আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনে হয় যেন লেখার সময় অন্য কারো করতলে ছিলাম-- মাহমুদুল হক



[বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান পুরুষ মাহমুদুল হক চলে গেলেন আজ। প্রায় দু-যুগ ধরে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকার পর বড় নিঃশব্দে, অনাড়ম্বরভাবে চলে গেলেন তিনি। মৃত্যুতেও তিনি তাঁর আড়ম্বরহীন চরিত্রের প্রকাশ ঘটালেন। আমরা মাত্র কয়েকজন মিলে তাঁকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে রেখে এলাম। একজন লেখক মারা যাওয়ার পরপরই তাঁর সম্বন্ধে লিখতে বসার মতো 'মানসিক জোর' আমার নেই।

তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কটিও এ ক্ষেত্রে আমাকে আবেগপ্রবণ করে তুলতে পারে। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ দীর্ঘ আড্ডা দিয়েছি একসময়। সেই আড্ডার কিছু অংশ ছাপা হয়েছিলো একটি ছোট কাগজে। সেখান থেকে খানিকটা তুলে দেয়া যাক। এটি মূল সাক্ষাৎকারের অর্ধেকেরও কম, কিন্তু ব্লগের জন্য বড়।

জানি সে কথা। কিন্তু দেশের একজন মহান লেখকের প্রস্থানের দিনে তাঁর একটি 'বড়' সাক্ষাৎকার পোস্ট করা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবেন না বলে আশা করি। ] আহমাদ মোস্তফা কামাল : আপনার লেখালেখির শুরু হলো কিভাবে? মাহমুদুল হক : সেটা বলা বেশ মুশকিল। ছোটবেলায় দু-চারটে গল্প লিখলেও আমি ঠিক কখন থেকে পরিকল্পনামাফিক লিখতে শুরু করেছিলাম সেটা আর মনে পড়ে না। তবে এটুকু মনে পড়ে-- ছোটবেলায় বাবার তাগিদে ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে গেলে আমি নিয়মিতভাবে একটা প্রার্থনাই করতাম-- হে আল্লাহ, আমাকে তুমি শরৎচন্দ্রের মতো লেখক বানিয়ে দাও! কামাল : কিন্তু আর সবাইকে বাদ দিয়ে শরৎচন্দ্রের মতো লেখক হতে চাওয়ার কারণ কি ছিলো? মাহমুদুল হক : কারণ তো বলা কঠিন, বোঝোই তো ওই বয়সের চাওয়া-পাওয়া, মন-মানসিকতা এই বয়সে এসে ব্যাখ্যা করা কঠিন।

তবে একটা কারণ হয়তো এই যে, ওই সময় শুধুমাত্র শরৎচন্দ্রকেই প্রায় পুরোটা পড়ে ফেলতে পেরেছিলাম, লেখক শব্দটার সঙ্গে যেন তাঁর একটা ওতপ্রোত যোগসূত্র ছিলো। কামাল : সে যা হোক, কথা বলছিলেন লেখক হয়ে ওঠা নিয়ে... মাহমুদুল হক : হ্যাঁ। আমি যখন ক্লাশ এইটে পড়ি তখন পশ্চিম বাংলা থেকে ঢাকায় চলে আসি। আমরা থাকতাম আজিমপুর কলোনিতে। আমাদের পাশের বাসায়ই থাকতেন কবি মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ।

তাঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর আমি বলতে গেলে তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে উঠি। তাঁর প্রতিটি কাজ আমি খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতাম, তাঁর কথা শুনতে ভালো লাগতো, তাঁর সঙ্গে ঘুরতে ভালো লাগতো, কবিতা লিখতেন তো... কামাল : তিনি কবিতা লিখতেন, এই ব্যাপারটিই কি আপনাকে তার ব্যাপারে এমন আগ্রহী করে তুলেছিলো? মাহমুদুল হক : হ্যাঁ, তাই। তো, তিনি একবার বললেন-- তোমাদের স্কুলে শহীদ সাবের নামে একজন শিক্ষক এসেছেন, খবরদার উনার ধারে কাছে যাবে না। -- কেন?-- উনি কমিউনিস্ট! -- কমিউনিস্ট ব্যাপারটি ঠিক কী, তখন তা না বুঝলেও উনার হাবভাবে মনে হচ্ছিলো-- ওটা একটা ভয়ংকর ব্যাপার এবং নিষিদ্ধ, অতএব পরিত্যাজ্য। কিন্তু বোঝোই তো-- নিষিদ্ধ সবকিছুর প্রতি মানুষের একটা দুর্মর আকর্ষণ থাকে।

শহীদ সাবেরের প্রতি আমার তেমন একটা আকর্ষণ জন্মালো। কিন্তু হলে কি হবে, তার সঙ্গে পরিচয় আর হয়ে ওঠে না। একে তো তিনি শিক্ষক, চাইলেই তো একজন ছাত্র একজন শিক্ষকের সঙ্গে যেচে গিয়ে আলাপ করতে পারে না। তিনি আমাদের ক্লাসও নিতেন না, যে, ক্লাসে একটু মনোযোগ আকর্ষণ করার সুযোগ পাবো। তো, একদিন তিনি ক্লাসে এলেন, নির্ধারিত শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন বলে তিনি সেই ক্লাসটি নিতে এসেছিলেন-- এবং এসে বললেন আমি তো তোমাদের নিয়মিত ক্লাস নেবো না, চলো আজকে ভিন্ন ধরনের কিছু করা যাক।

কি করা যায়? তিনি বললেন, দেখা যাক কে কেমন রিডিং পড়তে পারো। তো, ওই পড়তে গিয়েই আমি তাঁর চোখে পড়ে গেলাম। ক্লাসের পরে তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। আমি গেলাম-- তিনি অনেক কথাই জিজ্ঞেস করলেন, দেয়াল পত্রিকা বের করার কথা বললেন ইত্যাদি। অর্থাৎ তাঁর সঙ্গে আমার একটা যোগাযোগ স্থাপিত হলো।

তিনিও আমাদের পাশের বাসায় থাকতেন-- একপাশে মাহফুজ উল্লাহ, অন্য পাশে শহীদ সাবের। তো আমরা থাকতাম তিন তলায়, তিনি থাকতেন পাশের বাসার দোতলায়, এবং আমাদের বাসার জানালায় দাঁড়ালে তাঁর বাসার প্রায় পুরোটাই দেখা যেতো। আমি এবার মাহফুজ উল্লাহকে বাদ দিয়ে সাবেরকে নিয়ে পড়লাম। সব সময়ই তাঁকে লক্ষ্য করি, তাঁর সঙ্গেই মেলামেশা করি, আর মাহফুজ উল্লাহকে এড়িয়ে চলি। তো একসময় সাবের আমাকে তাঁর লেখাগুলো কপি করে দিতে বললেন।

তিনি জেলে থাকতে ওখানে বসেই অসাধারণ কিছু অনুবাদ করেছিলেন, কিন্তু যেসব কাগজে সেগুলো লেখা ছিলো তার কোনো আগামাথা ছিলো না। কোনোটা চিরকূটের মতো, কোনোটা চারকোনা ছোট কাগজ, সিগারেটের প্যাকেটের উল্টোপিঠে। মানে বুঝেছ তো, কোনো ঠিকঠিকানা নেই। আবার কাগজগুলোর কোনো সিরিয়াল নম্বর বা পৃষ্টা নম্বরও দেয়া ছিলো না। পৃষ্ঠাই নেই তার আবার নম্বর কি, হা হা হা, ফলে একটি অংশের সঙ্গে আরেকটি অংশ মেলাতে গিয়ে আমাকে পুরোটাই পড়তে হতো।

কাজটা রীতিমতো আমার নেশায় পরিণত হয়েছিলো। তো এইভাবে তাঁর লেখা কপি করতে করতে তাঁর সিনট্যাক্সটা আমার হাতে চলে এলো। কামাল : তাঁর গদ্য কি আপনার ওপর কোনো প্রভাব ফেলেছে? মাহমুদুল হক : না, তাঁর গদ্য খুব অদ্ভুত আর অন্যরকম। কামাল : আপনার গদ্যও তো অদ্ভুত আর অন্যরকম। মাহমুদুল হক : না, আমার গদ্য তাঁর গদ্যের মতো নয়।

তাঁর গদ্য খুবই নির্মেদ, নির্ভার। আমার গদ্য বেশ খানিকটা কাব্যাক্রান্ত। তোমার কি মনে হয়? কামাল : আমি আপনার গদ্যকে ঠিক কাব্যাক্রান্ত বলবো না, আমি বলবো_ আপনার গদ্য কবিতা পাঠের আনন্দ দেয়। কিন্তু এর কারণ কি? মাহমুদুল হক : সম্ভবত কবিতার প্রতি প্রেমই এর কারণ, আমি খুব বেশি কবিতা পড়তাম। কামাল : আপনার গদ্য-- 'বিশেষ করে জীবন আমার বোন'-এর গদ্য সমগ্র বাংলা সাহিত্যের গদ্য থেকে টোটালি ডিফারেন্ট।

এই ভাষা আপনি পেলেন কোথায়? মাহমুদুল হক : আমার বর্ণনাভঙ্গির সঙ্গে সম্ভবত আমার মায়ের কথনভঙ্গির মিল আছে। আমার মা খুব সুন্দর করে কথা বলতেন, চমৎকার করে গল্প করতে পারতেন। আমি আমার অনেক বন্ধুকে মা'র কাছে নিয়ে যেতাম, তিনি ওদেরকে গল্প শুনিয়ে এমন মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলতেন যে, একবার গেলে কেউ সহজে ফিরতে চাইতো না। তাঁর গল্প বলার একটা নিজস্ব স্টাইল ছিলো। গল্পের তো একটা নিজস্ব কালক্রম থাকে।

অর্থাৎ তুমি যদি একটি গল্পের কোনো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে দাঁড়াও তাহলে দেখতে পাবে ওই বিন্দুর ঘটনাগুলো ঘটমান অর্থাৎ বর্তমানে ঘটছে, কিছু ঘটনা পেছনে ফেলে এসেছো অর্থাৎ সেগুলো অতীত, আর কিছু ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে। কথ্য-গল্পেরও কিন্তু এরকম কালক্রম থাকে। আমার মা সেই কালক্রমকে ভেঙে ফেলতেন। অর্থাৎ যেসব ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটার কথা সেগুলো অবলীলায় অতীত কালের ফর্মে বলতেন, অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে স্থাপন করতেন ভবিষ্যতে। এইরকম আর কী! তাছাড়া তাঁর সিক্সথ সেন্স বা ইনটিউশন ছিলো প্রবল।

বহু বিষয়ে তিনি যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন সেগুলো হুবহু মিলে গেছে। এটা বেশ রহস্যময় লাগে আমার কাছে। তো এসব বিষয় হয়তো আমার ওপর কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলেছে। কামাল : কিন্তু আপনার বিভিন্ন উপন্যাসের ভাষাভঙ্গিতে বেশ খানিকটা পার্থক্য চোখে পড়ে। এর ব্যাখ্যা কি? মাহমুদুল হক : আমি সবসময় নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছি।

ব্যক্তিগতভাবে আমি পরপর দুটো লেখার প্রকাশভঙ্গি বা ভাষা একইরকম হওয়া উচিত নয় বলেই মনে করি। আমি তাই প্রত্যেকটি লেখা ভিন্ন ভিন্ন গদ্যে লিখতে চেষ্টা করেছি। এই যে অনেকদিন ধরে আমি লিখছি না তার একটি কারণ হয়তো এই যে, শেষের দিকের লেখাগুলোতে আমি একঘেঁয়েমিতে ভুগছিলাম-- নতুন প্রকাশভঙ্গি বা ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কামাল : শেষের দিকের লেখা মানে, কোনগুলোর কথা বলছেন? মাহমুদুল হক : যেমন 'খেলাঘর' বা 'মাটির জাহাজ'। কামাল : আমি অবশ্য আপনার সঙ্গে একমত হতে পারলাম না।

ওগুলোর ভাষাও আগেরগুলোর চেয়ে আলাদা। যাই হোক, লেখা থামিয়ে দেয়ার নিশ্চয়ই এটাই একমাত্র কারণ নয়! মাহমুদুল হক : না তা নয়, আরো অনেক কারণ আছে। কামাল : কি কারণ? মাহমুদুল হক : দ্যাখো, সাহিত্যের জগৎটিকে আমি যেভাবে আবিষ্কার করেছি সেটা আমার জন্য খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা হয় নি। এ জগতের অধিকাংশ লোককে আমি যেভাবে চিনেছি সেটা আমার একেবারেই ভালো লাগে নি ... কামাল : কি রকম? মাহমুদুল হক : সেসব বলা ঠিক হবে না। তবে এটা জেনে রেখো, আমি এই জগৎটির সঙ্গে এতো গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম যে, বহু লেখকের হাঁড়ির খবর আমার জানা হয়ে গিয়েছিলো।

মানুষ হিসেবে যে এঁরা কতোটা অসৎ, ভণ্ড, বদমাশ হতে পারে তা আমি দেখেছি। কামাল : তাই বলে আপনি লেখা থামিয়ে দেবেন? পৃথিবীর কোথায় অসৎ, ভণ্ড, বদমাশ মানুষ নেই? সেজন্য কি আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন যে, পৃথিবীতেই থাকবেন না? মাহমুদুল হক : ব্যাপারটা সেরকম নয়। ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে, সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাই নি তা-তো নয়। কিন্তু তোমার কি মনে হয় না যে, একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর মানুষ? লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর-- লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়! কামাল : আপনার এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমার কোনো দ্বিমত নেই। তবু লেখালেখি থামিয়ে দেয়াটাকে আমি মেনে নিতে পারি না।

একজন লেখকই তো ক্লেদের মধ্যে কুসুম ফোটাতে পারেন, সেটা তিনি করেনও। শুধু লেখকরাই নন, সব শিল্পীই তো সেই কাজটিই করেন, নইলে পৃথিবীটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়তো অনেক আগেই। মাহমুদুল হক : তোমার কথা শুনে ভালো লাগছে। আমি তো সবসময় বিশ্বাস করে এসেছি-- শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষদেরও।

শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরী, আমি বলবো-- অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধুমাত্র সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিলো বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে। আগেই তো তোমাকে বলেছি-- আমি শেষের দিকে এসে একঘেঁয়েমিতে ভুগছিলাম। আর তাছাড়া একটা সময় এসবকিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হচ্ছিলো আমার কাছে।

কি করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কি, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কী না-- এই সব আর কি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগে নি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম তা নয়। এরকম তো সব লেখকেরই হয় যে, মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যাত্নও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিলো। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে ফিরে আসেন।

আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয় নি। কামাল : প্রসঙ্গ বদলাই। আপনার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস তো অনুর পাঠশালা! মাহমুদুল হক : হ্যাঁ। ওটা বেরিয়েছিলো ১৯৭৩ সালে, তারপর '৭৪-এ নিরাপদ তন্দ্রা, '৭৬-এ জীবন আমার বোন। কামাল : তারপর বেশ দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ৮৮ তে খেলাঘর! মাহমুদুল হক : হ্যাঁ।

কামাল : এত দীর্ঘ বিরতির কারণ কি? মাহমুদুল হক : না, লেখালেখিতে এতটা বিরতি পড়ে নি, তবে বই প্রকাশের ব্যাপারে আমি চিরকালই অলস, খুঁতখুঁতে, ওইসব কারণে দেরি হয়ে গেছে। আমার সব লেখাই '৮২-এর মধ্যে লেখা। এর পরে আমি আর কিছুই লিখি নি, একটি মাত্র গল্প ছাড়া। লেখালেখি ছেড়ে দেয়ার আগে আমার ওই তিনটি বই ছাড়া একটা কিশোর উপন্যাস বেরিয়েছিলো-- চিক্কোর কাবুক, বাকিগুলো পরে... কামাল : মানে খেলাঘর, কালো বরফ, মাটির জাহাজ, অশরীরী বা প্রতিদিন একটি রুমালের গল্পগুলো আগের লেখা? মাহমুদুল হক : হ্যাঁ। কামাল : এর মধ্যে আপনার বিবেচনায় সেরা লেখা কোনটি, কিংবা প্রিয়? মাহমুদুল হক : এটা বলা তো কঠিন।

নিজের কোনো লেখাকে সেরা বলা যায় নাকি? তবে প্রিয় লেখার কথা বলতে গেলে কালো বরফের কথাই বলবো। কামাল : কারণ কি? মাহমুদুল হক : এটা লিখে একটু তৃপ্তি পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিলো বাহুল্যহীন, মেদহীন ঝরঝরে একটা উপন্যাস লিখতে পারলাম। মানে এই একটি উপন্যাসই আমার কাছে বেশ কমপ্যাক্ট মনে হয়। আর উপন্যাস-গল্প এগুলো একটু কমপ্যাক্ট হওয়াই ভালো।

লেখার সময় তো যা-ই আসে তাকেই শ্রেষ্ঠ মনে হয়। অনন্য মনে হয়! আসলে তো তা নয়। লেখাটা চূড়ান্ত করার সময় লেখককে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হয়, নির্মম হতে হয়। আমি তো মাটির জাহাজের মূল পাণ্ডুলিপি থেকে ৩৩ পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে দিয়েছি-- এত নির্মম কেউ হয় বলো? তো সেই দিক থেকে দেখতে গেলে কালো বরফকে বেশ কমপ্যাক্ট আর গোছানো লেখা বলা যায়। কামাল : শুধু এই একটি কারণেই এই উপন্যাসটি প্রিয়? মাহমুদুল হক : কেন, একটা উপন্যাস লিখে তৃপ্তি পেয়েছি, এটা কি একটা বড় ব্যাপার নয়? কামাল : না, আমি সেটা বলছি না।

আমারও ধারণা ছিলো, আপনার নিজের কাছে কালো বরফই প্রিয় হবে, কিন্তু সেটা অন্য কারণে। মাহমুদুল হক : অন্য কারণটা কি? মানে তুমি কি ভেবেছিলে? কামাল : আমি ভেবেছিলাম বিষয়ের কারণেই এই উপন্যাসটি আপনার প্রিয় হবে। ওই উপন্যাসটি, আমার মনে হয়েছে, অনেকটাই আত্নজৈবনিক। বিশেষ করে আপনার শৈশবের দেখা মেলে ওই উপন্যাসে। আর আত্নজৈবনিক উপন্যাস তো লেখকদের কাছে একটু বেশি আদরণীয় হয়ই।

মাহমুদুল হক : কিন্তু ওটা আমার জীবন নিয়ে লেখা নয়, ওখানে আমি নেই। কামাল : পুরোপুরিই আপনি আছেন তা তো বলি নি। কিন্তু ওই উপন্যাসে আবদুল খালেকের যে শৈশব-প্রেম সেটা তো আপনারই! আপনার বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসে শৈশব-প্রেম বেশ প্রবলভাবে আসে, এটাতে তার তীব্র প্রকাশ ঘটেছে। মাহমুদুল হক : কিন্তু আমার মাঝে মাঝে মনে হয় শৈশবের প্রতি কোনো আমার কোনো প্রেম নেই। আমার শৈশব খুব দ্বন্দ্বসংকুল, দেশভাগের যন্ত্রণায় ভরা, বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়ার বেদনায় ভরা।

কামাল : এই উপন্যাসেও সেটাই এসেছে, আবদুল খালেকের শৈশব তো বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়ার যন্ত্রণা ও বেদনায় ভরাই। মাহমুদুল হক : শোনো, দেশভাগের সময় আমার বাবা এখানে চলে এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু আমরা আসতে চাইনি। মা তো আসার ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না। এখানে আসার আগে তিনি দুবার ঢাকায় এসেছিলেন বাবার সঙ্গে, এবং ফিরে গিয়ে বলেছিলেন ওটা বর্বরদের দেশ। কারণ কি জানো? যে দুবার তিনি এসেছিলেন কোনোবারই রাস্তাঘাটে কোনো মেয়েকে চলাফেরা করতে দেখেন নি।

তখন তো ঢাকা শহরে মেয়েরা বাইরে বেরুতোই না, দু-একজন বেরুলেও রিকশা পর্দা দিয়ে ঘিরে বেরুতো। তো এইসব দেখে মা'র নাকি মনে হয়েছিলো, যে দেশে মেয়েরা বাইরে বেরুতে পারে না সেটা একটা বর্বর দেশ। তিনি ব্যাপারটা এতোই সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন যে, ফিরেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন-- কিছুতেই তিনি পাকিস্তান যাবেন না। এমনকি ওখানে বাস করার জন্য নতুন বাড়ি পর্যন্ত বানানো শুরু করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা থাকতে পারি নি।

আব্বা এখানে চলে আসার পর ওখানকার অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে, সবাই আমাদেরকে দেখতে থাকে সন্দেহের চোখে, এমনকি আমাদের সঙ্গে মেলামেশাও প্রায় বন্ধ করে দেয়। সামপ্রদায়িক ভেদবুদ্ধি একসময় এমন এক অবস্থায় পেঁৗছায় যে আমরা চলে আসতে বাধ্য হই। এখন বলো, যে জন্মভূমি তার সন্তানদের দেশত্যাগে বাধ্য করে সেই জন্মভূমির প্রতি কোনো প্রেম থাকে? [তাঁর কণ্ঠে তীব্র ক্ষোভ বেদনা অভিমান ও যন্ত্রণা ঝরে পড়ে। অনেকক্ষণ আমি কোনো কথা বলতে পারি না। বাধ্য হয়ে দেশত্যাগের যন্ত্রণার সঙ্গে তো আমার কোনো পরিচয় নেই, কি বলবো আমি? তিনিও অনেকক্ষণ চুপ করে থাকেন।

আমি নিঃশব্দে তাঁর গম্ভীর-বিষণ্ন হয়ে যাওয়া মুখ দেখি, ভিজে ওঠা চোখ দেখি। একসময় নিজেই আবার কথা শুরু করেন তিনি। ] মাহমুদুল হক : হ্যাঁ, কি যেন বলছিলে তুমি? কামাল : এই বিষয়টা না হয় থাক বটু ভাই। মাহমুদুল হক : না, থাকবে কেন? তোমার মতামতটা শোনা যাক। কামাল : কালো বরফ নিয়ে কথা হচ্ছিলো।

মাহমুদুল হক : হ্যাঁ, তুমি আমার শৈশব প্রেমের কথা বলছিলে! কামাল : হ্যাঁ। মাহমুদুল হক : কিন্তু ওটা তো আমার শৈশব নয়। কামাল : ওই উপন্যাসের চরিত্রগুলো কি আপনার পরিচিত নয়? মাহমুদুল হক : না, ওটা তো বানিয়ে লেখা। আচ্ছা তুমি তো লেখ, লেখার জন্য যে সব চরিত্রের সঙ্গে পরিচয় থাকার দরকার হয় না, সেটা তো বোঝো! কামাল : তা বুঝি। কিন্তু লিখি বলেই এটাও বুঝি যে, মাধুর মতো কোনো রক্তমাংসের মানুষের সঙ্গে পরিচয় না হলে, ওরকম কোনো চরিত্রও সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

মাহমুদুল হক : মাধুর মতো একজন ছিলো অবশ্য, ছোটবেলায় ওরকম একজনকে দেখেছি আমি, মনে আছে। কামাল : আর মণি ভাই? মাহমুদুল হক : না, ওরকম কেউ নেই। মণি ভাইয়ের চরিত্রটা ঠিক উল্টে দিলে যাকে পাওয়া যাবে, সে আমার বড় ভাই। কামাল : মা? মাহমুদুল হক : মা? হ্যাঁ, কালো বরফের মায়ের সঙ্গে আমার মায়ের বেশ খানিকটা মিল আছে বটে। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি শোনো।

এই উপন্যাসটা বই হয়ে বেরুনোর অনেকদিন পর আমি কুমিল্লা অভয়াশ্রম থেকে একটা চিঠি পেলাম। চিঠিটা এসেছিলো প্রকাশকের ঠিকানায়। তো খুবই কাঁচা হাতের লেখা চিঠিটাতে একটা বাক্য ছিলো-- আপনার কালো বরফ পড়িয়া আমার মাতৃদর্শন ঘটিয়াছে। চিঠিটা পড়ে আমি অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম, কেঁদেছিলামও। এ-তো আমারও মাতৃদর্শন।

আমার লেখক জীবনে যা কিছু বড় প্রাপ্তি তার মধ্যে এই চিঠি একটি। কামাল : মা'র প্রসঙ্গটি আপনি বেশ স্পর্শকাতরভাবে উপস্থাপন করেন আপনার লেখায়। মাহমুদুল হক : হ্যাঁ, মা'র ব্যাপারে আমি নিজেই খুব স্পর্শকাতর। মা চলে যাওয়ার পর আমার সবই শেষ হয়ে গেছে। আমার জীবনে মা'র ভূমিকা সাংঘাতিক।

আমার খুব সাধ ছিলো তাঁকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখবো। কামাল : লিখলেন না কেন? মাহমুদুল হক : হলো না আর কি! লেখালেখিটা ছেড়ে না দিলে হয়তো লিখতাম। আমার কি মনে হয় জানো? পৃথিবীতে এ পর্যন্ত মা নিয়ে যতোগুলো লেখা হয়েছে, আমি প্রায় সবই পড়েছি, এর মধ্যে মানিকের জননীই সেরা। সবার থেকে একদম আলাদা। আমার মনে হয় আমি মাকে নিয়ে উপন্যাসটা লিখতে পারলে সেটা মানিকেরটার চেয়েও ভালো হতো।

কামাল : আপনার আর কোনো লেখায় কি আপনার মাকে পাওয়া যাবে? মাহমুদুল হক : না, ঠিক সেভাবে... খেলাঘর উপন্যাসটার ভাষা আমার মায়ের মুখের ভাষা থেকে নেয়া। সংলাপগুলো খেয়াল করে দেখো, ওই ভাষায় আমি বা আমার চারপাশের কেউ-ই কথা বলে না। মা ওই ভাষায় কথা বলতেন। কামাল : খেলাঘর ছাড়াও আপনার বহু লেখায় মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারটা ঘুরেফিরে এসেছে। কেন? বিষয় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ কি আপনার খুব প্রিয়? মাহমুদুল হক : একটা জাতির জীবনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো, আমি সেই জাতির একজন লেখক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখবো না? এটা কি লেখক হিসেবে আমার একটা দায়িত্বও নয়? কামাল : কিন্তু আপনার লেখাগুলোতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা নেই।

এ জাতি তো যুদ্ধ করেই দেশটা স্বাধীন করেছিলো! অথচ আপনার প্রায় সব লেখাই যুদ্ধের মধ্যে আটকে পড়া অসহায় জনগোষ্ঠীর মনোজগতের গল্প, যুদ্ধের কথা সেখানে নেই বলতে গেলে। যেমন খেলাঘরে ইয়াকুব আর রেহানাকে দেখে মনেই হয় না যে, তাদের চারপাশে একটা যুদ্ধ চলছে, তাদের পাশের সাধারণ কৃষকটিও লাঙল ফেলে বন্দুক তুলে নিচ্ছে। তারা ব্যস্ত আছে নিজেদেরকে নিয়ে, নিজেদের সংকট আর অসহায়ত্ব নিয়ে। মাহমুদুল হক : আমি যেভাবে দেখেছি সেভাবেই তো লিখবো। আমি নিজে তো যুদ্ধ করি নি।

যুদ্ধের সময় আমিও তো অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে আটকে পড়া এক অসহায় মানুষ ছিলাম। [এভাবে দিনের পর দিন আমাদের আলোচনা চলে। লেখালেখি ছাড়াও আসে তাঁর নানা ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ-- তাঁর জীবনযাপন, তাঁর অতীত ও বর্তমান, তাঁর উদ্দাম-উচ্ছ্বল-মুখর যৌবনের দিনগুলোর কথা বলতে বলতে তিনি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। চলে সমসাময়িক এবং পূর্বপ্রজন্মের লেখকদের সম্বন্ধে তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে পর্যালোচনা-- কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আবার শর্ত জুড়ে দেন-- এসব কোথাও প্রকাশ করা যাবে না, অন্তত তাঁর মৃতু্যর আগে তো নয়ই। কিন্তু এতসব আলোচনার মাঝখানে আমার ভেতরে উন্মুখ হয়ে থাকে তাঁর লেখালেখি বন্ধ করার বিষয়টি।

কেন তিনি আর লেখেন না-- এ বিষয়ে কি সত্যিই তিনি কোনোদিন কিছু বলবেন না? তারপর একদিন তিনি তাঁর ক্লান্তির কথা বললেন, বললেন ব্রেকডাউন অব কমিউনিকেশনের কথাও। ] মাহমুদুল হক : ডাক্তার নন্দী নামে এক ভদ্রলোক আমার মায়ের চিকিৎসা করতেন। খুব অদ্ভুত মানুষ ছিলেন তিনি। পশুপাখির সঙ্গে কথা বলতেন, মনে হতো তিনি ওদের ভাষা বোঝেন, অন্তত তাঁর কথা বলার ধরনটা ওইরকমই ছিলো। তাঁর পোষা কুকুর ছিলো, সেগুলোকে তিনি সন্তানের মতো ভালোবাসতেন।

আমি তখন টিয়েপাখি পুষতাম, তিনি আমাদের বাসায় এসেই আগে টিয়েকে আদর করতেন, কথাবার্তা বলতেন। তো ওই ভদ্রলোক আমার কাছ থেকে বই নিয়ে যেতেন পড়ার জন্য। একদিন তিনি বললেন-- 'আমার কি মনে হয় জানো? মনে হয় আমরা সময় কাটাবার জন্য, ক্লান্তি দূর করার জন্য এসব বইটই পড়ি, অথচ এসব যারা লেখেন তাঁদেরও একসময় আর এগুলো ভালো লাগে না। বুঝলে, ক্লান্ত লাগে ক্লান্ত লাগে। ' তাঁর এই কথাটা আজকাল আমার খুব মনে পড়ে।

আমারও এখন ক্লান্ত লাগে ক্লান্ত লাগে। জীবনটাকে ভীষণ অর্থহীন মনে হয়। আর তাছাড়া, লিখে কি হয়? লেখালেখি করে কি কাউকে কমিউনিকেট করা যায়? মিউজিক বরং অনেক বেশি কমিউনিকেটেবল ল্যাংগুয়েজ। লেখালেখিতে যা কিছু বলতে চাই তা বলা হয়ে ওঠে না, আমি অন্তত বলতে পারি নি। যেটুকু বলেছি তা-ও যে বোঝাতে পেরেছি বলে মনে হয় না।

যাকে বলে ব্রেকডাউন অব কমিউনিকেশন সেটা আমাদের প্রায় সবার জীবনে ঘটে, আমার জীবনেও ঘটেছে। কামাল : তবুও তো আমরা কথা বলি, লিখি, ছবি আঁকি, গান বাঁধি, সুর তুলি, গান গাই। কমিউনিকেট করার সবরকম চেষ্টা করে যাই। মাহমুদুল হক : হ্যাঁ, যেমন করে জীবন অর্থহীন জেনেও আমরা জীবন যাপন করে যাই। মৃত্যুই চূড়ান্ত সত্য, জন্মালে মরতে হবেই, আর আমি মারা গেলে আমার এত কীর্তি কোথায় যাবে? এত কীর্তি দিয়ে আমার হবেটাই বা কি? সেই দিক থেকে দেখতে গেলে জীবন এবং জীবনের যাবতীয় কার্যকলাপ সবই খুব অর্থহীন, খুবই অর্থহীন।

কিন্তু আমরা এগুলো ভুলে থাকি। কিভাবে থাকি? এত অনিবার্য বাস্তবতার কথা আমরা কি করে ভুলে থাকি? আমার তো মনে হয় প্রকৃতিই আমাদের ভুলিয়ে রাখে, নইলে মানুষের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হতো না। কিন্তু মরবার আগে একজন মানুষ ঠিকই টের পেয়ে যায়, মৃত্যুর কথা তার বারবার মনে পড়ে, বারবার মৃত্যুর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলে সে। কেন মনে পড়ে? ওই প্রকৃতিই মনে করিয়ে দেয় যেন সে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এইভাবে প্রকৃতি আমাদের আগলে রাখে।

খেয়াল করে দেখো, এমন অনেক কিছুই আমাদের লেখার মধ্যে থাকে যা আমরা সচেতনভাবে ভাবিনি। পরে পড়লে অবাক লাগে, মনে হয়, এ কি আমারই লেখা? মনে হয়-- লেখার সময় আমরা অন্য কারো করতলে ছিলাম, থাকি। [মাহমুদুল হককে নিয়ে আমার আগের একটি পোস্ট : দিব্যকান্তি সম্পর্কের কথক : লিংক Click This Link ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।