আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নচোর-১৩ তম র্পব

দ্যা ব্লগার অলসো.....

স্বপ্নচোর-১২তম পর্ব পুরোপুরি নৈরাশ্যবাদী হয়ে যাওয়া জয়ের জীবনে যেন আশার আলো বয়ে আনলো জেবা। আর বিত্ত আর প্রাচুর্যের মাঝে বড় হওয়া জেবার জীবনে যে অমানিশার আঁধার নেমেছিলো, সেটা এক নিমিষেই কেটে গেলো জয়ের সান্নিধ্যে এসে। সুগন্ধায় জয়ের একটা ফ্ল্যাট আছে, টিনার দেওয়া। সেটা ব্যবহার করা হতো তখনি যখন সে কোন মেয়েকে ফাঁদে ফেলতো। অনেকদিন ধরে জয় ওদিকটাই যাচ্ছিলোনা।

জেবাকে কোথায় রাখবে, এ চিন্তায় ও যখন অস্থির, হঠাৎই মনে পড়লো এই ফ্ল্যাটটার কথা। সেই দিন থেকেই এখানে আছে জেবা। জয় প্রায় সারাদিন এখানেই কাটায়, রাতে চলে যায় বস্তিতে। আর যাওয়ার সময় প্রতিদিনই জেবার মুখে একটা কথা শুনতে হয় ওকে, আর সেটা হচ্ছে- আমার পক্ষে এখানে এভাবে থাকা সম্ভব নয়। জয় এর কোন উত্তর দিতে পারেনা।

প্রতিদিনই ওদের মধ্যে অনেক কথা হয়, নিজেদের স্বপ্নের কথা বলে ওরা, বলে আগামীর কথা। জয় আবৃত্তি করতো কলেজে থাকার সময়, এ শহরে আসার পর ঘুণে ধরা জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া সব সুকুমার প্রবৃত্তির সাথে এটাও শামিল হয়েছিলো। জেবার সান্নিধ্যে এসে সুপ্ত সেই গুনটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। একদিন ওকে কবিতা শোনাচ্ছিলো জয়, প্রিয় কবি মহাদেব সাহার কবিতা; ‘শূন্যতা আমার সঙ্গী, শূন্যতা আমার সহোদর, দূর বনে পাতা ঝরে, ঘুমায় পাথর.... শূন্যতা আমার সঙ্গী, তাকে নিয়ে কীরকম মগ্ন হয়ে থাকি, তারই সঙ্গে করি বাক্যালাপ, হয়তো তাকেই...’ ‘না, নিরাশার কবিতা শুনতে চাইনা, আশার বানী শোনাও,’ মাঝপথে তাকে থামিয়ে দেয় জেবা। ‘আমার চারিদিকে এতো শূন্যতা বিরাজমান ছিলো, ভুলেই গিয়েছিলাম পূর্ণতা কাকে বলে।

জেবা, তুমি কি স্বপ্নচারিণী? যদি তাই হয়ে থাকো তাহলে এই কবিতাটা শোনো: ‘‘মাঝে মাঝে ভালো লাগে দেশী নৌকো মেঘলা দুপুর তারাভরা কোনো রাত, নিরিবিলি গাঁয়ের পুকুর, ভালো লাগে এই মেঘ, ভালো লাগে এই বেঁচে থাকা কেন যেন ভালো লাগে তোমাকেই ফিরে ফিরে ডাকা; হঠাৎ কেমন যেন মনে হয় সবকিছুই ভালো দুইচোখে পড়ে এসে ভালোবেসে পৃথিবীর আলো, মাঝে মাঝে ভালো লাগে তুচ্ছ এই পুরোনো জীবন কোনো কোনোদিন খুব ভালো হয়ে যায় এই মন। ’’ ‘তোমার কন্ঠস্বরে কি এমন মাদকতা, যা আমাকে এলোমেলো করে দেয়, আমি জানি না জয়, এও জানিনা আমি কোথায় চলেছি, কি করছি’ বলে জেবা, উদাস দুটি চোখে রাজ্যের বিষন্নতা। ‘আমিও জানি না, যেখানে আমি তোমাকে নিয়ে যেতে যাচ্ছি, সেখানে নিয়ে যেতে পারবো কিনা, তবে তোমার প্রতি আমার অনুরোধ, একবার অন্তত আমার দুটি হাতে তোমার হাত রাখো। আমরা দুজন তো এমনিতেই ডুবে ছিলাম আঁধারে, যদি লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারি, নাহয় সেই আঁধারেই হারিয়ে যাবো। ’ জয়ের এই উচ্চারণ জেবার মনের সব দ্বিধা-দ্বন্ধ এক লহমায় দুর করে দিলো, ‘আমরা পারবো জয়, অবশ্যই পারবো।

’ বললো সে। এরপর ওরা খুব সহজেই একে অপরের কাছে চলে আসে। দুজন দুজনকে বুঝতে চেষ্টা করে, পৌঁছাতে চায় একে অপরের মনের গহীনে, জায়গা করে নেয় সেখানে। ‘জেবা, বলোতো মানুষ স্বপ্ন কেন দেখে?’ জিজ্ঞেস করলো জয়, জেবাকে সাথে নিয়ে কর্ণফুলির তীরে বেড়াতে এসেছে ও। ‘কেন?’ প্রশ্ন জেবার।

‘মানুষ স্বপ্ন দেখে, কারণ সে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। আমার মনে হয় কি জান? মনে হয়, যে স্বপ্ন দেখেনা, সে জীবন্মৃত। ’ ‘তুমি স্বপ্ন দেখো?’ ‘দেখতাম, যখন আলো আমার কাছে ছিলো। স্বপ্ন দেখতাম, ও একদিন আমার বউ হবে, আমার খুঁড়িয়ে চলা জীবনটাকে গতিময় করবে, আমার পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে তুলবে। ’ ‘সে কি একই স্বপ্ন দেখতো?’ ‘হ্যাঁ, বরং আমার চেয়ে অনেক বেশি।

’ ‘আমি কল্পনায় দেখছি, যদি তোমাদের মিলন হতো, কি সুন্দরইনা হতো সেই জুড়ি। ’ ‘ছন্নছাড়া সেই যুবকের চোখে স্বপ্ন ছিলো, ছিলোনা সাধ্য। মানুষ আকাশ ছুঁতে পারেনা জেবা, শুধু দেখতে পারে। ’ ‘জয় আমাদের ভালোবাসাও কি....’ ‘না জেবা, আমার জীবনে যে সফেদ জোছনা এসছে, আমি চাইনা আবার তা কৃষ্ণপক্ষের আঁধারে ঢেকে যাক। জীবন দিয়ে হলেও আমি তোমাকে আমার করব।

’ জয়ের চোখে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন, জেবার মধ্যেও সংক্রামিত হলো। সে তার কোমল হাত দুটি জয়ের হাতে রাখলো, জয় হাত দুটোকে মুঠোর ভেতর পুরে নিলো, চেয়ে থাকলো জেবার দিকে। তারপর একসময় ঘোর ভাঙল ওদের, জেবা বলল-‘জয়, স্বপ্ন দেখার জন্য সুন্দর মন আর চোখ থাকলেই হলো, কিন্তু তাকে বাস্তব করার জন্য তো......’ ‘অর্থ চাই, এই তো?’ ‘হ্যাঁ। আমি তো বাবার সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছি, নাহলে.....’ ‘তুমি চিন্তা করোনা জেবা, আমি ভেবে রেখেছি এর সমাধান। ’ ‘কি রকম?’ ‘আমার কাছে কিছু টাকা আছে, বলতে পারো আমার সারা জীবনের সঞ্চয়।

’ একটু থামলো জয়, তারপর আবার শুরু করলো-‘আমি আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি জেবা, শুনতে চাও, কি সেই স্বপ্ন?’ ‘বলো। ’ ‘আমরা এই শহরে থাকবোনা জেবা, গ্রামে চলে যাবো। সেখানে ছোট্ট একটা ঘর তুলবো। আমাদের ঘরটা হবে নদীর পাড় ঘেঁষে। ঘরের চারিদিকে থাকবে নানারকম গাছ-গাছালি।

শরতের কোমল হাওয়া নদীপাড়ের কাশফুলে যখন দোলা দিয়ে যাবে, তখন সেই হাওয়া আমাদের দখিন জানালায় এসে আছড়ে পড়বে। বর্ষার মুষলধারে বৃষ্টি আমাদের ছোট্ট কুটিরের টিনের ছালে ঝমঝম শব্দে এক মধুর কবিতার অবতারণা করবে। দুর্বা ঘাসে যখন শিশির ঝরবে, কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আমাদের প্রেমকুঞ্জ; বুঝবো শীত জাঁকিয়ে বসেছে। আর বসন্তে তোমার আমার হাতে লাগানো ফুলের চারাগুলো থেকে নানানরকম ফুলে আমাদের ছোট্ট ঘরের চারিদিকে ভরে যাবে, তখন সবুজ ঘাসের মাদুরে আয়েশ করে বসে আমরা দুজন চা খাবো। ’ ‘আর বলোনা জয়, আমার লোভ হচ্ছে।

’ কাতর কন্ঠে বললো জেবা। ‘আমি তোমাকে লোভ দেখাচ্ছিনা জেবা, স্বপ্নের কথা বলছি। আর তুমি পাশে থাকলে অবশ্যই আমার স্বপ্ন সফল হবে। বলো আমার পাশে থাকবে জেবা, আমাকে ছেড়ে যাবেনা। ’ ‘যাবোনা জয়, তোমার পাশেই থাকবো।

’ জেবার গলায় মাদকতা, অতল জলের আহ্বান। চলবে....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।