যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
ঊনচল্লিশবার ট্রাইয়ের পরে একজন মিস্ত্রি এনে তালা খুলতে হলো লাশটা বের করতে। দুর্গন্ধে পুরো বাড়ীর লোকজন পাগল হয়ে গেছে। ফোন করে অফিস থেকে ডাকিয়ে মৃতদেহ সৎকার করতে বাধ্য করেছে পড়শীরা। সে যাই হোক পড়শীদের ভালো-মন্দ দেখা তো কর্তব্যই। প্রয়োজনে কিনবো নতুন তালা।
দরজা খুলে ইদুরের দেহাবশেষ কোথাও পেলাম না। তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম খাটের তল, দরজার কোন, আলমারীর পেছন, রান্নাঘরে ঝাড়ু রাখার স্থান, বাথরুমে বেসিনের তল, জুতার ভেতর, পাপশের নিচ। দেয়ালে কোথাও লটকে আছে কিনা চেক করতে ক্যালেন্ডার, ঝুলন্ত ছবিগুলো নেড়েচেড়ে দেখলাম। পাশের ফ্লাটের বড় ছেলে এসে কিছুক্ষণ মহোৎসবে ইদুর খুঁজে ব্যর্থ হয়ে বিদায় নিয়েছে।
সবাই এত গন্ধ গন্ধ করে সরব হবার কারণও আছে।
মানুষের মত ইদুরও মরে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পড়শীদের গন্ধ বিলাসী নাকের প্রশংসা করে আবার খুঁজতে গিয়ে ড্রয়ার হাতালাম। পেলামও। একটা ড্রয়ারে শান্তিতে ঘুমাচ্ছিল ইদুর।
লেজ ধরে নামিয়ে আনলাম।
ইদুরের শরীরে সৌম্যকান্ত মৃতের নিথরতা - এত গন্ধ ছড়াবার কোন মানে নেই। নিরীহ ইদুরের মৃত্যু রহস্য নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যাথা নেই। দূরে ছুরে মারলাম বারান্দা দিয়ে। একদম রাস্তার ওপাশের মিউনিসিপ্যালিটির ড্রেনে ঝপাৎ গিয়ে পড়লো। সব ভুলে হাসি হাসি মুখ করে ইদুর ধরা হাত দিয়ে নাকের উপরে জমানো ঘাম মুছলাম।
গন্ধে পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো, আরেকটু হলে বমিই করে ফেলতাম।
পড়শীরা এসে বাহবা দিয়ে গেল। কেউ দুঃখ প্রকাশ করলো অফিস থেকে এভাবে ডেকে নিয়ে আসার জন্য। প্রথম জন গলার স্বর আবেগিত করে বললো, তা বুঝলেন ভাই, আপনি এভাবে এলেন বটে, কিন্তু ঐ উপরের তলার জন কিন্তু এভাবে আসতো না; তার বাসায় তো দুইদিন পর্যন্ত একটা বিড়াল মরে পড়েছিল! রাস্তা দিয়ে কোন মানুষ সুস্থ্যমত হেঁটে যেতে পারতো না!
আরেকজন বললো, আপনাকে কিন্তু এভাবে না ডাকলেও হতো, আমি তো বলেছিলাম, বেচারার ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করি, মাত্র চার-পাঁচঘন্টার ব্যাপার, একটু না হয় অপেক্ষা করতাম! ঐ যে আপনার বাসার পাশের জন, উনি কিন্তু বিশেষ সুবিধার না। তিনদিন পর্যন্ত তার ঘরে একটা মুরগী মরে পড়ে ছিল।
সে কি ভয়ংকর গন্ধ! ফোন করতেই উল্টো ঝাড়ি দিয়েছিল, বলে কি জানেন? আমার ঘরে যা ইচ্ছে মরে পড়ে থাকবে, আপনাদের কি? খবর্দার, যদি তালা ভাঙেন, জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো!
আরো একজন বললো, ভাই আপনি আসলেই একজন ভাল প্রতিবেশী। অন্যরা এমন করে না। ঐ দুটোকে দেখেছেন, গলায় গলায় পিরিতি কেমন, কিন্তু কেউ কারো চেয়ে কম না। পেছনে আরেকজনের সর্বনাশ করতে জুরি নেই। আর এই যে বুড়ো বাড়িওয়ালাটা দেখছেন, সে হলো হাড়ে হাড়ে বজ্জাত।
তার ঘরে কিছু না মরলেও ঐ ব্যাটা বদের হাড্ডি নিজেই মরে গন্ধ ছড়াচ্ছে! কই আমাদের তো রেহাই দিচ্ছে না, সময় পেলেই বাড়িয়ে দিচ্ছে বাড়ী ভাড়া!
অবশেষে বৃদ্ধ এসে দাড়ালেন। পিঠে হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। ওই যে তিনটে গাড়ল দেখছেন এরা সবাই আমার তিন দশকের নিয়তি - এত বছর পর্যন্ত বাড়ীতে রেখেছি, কিন্তু একবারও নিজেদের ঘরে কিছু মরে থাকলে পরিষ্কার করার আগ্রহটুকুও দেখি নাই। প্রত্যেকটা পচে গিয়ে গন্ধ ছড়াচ্ছে।
সবার কথা শুনে হঠাৎ মনে হলো মৃত ইদুরের কুৎসিত গন্ধটা এখন আর নাকে লাগছে না।
মৃত মানুষের ভয়ংকর গন্ধ ইদুরের গন্ধটাকে দূর করে দিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।