আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩৬ নং ওয়ার্ড



৩৬ নং ওয়ার্ড মুহাম্মাদ যাফযাফ অনুবাদ : ফয়সাল বিন খালিদ আমি তোমার সাথে মিথ্যে বলব না। কারণ আমার বাবা আমাকে মিথ্যে বলা শেখাননি। কাউকে নিজের সাথে বা অন্যের সাথে মিথ্যে বলা না শিখিয়েই তিনি মারা গেছেন। আমার দাদাও মিথ্যে বলা জানতেন না। দাদা ছিলেন নিরীহ এক বৃদ্ধ।

সবসময় চুপচাপ থাকতেন এবং গাছতলায় বসে তামাক ফুকতেন। সেই গাছটা এখনো আছে আমাদের বাড়ির উঠোনে, মানে সন্যাসিনীদের স্কুলের উঠোনে। দাদা সেই স্কুলে দারোওয়ানের কাজ করতেন। দাদার বয়স হয়ে গেলে আমার বাবা সেই স্কুলে দারোওয়ানীর কাজ নিয়ে ছিলেন। মানে তিনি দাদার স্থান নিয়ে ছিলেন।

আমি এখন সেই স্কুলেরই একটা ঘরে থাকি। আমি ফরাসীতে কথা বলছি বলে রাগ কর না। আমি আরবী পড়তে পারি। তবে ছোটবেলা থেকেই আমি ফরাসীতে কথাবার্তা বলে অভ্যস্ত। কারণ আমি সন্যাসিনীদের স্কুলে বড় হয়েছি।

এটা ঠিক যে তারা ভাল আরবী জানে। কিন্তু সাধারণত তারা ফরাসীতে কথা বলে। মাঝে মাঝে তারা অন্য আরেকটা ভাষায় আলাপালোচনা করে। আমার ধারণা সেটা ল্যটিন ভাষা। না বরং আমি নিশ্চিত সেই অন্য ভাষাটা ল্যাটিন ভাষা।

তোমাকে তো বলেছি আমি ওখানের একটা ঘরে থাকি। তবে আমি একা থাকি না। তোমার সাথে মিথ্যা বলব না, আমি আমার মায়ের সঙ্গে থাকি। আমার একজন বিবাহিত ভাই আছে। ও মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসে।

তবে একা। কারণ অমার মা তার বউকে পছন্দ করে না। আমি আর ভাই সারা দিন সেই গাছতলায় খেলা করতাম। গ্রীস্মকাল এলে গাছতলায় পাটি বিছিয়ে সারা দিন সেখানেই পড়ে থাকতাম। এবং মাঝে মাঝে হাশীশ ফুকতাম।

বিশ্বাস কর, এই সবই, এর বেশী কিছু ঘটে নি। আমার ভাই আমার ছেলে বন্ধুর মত, এটা বলতে আমার লজ্জা করে না। আমার দাদা ও বাবাও গাছতলায় বসে তামাক খেতেন। দাদা আরেকটা অদ্ভুত কাজ করতেন। তিনি সেই গাছটার গড়ায় কিছু মিছরী পুতে রেখেছিলেন।

এবং সবসময় তিনি তাতে পানি দিতেন। দাদা মারা গেলে বাবা সেই কাজটা করতে লাগলেন। এবং বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমি সেই কাজটা করে যাচ্ছি। আমার অনুরোধ তুমি একদিন আমাদের বাড়িতে, অর্থাৎ সন্যাসীনিদের স্কুলে গিয়ে সেই গাছটা দেখে আসবে, যার নিচে আমি প্রতি সপ্তায় একবার এক টুকরো মিছরী পুতি এবং তাতে নিয়মিত পানি দেই। আমি জানি না কেন আমি এই কাজট করি।

পূর্বপুরুষের প্রথা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের থেকে অনেক ভাল ছিলেন এবং তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী জানতেন এবং ভাল বুঝতেন। তবে এটাও সত্য যে, তারা অনেক খুনোখুনি করতেন। সন্যাসিনী স্কুলের পাঠাগারের বই পড়ে আমি এটা জানতে পেরেছি। পৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ হয়ে গেছে।

তবে যারা খুনোখুনি করেছে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে আর যারা করেনি, সবাই মারা গিয়েছে। তুমি নিশ্চয় জান, আমাদের গায়ে যদি একটি গুলিও না লাগে এবং কেউ বুকে ছুড়িও না বসায় তবুও আমরা সবাই একদিন মারা যাব। আমরা সবাই মারা যাব। তুমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাক, আমি তোমার সাথে মিথ্যে বলছি না। কারণ আমি আমার বাবার কাছ থেকে মিথ্যে বলা শিখিনি, আমার বাবা আমার দাদার কাছ থেকে মিথ্যে বলতে শিখেননি এবং আমার দাদা তার দাদার কাছ থেকে যে জিনিসটা শেখেননি তা হল, এই জীবনে মিথ্যে বলার লোকের অভাব নেই।

তবে আমি সেই দলের কেউ নই। তার প্রমাণ গতকাল আমি তোমাকে বলেছি যে, আমি আমার বাইসাইকেলটা বিক্রি করে দিয়ে দেরীতে বিয়ে হওয়া আমার এক বান্ধবীর জন্য সোনার চুড়ি কিনেছি। সাইকেল বিক্রির কিছু টাকা এখনো রয়ে গেছে। তা দিয়ে দুই বোতল মদ কিনে আমি আর তুমি এক সাথে মাতাল হব। তবে আমি মাতলামো করা পছন্দ করি না।

আমি শুধু পান করতে পছন্দ করি, বিশেষত তোমার মত মানুষের সাথে। লোকে বলে ইসলাম ধর্মে নাকি মদ হারাম। কিন্তু সবাই তো দেখি মদ খাচ্ছে। সান্যাসিনীদের সাথে থেকে থেকে আমার মদের অভ্যাসটা হয়েছে। তারা প্রচুর পান করে।

তবে তারা কখনো মাতলামো করে না। তুমি নিজেই দেখে থাকবে মুসলমান ভদ্র মহিলারা মদ পান করে, মাতাল হয়ে, গ্লাস-বোতল বেঙ্গে চেয়ার-টেবিল উলটে সব এলোমেলো করে, খিস্তিখেউড়-ঝগড়াঝাটি করে কি কাণ্ডটাই না করে। নিশ্চিত থাক, আমি তাদের মত নই, আমার পক্ষে এমন কিছু করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। মাতাল হয়ে তারা তো তাদের বন্ধুদের সাথেও ঝগড়া করে। আমার বন্ধু তুমি এবং তোমার সাথে ঝগড়ার কথা কখনো আমার কল্পনাতে আসবে না।

তাছাড়া আমি তো সর্বক্ষণ তোমার পাশেই আছি। এটা ঠিক যে, এখন আমি সেই অসুস্থ ছেলেটার দেখাশোনা করছি। কিন্তু আমার কাছে তোমার গুরুত্ব অনেক বেশী_ খোলামেলাই বলছি। তোমার আর তার মাঝে অনেক পার্থক্য। ও খুব ভাল ছেলে।

তবে বোকা। আমি তাকে দেখাশোনা করা বাবদ মাসে মাসে একটা সম্মাজনক মাইনে পাই এবং আমি ভাল করেই জানি, তার অসুস্থতার কারণ তার বাবা-মায়ের সেপারেইশান। তার বাবা নামকরা সার্জন ডাক্তার। এখন ফ্রান্সে আছেন। কিন্তু তার মা এখনো মরোক্কেতেই আছেন এবং বাপ-দাদার আত্মার কিড়ে কেটে বলেছেন তিনি কখনো ফ্রান্সে যাবেন না।

তিনি একটি স্কুলে চাকরি করেন। তার অনেক বন্ধুবান্ধব। এত যে আমি তাদের সবার নাম-চেহারা মনে রাখতে পারি না। তারা প্রচুর পান করে। মনে হয় ওই বাড়িটা যেন হুইস্কির খনি।

এই সব তো তুমি আমার চেয়ে ভাল জান। তার ছেলেটা এখন ড্রাগ নেওয়া বন্ধ করেছে। এখন আর ও ঘুমাপাড়ানি ইঞ্জেকশান নিচ্ছে না। তবে ও যখন বেশী পাগলামো শুরু করে, আবোলতাবোল প্রলাপ বকতে থাকে তখন তাকে শান্ত করার জন্য আমি একটা ঘুমপাড়ানি ইঞ্জেকশান দেই : নিজ হাতে তার মুখে ঔষধ তুলে দেই, দীর্ঘক্ষণ ধরে তাকে চুমো দেই এবং ও ধীরে ধীরে আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ে। তুমি আবার ভেবে বস না যে, আমার সাথে তার সেই ধরনের কোন সম্পর্ক আছে।

ছেলেটার বয়স উনিশ এবং তার একজন ইহুদী বান্ধবী আছে। আমি শুধু তাকে শান্ত করার জন্য মাঝে মাঝে তাকে চুমো খাই। মানুষের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব, তার সাথে আমার এমন কোন সম্পর্ক নেই। তবে তুমি জান মানুষের কল্পনা শক্তি অসীম। সে অন্যদের সম্পর্কে এবং নিজের সম্পর্কে সব কিছুই কল্পনা করতে পারে।

উদাহরণত : মাঝে মাঝে আমি কল্পনা করি আমি এই ছেলেটার মা এবং ভুলে থাকি আমার একমাত্র সন্তানের কথা, যাকে নিয়ে তার বাবা বিদেশ চলে গেছে। মোটকথা আমার ছেলে এখন তার বাবার সাথে অন্য কোন দেশে আছে এবং ওই দেশে সম্ভবত এমন অনেক কিছু পাওয়া যায় যা এই দেশে নেই। ভেব না যে, এই সব হচ্ছে মাতালের প্রলাপ। কারণ তুমি জান প্রচুর পান করেও আমি মাতাল হই না। আমি তোমাকে আমার জীবনের বাস্তবতাগুলো বলছি।

এগুলো যখন আমার জীবনের বাস্তব সত্য তখন সেগুলো লুকিয়ে রেখে কী লাভ। মানুষ তাদের এই সব বিষয়গুলো গোপন করে রাখে। বাদ দাও মানুষের কথা, তারা যা ইচ্ছে তা করুক। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তোমাকে ছাড়া আমার আর অন্য কোন ইচ্ছে নেই। আমি তোমার সাথে মিথ্যে বলব না।

আমার বাবা আমাকে মিথ্যে বলা শেখান নি। খুব বকবক করছি তাই না ? বিরক্ত হয়ো না। সারা দিন একটা অসুস্থ ছেলের প্রলাপ শুনি। হতে পারে তারই প্রতিক্রিয়া। তুমিই তো একদিন বলেছিলে, এই জীবনকে গ্রহণ ও সহ্য করার জন্য আমাদেরকে অনেক উদার দিল হতে হবে, কারণ নিজেদের পছন্দ ও ইচ্ছা অনুসারে আমরা এই জীবনে আসতে পারেনি।

মনে আছে তোমার ? নিশ্চয় ! কারণ তুমি কোন কিছুই ভুল না। এই কারণেই আমি তোমাকে এত পছন্দ করি। আমি তোমাকে শিখিয়ে দিব কিভাবে গাছতলায় হাশীশ (গাজা) পুততে হয় তারপর আমরা এক সাথে প্রতি দিন সন্ধ্যায় তাতে পানি দিব, যেমন করতেন আমার দাদা ও বাবা। সম্ভবত তাদের পূর্বেও অন্যরা এই কাজটা করেছে। সেই কথাটা আমি আবার বলতে চাই না যে, আমাদের উচিৎ পূর্বপুরুষদের মেনে চলা, তারা মহা বিজ্ঞ বা নির্বোধ যাই হোন।

তুমি ভালোবাসা শব্দটা শুনতে পার না, আমি তোমাকে ভাল করেই বুঝি। তারপরও বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি নিশ্চই জান ভালোবাসা আর মায়া এক জিনিস নয়। সেই ছেলেটার জন্য আমার খুব মায়া হয়, যেমন মায়া লাগে তার মায়ের জন্য, যে মদে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে চাইছে। মাঝে মাঝে আমি ভাবি কেন তিনি এমন করছেন, তিলে তিলে আত্মহত্যা করছেন।

তারা তাকে কতবার হাসপাতালে ভর্তি করল। কিন্তু ফিরে এসে আবার মদ ধরলেন। কিন্তু তার ছেলে এখন আর নিজে ড্রাগ নিচ্ছে না। তবে আমি তো তোমাকে বলেছি, আমি তাকে ঔষধ খাওয়াই, তার গালে কপালে চুমো দেই এবং দুধের শিশুর মত বুকে নিয়ে ঘুম পড়াই। ওর জন্য আমার খুব মায়া হয়।

কারণ আমি নিজেও একদিন ওই অবস্থায় পড়েছিলাম, যখন আমার স্বামী আমাকে ফেলে আমার একমাত্র সন্তানটাকে নিয়ে বিদেশ চলে যায়। তারা আমাকে মানসিক হাসপাতাল ভর্তি করে দিল। ৩৬ নং ওয়ার্ডে শুয়ে আমি শুনলাম ডাক্তার নার্সকে বলছেন, আমার রোগটার নাম হচ্ছে সাইকোসিস। এই রোগ সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। আমি শুধু একটা তীব্র বেদনা বোধ করছিলাম।

যে আমাকে বুঝতে পারে না, আমি কখনো এমন মানুষকে সহ্য করতে পারি না, সে ক্ষেত্রে ভুল আমার হলেও না। তুমি বলতে পার এটা আমার এক ধরনের স্বার্থপরতা। হতে পারে। কিন্তু শেষ বিচারে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতির দায় তো আর মানুষের ঘাড়ে পড়ে না। তাই না ? তুমি একদিন আমাকে বলেছেলে যে, জগতে এমন অনেক কিছু আছে যা আমরা বুঝতে পারি না।

কারণ তা আমার বুদ্ধির ক্ষমতার ঊর্ধ্বের বিষয়। সুতরাং, কোন ভুল করে আমি যদি ভাবি যে, অন্যদের তা মেনে নিতে হবে তাহলে, তুমি আমাকে স্বার্থপর বলতে পার না। কারণ এটা আমার স্বভাব এবং আমার বুদ্ধি-ঊর্ধ্ব বিষয়। তেমনি যে জিনিসটা সেই তরুণ ও তার মাকে ড্রাগ নিতে বাধ্য করেছে, তা তাদের ক্ষমতার সীমার বাইরের জিনিস। আমি সেটা বুঝতে পারি, তোমার কাছ থেকেই শিখেছি।

তাই আমি তোমাকে যতটুকো ভালোবাসি, সেই ছেলেটার প্রতি ততটুকো মায়া বোধ করি। আমি আমার স্বামীকে ভালোবেসে ছিলাম। কিন্তু দেখ সে আমার সাথে কি আচরণটা করল। কোন নরীর পক্ষে তোমাদের পুরুষদেরকে_সরি ওই সব পুরুষদেরকে_ বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। যেই নারী পুরুষকে বিশ্বাস করতে শুরু করে, তার উপর নির্ভর করে, ওমনি সে ফুলে ওঠে রোমান মোরগ কিংবা ... ময়ূরের মত।

বলছ এর বিপরীতও ঘটে ? ঠিক, আমি তোমার সাথে এক মত। পুরুষের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য নারীর বেলাতেও তা খাটতে পারে। সেই সন্যাসিনী স্কুলের বাগানে একটি বিড়াল ও একটি বিড়ালনী ছিল। তারা সবসময় এক সাথে থাকত। কিন্তু একদিন দেখলাম কোত্থেকে জানি আরেকটা বিড়ালনী এসে উপস্থিত।

সম্ভবত তা লোহার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে ওপার থেকে এসেছিল। বিড়ালটা এই নতুন বিড়ালনীর প্রেমে পড়ে গেল ? বিড়ালদেরও কি প্রেম-ভালোবাসা আছে ? তুমি বলছ, হা.. তাই হবে তাহলে। আমি তোমার সব কথার সাথে এক মত। তারপর কয়েক দিন সেই বিড়ালনীটা আর কিছু খেল না, সারাদিন মেউ মেউ করে এদিক ওদিক ঘুড়ে বেড়াল এবং শুকিয়ে গিয়ে এক দিন মারা গেল। সুবহানাল্লাহ ! কিন্তু আমার সন্তান ছিনিয়ে নেওয়ার পরও আমি মারা যাইনি।

আমিও খানাপিনা ছেড়ে দিয়েছিলাম, সারাদিন কাঁদতাম, বিড়ালের মেউ মেউ শুনলে ব্যাকুল হয়ে ছুটি যেতাম। কিন্তু তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর সব ভুলে গেলাম। এই সব তো তোমাকে আগেও বলেছি। এই ছেলেটার জন্য আমার খুব মায়া লাগে। কারণ ও এখন যে অবস্থায় আছে আমি যে অবস্থাটা পার হয়ে এসেছি।

তবে তার মা এখনো মাতাল হয়ে যাচ্ছে এবং কেঁদে যাচ্ছে অবিরাম। যা ঘটেছে তিনি তা ভুলার চেষ্টা করছেন না। হয়ত তিনি কিছু ভুল করেছেন, হতে পারে অন্যরা তার উপর কিছু অন্যায় করেছে। কিন্তু তিনি সেই সব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। কি বলছ ? আমি তোমার কথা ঠিক শুনতে পাই নি ! ওহ !! খোদ জীবনটাই একটা ভুল ? কে করলেন এই ভুলটা ? মাঝে মাঝে আমি তোমার কথা বুঝতে পারি না।

যেমন তুমি বল অনেক মানুষ এমন আছে, যাদের জন্মটা মূলত একটা ভুলের ফল। আশা করি আমি তেমন কেউ নই। তার প্রমাণ আমি এখন সেই অসুস্থ ছেলেটার দেখাশোনা করছি। আমি যদি না জন্মাতাম তাহলে কে তার দেখাশোনা করত ? ডাক্তাররা জন্ম না নিলে কে তার ও তার মায়ের চিকিৎসা করত ? তুমি মাঝে মাঝে বল, কিছু কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করে অন্যদের ভুলগুলো শোধরাবার জন্য। এই কথাটা আমি ভাল বুঝতে পারি।

কিন্তু আবার তুমিই দেখি জোর দিয়ে বল যে, গোটা জীবনটাই একটা মস্ত ভুল। তোমার কথা শুনতেই আমার ভাল লাগে, যখন আমি তোমার কথাগুলো বুঝতে পারি না তখনও। যা কিছু বলা হচ্ছে তার সব বুঝতে হবে এমন তো কোন কথা নাই এবং অনেক দুর্বোধ্য কথাও সুন্দর হতে পারে। যেমন তোমার দুর্বোধ্য কথাগুলো। তোমার কথাগুলো সুন্দর।

কারণ তুমি তা শোন তোমার ভালাবাসার মানুষের কাছ থেকে। যাকে আমরা পছন্দ করি তার সে সব কথাও আমরা বুঝতে পারি যা বুঝা সম্ভব নয়, অন্তত তার কথাগুলো আমাদের কাছে সুন্দর এবং যুক্তিসঙ্গত মনে হয়, আমরা ব্যাখ্যা করে তার অর্থ বের করার চেষ্টা করি এবং তা যেমনই হোক তাতে অনেক সত্য খুঁজে পাই। উদাহরণত : তোমার অনেক কথা আমার কাছে দুর্বোধ্য ঠেকে, কিন্তু আমি তোমাকে বুঝতে পারি। তাই আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি যে মাঝে মাঝে কাঁদি সেটা শুনে রাগারাগি কর না।

ঝাপসা কিছু স্মৃতি মাঝে মাঝে আমাকে কাঁদায়। কখনো কখনো আবার বিনা কারণে কাঁদি। এটা অস্বাভাবিক আচরণ ? কিন্তু তুমিই তো একদিন বলেছ এই জীবনে অস্বাভাবিক বলে কিছু নেই। তোমার পূর্বে অনেক পুরুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে এবং একসময় যে তাদের সাথে আমার সম্পর্ক হয়েছিল, সেটা মনে পড়লে আমি কুকড়ে যাই। কারণ তারা আমার কোন কথা শুনত না।

বরং তারা একই কথা বার বার বলে যেত। যেমন 'বার নয়, তোমার উপযুক্ত জায়গা দার (ঘর)'। পুরুষগুলো সবাই কেন এত নিখুঁতভাবে একই রকম ? কেন তুমি ব্যতিক্রম ? বলছ, সেটা আল্লাহর ইচ্ছা ? কিন্তু আল্লাহ কেন এক জনের জন্য যেটা ইচ্ছা করেন অন্যদের জন্য সেটা করেন না ? এটা নাস্তিক মার্কা কথা ? না.. না.. আমি নাস্তিক নই। আমি শুধু বিষয়টা বুঝতে চাইছি। আমি নাস্তিক নই সেই ব্যাপারে যাতে নিশ্চিত হতে পার তাই বলছি, আমি ঠিক করেছি শেষ জীবনে আমি একবার হজ্ব করতে যাব।

নিশ্চই আল্লাহ তখন আমার সব পাপ মাপ করে দিবেন !! তাই না ? বলছ আমরা সবাই আসলে পাপী ? কিন্তু সম্ভবত আমি প্রায় নিষ্পাপ। আমি তো তেমন কোন পাপ করেনি। এমনকি তারা যখন আমাকে ৩৬ নং ওয়ার্ডে রেখে এল তখনও আমি বুঝতে পারিনি তারা কেন আমাকে এখানে নিয়ে এল। তারা অন্য কাউকে নিয়ে আসতে পারত যার আসলেই সেই সব ঘুমপাড়ানি ইঞ্জেকশানগুলো দরকার। তবে স্বীকার করতে হবে তখন আমারও ঘুমপাড়ানি ইঞ্জেকশানগুলোর দরকার ছিল।

সেগুলো গায়ে ঢুকার পর আমার খুব আরাম লাগত। মনে আছে সেই সময় আমি একবার ফেরেশতা দেখেছিলাম। তুমি কি কখনো ফেরেশতা দেখেছ ? কি বললে ? বরং তুমি শয়তান দেখেছ, মানুষের বেশে ?! আল্লাহ মাফ করুক !! কি বলছ এই সব। আল্লাহ হেফাজত করুক, আমি কখনো শয়তান দেখতে চাই না, মানুষের রূপে হলেও না। তবে শয়তান বলে তুমি কি বুঝাতে চাইছ মনে হচ্ছে আমি সেটা বুঝতে পেরেছি।

কারণ আমি দেখেছি সেই ছেলেটা ও তার মা মাঝে মাঝে খালী ঘরে একা একা বলতে থাকে 'যাও.. যাও !! আমাকে একা থাকতে দাও' তখন আসলে তাদের সাথে শয়তান থাকে ? তারা ওই শয়তানের সাথেই কথা বলে ? মাগো !! কি ভয়ংকর ব্যাপার। আমি শয়তান দেখতে চাই না। যদি কখনো দেখে ফেলি তাহলে আমি জানালা দিয়ে বা ঘরের কোন ফাঁক দিয়ে পালিয়ে যাব। ওহ .. কেন আমাকে ভয় দেখাচ্ছ ? শয়তান ইচ্ছে করলে আমাকে ধরে ফেলতে পারবে ? সে আল্লাহর সাথেই অবাধ্যতা করেছে তাই মানুষ-টানুষ ধরা তার কাছে নস্যি ? কিন্তু আমি জানি আল্লাহ অনেক শাক্তিশালী। তিনি তাকে ধরে কেয়ামত পর্যন্ত কোন খাচায় বন্দী করে রাখতে পারবেন।

বন্ধু ! তুমি মাঝে মাঝে এমন কিছু কথা বল, আমার ভয় হয় সেগুলো আমাকে আবার ৩৬ নং ওয়ার্ডে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তোমার সেই সব কথাগুলো অমার মাথায় কুলোয় না। তবে আমি নিশ্চিত যে, আমি আর কখনো ৩৬ নং ওয়ার্ডে ফিরে যাব না। কারণ আমি খেলাটা বুঝে গেছি এবং যেহেতু আমি বোকা নই তাই আমি আর কখনো সেখানে ফিরে যাচ্ছি না। জান কেন তারা আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল ? কারণ আমি তাদের বুঝতে পারিনি এবং তারা আমাকে বুঝতে পারেনি।

তোমাকে তাদের নির্বুদ্ধিতাগুলো বুঝতে হবে। অন্যথায় তুমিই তাদের দৃষ্টিতে নির্বোধ হয়ে যাবে এবং তারা তোমার মাঝে সাইকোসিস নামের রোগটা আবিষ্কার করে ফেলবে। আহহহ !!! অনেক বকবক করলাম। এটা আমার অভ্যাস এবং তুমি সবসময় তা সহ্য করে যাও এবং আমার কথা শোন। এই জন্যই আমি তোমাকে এত পছন্দ করি।

সব পুরুষ যদি তোমার মত হত এবং তাদের স্ত্রীদের সন্তান নিয়ে দূর দেশে পালিয়ে না যেত !!। যাইহোক। এ সম্পর্কে আমরা আরো অনেক দিন আলোচনা করব, সম্ভবত মৃত্যু পর্যন্ত করে যাব। আমার বিশ্বাস মৃত্যুর পর আমাদের দু জনের ঠিকানা অভিন্ন হবে। আমি নিশ্চিত।

এই নিয়ে আমি অনেক স্বপ্নও দেখেছি। স্বপ্নে তোমার আস্থা নেই ? কিন্তু আমার বাবা বলেতেন কোরানে স্বপ্নের কথা এসেছে। তুমি তো কোরান খুব ভালোবাস। সবসময় বল কোরান এক মহা গ্রন্থ। তোমার কাছ থেকে আমি কত কিছু যে শিখলাম!! মাফ করবে, এবার আমাকে উঠতে হবে।

এরমধ্যে ছেলেটা নিশ্চয় জেগে গেছে। তাকে ঔষধ খাওয়াতে হবে এবং আমার সেই ঘুমপাড়ানিটাও কিছু দিতে হবে। তার মাও নিশ্চয় ইতিমধ্যে হুইস্কির বোতল ভাঙ্গতে শুরু করেছেন। সেই ভুল শোধরাতে আমাকে এখন যেতেই হবে। এটা আমার ক্ষমতার বাইরের ব্যাপার।

আমার কিছু করার নেই। না.. তুমি তো সব সময় দিয়ে যাচ্ছ। আজ মদের বিল আমি দিব। এই ব্যাপারটাও তেমনি তোমার ক্ষমতার বাইরের। ঠিক আছে.. দেখা হবে... শুভ সন্ধ্যা ... বাই বাই !! “Fais moi une grande bise”


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।