এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ছেলেটি বেশ শান্তশিষ্ট , কথাও বলে কম। প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সকলের মত সে - হ্যালো, হাই ডু ইউ ডু বলেনি, সালাম দিয়েছিল। সেদিন থেকেই মনের এক কোনে কেন জানি তার জন্য একটি টান অনুভব করতাম। উপরের ফ্লাটে থাকার দরুন মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যেত, সুন্দর করে একটি হাসি উপহার দিয়ে বলতো - ভাইয়া ভালো আছেন ? তার কখনো হাসি ছাড়া মুখ দেখেছি বলে মনে পড়েনা। মা, বাবা ও এক বোনের সংসারের একমাত্র উপার্যনক্ষম সে।
শত কষ্টে পড়লেও কখনো কারো কাছে হাত পাততে দেখিনি , অথবা শুনিনি। শহরে এসেছিল কাজের সন্ধানে, পেয়েও গিয়েছে ভাল কাজ, কিন্তু যে বেতন পায় তা দিয়ে শহরে ৪ জনের সংসার চালানো সম্ভব না বলেই একলা থাকে, আর বাকি সকলে গ্রামে। বুকের ভিতরে জমে থাকা ভালবাসাকেও কখনো জাগতে দেয়না, শুধুমাত্র দায়িত্বের কথা চিন্তা করে। বন্ধু বান্ধবও বানায়না, অযথা খরচ এড়ানোর জন্য। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে চলে আসতো আমার কাছে, চুপচাপ বসে কাটিয়ে দিত কিছু সময়, চাপাচাপি না করলে সমস্যার কোন কথা ই বলতে চাইতো না।
সেদিন সকালে ঘুম ভেংগে গেল সেলফোনের কর্কষ আওয়াজে, প্রথমে মেজাজটা নিজের উপরে চরমভাবে বিগড়ে গিয়েছিল রাতে সাইলেন্ট করতে ভুলে যাওয়াতে, পরক্ষনের খবরটি পেয়ে মনে হলো, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন, না হলে খবরটি পেতে হয়তো বেশ দেরী হতে পারতো। ফোন নম্বরটি ছেলেটির , কিন্তু কথা বলছে একজন মেয়ে, শুরুতে আরেকবার খটকা লাগলো ... ব্যাপার কি ? ... পরে শুনলাম উনি একজন নার্স, সেল ফোনে "ভাইয়া" নামে আমার নম্বরটি সেভ করা দেখে এখানেই প্রথম ফোন করেছেন.... কারন ভোরবেলা কাজে যাওয়ার পথে আমার ছোট ভাইটির কোম্পানী থেকে দেয়া মোটরসাইকেলটিকে ঘাতক বাসের মাতাল ড্রাইভার পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে। তার অবস্হা আশংকাজনক। ভাইটি এখন আই সি ইউ তে চিকিৎসাধীন আছে ।
সাথে সাথে রেডি হয়ে চললাম হাসপাতালে, টানা ৩ দিন যমদুতের সাথে মরনপণ লড়াই করে নিতান্ত ভাগ্যের জোরে এবারের যাত্রায় সে বেচে গেলেও ডাক্তার বললেন - হাসপাতালে থাকতে হবে কমপক্ষে আরো ৩ সপ্তাহ।
প্রাইভেট ক্লিনিক হওয়ায় খরচ ও আকাশচুম্বী, এর উপরে মরার উপরে খাড়ার ঘা হিসেবে শুনলাম, সামনের সপ্তাহে ছোট বোনকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। অনেক কষ্ট করে সে বেশকিছু টাকা জমিয়েছিল তাদের বসতভিটাকে পুনর্নিমান করবে বলে, যাতে করে ছেলে পক্ষ মেয়ের বাড়ীর কোন খুত না ধরতে পারে, সে কাজও প্রায় শেষ কিন্তু পেমেন্ট সব বাকী। তাও নাকি করতে হবে এ সপ্তাহের ভিতরে। এত ভোরবেলা সে নাকি ঐ টাকা একই গ্রামের এক লোক যিনি সেদিন বাড়ী যাচ্ছিলেন তাকে দেয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। পথের মধ্যে এ্যাক্সিডেন্টের কারনে সে টাকাও হারিয়ে গেছে।
...... কানতে কানতে ছেলেটি বলছিল -- এ জীবন রেখে কি লাভ ভাইয়া, নিজের চোখের সামনে বোনের জীবনের অঘটন, বাবা মা কে টাকার জন্য অন্যের কাছে ছোট হতে দেখার চেয়ে মরে যাওয়াই অনেক ভাল .... এতকিছুর পরেও আত্মসন্মানবোধে পরিপূর্ন ছেলেটির মুখ থেকে একবারের জন্যও সাহায্যের প্রয়োজন কথাটি না শুনে তার প্রতি সন্মানে চোখ ভিজে এলো ... সান্তনাসুচক একটি কথাও বলতে পারছিলাম না, শুধু তার হাতে আলতো চাপ দিয়ে চলে আসছিলাম, ওমনি সে মিষ্ট করে হেসে বলে উঠলো...... ধন্যবাদ ভাইয়া ।
( সে কিভাবে বুঝেছিল সে রাতে আমি কি করতে যাচ্ছি, তা আমি আজো বুঝতে পারিনি .......)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।