হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায়
সমুদ্র আমার বরাবরই ভাল লাগে। ভাল লাগে সাগর পাড়ে ঢেউগুলোর আছড়ে পড়া দেখতে। আরও ভাল লাগে সৈকতে পা ভিজিয়ে বালুর মাঝে হেঁটে বেড়াতে। সাগর পাড়ি দিয়ে যে বাতাসগুলো দেহমন ছুঁয়ে যায়, তারা যেন আমাকে প্রলুব্ধ করে সারাক্ষণ সৈকতে বসে থাকতে। সন্ধায় সূর্য যখন ডুবে যায়, পশ্চিমের রক্তিম আভা সাগরের ঢেউয়ে মিশে যেন একাকার হয়ে যায়।
অল্প দূরে আকাশে মিটিমিটি জ্বলে সন্ধাতারা যেন জানান দেয়, আঁধারে আসছে তারার মিছিল। এমনই এক নান্দনিক পরিবেশ দেখেছিলাম পতেঙ্গায়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে।
আমাদের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগাম। এ মহানগরীর কোল ঘেষেই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত এ সৈকতের দূরত্ব খুব বেশি নয়।
মাত্র ১৭ কিলোমিটার। যেদিন ওখানে গিয়েছিলাম সেদিন ছিল ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৬। চট্টগ্রাম নগর থেকে পতেঙ্গা যাওয়া তেমন কোন কঠিন ব্যাপার নয়। ওখানে যাওয়ার জন্য বাস, ট্যাক্সি, সিএনজি যেকোন কিছুই আপনি ভাড়া করতে পারেন। যাওয়ার রাস্তা খুব একটা খারাপ নয়।
আর দূরত্বই বলে দিচ্ছে যে শহর থেকে সৈকতে যেতে বড় জোর আধ ঘন্টা লাগতে পারে। পতেঙ্গা যাওয়ার পথে অনেক বড় বড় কারখানা চোখে পড়বে। চোখে পড়বে মেরিন একাডেমি। যাওয়ার পথের অনেকটা জুড়েই পাশে থাকবে কর্ণফুলি নদী।
পতেঙ্গা সৈকত তেমন একটা বড় নয়।
কক্সবাজার সৈকতের সাথে তুলনা করলে এটা নিতান্ত শিশু মাত্র। তবে এ সৈকতের আলাদা একটা বিশেষত্ব হচ্ছে প্রায় গোটা সৈকত জুড়েই পাথরের বড় বড় ব্লক ফেলে রাখা হয়েছে। লোকজনকে সৈকতে আসতে হলে ব্লকের উপর দিয়েই আসতে হয়। অনেককেই দেখলাম পাথরের ব্লকের উপর বসে বাদাম খাচ্ছে।
বিকালবেলা সাগর পাড়ে আজ বেশ লোকজন এসেছে।
তবে কক্সবাজারের সাথে এখানে আসা লোকজনদের মধ্যে একটা পার্থক্য লক্ষ্য করলাম। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জুটির সংখ্যা বেশি ছিল। এখানে যে জুটি নেইÑতা কিন্তু নয়। তবে তা সংখ্যায় কম। তবে ফুল ফ্যামিলির সংখ্যা বেশি।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বেশিরভাগই চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দা। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিকাল কাটাতে এসেছে।
এখানে পর্যটকদের জন্য ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা আছে। অনেকেকেই দেখলাম ঘোড়ায় চড়ছে। বেশিরভাগই কিশোর, তরুণ।
তবে কিশোরীর সংখ্যাও কম ছিল না। আরেকটা রোমাঞ্চকর বাহনে চড়ার ব্যবস্থা দেখলাম। সেটি হচ্ছে স্পীডবোট। যাত্রী নিয়ে স্পীডবোড তীর থেকে সাগরের একটু ভেতরের দিকে যাচ্ছে। দেখলাম ঢেউয়ের তোড়ে সেটার প্রায উল্টে যাবার জোগাড় হয়েছে।
যাত্রীরা ভয়ে বিকট চিৎকার জুড়ে দিচ্ছে। লোকজন তীর থেকে এ দৃশ্য দেখছে। আবার তারাই স্পীডবোটে চড়ে ঢেউয়ের মাঝে দুলছে, আবার চিৎকার করছ। সে এক অদ্ভুত মজা!
কক্সবাজারের মত এখানেও শামুক-ঝিনুকের মালা, গয়না, শো-পিচ বিক্রি হতে দেখলাম। তবে দাম অনেক বেশি।
কখনো কি সাগর সঙ্গম দেখেছেন? না দেখলে তাড়াতাড়ি পতেঙ্গা চলে যান। এমন বিরল দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। কর্ণফুলি নদী আর বঙ্গোপসাগর যেখানে মিশেছে সেখানে তাকালে পানির পার্থক্য স্পষ্ট চোখে পড়ে। সত্যিকারের সাগর সঙ্গম কি তা এ দৃশ্য স্বচক্ষে না দেখলে কখনোই বোঝা যাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।