হঠাৎ শুন্যতা ...................
জীয়া উদ্দানে আনেকক্ষন দাঁড়িয়ে আছে সালেহা...আসল না আরোপিত নাম তা অবশ্য বলা যাচ্ছে না। আর সেটা জানারো কোন প্রয়োজন আছে বলে বোধ করি না। সালেহারা নামে পরিচিত হয় না। তাদের পরিচয় শারিরীক গঠনে, পরিপক্কতায় আর আদিম খেলার দক্ষতায়। বিগত সরকার এই উদ্দান টি ঘসা-মাজা করে জাতে তুলেছে, তাই এখানে সালেহাদের আর প্রবেশ যোগ্যতা নেই।
কিন্তু যাওয়ার জায়গা কোথায়?
বাইরে পিট-পিট বৃষ্টি হচ্ছে। সালেহা একটু অন্ধকারে একটা বড় পাতার গাছের নিচে অন্ধকারে সরে দাঁড়ায়। অনেকের মত চটকদার বেশভূষা সালেহার নেই। কেনার পয়সা কই। শরীর বেচবে তার যায়গায়ই নেই তার আবার বেশভূষা।
গত আড়াই দিন ধরে কোন রোজগার নাই। ঘরে মা টা আসুস্থ পড়ে আছে। চিকিৎসা দরকার। কে করবে। দুই বেলা মুখে কিছু গুঁজবে তারই ব্যাবস্থা নেই।
আরো আছে একটা ছোট বোন। মাত্র ১১ বছর বয়স। বস্তির কাসেম ফকিরের নজর পড়েছে তার উপর। এত টুকু একটা মেয়ে...সালেহা প্রতীরোধ করতে পারবে কয়দিন কে জানে। ছোট বোনের মুখটা সালেহার চখে ভেসে উঠে...বোনটা কখনো কাঁদে না, আজ সকালে ক্ষিদার যন্ত্রনায় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিল।
আজ সালেহা আনেক টা বেপরোয়া হয়ে উঠে। আজ রাতে যে ভাবেই হোক একটা কামার্ত জানোয়ার তাকে আকর্ষণ করতেই হবে।
বৃষ্টির ফোঁটা বড় হয়ে পরছে...বড় পাতা ওয়ালা গাছটাও তাকে আর রক্ষা কতে পারবেনা বেশিক্ষন। এমন সময় দুটো গাছ পরেই এক লোক এসে দাড়ালো। সালেহা অপেক্ষা করে।
সে বোঝার চেষ্টা করে। ওটা শিকার না শিকারী। লোকটা একটা সিগারেট ধরাচ্ছে...ফিল্টার ছাড়া। সালেহা ভিতরে ভিতরে কিছুটা হতাস বোধ করে। তার অভিঙ্গতায় সে বুঝে, এ যদি খদ্দেরও হয় দামাদামি করবে।
কিন্তু এই দুর্যোগের রাতে আর কোন সুযোগও তো হাতের কাছে নাই। সালেহা ইশারা করে একটা প্রানহীন হাসি দেয়। খদ্দের ইসারা বুঝে...সাড়া দেয়।
সালেহা যা ভেবেছিল তাই...হারামজাদা দামাদামী শুরু করেছে। সালেহা ধৈর্য্য নিয়ে দর কষাকষি চালিয়ে যায়।
সে জানে আজ রাতেই শেষ হতে পারে আড়াই দিনের উপোস। বোনটা আজ রাতে ভরা পেটে ঘুমাবে, মা টা হয়তো কিছুটা সুস্থ বোধ করবে। সালেহা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে...১৫০টাকায় মনে হয় হারামজাদাটা রাজি হয়ে যাবে।
ঘ্যাঁচ করে একটা পিক্আপ এসে হার্ডব্রেক করলো। পুলিশের গাড়ী।
এই বেজন্মা গুলো আসল কাগের কাজ নেই খালি আসময়ে এসে হাজির হয়। সালেহা দ্রুত হারিয়ে যায় গাছ পালার আড়ালে। পুলিশ গুলো খদ্দেরটাকে ধরেছে। গালা-গালী শুনতে পায় সালেহা, কিছু খদ্দেরের উদ্দেশ্যে কিছু তার। এই পরিস্থীতিতেও সালেহার হাসি পেল খদ্দেরের কথা মনে করে।
হারামজাদার বাচ্চা...কর এখন দামাদামি।
অনেক্ষন পর সালেহা রাস্তায় নেমে আসে। রাস্তায় শুধু গাড়ির বহর। বৃষ্টির জন্য রাস্তায় জ্যাম আরও বেশী। সালেহা অন্যমনষ্ক হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বিজয় স্বরণীর দিকে হাটা দেইয়।
সে আনুভব করে প্রতিটা গাড়ী থেকে লোক তাকে দেখছে। বৃষ্টিতে ভিজে সালেহার শাড়ী শরীরের সাথে সেঁটে গেছে। শরীরের যৎসামান্য চড়াই-উৎরাই তাতে বুঝা যাচ্ছে। এমন উন্মক্ত প্রদর্ষণী কে হেলায় হারাতে চায়। সালেহার আবারো হাসি পায়।
সে জোরে হেসে উঠে...হাসতে গিয়ে তার অন্ধকারে চোখ পড়ে রাস্তার শেষ প্রান্তের আর্ধ-ভগ্ন দালানটার দিকে... সালেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়...দালানটা যেন ভেংচি কেটে সালেহাকে কটাক্ষ করছে। যে বলছে “আমার ধ্বংস আছে...কিন্তু তোর নেই...সালেহা। ”
হঠাৎ পাশে একটা গাড়ী এসে দাঁড়ায়। “কত নিবি ?” সালেহা বোকার মত তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন “ওই মাগী...কত নিবি” “২৫০ টাকা, দামাদামি হইব না”, কর্কস কণ্ঠে জানায় সালেহা...(চলবে...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।