যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
রাজর্ষী উঠনের নীল জলে সাতার কাটছে। সিমেন্টের এই গাড়ী বারান্দা তার উঠন, দীঘি। নীল জলে সেখানে মাতোয়ারা সময়ের নিবাস। একটু পরে রাচি নামবে। আজ তার উম্মাদনা দুরন্ত।
যদি বলে গাড়ীর তলে ঝাপ দাও, রাজর্ষী নিমিষেই লাফিয়ে নামবে হত্যায়।
রাচি নেমেই ভ্রু কুচকে ছেলেটিকে দেখে। দোতালায় নতুন ভাড়াটের বেয়াড়া পুত্রধন। মাস ঘুরতেই সাত বছরের বড় রাচির দিকে ভুলভাল দৃষ্টিতে চায়। রাচির দীর্ঘদিনের প্রেমিক রায়হান বিষয়টি নজরে এনেছে।
বলেছে, বাহ বাহ! তোমার তো বেশ ভাল একটা গ্যালান্ট জুটেছে!
রাচি এরপর থেকে বেয়াদপ ছেলেটির দৃষ্টি মাপে। একধরণের তারল্য শরীর মেপে কেমন চোখের তারায় লুটিয়ে পড়ে। একদিন সুযোগ বুঝে বলেই ফেললো, আপুমনি আপনি খুব সুন্দর, আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে! রাচি মুচকি হেসে দস্যিপনাকে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু আজকে মনে হলো ছেলেটি আগেভাগে নেমেছে প্রস্তুতি নিয়ে। রাচির ভার্সিটি আর ছেলেটির কলেজ একই সড়কে।
সময়ও নাকেমুখে। কিছুটা অযাচিত সঙ্গ ছেলেটি এমনিতেই পেয়ে বসেছে।
আজকে রাস্তায় নামতে রাজর্ষীকে অতিরিক্ত সপ্রতিভ মনে হলো। জিজ্ঞেস করলো রাচিকে, আপু আজ ভার্সিটিতে না গিয়ে আমার সাথে ঘুরবেন?
রাচি বিষ্ময়ে বিমুগ্ধ। হেসে বলে, থ্যাংক ইউ, আমার একটু কাজ আছে ভাইয়া!
রাজর্ষী ঘুরে সামনে চলে আসে।
লোক নাই সড়কের সামনে হাটু গেড়ে বসে। বলে, ভালবাসি তোমায়!
রাচি লাফ দিয়ে দুই পা পেছনে। বলে কি পাগলটা! রাজর্ষী বলে, তোমার জন্য এই বুক চিড়ে কলজে বের করে দিতে পারি!
রাচি হতবিহলব হয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে রাজর্ষীর হাতে চকচকে একটা ছোরা দেখতে পায়। নিজের বুকের ঠিক মধ্যেখানে চালিয়ে দেয়।
ঝাপিয়ে রক্তের একটা স্রোত নামে। রাচি অভাবনীয় ঘটনায় চিৎকারে মাতাল হয়ে ওঠে। রাজর্ষীর বুক থেকে বেরুনো ছোপ ছোপ রক্তে শার্ট চুপচুপে।
একটা ট্যাক্সি থামিয়ে কিছুদূরের ক্লিনিকে নিয়ো তোলে। বেশী ভয়ংকর কিছু নয়।
ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিলে রাজর্ষী উঠে দাড়ায়। রাচি তার হাত ধরে বলে, এ কি পাগলপন?
রাচি এখন অনেক ফ্রেন্ডলী। রাজর্ষীকে এরপরে কয়েকদিন একটু একটু সময় দেবার পরিকল্পনা করে। পরের দিন বুকে ব্যান্ডেজ বাধা রাজর্ষীকে নিয়ে আশুলিয়া যায়।
তোমার একটু হাত ধরি?
রাচি অরুচি করে না।
তবে বাতলে দেয়া সীমানা। কেবল এই কবজি পর্যন্ত।
রাজর্ষী এতেই সন্তুষ্ট। হাত নিয়ে তার গবেষণা চলে। বলে তোমার হাতে পুষ্টিহীনতা।
এই হাত দিয়ে কি কাপড়চোপড় ধোও!
রাচি নিজের কাপড় নিজেই ধুতে পছন্দ করে। জিজ্ঞেস করে? কেন?
বড় অযত্নে রাখো হাত দুটি। এই সোনার হাত দুটো আমাকে দিয়ে দাও। তুলে রাখবো মাথার উপরে?
রাচি হাসে। রাজর্ষীর বাচ্চাসুলভ পাগলপন তাকে মুগ্ধও করে।
বলে, কিভাবে হাত দুটো দেই? কেটে দিতে হবে যে!
রাজর্ষী বলে, সেটা তো আর পারবে না! হাত দিতে হলে তোমাকেই চলে আসতে হবে!
হাসতে থাকে দুজন। আশুলিয়ার পানশীতে পড়ন্ত সূর্যের ঢেউ লাগে। মাথার উপরে ল্যান্ডিং এর জন্য ধেয়ে চলা উড়োজাহাজের শোশো গর্জন।
এরপর প্রতিদিন রাচির হাত নিয়ে রাজর্ষীর দস্যিপনা চলে। একদিন বলে, তোমার এই হাতের সাথে আমার হাত সঙ্গম করে।
এই হাত ছুয়ে আমি তোমার ঠোঁট ছুই। রাচি কেঁপে ওঠে। সেই কাঁপন তার বাসায় ফেরার পরেও বইতে থাকে।
রাচির জীবন অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। রায়হানকে সে পাগলের মত ভালবাসে।
ওদিকে রাজর্ষী তার জন্য জীবন দিতে পারে। বিনিদ্র রাত্রি কাটে একটা সমাধানের প্রত্যাশায়। ভোররাতে তার চেহারা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে আনন্দালোকে। পাওয়া গেছে একটা সমাধান।
পরের দিন আবার দুজন আশুলিয়ায়।
সেরিনার ছাদে চেয়ার টেনে সুর্যাস্ত দেখে। রাজর্ষীর হাতে তার হাতদুটো মৈথুনে ব্যস্ত। নখ খুটে দেখে। রাচির শরীরে সুখের আবেশ। বলে, তোমার এই হাত দুটো হলেই চলবে?
রাজর্ষী ঠোঁট ছোয়ায় হাতের পাতায়।
বলে, হুম! দিয়ে দাও আমায়! বলে বুদ হয়ে থাকে রাজর্ষী। কোনদিকে কোন খেয়াল নেই। এই মন্থর সন্ধ্যায়ও সুর্যটা ডুবে যায় বিদ্যুত বেগে।
হঠাৎ রাজর্ষী টের পায় রাচির হাতের উপরে প্রচন্ড একটা ঝাঁকুনি। সেই সাথে আর্তচিৎকার।
লাফ দিয়ে ওঠার আগেই সে দেখতে পায় রাচির ডান হাতটা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন। কবজি থেকে।
একটা বড় ছোরা দিয়ে এক কোপে রাচি কেটে ফেলেছে তার ডান হাত। অজ্ঞান হবার আগে রাজর্ষীর জরিয়ে ধরা বুকের মাঝে অস্ফুট স্বরে বলে, খুশী তো?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।