দ্যা ব্লগার অলসো.....
স্বপ্নচোর- ১৩ তম পর্ব
ব্যাংকে যে টাকা রেখেছিলো জয় অনেক আগে, গিয়ে দেখা গেল সেই টাকার পরিমাণ বেড়ে এখন দু’লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ওদের গ্রামে জমির মূল্য তেমন একটা বেশি নয়। অল্প টাকায় সেরকম জায়গা পাওয়া যাবে, ভাবল জয়। একইভাবে টিনচালার একটা বেড়ার ঘর তুলতেও তেমন একটা খরচ হবেনা। বাকী যা থাকবে তা দিয়ে মুরগীর ছোট্ট একটা ফার্ম খোলা যায়।
টাকা শর্ট পরে গেলে নাহয় মারুফের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যাবে। দারুণ প্রসাদ অনুভব করল জয়, জেবাকে ওর পরিকল্পনার কথা শোনালে ও নিশ্চয়ই খুশি হবে।
‘আমার জীবনে এই দিন আসবে, আমি কখনও ভাবিনি, এমনিতেই কিছু টাকা ব্যাংকে রেখেছিলাম’ জেবাকে বলল জয়, ‘আর সেই টাকা বেড়ে এখন দু’লাখ টাকা হয়েছে। জেবা, আমরা তো খুব সাধারণ একটা জীবন চাই, তাইনা? ছোট্ট একটা ঘর, আর ঘর ভর্তি ভালোবাসা। ’
‘হ্যাঁ, আমাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য এই টাকাই যথেষ্ঠ জয়।
’
‘তোমার কষ্ট হবে নাতো? তুমিতো সারাজীবন বিত্তের মাঝে বড় হয়েছো। গ্রামের সাধারণ জীবনে মানিয়ে নিতে পারবেতো?’
‘পারবো জয়, আমাকে পারতেই হবে। ’
‘ঠিক আছে, তাহলে কালই আমরা বিয়ে করে ফেলবো। কয়েকদিন এখানে থাকবো, গ্রামে জায়গা দেখতে হবে। কাল ব্যাংক থেকে টাকা তুলবো, পরে সব ব্যবস্থা করা যাবে, কি বলো?’
‘হ্যাঁ।
’ সায় দিলো জেবা।
ব্যাংক থেকে টাকাগুলো তুলে নিলো জয়। মনে খুশি, চোখে স্বপ্ন। প্রথমে জেবাকে নিয়ে কাজী অফিসে গিয়েই বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে। ওর জন্য একটা উপহার কেনা দরকার, কি কেনা যায়? ভেবে-চিন্তে বারোশো টাকা দিয়ে ওর জন্য একটা আংটি কিনল।
এতে যদিও অনেক টাকা বেরিয়ে গেলো, তবু নতুন বউ হিসেবে ওকে একটা কিছু দেওয়া দরকার, ভাবল জয়।
‘তুমি খুশিতো জেবা?’ কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করল জয়, রিকশায় করে যাচ্ছে ওরা।
‘এতো খুশি আমার জীবনে কখনও আসেনি জয়। ’ ওর অন্তরের গভীর থেকে যেন কথাগুলো বেরুলো, এমনই মনে হলো জয়ের।
‘জানো, মারুফ কি বলেছে আমাকে?’ বলল জয়, বন্ধু মারুফ সাক্ষী হয়েছে ওদের বিয়েতে।
‘কী?’
‘বলেছে, তোর জীবনে আবার আলো এসেছে, পূর্ণিমা রাতের আলোর চেয়ে হাজারগুন বেশি দীপ্যমান। ’
জেবার দু’গাল লাল আপেলের আকার নিল, লজ্জা পেয়েছে।
রুমে গিয়ে দেখা গেল সারা ঘর ফুলে ফুলে ভরে আছে। বিছানার মাঝখানে ফুল দিয়ে হার্ট বানানো হয়েছে, আর তার মাঝখানে বড় বড় হরফে লেখা-‘‘বন্ধু মারুফ, তোর যুগল জীবনের শুভকামনায়। ’’
‘দেখো পাগলটা কি করেছে।
’ হেসে বলল জয়, মনে মনে দারুণ খুশি, মারুফ ওকে আসলেই ভালোবাসে, এটা উপলব্দি করে।
‘তোমার বন্ধু মোটেও পাগল নয়, বরং সে খুব সচেতন। আরে বুদ্ধু, বাসর রাতের বিছানা ফুল দিয়ে সাজাতে হয় সেটাও মনে নেই?’ হাসল জেবাও, সেও খুশি, এতো ফুল দেখে।
‘ঠিক আছে ম্যাডাম, এই ফুলশয্যাকে স্মরণীয় করতে তৈরী হোন, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি হাওয়া খাওয়ার জন্য। ’
‘দেখো, রাত আটটার আগেই ফিরবে।
প্রথম রাত, প্রথম পরীক্ষা, দেরি করে আসা মানে ফেল করা। আর যদি ফেল করো তোমার কপালে খারাবী আছে বলে দিলাম। ’
‘সে তোমাকে বলতে হবেনা। ’ গলার স্বর নামিয়ে আবার বলল ‘ইচ্ছে তো করছে এখনই বাসর রাতটা সেরে ফেলি, জরুরী কাজ পরে আছে, এজন্যই যাচ্ছি। ’
‘চুপ, অসভ্য কোথাকার!’ বলল জেবা, লজ্জায় লাজরাঙা হয়ে গেছে ওর দুটি গাল।
হাসল জয়, যেতে যেতে বলল ‘বাই হানি, সি ইউ টুনাইট। ’
‘বাই। ’
ঘড়ি দেখল জয়, সাতটা দশ। ফেরার তাগিদ অনুভব করলো ও, জেবা অপেক্ষা করছে ওর জন্য। বস্তিতে গিয়েছিলো, সেখানকার পাট চুকিয়ে এসছে।
ভাড়া বাকী ছিলো, দিয়ে দিয়েছে। বস্তির কর্তা কাশেম জিজ্ঞেস করেছিলো-‘কি ব্যাপার, ঘর ছেড়ে দিচ্ছো?’
‘এতোদিন পর আমার নিজের ঘর হতে যাচ্ছে কাশেম ভাই, আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। ’
‘আল্লাহ তোমাকে সুখী করুক জয়। ’
ওখান থেকে সোজা ফখরুদ্দিনের দোকানে। জয় যখন বললো ও বিয়ে করতে যাচ্ছে, সত্যি সত্যি ফখরুদ্দিন কষ্ট পেলো।
সে তখনও পর্যন্ত আশায় ছিলো, জয় ওর মেয়েকে বিয়ে করবে। ওর মন খারাপ হয়ে গেলো ফখরুদ্দিনের চেহারা দেখে। বললো-‘আসলে আমি হঠাৎ করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর যাকে আমি বিয়ে করছি, সে আমার....., মনের মানুষ। ’
‘বুঝতে পেরেছি। ’ গম্ভীর গলায় বলল ফখরুদ্দিন।
‘সখিনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে আমাকে খবর দিবেন, আমি অবশ্যই আসব। ’
কিছু বললনা ফখরুদ্দিন, জয়ের মনে হলো ওখানে থাকা আর ঠিক হচ্ছেনা ওর, চলে এলো।
তারপর ষ্টেশনরোড, প্রীতমকে ওখানেই পাওয়া গেলো।
‘কি!, বদ্দা, তুঁই বিয়ে গইরতে লাইগ্যো?’ (কি! ভাইয়া, তুমি বিয়ে করছো?’)
‘হ্যাঁ, শুধু তাই না, আমরা গ্রামেও চলে যাচ্ছি, সেখানেই থাকবো, তোর খুশি লাগছেনা?’
এরপর ওকে অবাক করে দিয়ে কাঁদতে লাগলো প্রীতম, ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল- ‘আঁই খুশি অই বদ্দা, খুশি অই। নইতাম কা, এক গরছাড়ার গর অর, ইতারতন বেশি খুশির হতা আর কি অইত ফারে।
’ (আমি খুশি হয়েছি ভাইয়া, খুশি হয়েছি। হবোনা কেন, এক ঘরছাড়ার ঘর হচ্ছে, এরচে বেশি খুশির কথা আর কি হতে পারে। )
ওকে জড়িয়ে ধরলো জয়, ওর পিঠে হাত বুলাতে লাগলো, বললো-‘কাঁদিসনা, তোর কান্না আমাকে কষ্ট দেয়। তুই ভাবিসনা, আমি তোর সাথে যোগাযোগ রাখব। ’
প্রীতমের কান্নার কারণ বুঝতে পারে জয়, ছেলেটা হয়তো ভাবছে, এরপর ওকে হয়তো ভুলে যাবে সে।
‘তোকে আমি কখনও ভুলবনারে, কখনও ভুলবনা। গ্রামে গিয়ে তো আমি ফার্ম দিবো, সেখানে তো একটা ছেলে লাগবেই। তোকে নিয়ে যাবো। দুজনে মিলে ফার্মটা দাঁড় করাব, আজ এই ঘরছাড়ার ঘর হতে যাচ্ছে, তোকে কি করে পর করি, ভাই’ মনে মনে বললো জয়।
চলবে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।