সাহেবের সাথে বিশেষ খাতির হলো তিনি আমাকে সুযোগ পেলেই নানা মজার আইটেম খাওয়াতেন। আমি হিন্দী বা উর্দু যাই বলেন এতে খুবই কাচা ছিলাম। তো শেফ সাহেব আমাকে সময় পেলে হিন্দী বা উর্দু শিখাতেন। যদিও তিনি নিজেও ছিলেন বাঙ্গালী। অনেক বছর এইদেশে বলে এই হিন্দী বা উর্দু ভাষা ও শিখে ফেলেছেন।

আমার হিন্দী শিখা ভালোই চলছে। আপ ক্যাসে হো? ঠিক হে? তাবিয়াত(শরীর) ঠিক হে? আস্তে আস্তে বলতে গেলে সব ঠিক কিন্তু দ্রুত বলতে গেলে সব উল্টা পাল্টা হয়ে যায়। একবার আমাদের শেফ সাহেব ছুটিতে গেলেন। তার জায়গায় রেষ্টুরেন্ট মালিক একজন ইন্ডিয়ান শেফ রাখলেন। আমি মনে মনে খুশি যে আমার হিন্দী শেখাটা এবার পুরাই পুরা হবে।

ততদিনে আমি হাফ ওযেটার মানে টুকটাক অর্ডার নিতে পারি এমন ওয়েটার হয়েছি। যার কারনে আমি কিচেনে খুব কম যেতাম, কারন সব সময় সামনেই থাকতে হতো। তবে সময় পেলেই কিচেনে গিয়ে হিন্দী শিখতাম। এই শেফ সাহেব আবার পেটুক ছিলেন। যাই রান্না করতেন তার কিছু নাকিছূ চেখে দেখতেন।

নিজ নিজ মর্জি মতো রান্না করে খেতেন। যাই হোক রেষ্টুরেন্ট মালিক যতক্ষন না জানছে ততক্ষন ঠিক আছে। একবার এক অর্ডারে শাক আলু(ইন্ডিয়ান কোনো খাবারের নাম) অর্ডার হলো। শেফ সাহেবের মনে হয় এই পদ অনেক প্রিয় ছিলো তিনি শাক আলু বানিয়ে তার অর্ধেকটাই খেয়ে গেলেন। আমি কিচেনে খাবার আনতে গিয়ে দেখি উনি মনের সুখে খাইতেছেন।

আমি বললাম আপ কিয়ু খা রাহে হো? সে বলে মেরি মর্জি! আমি বললাম 'আগার কাস্টমার কো কম হো যায়ে তো কেয়া হোগা'? ও কয় 'ইয়ে লোগ জেদা নেহি খাতে!'। খাবার দেবার পর কাস্টমার আমাকে ডেকে পাঠালেন বললেন শাক আলু এতো কম কেনো? তুমি কি জানো না আমরা চার জন লোক, আর আমরা সবাই এটা খুব পঝন্দ করি। তোমার ম্যানেজার কে ডাকো! ম্যানেজার আইলো, ম্যানেজার সরি বললো, এবং দশ মিনিটের মধ্য ফ্রি শাক আলু দেবার ওয়াদা করলো। আমাকে জিগাস করলো কি হইছে আমি পুরা কাহিনী বললাম, ম্যানেজার আমাকে সহো কিচেনে গেলো শেফ কে সরিয়ে নিজেই শাক আলু পাকিয়ে কাস্টমার কে দিয়ে আসলো। কাস্টমার চলে যাবার সাথে সাথে শেফ কে জিগ্গাসাবাদ করা হলো শেফ কথা পাল্টাইলো, সে কয় ম্যায়নে ক্যায়া কিয়া ইসনে মুঝে বোলা দো আদমি ইসলিয়ে ম্যানে কম বানায়া!!! আমার মেজাজ খারাপ হইলো।

আমি মালিক রে কইলাম হে মিছা কথা কয় আমি তারে এই মাত্র খাইতে দেকছি যকন জিগাইছি হে কয় কাস্টমার বেশি খাইবো না সো কোনো টেনশন নাই, শেফ কয় ইয়ে তুম ক্যায়া বলরাহে হো হিন্দী ম্যা বলো, আমি নিজেরে কন্টোল করতে না পাইরা কইলাম ম্যা দেকা আপ এইমাত্র কায়া শাক আলু, ম্যানে জিগায়া তো তুম বলতা ইয়ে লোখ কম খাতে!! ম্যা এই মাত্র দেখা আপ শাক আলু কায়া, মিছা কিয়ু্ বলতা হো! একপলক তাকিয়ে দেখি মালিক আর শেফ ছাড়া সবাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে। কিছুই বুঝলাম না। পরে অবশ্য শাহীন ভাই বললেন আমি কি হিন্দী বলেছিলাম সবার সামনে। শাহীন ভাই মুখ থেকে শুনার পর থেকে নিজের হাসি আর চেপে রাখতে পারি নি। পরের দিন কাজে যেতেই সবাই আমাকে এইমাত্র কায়া, আর কথায় কথায় মিছা কিয়ু বলতা হে আরো কিছু বানিয়ে বানিয়ে আমাকে জ্বালাতোন করতে লাগলো।

রেষ্টুরেন্ট কাজ ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু এখনো ওই ঘটনা মনে পড়লেই আমার ভীষন হাসি পায়। এর পর আমি আর কোনো দিন হিন্দী বা উর্দু শিখা বা বলার চর্চা করি নাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।