আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জল-বনদস্যু রাজু বনাম সরকার



সাম্প্রতিক খবরে প্রকাশ, সুন্দরবনের কুখ্যাত বন- জলদস্যু রাজু বাহিনীর হাতে ১৩ দিন বন্দি থাকার পর মুক্তিপণ দিয়ে ৪০ জেলে ফিরে এসেছেন, আর দস্যু রাজুর বন্দিশালায় মুক্তিপণ আদায়ে অপারগতায় এখনও ৬৩ জেলে বন্দী রয়েছেন। এর আগেও রাজুবাহিনী সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে। সরকার পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে রাজুবাহিনীকে কব্জা করার যাবতীয় সম্ভাব্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু রাজুবাহিনীর মত একটি দস্যুদলকে দমন করতে সরকারবাহিনীর কতো সময় প্রয়োজন যদি সরকারের দায়িত্বশীল কর্তাদের সদিচ্ছা সত্যিই থেকে থাকে ! একটি দস্যুদল সুন্দরবনএলাকা জুড়ে ত্রাস চালাবে আর নিরীহ গরীব জেলে ও গ্রামবাসীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে নিঃশেষ করে দেবে আর সরকারী কর্তারা শুধু লোক-দেখানো তথাকথিত ‘তৎপরতা’ এর আত্মসন্তুষ্টি নিয়েই মনে করবেন তাঁদের কর্তব্য সম্পন্ন হলো, তাহলে এই বিশাল সেনাবাহিনী নামক শ্বেতহস্তী পোষার কোন দরকার ! রাজু বাহিনীর মতো একটি বন- জলদস্যুদলকে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেবার ক্ষমতাই যদি আমাদের সেনাবাহিনীর না থাকবে তাহলে এই বাহিনী কোন যুদ্ধ করারই তো যোগ্যতা রাখে না। পুলিশবাহিনীর কথা উল্লেখ করে লাভ নেই কারণ, দল ও মত নির্বিশেষে দেশের সবাই স্বীকার করবেন যে, একমাত্র ক্ষমতায় অধিষ্ট সরকারী দলের হয়ে পেটোয়াবাহিনীর কাজ করা আর নিরীহ জনগণের জীবনে চূড়ান্ত অভিশাপ হওয়া ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর আর অন্য কোন উল্লেখযোগ্য ভুমিকা বিগত ২৫ বছরে জনগণ মূলতঃ দেখেনি, সেকথা যে কোন পক্ষপাতহীন মানুষই স্বীকার করবেন একবাক্যে ।

রাজুবাহিনী যদি জল ও বনপদে ত্রাসকারী দস্যু হয়, তবে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী সরকারী তকমাধারী জনপদের দস্যু হওয়া ব্যতীত আর কোন যোগ্যতা কোনভাবেই প্রমাণ করতে পারেনি । সত্যিকার অর্থেই যদি কোন সরকার আজ অবধি শুধুমাত্র পুলিশবাহিনীর সকল কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নিয়োগ কালীন জমা টাকা ও সম্পত্তির সাথে তাদের নিয়োগ পরবর্তীকালীন জমা টাকা ও সম্পদের হিসাব নিতেন প্রকৃত সততা ও সদিচ্ছার অনুবর্তী হয়ে, তাহলে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী সরকারী তকমাধারী জনপদের দস্যু ব্যতীত আর কিছুই নয়, একথা ১০০% প্রমাণিত হয়ে যেতো । কিন্তু চোর বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? তেমন সৎসাহসী সরকারও তো বাংলাদেশের দূর্ভাগা জনগণ আজ অবধি দেখেইনি । মাঝখানে থেকে সবসময়েই ভূক্তভোগী সেই নিরীহ জনগণই । ওরা রাজুবাহিনীর ত্রাসের যেমন শিকার, তেমনিই বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী ও সরকারী বিভিন্ন দফতরের লোভী ঘুষখোর দূর্নীতিবাজ কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সরকারী ত্রাসেরও শিকার ।

কোথায় যাবে এই দূর্ভাগা দেশের মানুষগুলো ! কোথায় মিলবে এই অভাগাদের আশ্রয়, কে শোনাবে তাদের অমিয় আশার ভবিষ্যতবাণী ? যথার্থ ও উপযুক্ত ট্রেনিং প্রাপ্ত সেনাবাহিনীর একটি দলকে যদি পর্যাপ্ত রসদ ও অস্ত্র দিয়ে রাজুবাহিনীকে দমনের দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে একথা নিশ্চিত যে বড়জোর একসপ্তাহের মধ্যেই রাজুবাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে আর এলাকার গরীব জনগণও হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে, আর সেই সাথে ভবিষ্যতে ‘রাজু’ হবার আকাঙ্খা পোষণকারী পাতি দস্যুগুলোও পাততাড়ি গোটাবে । কিন্তু সেই জরুরী উদ্যোগ সরকার নেয় না কেনো ! কি রহস্য এই উদ্যোগ না নেয়ার পেছনে ! সুন্দরবন এলাকার এই অতি দরিদ্র জনপদে বসবাসকারী এই অভাগা মানুষগুলোর মুখে নেই নিত্য আহার, পরনেও নেই লজ্জা নিবারণের প্রকৃত বস্ত্র, বাসের নেই একটি নিরাপদ ঘর, আর এদেরই ওপর যখন রাজু বাহিনীর মতো দস্যুদের ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর মতো সরকারী উর্দিধারীদের মনুষ্য আত্মাবিহীন নির্ম্মমতার খড়্গ আসে নেমে, তখন ওদের খবর বিশ্ববাসীকে জানাবার সৎসাহস নিয়ে এগিয়ে আসেন যদি কোন মমতাবান সাংবাদিক নিজের জীবনেরও তোয়াক্কা না করে, তখনও ওই অভাগাগুলো জীবনের ভয়ে কাতর হয়ে না না করে দিগন্তবিদারী কান্নায় নিজের পরিচয় ও মুখ লুকায়, কারণ ওদের রক্ষা করতে কোন দল বা নেতা, কোন সরকার বা দয়াবান মন্ত্রী তো এগিয়ে আসবেন না । আমাদের দেশের মন্ত্রীরা, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি কি সংবাদপত্রগুলো পড়েন বা সেই মহার্ঘ সময় কি তাঁদের হয় কখনো ? যে জনগণের ভোটে তাঁরা আজ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি সেই জনগণের জীবনের অঘোর দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো যে তাঁদের নিত্য কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত তা কি ওঁরা একবারের জন্যেও ভেবে দেখেছেন কখনো ? সর্ব্ব-মাননীয় মন্ত্রী,প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি মহোদয়গণ কি একবার দয়া করে আপন আপন কর্তব্যের প্রতি সজাগ হবেন !! দোহাই লাগে আপনাদের মন্ত্রীত্বের, নাহলে সুন্দরবন এলাকার এই অতি অভাগা মানুষগুলোর আত্মার অভিশাপে আপনারাও একদিন অন্যকিসিমের ‘রাজু’ বাহিনীর হাতে মার খেয়ে যাবেন কিন্তু, সেদিনও বড় দূরে নয় !!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।