বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d
আর দশটি মেয়ের মত সেই মেয়েটিরও চোখে স্বপ্ন ছিল। ছিল স্বপ্ন ঘেরা একটা মায়াবী বাঁধন, সে সীমানায় বাস করতো তার বাবা-মা, ভাই-বোন। আবার কারো জন্য হয়ত মনে গহীনে গোপনে লালিত হচ্ছিল একটা সুপ্ত বাসনা। মোট কথা একটা সোনালী ভবিষ্যত ছিল।
অভাবের তাড়নায় হোক আর নিজের পায়ে দাড়ানোর স্বপ্নেই হোক মেয়েটি ছুটে এসেছিল ঢাকা শহরে কাজের আশায়। পেয়েছিলও একটা ভাল কাজ। বিউটিপার্লারে বিউটিশিয়ানের কাজটা জুটিয়েছিল। বিশ্বাস করি, তার মধ্যে নিঃশ্চই কোন ক্রিয়েটিভিটি ছিল। না হলে বিউটিশিয়ানের কাজ করবে কিভাবে? এর মানে মেয়েটি একটি প্রতিভা সম্পন্ন মেয়ে।
একটা সম্পদ একটা রত্ন। যে কিনা উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই নিজের ভিতরে থাকা সব যোগ্যতাকে প্রস্ফুটিত করতে পারতো।
আরো ভালো কাজের আশায় সে রাজি হয়েছিল বিদেশ যেতে। প্রস্তাবটা পেয়েছিল তারই এক সহকর্মীর কাছ থেকে। তার হাত ধরেই সেই মেয়েটি যায় জনৈক নূরুর কাছে।
নূরু মেয়েটিকে জানায় সে যদি সিঙ্গাপুর যায় তবে ওখানে বিউটিপার্লারে কাজ পাবে। আরো অনেক বেশী বেতন পাবে। দোদুল্যমান মেয়েটি শেষমেষ বাড়ীর সব সয়-সম্পত্তি বিক্রি করে নূরুর হাতে তুলে দেয় প্রায় দুই লক্ষ টাকা। সেই টাকা সে নিজে সহ নূরু গিয়ে জমা দেয় ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে।
অপেক্ষা কয়েকদিন।
তারপর একদিন শুভ সংবাদ আসে, তার যাওয়ার সব কাগজ পত্র হয়ে গেছে। বিমানের তারিখও ঠিক হয়ে যায় এভাবেই। স্বপ্ন গুলো আবারো ঝিলিক দিয়ে উঠে মেয়েটির চোখে। সেই ট্রাভেল এজেন্সীর লোকজন আর বিমানবন্দরের অভিবাসন কর্মকর্তার সাহায্যে অন্য নামের পাসপোর্ট নিয়ে উড়াল দেয় সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে। এয়ারপোর্টে মেয়েটি পেয়ে যায়, ঠিক তার মতই আরো কয়েকজন সাথীকে।
কিছুটা আশ্বস্ত হয় মেয়েটি।
সিঙ্গাপুরের মাটিতে নেমেই মেয়েটির জীবনে নেমে আসে একটি কঠিন কালো অধ্যায়। মেয়েটিকে আটকিয়ে রাখা হয় একটি বাসায়। সেখানে তার উপর চলে পাশবিক নির্যাতন। চলে যৌন অত্যাচার।
মেয়েটিকে জোড়পূর্বক পতিতাবৃত্তিতে জড়ানো হয়। বিভিন্ন হুমকি আর শারীরিক অত্যাচারে জর্জরিত করা হয়। এভাবে মেয়েটি একসময়ে পতিতায় পরিনত করা হয়।
এর কিছুদিন পরে মেয়েটিকে বলা হয় তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তোলা হয় বিমানে।
কিন্তু বিমানটির তো গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়ায়। সেখানে নতুন পরিবেশে তাকে আবারো নষ্ট করা হয় নতুন ভাবে। এভাবে ভাগ্যের চাকায় সে আবারো আগের জায়গা সিঙ্গাপুরে ফিরে আসে। আবারো চলে একই কাহীনি।
এই অবস্থায় একদিন সেই পতিতালয়ে পুলিশি তল্লাশি চলে, যার ফলশ্রুতিতে মেয়েটির সাথে পরিচয় হয় এক বাংলাদেশীর।
সেই বাংলাদেশীর সাহায্যে মেয়েটি ফিরে আসে বাংলাদেশে।
ঢাকার কোর্ট রিপোটার্স এসোসিয়েশানের এক প্রেস কনফারেন্সে মেয়েটি অকপটে বিবরনী দিয়ে যায় তার জীবনের কালো অধ্যায়ের। একটি মামলাও দায়ের করা হয় দোষী ব্যাক্তিদের নামে। এখন মেয়েটি এখানেও নিরাপদে নয়। অনবরত তাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে সেই দালালেরা।
মেয়েটি এখন কিভাবে ফিরে যাবে তার স্বপ্ন ঘেরা সেই পুরোনো দুনিয়ায়? কে নেবে মেয়েটাকে? কিভাবে খাপ খাওয়াবে ক্ষতবিক্ষত দেহ আর মনটাকে সমাজের সাথে?
এই প্রশ্ন গুলো মেয়েটির মনে ঘুরে ফিরে আসে। কে দেবে তার এই উত্তর গুলো?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।