আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিবারতন্ত্র-বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজশাহী আওয়ামী লীগের দুই ভাইয়ের রাজনীতি



জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, রাজশাহী রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন খেলা। অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহীর রাজনীতিতে ‘দুই ভাই’ বলে পরিচিতি নবনির্বাচিত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরী মরিয়া হয়ে উঠেছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে তাদের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য। এই লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার অভিযোগটিকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সূত্র মতে, দুই ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নবনিবাচিত মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকে সংবর্ধনা প্রদান ও বিশেষ প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গতকাল শুক্রবার বিকেলে। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুককে বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরী এই বিশেষ প্রতিনিধি সভা ও সংবর্ধনার আয়োজন করেন।

তবে সভায় জেলা আওয়ামী লীগের মোট ২২ জন নেতার মধ্যে মাত্র ৮ জন উপস্থিত হয়েছিলেন বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। সভাতে অবশ্য বিপুল সংখ্যক সাধারণ কর্মী-সমর্থককে আনা হয়। এই সভা ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কিছুই জানেন না। তিনি জানান, অনুষ্ঠান ও বিশেষ প্রতিনিধি সভা সম্পর্কে তাকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি কিংবা মৌখিকভাবেও বলা হয়নি। সভা ও সংবর্ধনার জন্য নেয়া হয়নি সভাপতির কোন অনুমতিও।

যা দলীয় গঠনতন্ত্রের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও তাজুল ফারুক জানান। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মনে করে, সিটি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা না করা নিয়ে রাজশাহী আওয়ামী লীগে আবার শুরু হয়েছে নতুন সংকট। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের নির্বাচনকে ঘিরে এই সংকট দানা বেধে উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক-কেন্দ্রীয় সদস্য ও নবনির্বাচিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে সংবর্ধনা প্রদান ও জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ প্রতিনিধি সভা আহবানের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওমর ফারুক চৌধুরী। খায়রুজ্জামান লিটন ও ওমর ফারুক চৌধুরী পরস্পরের ফুফাত ও মামাত ভাই।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ও সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক জানান, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এধরনের সভা আহবান বা সংবর্ধনার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এধরনের সভা আহবান করার আগে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁর অনুমতির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরী জানান, সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধিতা করায় নেতা-কর্মীরা তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুকের ওপর বিক্ষুব্ধ। কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে সভার বিষয়ে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সম্মতি থাকা মানেই কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মতি থাকা।

তারপরও কেন্দ্রীয় সম্মতি নেয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সভাপতি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক জানান, বিগত সময়ে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর সাথে যোগসাজশ করে তাকে সংসদ সদস্য নির্বাচনে পরাজিত করানোর ষড়যন্ত্র, বাঘায় তাকে হত্যা প্রচেষ্টা, বর্তমান সরকারের সময়ে তার (তাজুল ফারুকের) এক আত্মীয়ের (জামাতা সাংবাদিক আকাশ) নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করিয়ে গ্রেফতার ও নির্যাতন করানোর কারণে তিনি সিটি নির্বাচনে কারও পক্ষে কিংবা বিপক্ষে মাঠে নামেননি। তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক আরও জানান, খায়রুজ্জামান লিটন ফোন বা মোবাইল করে হলেও তাকে একটিবারের জন্যও তার (লিটনের) পক্ষে মাঠে নামার জন্য বলেননি। এমনকি বিগত দুই মাস ধরে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাসুদুল হক ডুলুর সঙ্গেও তার (তাজুল ফারুকের) দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। তিনিও তাকে (তাজুল ফারুককে) তার (ডুলুর) পক্ষে কাজ করার জন্য বলেননি।

ফলে তিনি (তাজুল ফারুক) লিটন বা ডুলু কারও পক্ষে বা বিপক্ষে মাঠে নামেননি বলে জানান। দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচিত সাবেক সভাপতি। তিনি গত ২০০১ সালের ৮ মে মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং রাজশাহী-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুকের সহযোগিতায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অন্যদিকে তাজুল ফারুক স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগ তথা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত।

তিনি স্কুল শিক্ষক থেকে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সর্বশেষে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে সরাসরি ব্যালটের মাধ্যমে তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক ও ওমর ফারুক চৌধুরী যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু পরবর্তীতে এই দই নেতার মধ্যে বিরোধ-দ্ব›দ্ব গতি পাওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম মূলত: সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নয়টি থানা আওয়ামী লীগ ও গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগ থানার মর্যাদা পাওয়ায় মোট ১০টি থানা আওয়ামী লীগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের দিয়েই চলে আসছে। এই ১০টি থানার সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে বাগমারা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বাঘা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোদাগাড়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি, তানোর আওয়ামী লীগের সভাপতি, পুঠিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পবা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশেষ প্রতিনিধি সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র আরও জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন দিনার ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তর থেকে গত ৫ ফেব্র“য়ারি, ২০০৮ বিপুল পরিমাণ পচা গম, আমের পালফ, সুজি, তেঁতুল, মরিচসহ অন্যান্য জিনিস জব্দ করে যৌথ বাহিনী। যৌথ বাহিনী, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক চৌধুরীর সাগরপাড়ার বাসায়ও দু’ঘন্টা ধরে তল্লাশি চালিয়েছে বলে জানা গেছে। দিনার ইন্ডাস্ট্রি থেকে এক হাজার বস্তা পচা গম, ১০০ বস্তা পচা তেঁতুলসহ বিপুল পরিমাণ পচা আচার, সুজি, ময়দা, আটা, মরিচ, ধনিয়া, হলুদের গুড়া জব্দ করা হয়। কিন্তু একটি বিশেষ বাহিনীতে জনাব চৌধুরীর বোন জামাই উচ্চ পদে আসীন থাকায় এই মামলা থেকে রেহাই পান তিনি। অন্যদিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহফুজুল হক লোটনও রাজশাহীর নতুন মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানসগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের চাচা।

এই লোটন ২০০১ সালের ৮ মে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক চৌধুরীর মাতা মিসেস মঞ্জুয়ারা বেগম উষা জামায়াতের একজন শীর্ষ নেত্রী। জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর ছেলে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া কামারুজ্জামানের পরিবারে বাংলাদেশের পক্ষের অসা¤প্রদায়িক চেতনার কেউ নন বলে রাজশাহীর প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।