সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
অবশেষে জেনারেল মোশাররফ চলে গেলেন। পাকিস্তানের মানুষ উৎসব করেতেছে। বিশেষ করে আইনজীবীরা উল্লসিত। প্রধান বিচারপতি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সহ হাইকোর্টের বিচারপতিদের অকার্যকর ও বরখাস্ত করার পর মোশাররফ-বিরোধী বিক্ষোভ বড় আকার ধারণ করে।
পাকিস্তান বিক্ষোভ ও গণঅভ্যুত্থানের দেশ নয়। ফলে সেইখানে কোনো বিক্ষোভ ও গণঅভ্যৃত্থানে সরকার পতনের নজির নাই। এবারও তা হলো না। মোশাররফ যে প্রক্রিয়ায় সরে গেলেন তার পশ্চাৎপটে একটা নির্বাচন ছাড়া জনগণের প্রত্যক্ষ কোনো চাপ তার ওপর আছিল না। ক্ষমতার জটিল হিসাব-নিকাশের মধ্য দিয়ে তাকে সরে যেতে হলো।
এর মধ্যে কত ঘটনা ঘটলো।
ইফতেফার আহমেদ চৌধুরী বরখাস্তও গৃহবন্দী হলেন।
বেনজির ভুট্টো ফিরলেন। ফেরার পথেই তার গাড়ি বহরে হামলা হলো।
নওয়াজ শরিফ ফিরলেন।
বেনজির গুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হলেন।
মোশাররফ সেনাবাহিনী প্রধানের পদ ত্যাগ করলেন।
আশফাক কায়ানী সেনাপ্রধান হলেন।
নির্বাচন হলো। বেনজিরের দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি জয় পেল।
ঐতিহাসিক কোয়ালিশন সরকারের ঘোষণা এলো মুসলিম লীগ ও পিপিপির সমন্বয়ে।
মুসলীম লীগ মোশাররফকে সরানো ও বিচারপতিদের পুনর্বহালের ইস্যুতে কোয়ালিশন থেকে সরে এলো।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর করে এলেন। অভিশংসনের প্রস্তুতি নেয়া হলো।
এবং মোশাররফ পদত্যাগ করলেন।
ঘটনাপ্রবাহ তো বলে মোশাররফকে সরে যেতেই হতো। পৃথিবীর বহু দেশে দুই টার্মের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন না সাংবিধানিকভাবে। জেনারেল মোশাররফ ক্ষমতা নেন ১৯৯৯ সালে। ২০০৮ সালে তো তার ক্ষমতার ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ে তার সরে যাওয়াকে কোনো ভাবে পরাজয় তো বলা যায় না।
কিন্তু মোশাররফের জন্য এটা পরাজয়ই বটে। কারণ পাকিস্তানের মসনদে তার প্রয়োজন ফুরায়নি।
হয়তো আন্তর্জাতিক স্বার্থের কারণে তার আরও কিছুদিন থাকা পড়তো। কিন্তু নওয়াজ শরিফের উত্থান তা কষ্টকর করে তুলেছে। পিপিপি তো শেষ পর্যন্ত সমঝোতাই চেয়েছিল।
কিন্তু নওয়াজ খুব কড়া ভূমিকা পালন করেছেন। মোশাররফ পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের লোক। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-ইসরাইলের স্বার্থের প্রতিভূ। তিনি গত নয় বছর ধরে এই স্বার্থ রক্ষা করেছেন। যত ভাবে পেরেছেন, অবদান রেখেছেন।
কিন্তু তারপরও চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত হয় নাই।
মোশাররফ এসেছিলেন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের প্রস্তুতির চূড়ান্ত সময়ে। তার সক্রিয় সমর্থনে ও সহযোগিতায় আফগানিস্তানে ন্যাটোর অভিযান পরিচালিত হয়। আফগানিস্তান বেদখল হয় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। সেখানে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ন্যাটো বাহিনীর জয়ে এখন ক্ষয় ধরেছে। নতুন করে তালেবানরা সংঘটিত হচ্ছে। পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশ তো বটেই, মেইন ল্যান্ডে পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের আগাগোনা বেড়েছে। আফগানিস্তানের যুদ্ধ এখন শুধু আফগানিস্তানের ব্যাপার না। পাকিস্তানেরও ব্যাপার।
ফলে, পরিস্থিতি বেশ প্যাঁচ খাইছে।
মোশররফ আর বুশ এই যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী করা ছাড়া কোনো সমাধান দিতে পারেন নাই।
যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের পাকিস্তান রাষ্ট্রের কমান্ডার ইন চীফ এখন পরাস্ত। নিশ্চয়ই নতুন কমান্ডার খুঁজবে তারা। কারণ সিভিল সরকারের ভেতর থেকে তেমন আস্থাভাজন কমান্ডার তারা কখনোই পাবে না।
চিন্তা নাই। পাকিস্তানে গণতন্ত্র তাদের মাথাব্যথার বিষয় না। তাদের মাথাব্যথা আফগানিস্তান আর ইরাকের গণতন্ত্র নিয়ে। সো, পাকিস্তানে সাধারণ মানুষ, কোর্ট-কাচারির কী হইলো সেটা ইস্যু না। ইস্যু হইলো দে নিড এ নিউ কমান্ডার ইন পাকিস্তান সেক্টর।
কে তিনি?
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রচুর রাষ্ট্রপ্রধান তৈয়ার করছে অতীতে। সেখান থেকে কাউকে না কাউকে তো পাওয়াই যাবে।
এক মোশাররফ গেছে তো কী হইছে। আরও অনেক মোশাররফ আছে।
পাকিস্তান নিয়া আমার লেখা ব্লগ :
Click This Link
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।