আমি জানি আমার গায়ের রং শ্যামলা। কিন্তু এতেই কী ঢাকা পড়ে যাবে আমার সুন্দর মুখশ্রী, আমার প্রথম শ্রেণীর তড়িৎ কৌশলের স্নাতক ডিগ্রী, আমার স্কিল? বাংলাদেশটা কী এখনো এতোটা বর্বর? মেয়েরা কী এখানে এতোটাই ফ্যালনা?
একটু আগে তর্ক হচ্ছিলো বাবার সাথে। আমার সেই বাবা, যে বাবা একা হাতে বড় করে তুলেছেন আমাকে, বাইশটি বছর ধরে নিজের জীবনের সব সাধ আহলাদ ঝেড়ে ফেলে এই আমাকে মানুষ করে তুলতে শ্রম দিয়েছেন। সেই বাবা, যিনি সব সময় আমাকে পরিপূর্ণ, স্বাবলম্বী একজন মানুষ হতে দীক্ষা দিয়েছেন। সেই প্রাণপ্রিয় বাবাকে যখন বুক ভাঙা কান্নায় ভেসে যেতে দেখি, তখন তো মনে হয় এইসব অমানুষগুলোকে চামড়া ছাড়িয়ে নিই।
খুবই অবাক হয়েছিলাম গত সন্ধ্যায় অসময়ে বাবাকে ঘরে ফিরতে দেখে। চেহারায় একটা বিধ্ধস্ত অবস্থার ছাপ। আমার সারা জীবনে আমি এ মানুষটার এই চেহারা দেখিনি। আশংকায় কেপে উঠলো মন। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই আমার সেই সারাজীবনের হিরো, আমার মাথায় বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে রাখা বাবা একবারে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পড়লেন।
অনেক সাধনায় যখন ওনাকে থামালাম, জানতে পেলাম তার দীর্ঘ ৪৫ বছরের বন্ধু "অমানুষ" টা দীর্ঘদিনের ওয়াদা ভেঙ্গে তার বিসিএস ডাক্তার ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার কথা পাকা করেছেন। আর বাবা কৈফিয়ত চাইতেই (ওনার স্ত্রীসহ) দুজনে মিলে আমার গায়ের রং নিয়ে অনেক কটূ কথা বলেছেন। ঊঃ ! মাগো! এরা তো জানোয়ার থেকেও অধম।
বাবার কষ্টটা যতোটা না ওয়াদা ভাঙ্গার জন্য তার চেয়ে অনেক বেশি আমাকে নিয়ে ওসব বলাতে। এখন আমি কিভাবে বাবাকে বোঝাই যে আমি তো বিন্দুমাত্র বিচলিত নই আমার রং নিয়ে।
বাবা তুমিই তো শিখিয়েছো - সবচেযে বড় সম্পদ হলো চরিত্র, তোমার কাছেই তো শিখেছি আত্মসম্মানবোধের সংজ্ঞা।
তুমি ভাবছো ক্যানো বাবা। আমার এতো ভালো একটা রেজাল্ট আছে, আমার চেহারা ও তো ঈশ্বর খারাপ করেননি, তবে কেনো ওরকম একটা অমানুষের কথায় এতো ভঙ্গে পড়ছো। আরএমনওতো নয় যে আমার বিয়ের বয়স চলে যাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।