ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস
[Nothing is obvious except death.মৃত্য অনিবার্য। তারপরেও আমার মতো লেইট্ টোয়েনটিজের এক তরুনের ভাবনায় মৃত্যচিন্তা’র উপস্থিতি একটু অস্বাভাবিক কিছুটা অস্বস্তিকরও বটে। হয়তোবা আফ্রিকায় অলস, একাকী, নিঃসংগ,নির্জন দিন-রাত্রিই আমার চিন্তায় মৃত্য’কে বারেবারে টেনে আনে,স্বপ্নের ঘোরে দুঃস্বপ্ন হিসেবে হানা দিতে
প্রলুব্ধ করে। নাতিদীর্ঘ জীবনে যে কতক মৃতের ঘটনা আমায় ভীষনভাবে আলোড়িত করেছে,তন্মধ্যে বুয়েটের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি’র অপমৃত্য প্রধানতম। ২০০২,সালের ৮ই জুন ছাত্রদলের খুনী দু-গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নির্মম বলি রাজনীতি থেকে বহুদুরে অবস্থানকারী এক নির্দোষ প্রাণ।
কামড়া-কামড়ী’র রাজনীতি আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিদারুন ব্যার্থতার এক ক্ল্যাসিক দৃষ্টান্ত। মেধার বিচ্ছুরণে আলোকিত, গর্বিত প্র’বি’র ইতিহাসে এক ব্ল্যাক স্পট,কালো অধ্যায়। ]
প্রথম অংশঃ
৮ই জুন,২০০২ : অতঃপর একটি খুনী বুলেট তাকে অকস্মাৎ থামিয়ে দেয়-১
আচ্ছা, আমি কি সেদিন কেঁদেছিলাম। এক অচেনা-অজানা মেয়ে, আগে কখণো দেখিনি,নামও শুনিনি,শুধু একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত এবং সে এখণ মৃত-এই সত্যটা কি কান্নার মতে যথেষ্ট আবেগ’কে আনয়ন করার জন্য যথেষ্ট। আমি দূর্বল চিত্তের মানুষ।
তারপরও আমি জানি,আমি কাঁদিনি যদিওবা দু-এক ফোটা অশ্রু ঝরে থাকে ,সেটা নিতান্তই বেঁচে থাকার আনন্দে। খুণীর ছড়্ড়া বুলেট অন্য যে কাউকে বিদ্ধ করেছে আমাকে তো আর নয়;আমি এখণো জীবিত। এমনই প্রবল আমার আত্মপ্রেম। যদিওবা সেই গুলিবিদ্ধ আত্মা আমাদের আর অপরিচিত হয়ে থাকেনি।
জিব্রানের ভাষায়,
No strangers are you among us, nor a guest, but
our son and our dearly beloved.
অতঃপর আমরা ফুঁসে উঠেছিলাম,আমরা গর্জে উঠেছিলাম;আমরা হিংস্র হতে চেয়েছিলাম,আমরা প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম।
মিছিল-অবরোধ-স্ট্রাইক-শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত-হল ভ্যাকান্ট-বিশেষ নিরাপত্তা তল্লাশী-পুণরায় একাডেমিক কার্যক্রম চালু-মানববন্ধন-স্ট্রাইক-অনশন-ঘেরাও-আলটিমেটাম-পুলিশী আক্রমন-পুলিশী নির্যাতন-বিশ্ববিদ্যালয় আবারো বন্ধ ঘোযনা-প্রহসনের বিচার............
পলাতক প্রধান আসামীর কারাদন্ড...। সেই পলাতক আসামি এখনো পলাতক.........!অর্জিত হয়নি প্রায় কোন দাবীই,এমনকি সনী’র নামে এখণো নামহীন বুয়েটের ছাত্রীহলের নাম।
ব্যার্থ আন্দোলন,নিদারুন হতাশা।
আমরা নিজেদেরকে পরাজিত ভেবেছিলাম,হতাশা আমাদের আষ্ঠেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছিলো।
তবু অনেকঅনেক দিন পরে নির্জনে বসে একলা ভাবি, “কিছুই কি অর্জিত হয়নি”!
আমার কানে বাজে পিট সিগারের গাওয়া কয়েকটি লাইন।
Only thing we did was wrong,
Staying in the wilderness too long
The only thing we did was right
Was the day we began to fight?
সময়ে কোন শোকই না প্রশমিত হয়। সময়ের সংগে অসমান যুদ্ধে কোন আবেগেরই বা পরিত্রান আছে। গোগলের বয়ানে পড়েছিলাম।
“আমি এক ব্যাক্তিকে জানতাম,যার মাঝে যৌবনের শক্তির স্ফুরণ ঘটেছিল,সে ছিল মহত্ত্বের এবং অন্যান্য সদ্গুনের আধার। সে প্রেমে পড়েছিলো আর সেই প্রেম ছিলো কমনীয়,উদগ্র,প্রমত্ত,দুঃসাহসী,সরল।
কিন্তু তার ভালবাসার পাত্রী-দেবী প্রতিমার মতো সুন্দরী কোমল মেয়েটি-মৃত্যের করাল গ্রাসে পতিত হল। যে ভয়ানক মানসিক যন্ত্রণার বিক্ষোভে ,যে প্রমত্ত বিষন্নতার দহনে,যে সর্বগ্রাসী হতাশায় এই হতভাগ্য প্রেমিকটি নিপীড়িত হচ্ছিল তেমন আমি কদাচ দেখেনি।
বাড়ির লোকের তাকে চোখে চোখে রাখত;যা দিয়ে সে আত্মহত্যা করতে পারে এমন সমস্ত কিছুই তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়। দু-সপ্তাহ পর সে একটু ধাতস্থ হলো; তাকে স্বাধীনতা দেয়া হলো। আর সেই স্বাধীনতার সুযোগে সে যা করল তা হল পিস্তল কেনা এবং সেই পিস্তল দিয়ে সে তার মাথার খুলি চূর্ন-বিচূর্ণ করে ফেললো।
ভাগ্যক্রমে এক যশস্বী ডাক্তার সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাকে সারিয়ে তুললো। তার উপর আরও কড়া নজর রাখা হতে লাগল। এমনকি টেবিলে খেতে বসার সময় তার পাশে ছুরি পর্যন্ত রাখা হত না;কিন্তু শিগগিরই সে আরেকটা সুযোগ বের করলো-চলন্ত গাড়ির তলায় ঝাঁপ দিলো। তার হাত-পা ভাঙল;কিন্তু এবারেও তাকে সারিয়ে তোলা হল। এর একবছর পর আমি তাকে দেখতে পাই এক জনাকীর্ন হল ঘরে;সে টেবিলের ধারে বসে একটা তাসের চাল দিচ্ছিল স্ফুর্তির সংগে ,তার চেয়ারের উপর কনুইয়ের ভর দিয়ে তার তরুণী বধূটি পয়েণ্টের হিসাব রাখছিলো”।
ব্যাক্তিমানুষ চিরদিন বেঁচে থাকেনা,তার সৃষ্টশীলতা টিকে থাকে। কবি হয়তো অনিবার্য মৃত্যকে ফাঁকি দিতে পারেনা কিন্তু কবিতা বেঁচে থাকে। সাধারণ এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সনি হয়ে সময়ের আবর্তে,কালের ধুলোয় হারিয়ে যাবে কিন্তু তার স্মৃতিফলকের মতোই আমাদের কারো কারো মনে থাকবে ,আনাড়ী হাতে লেখা তার কবিতার ক’টি লাইন,
এই আমি খুব আবেগপ্রবণ
এই আমি খুব জেদি
এই আমি খুব ছেলেমানুষ
এই আমি কিছুটা বাস্তব
এই আমি খুব একা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।