আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ প রা ধ বো ধ ........... ( ছোটগল্প ) .......... ...

sabujs@yahoo.com
বুড়িটাকে আর সহ্য হয় না । প্রতিদিন এ ছুতো ও ছুতো নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবে । এসে কোন কারন ছাড়াই আমার ঘরে হুটহাট ঢুকে পড়বে। প্রথম প্রথম ভদ্রতা করে কিছু বলতাম না। ভাবতাম একা একা একটা শূন্য বাড়িতে দুজন মানুষ থাকে ।

বুড়ো নাকি এই বয়সেও কী একটা চাকরি করে । সেই সকালে বাইরে বেরিয়ে যায় । খালি বাড়িতে বুড়ি আর কতোক্ষন একা একা থাকবে !! তাই হয়তো সময় কাটাতে আমাদের বাড়িতে আসে । কিন্তু কিছুদিন পার হতে না হতেই একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম । বুড়ি আসলে আমাদের বাড়িতে আসে আমার সাথে কথা বলতে ।

সেই কথারও কোন আগামাথা নেই । .......... কী খেয়েছি ? ভার্সিটিতে কার কার সাথে কথা বলি ? গত সপ্তাহে আমার যে জ্বর হয়েছিলো তা এখনো আছে কীনা এইসব খাপছাড়া প্রশ্ন ....... . আমার প্রতি বুড়ির এতো আগ্রহ কেন তা অনেক মাথা ঘামিয়েও বের করতে পারলাম না । উপরন্তু প্রতিদিন হুটহাট করে আমার রুমে ঢুকে পড়ায় একদিন যারপরনাই বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললাম ... কী দরকার ? ??? ...... আমার গলাটা বোধ হয় একটু রুক্ষ হয়ে উঠেছিলো । বুড়ি চমকে উঠলো । একটা সন্ত্রস্ত ভাব নিয়ে যেন লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে চাইলো ।

কোনওরকমে বললো ............ ..'' না বাবা , কিছুনা । গতকাল একটু পায়েস রান্না করছিলাম তো । তোমার কাকার তো ডায়বেটিস তাই মিস্টি কোন কিছু খায়না । তাই ভাবলাম পায়েসটা নষ্ট না করে তোমাকে খাওয়াই । ....... '' একথা শুনে একটু লজ্জাই পেলাম ।

বল্লাম , ঠিক আছে চলুন । আমাদের বাসা থেকে বুড়ির বাসা খুব বেশি দূরে না । কিন্তু এটুকু হাঁটতে হাটতেই বুড়ি হাপিয়ে উঠলো । অবশেষে মলিন শাড়ির আচঁলটা দিয়ে কপালের ঘামটুকু মুছতে মুছতে যে বাড়ির সামনে এসে বুড়ি দাড়াল , সেটাকে বাড়ি না বলে ঘুপচি বলাই ভাল । একটামাত্র শোবার ঘর ।

স্টিলের দরজাটা মরচে পড়ে নিচের অংশটা খসে গেছে । রান্নাঘরের অবস্থা সবচেয়ে করুন । গতকাল শেষরাতে বোধহয় বৃষ্টি হয়েছিলো । তার পানি এক কোনায় জমে স্যাতঁসেতে হয়ে আছে । শ্যাওলা আর উচ্ছিষ্ট খাবার জমে গ্যাসের চুলাটা ছোটখাট একটা আবর্জনার স্তুপ হয়ে আছে ।

দেয়ালের পলেস্তেরা খসে খসে বেরিয়ে পড়েছে লাল ইটের নগ্ন রুপ । সর্বত্র নিম্ন মধ্যবিত্তের নগ্ন ছাপ স্পষ্ট ..... ..... আমাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বুড়ি যেন হঠাৎ করেই শশব্যস্ত হয়ে উঠলো । .......... ''কোথায় বসতে দেবে .??? !!! .. ঘরে যে একটা চেয়ারও নেই ............. '' একথা বলতেই আমি বল্লাম .... .. ''আপনি এতো ব্যস্ত হবেন না । আমি খাটেই বসি , কোন সমস্যা নেই ....'' খাটে বসে বসে শোবার ঘরটাতে ভালো করে চোখ বুলালাম । বুড়ি আমার জন্য পায়েস আনতে চলে গেল ।

ঘরে দেখি তেমন কিছুই নেই । মশারির একটা স্ট্যান্ডে সব কাপড় চোপড় গাদাগাদি করে রাখা । দুটো তেল চিটচিটে বালিশ । একটা বালিশের কোনা দিয়ে তুলো বেরিয়ে আছে ..................... অবশেষে জানালার দিকে চোখ ফেরাতেই চমকে উঠলাম । জানালার পাশেই দেয়ালে একটা কাঠের ফ্রেমে ২৭/২৮ বছরের তরুনের ছবি ।

ছেলেটার চেহারার সাথে আমার চেহারার অদ্ভুত মিল । মনে হলো যেন আমারই ছবি বাধিঁয়ে রাখা হয়েছে । অবাক হয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম ছবিটার দিকে। হঠাৎ বুড়ির কথায় চমকে উঠলাম । ... বাবা , এই নাও পায়েস ।

... কিন্তু ততোক্ষনে আমার অবাক চোখের দৃষ্টি অনুসরন করে বুড়ির চোখ ছবিটার দিকে চলে গেছে । ............ বাষ্পরুদ্ধ গলায় বললো ... আমার ছেলে ....... শুনেছি অনেক বড় অফিসার । সেই আমেরিকাতে থাকে । ..................... দেশে আসেনা ??? ....................... না, .... ....... আজ সাত বছর হলো ........। গতকাল আমার বাবার জন্মদিন ছিলো ।

জানো , ও খুব পায়েস খেতে পছন্দ করতো ........ ...................কোন যোগাযোগ নেই ?? .................... না ......... একথা বলতে বলতেই বুড়ি ঝরঝর করে কেদেঁ ফেললো । তখন একদলা কষ্ট এসে হঠাৎ করেই যেন আমার গলায় দলা পাকিয়ে গেল । আমাদের বাড়িতে যেয়ে বুড়ির অকারনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার কারন আমার কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠলো । . ............. এতো দারিদ্র্যতার মাঝেও পায়েসটুকুকে মনে হলো অনেক বড় বিলাসিতা ........ ........ আমি বুড়িকে কিছুই বললাম না । শুধু লঘু পায়ে বাম চোখটা মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে এলাম .......... আকাশে তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি ........ ..........
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।