আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্ঠো ব্যাটাই চোর



প্রফেসর ইউনুস এবং গ্রামীণ ব্যংককে নোবেল দেওয়ার ঘোষণাপত্র পড়ছিলাম, নিম্নস্তর থেকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রচেষ্টার জন্য ২০০৬ সালের নোবেল সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে ড. ইউনুস এবং গ্রামীণ ব্যংককে, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বাস্তবায়ন সম্ভব নয় যদি না সমাজের বিশাল একটা অংশ দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়, গ্রামীণ ব্যংক এবং ইউনুসের মাইক্রোক্রেডিট প্রকল্প এমনই একটি প্রকল্প----- দারিদ্র শান্তির পক্ষে অন্তরায় এমন একটা ভাবনা যখন বিজ্ঞজনের ভদ্র চেহারায় প্রকাশিত হয় তখন দারিদ্রের স্বরুপ এবং দারিদ্রের ভাবনা বাধাগ্রস্থ হয়। দারিদ্র সামাজিক বৈষম্যের প্রকট প্রকাশ। দারিদ্র মানুষের নির্মিত একটি ব্যবস্থা যেখানে সম্পদের অসম বন্টনই দায়ী। আমার দীর্ঘ দিনের এই বিশ্বাস ভেঙে যায় এই বক্তৃতা পড়ে। ইউনুস সাহেবও তার বিশাল নোবেল বক্তৃতায় দারিদ্রকে শান্তির হন্তারক ঘোষণা করেন অবলীলায়।

আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবতে থাকি দারিদ্র কখন কোন যুদ্ধের সুচনা করেছে? তবে ইউনুস সাহেব দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছেন। তিনি তোপ দাগছেন কথার, নোবেল পাওয়ার পর তিনি ব্যস্ত নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে, দেশে বিদেশে তিনি দারিদ্রবিনাশী মাইক্রোক্রেডিট টোটকা বিতরণ করছেন। বাঙালী হিসেবে আমার জাতীয়তাবোধ আপ্লুত হচ্ছে সুখবোধে। দারিদ্র যেমন মানুষের নির্মিত বৈষম্য তেমন ভাবেই যুদ্ধও মানুষের তৈরি অভিশাপ। তবে দরিদ্র ব্যক্তি শুধুমাত্র আক্রান্তের তালিকায় থাকে, তারা কোনো সময়ই শান্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে না।

তারা আক্রান্ত হতে পারে, তারা নির্বিবাদে মরে যেতে পারে। এবং যুদ্ধের উচ্ছিষ্টের লালসায় তারা নির্মম হতে পারে, তবে এইসব ক্ষুন্নবৃত্তি বাদ দিলে যেকোনো যুদ্ধে দারিদ্রের অংশগ্রহন সীমিত। তবে যেকোনো সময়েই দরিদ্রকে কলংকিত করা এবং সামাজিক অব্যবস্থার জন্য দায়ি করবার প্রবনতা রয়েই গেলো। সম্প্রতি বাংলাদেশে সিপিডি একটি প্রকাশনায় জানিয়েছে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১০ শতাংশ গেরোস্থালী সংঘর্ষে ব্যয় হয়। এবং এখানে মূল অভিযোগ বৌ পেটানো কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশের মানুষ বৌ পিটিয়ে দেশের মোট উৎপাদনের ১০ ভাগের এক ভাগ অপচয় করে। হিসাবটা চিন্তিত হওয়ার মতোই, বিশ্বব্যংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর মতে বাংলাদেশ দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে এর জিডিপি গ্রোথ ১০ শতাংশ হতে হবে, তবে বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের নিয়মিত জিডিপি গ্রোথ ৬ শতাংশের কাছাকাছি। বৌ পেটানো কুলাঙ্গারেরা যদি ১০ শতাংশ অপচয় না করতো তবে বার্ষিক জিডিপি গ্রোথ ১৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারতো। আহত বৌয়ের চিকিৎসায় প্রতিবছর প্রতিটা গৃহে ২০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়। এই ব্যয় মূলত ক্ষতের চিকিৎসা, মানসিক অভিঘাত কাটিয়ে উঠা এবং অন্যন্য কারণে অপচয় হয়।

আমি সিপিডির এই গবেষণা পত্রটি পড়বার আগ্রহ নিয়ে ছিলাম, তবে বাংলাদেশে এই সুযোগ কম, তাই জাতিসংঘের তহবিলে করা আরও একটি গবেষণা পত্র পড়লাম, সেটারও বিষয়বস্তু বাংলাদেশের বৌ পেটানো। সেখানেও বলা হয়েছে বাংলাদেশের নারী নির্যাতন এবং গেরোস্থালী সন্ত্রাসে আহত হওয়া ৪৫ শতাংশ নারীর পরিবারের মাসিক আয় ৫০০০ টাকার নীচে, গরিব মানুষের বিনোদন বৌ পেটানো এবং বছর বছর সন্তান জন্ম দেওয়া। আমি দরিদ্রদের নিয়ে লজ্জিত হই, এরা দেশের ও দশের ক্ষতি করছে, বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার কাছাকাছি অবস্থায় জীবনযাপন করে, বাংলাদেশেও যদি সংখ্যাটা এমনই হয় তবে আমাদের প্রায় ৩ কোটি মহিলা নিয়মিত স্বামীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছে, তাদের চিকিৎসা বাবদ যে বিশাল ব্যয় হচ্ছে সেটা দেশের প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, দায়টা কার? দরিদ্র মানুষের, তারা চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি করে দেশের আইনি পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে, এবং এরাই শুধুমাত্র ঢাকা শহরে প্রতি দিন ৬ জনের বেশী খুন হচ্ছে। আমাদের এই দারিদ্র বিষয়ক লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে, যদিও বিশ্বের যুদ্ধগুলো ঘটে সম্পদের লোভে, তবে সেখানে দরিদ্রের সম্পদের লোভ থাকে না, দরিদ্র মানুষ দু মুঠো পেটে পড়লেই খুশী, তারা অন্য দেশের সম্পদের অধিকার চায় না, তারা সেনাবাহিনী পোষার সামর্থ্য রাখে না, তারা যুদ্ধাস্ত্র কিনবার ক্ষমতা রাখে না, তারা প্রতি দিন কয়েক শো কোটি টাকা বোমা মেরে অপচয় করবার ক্ষমতা রাখে না।

এবং এরাই ছোটো ছোটো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে , কারণ যুদ্ধের পরোক্ষ প্রভাবে দেশে দুর্ভিক্ষ এবং মূল্যস্ফ্রীতি ঘটে, এই মূল্যস্ফ্রীতির সাথে পাল্লা দিয়ে তারা আয় বাড়াতে পারে না। আফ্রিকার অধিকাংশ দেশেই চরম দারিদ্র, তবে সেখানে যত হানাহানি সবই করছে সীমিত সম্পদশালী মানুষ, তারাই মূলত শান্তির মূল হন্তারক। হয়তো কোনো দিন অশান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হবে, সে সময়ে কাদের নোবেল দেওয়া প্রয়োজন সেটা আমরা বলতে পারবো। ঔপনিবেশিক এবং সামন্তবাদী ধারণায় পরিচালিত দেশগুলো, বিশ্বের সবচেয়ে যুদ্ধবাজ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমেরিকা, তার সহযোগী যুক্তরাজ্য এবং প্রতিটা দেশের সমরাস্ত্র কারখানার মালিকগুলো একে একে অশান্তিতে নোবেল পাবে, এবং এদের নির্মূল করা যেহেতু সম্ভব না, তাই উদোর পিন্ডি বুধোর ঘারে চাপাতেই হবে, এবং দরিদ্র মানুষকে আরও বেশী উমোদর করে ফেলা মাইক্রোক্রেডিট তত্ত্বের প্রবক্তা যিনি আবিস্কার করেন দারিদ্র বিশ্ব শান্তির পক্ষে হুমকি তাকেই শান্তিতে নোবেল দেওয়া হবে। আমাদের আরও সহজে শান্তিময় বিশ্ব নির্মান করা সম্ভবপর হবে যদি আমরা কোনোভাবে প্রয়োজনীয় শ্রমিকদের রেখে অবশিষ্ট দরিদ্রদের হত্যা করতে পারি, বিশ্বের ৫০ শতাংশ দরিদ্র মানুষকে হত্যা করলেই বিশ্বে চিরস্থায়ী শান্তি বিরাজ করবে, অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ রাখা বাধ্যতামূলক, নইলে আমাদের মিডিয়াবাজ মানুষেরা কিভাবে দেখাবে তারা মানবের উন্নয়নে জীবনপাত করছেন, নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে তারা দরিদ্রদের উন্নয়ন করছেন, যদি কিছু পরিমাণ দরিদ্র মানুষ নাই থাকে তবে তারা বেকার হয়ে যাবেন, তাদের অলস মস্তিস্কে নানাবিধ বদ ভাবনা দেখা যাবে, তারা হয়তো এই অলসতায় যুদ্ধবাজ হয়ে শান্তির প্রতি হুমকি হয়ে যাবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।