আমি নির্বাক হয়ে গেলে তোমার পতন অনিবার্য !
ঢাকার বয়স নিয়ে সাপ্তাহকি ২০০০-এ একটি প্রতবিদেন প্রকাশতি হয়ছে। আমরা সবাই ঢাকার ৪০০ বছর পালন করছি মহাধুমধামে কিন্তু ঢাকার বয়স যে ৮০০ বছর সেই খবর কয়জনে রাখি? প্রতবিদেনটিতে বিশ্লেষণ করা আছে। চাইলে যে কেউ পড়তে পারেন।
৪০০ না ঢাকার বয়স ৮০০ বছর
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ
সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে যখন স্থবিরতা ও অস্থিরতা চলছে ঠিক তখনই যেন ঢাকা নগরকেন্দ্রিক মানুষ এবং দেশের শহুরে জীবনের সঙ্গে যুক্ত নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে ভিন্ন আবেগ উন্মাদনা ছড়িয়ে দিয়েছে নতুন এক ক্রেজ। চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শহর ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তি পালনের দুবছরব্যাপী উৎসব আয়োজনের ছোঁয়া।
প্রথমে শহর ঢাকার ৪০০ বছর পালনের সেøাগান থাকলেও এখন একটু কাটছাঁট করে বলা হচ্ছে রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পালন উৎসব। এসব ডামাডোল দেখে আর শুনে মনে হচ্ছে ইতিহাসচর্চা আর ঐতিহ্য অšে¦ষণ থেকে ক্রমে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি। যেখানে জীবন্ত পৃথিবীর মানুষ তাঁর বিবর্ণ অতীতের ধূলিকণা ঘেঁটে উজ্জ্বল ঐতিহ্যকে খুঁজে ফেরে সেখানে ইতিহাসের সবল প্রমাণপত্র থাকার পরও আমরা প্রায় ৮০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য বুকে নিয়ে বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরের বয়স ৪০০ বছর কমিয়ে এক অ™ভুত তরুণ বানিয়ে দেওয়ার বিকৃত প্রয়াস চালাচ্ছি। এতে কার কী গোষ্ঠীগত বা ব্যক্তিগত লাভ হচ্ছে জানি না। তবে জাতিগতভাবে আমরা আমাদের প্রজন্মকে ঐতিহ্য বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার অসুস্থ তৎপরতা চালাচ্ছি।
কলকাতা শহরের তিনশ বছরপূর্তি সাড়ম্বরে পালন করেছে পশ্চিমবঙ্গবাসী। তারা যথার্থ খুঁজে ফিরেছে কলকাতা শহরের জন্মকালকে। সেই কখন কীভাবে সুতানটি গোবিন্দপুর গ্রাম শহরে রূপান্তরিত হলো তার ইতিহাস স্পষ্টই উন্মোচন করেছে তারা। আমাদের দেশের অতি উৎসাহী কোন গোষ্ঠী ইতিহাসের সর্বশেষ গবেষণার সঙ্গে সম্পর্কিত না করে সাতপুরোন তথ্যে মুঘল যুগের ঢাকাকে শহর ঢাকার সূচনা ভেবে বসে আছে। ইতিহাস অনুসন্ধানে না গিয়ে মুঘল রাজধানী প্রতিষ্ঠার সময়কাল থেকে রাজধানী ঢাকার বয়স ৪০০ বছর গণনা করেছে।
কিন্তু ইতিহাসের শক্তি নিয়ে যখন প্রতিবাদ উঠল তখন তড়িঘড়ি ৪০০ বছরকে অবধারিত একক ধরে শব্দ পরিবর্তন করে বলা হলো ‘রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছরপূর্তি’। এই প্রক্রিয়াটি দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস বলে মনে হয়েছে। মুঘল রাজধানী থেকে আজকের বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা কোনও ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে এগোয়নি। ১৬১০-এ ঢাকায় মুঘল প্রাদেশিক রাজধানীর পত্তনের পর থেকে তা সেই যুগেই অব্যাহত থাকেনি। নবাব মুর্শিদকুলি খান ঢাকা থেকে রাজধানী নিয়ে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদে।
আবার ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গের পর ঔপনিবেশিক যুগে বাংলার খণ্ডিত অংশের রাজধানী হিসাবে ঢাকার অবস্থান দেখা যায়। ১৯১১-এর পরে তাও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে প্রাদেশিক রাজধানীর চেয়ে ঢাকা একটুও বেশি মর্যাদা পায়নি। তবে আজ স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উৎস অনুসন্ধানের এমন অদ্ভুত তৎপরতা কেন?
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য চর্চায় সঙ্কট রয়েছে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলায় সমকালীন ইতিহাস গ্রন্থ রচিত হয়নি।
প্রাচীন যুগে লেখা সাহিত্যও হাতেগোনা। তাই প্রতœতাত্ত্বিক সূত্র এবং ফাহিয়েন, হিউয়েন সাঙের মতো পর্যটকদের বিবরণ ছাড়া প্রাচীন বাংলার সমাজ সংস্কৃতির খোঁজ পাওয়া কঠিন। এ কারণে দু একটি গ্রন্থ বাদ দিলে প্রাচীন বাংলার মানুষ ও তাদের কৃতি জানার সুযোগ নেই। এই েেত্র ইতিহাস গবেষণাও তেমন এগোয়নি। প্রাপ্ত লিখিত সূত্রে শুধু রাজনৈতিক ইতিহাস নির্মাণ করা যেতে পারে।
বাংলার ইতিহাসে সোনাফলা সময় ছিল মধ্যযুগ। এর মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় কেটেছে প্রথম পর্বটি। অর্থাৎ ১৩৩৮ থেকে ১৫৩৮ পর্যন্ত কালপর্ব। এ সময়টি ছিল বাংলার প্রায় অব্যাহত স্বাধীনতার সময়কাল। এ পর্বে অন্যতম রাজধানীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিল সোনারগাঁও।
পুরো বাংলাজুড়ে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেছিল। একটি কেন্দ্রীয় মুদ্রা-ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন স্বাধীন সুলতানরা। ব্যবসা বাণিজ্যের পূর্ণ বিকাশ ঘটে এ পর্বে। কমপে ১৬টি টাকশাল নগরী প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলায়। স্থাপত্যকলা ও পোড়ামাটির শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটে।
ইবনে বতুতা, মাহুয়ান, ভারথেমা, বারবোসা প্রমুখ বিদেশী পর্যটক সুলতানি পর্বের বাংলার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। কিন্তু সমকালীন ইতিহাস গ্রন্থের অভাবে এই গৌরবের ঐতিহ্যও তেমনভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে না আমাদের জ্ঞানচর্চায়। অধ্যাপক আবদুল করিম, অধ্যাপক মমতাজুর রহমান রহমান তরফদারের মতো বিশাল মাপের মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস গবেষকরা গত হয়েছেন। এঁদের অমূল্য সৃষ্টিগুলো আমরা কতটা চর্চায় রাখতে পেরেছি? বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস শিার্থী ও শিকদের চর্চা থেকেও সুলতানি বাংলা প্রায় মুছে যাচ্ছে। মধ্যযুগ বলতে এখন যেন অনেকের কাছে মুঘল যুগই বোঝায়।
তাই ঐতিহ্যের প্রান্তসীমা হিসাবে মুঘলযুগ বুঝতে গিয়ে আমরা ক্রমে আমাদের উৎস হারিয়ে ফেলছি। সম্ভবত এই সীমাবদ্ধতা থেকেই ঢাকা নগরীর উৎস খোঁজা বা স্বাধীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঢাকা নগরী আবিষ্কারের জরুরি দায়িত্ব পালন না করে দিল্লির মুঘল সাম্রাজ্যের একটি খণ্ডিত সময়ের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকাকে উপজীব্য করে ৪০০ বছরকে একটি বন্ধনীর ভেতর আটকে ফেলেছি। এমন খণ্ডিত যাত্রাকে ইতিহাস গবেষণা কখনও অনুমোদন করে না।
রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছরের উৎসব আয়োজন
মুঘলপূর্ব যুগের সোনাফলা সুলতানি বাংলা ইতিহাস-শিক ও গবেষকদের চর্চা থেকেই যেখানে ফিকে হয়ে গেছে সেখানে অন্য পেশাজীবীদের বিভ্রান্তিকে খুব অন্যায় বলা যাবে না। গত বছরও শুনেছিলাম ঢাকা শহরের চারশ বছর পালনের বিশাল আয়োজন চলছে।
টিভি চ্যানেলের টকশোতেও বিজ্ঞজনদের এ বিষয়ে বক্তব্য রাখতে দেখেছি। সান্ত্বনা ছিল ইতিহাসের এতবড় বিভ্রান্তি শেষ পর্যন্ত নিশ্চয়ই সংশোধিত হবে। বিশেষ করে এক দশক আগেই শিলালিপির মতো আকর সূত্র আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনায় তা মুদ্রিতও হয়েছে। এতকাল তথ্য ছিল না বলে ইতিহাস পাঠক মাত্রই জানত মুঘল পূর্বযুগে ঢাকা শহরের অস্তিত্ব ছিল না।
মুঘলরাই পত্তন করেছে এই শহরের। ১৬১০ সালে সুবাদার ইসলাম খান চিশতি ঢাকায় প্রাদেশিক মুঘল রাজধানী প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই নগরীর যাত্রা শুরু। ইতোমধ্যে ইতিহাসের সবল সূত্র আবিষ্কৃত হওয়ায় মুঘল-পূর্ব যুগে ঢাকা নগরীর সরব উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। মুঘল আগমনের অন্তত দুশো বছর আগে যে ঢাকায় শহুরে জীবন শুরু হয়েছিল এবং বর্তমান পুরোন ঢাকার অনেকটা এলাকাজুড়ে মুসলিম বসতির বিস্তার ঘটেছিল তাকে আর অস্বীকার করার উপায় নেই। তবু ভালো শেষ পর্যন্ত ঢাকা শহরের ৪০০ বছর উদ্যাপনের আয়োজকরা ইতিহাসের সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন।
সংশোধন করে এখন পালন করছেন শহরের বদলে রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর। কিন্তু এতে আশঙ্কা এবং প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে এমনিতেই ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছি আমরা তার মধ্যে ৪০০ বছর উদযাপনের ঔজ্জ্বল্যে সোনালি অতীত না অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায়।
এই আশঙ্কার কারণ আছে। ৪০০ বছর পালনের ডামাডোলে ইতিমধ্যে নানা টিভি চ্যানেল, সংবাদ মাধ্যম সংবাদ-টকশো ইত্যাদি প্রচার করে মানুষের মধ্যে ঢাকার খণ্ডিত ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত করছে। বোঝা যাচ্ছে চারশ বছর অতিক্রম করে কারও দৃষ্টি আর পেছনে পড়ছে না।
আর এতেই ভয় হচ্ছে, ঐতিহ্যের এত বিশাল ভাণ্ডার থেকে না জানি আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি! কারণ এই আশঙ্কার পেছনে সুনির্দিষ্ট লণ দেখা দিচ্ছে। সেদিন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার এক ছাত্রী আভিন আলী তার প্রতিক্রিয়া জানাতে এল। আভিন ফ্যাশন ডিজাইনারও। বলল, ফ্যাশন ডিজাইনের জগতে সাড়া পড়ে গেছে। ওরা ৪০০ বছর উদযাপনকে উপজীব্য করে ফ্যাশন ডিজাইন করবে।
আভিন আমার কাসের শিায় যে ইতিহাস জেনেছে তাকে ৪০০ বছরের রাজধানী ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করতে রাজি নয়। ঐতিহ্যের মূলে ফিরতে চায় আভিন। কিন্তু বোঝাতে পারেনি সহকর্মী বন্ধুদের। ওদের সরল যুক্তি এত বড় বড় মানুষরা বলছেন তাই ৪০০ বছরের উৎসবকেই ওরা ভিত্তি ধরবে। ইতিহাস বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে ভেবে এখন মন খারাপ আভিনের।
মিডিয়া ও অন্যান্য পেশাজীবীর বিভ্রান্তি
আভিনের কথামতো ইতিহাস সংশ্লিষ্ট বড় মানুষেরা যদি উৎসে না ফিরে ৪০০ বছরের আয়োজনে ঢাকার ঐতিহ্যকে খণ্ডিত করে উপস্থাপন করেন তবে অন্য পেশাজীবীদের অভিযুক্ত করে লাভ কি। ডামাডোল তাই শুরু হয়েই গেছে। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান কাবে ‘রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তি উপলে ৭ দিনব্যাপী ফ্যাশন শো হওয়ার খবর পড়লাম পত্রিকায়। কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও পত্রিকা এই অনুসন্ধানে সহযোগিতা করছে। নানা তথ্য মিডিয়াও মূল সত্য অনুসন্ধান না করে যখন ৪০০ বছরের সেøাগানে নানা স্টোরি তৈরি করছে তখন ভয় হয় লক্ষ লক্ষ পাঠক এভাবেই ইতিহাস বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
শহরের জন্ম
সোনারগাঁও থেকে ঢাকা
চৌদ্দ শতকের আগে সোনারগাঁও ছিল বিক্রমপুরের সেন রাজাদের নিয়ন্ত্রণে একটি হিন্দু প্রশাসনিক অঞ্চল। মুসলিম বিজেতাদের হাতে সোনারগাঁও অধিকৃত হয় চৌদ্দ শতকের শুরুতেই। ১৩০২ সালে সুলতান শামসুদ্দিন ফিরুজ শাহ সোনারগাঁও টাকশাল থেকে মুদ্রা জারি করেন। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে সোনারগাঁও প্রশাসনের একজন অফিসার ফখরউদ্দিন মুবারকশাহ দিল্লীর মুসলমান সুলতানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই সময় থেকে বাংলার স্বাধীন সুলতানী শাসনের সূচনা।
এরপর সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহের হাতে পুরো বাংলা সার্বভৌম স্বাধীন সালতানাতে পরিণত হয়। দুশো বছর অব্যাহত এই স্বাধীনতা বাংলার ইতিহাসে ছিল সোনালি অধ্যায়, যার আভাস শুরুতে রয়েছে। এ পর্বের সুলতানরা বহির্ভারতীয় হলেও কর্মভূমিকায় বাঙালি হয়ে গিয়েছিলেন। তারা বাংলাকে দিল্লির প্রদেশে পরিণত হতে দেননি, নিজেরা পিতৃভূমিতে ফিরে যাননি। বাংলার সমাজ ও অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ন, সাহিত্য ও শিল্পকলার বিকাশ এবং একটি শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছিলেন সুলতানরা।
তাই আন্ত ও বহির্বাণিজ্যভিত্তিক অর্থনীতি শক্ত অবস্থানে এসে দাঁড়ায় এই পর্বে। বাংলার জগৎখ্যাত মসলিন শিল্পের বিকাশ ঘটে এই পর্বে। পরবর্তী মুঘল শাসন পর্ব ছিল মসলিনের পড়ন্ত বিকালের শেষ আলো। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ফখরউদ্দিনের রাজত্বকালেই সিলেট হয়ে সোনারগাঁওয়ে এসেছিলেন (১৩৪৬ খ্রি.)। তিনি বাংলার এই রাজধানীর সমৃদ্ধির প্রশংসা করেছেন।
এই পর্বে সুফি সাধকরা সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েন। তাঁদের প্রভাবে মুসলিম সমাজের ব্যাপক বিস্তার ঘটতে থাকে। সুফিদের আদর্শ ও সুলতানদের উদার দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে হিন্দু মুসলমানের সম্মিলনে সুলতানি যুগে একটি অসা¤প্রদায়িক বাঙালি সমাজের শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়। বাংলা সাহিত্যের পরিপূর্ণ বিকাশের আখ্যানভাগ রচিত হয় সুলতানি যুগে। দিল্লি থেকে বিচ্ছিন্ন স্বাধীন দেশ হওয়ার সুবাদে স্বকীয় বাঙালি ঘরানায় স্থাপত্যকলা ও অনুপম পোড়ামাটির শিল্পের গৌরব এই যুগেই রচিত হয়।
যার অনেকটাই হারাতে হয় মুঘল অধিকারভুক্ত হওয়ার পর মুঘল শিল্পকলার প্রভাবে। ইতিহাসের তথ্য থেকে বলা যায় ঢাকার নাগরিক জীবন শুরু হয়েছিল চৌদ্দ শতকের চল্লিশের দশকেই। ফখরউদ্দিন মুবারক শাহের সময়েই ঢাকা একটি জেলা বা পরগণার অন্তর্ভুক্ত হয়। যাকে ফারসি ভাষায় বলা হয়েছে ‘ইকলিম’। এই ইকলিমটির নাম করা হয়েছিল সুলতানের নাম অনুসারে ‘মুবারকাবাদ’।
মুবারকাবাদের অবস্থান সম্পর্কে এইচ. ই. স্ট্যাপলটন যে ধারণা দিয়েছেন তা প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড. আহমদ হাসান দানী ১৯৫৭ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত ‘ইরনষরড়মৎধঢ়যু ড়ভ ঃযব গঁংষরস ওহংপৎরঢ়ঃরড়হং ড়ভ ইবহমধষ’ গ্রন্থের ১১০ নং পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত করেছেন। এই সূত্রে জানা যায়, মুবারকাবাদের অবস্থান মেঘনা নদীর দণি-পূর্বে; এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ঢাকাসহ প্রাচীন বিক্রমপুরের প্রায় সমুদয় অঞ্চল। দানী লিখেছেন মুবারকাবাদ ছিল ঢাকা জেলার একটি বড় পরগণা।
সুলতানি যুগের ঢাকা নগরীর সরব অবস্থান এবং মুসলিম সমাজের বিস্তারের সত্য আরও নিশ্চিত করেছে সমকালীন দুটো শিলালিপির স্যা। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলছি, দেড় যুগ আগে আমার পিএইচডি গবেষণায় এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছিল।
বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থেও এই ফলাফল উল্লেখ করি। মনে পড়ে নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক সেমিনারে উত্থাপন করেছিলাম ইতিহাসের এই নতুন সংযোজনটি। বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র থেকে ২০০১ সালে প্রকাশিত ঐধশরস ঐধনরনঁৎ জধযসধহ কযধহ ঈড়সসবসড়ৎধঃরড়হ ঠড়ষঁসব গ্রন্থে এই প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছিল। ২০০৭-এর ফেব্র“য়ারিতে বাংলা একাডেমী পত্রিকায় প্রকাশিত আমার এক দীর্ঘ প্রবন্ধেও এই বিষয়টির অবতারণা করেছি। পরে বাংলা একাডেমী প্রবন্ধটি গ্রন্থ আকারেও প্রকাশ করে।
সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৪৩৬-১৪৫৬ খ্রি.) সময় খোদিত উল্লিখিত দুটো শিলালিপির একটি থেকে স্পষ্টতই ধারণা করা যায় ঢাকা তখন ইকলিম মুবারকাবাদের অন্তর্গত ছিল। প্রথম শিলালিপিটি নারিন্দায় বিনত বিবর মসজিদ নামে পরিচিত সুলতানি যুগের ঢাকায় স্থাপিত টিকে থাকা একমাত্র মসজিদের গায়ে সাঁটা আছে। দ্বিতীয়টি পাওয়া গেছে বর্তমান কেন্দ্রীয় কারাগারের কিছুটা পশ্চিমে গিরিদাকিল্লা নামের মহল্লায় নাসওয়ালাগলি মসজিদের সম্মুখস্থ একটি তোরণের গায়ে। মসজিদ বা তোরণের অস্তিত্ব এখন আর নেই। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এবং বিশ শতকের শুরুর দিকে বজ্রপাতে মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
শিলালিপিটি প্রথমে ঢাকা কালেক্টরেটে ছিল। বর্তমানে তা জাতীয় জাদুঘরে সংরতি আছে।
নারিন্দা শিলালিপিসূত্রে জানা যায় মসজিদটি ৮৬১ হিজরি অর্থাৎ ১৪৫৬-৫৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। নাসওয়ালাগলি মসজিদের শিলালিপির উৎকীর্ণকাল জুন ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দ। সময়ের হিসাবে দুটো শিলালিপিই সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের সময় নির্মিত।
প্রথম শিলালিপিটির বক্তব্য বিষয় খুবই সীমিত। লিপি বিন্যাসে বোঝা যায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। দ্বিতীয়টিতে মসজিদের সম্মুখস্থ তোরণ নির্মাণের স্যা রয়েছে। এটি সরকারি উদ্যোগে নির্মিত হওয়ায় সমকালীন সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের নাম উৎকীর্ণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা হিসাবে ‘খাজা জাহান’ নাম লেখা হয়েছে আর নির্মাণ অঞ্চল হিসাবে লেখা হয়েছে ‘ইকলিম মুবারকাবাদ’।
মসজিদ দুটোর অবস্থান পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় এক সরল রেখায় তিন থেকে চার কিলোমিটার ব্যবধানে। অর্থাৎ মসজিদ দুটো ্ইকলিম মুবারকাবাদের অন্তর্গত ছিল। পাশাপাশি ‘ইকলিম’ নিশ্চিত করছে ঢাকার এই অংশে নাগরিক জীবনের স্পন্দন ছিল সুলতানি যুগের প্রথমার্ধেই। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে সুলতানের নামের সঙ্গে নির্মাতা হিসাবে খাজা জাহানের নামের উল্লেখ আছে। তুঘলক যুগে দিল্লিতে প্রধান কর্মকর্তা বা উজিরকে খাজা জাহান উপাধি দেওয়া হতো।
সাধারণভাবে সুলতানি যুগে প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের উপাধি ছিল খাজা জাহান। ধারণা করা হয় ইকলিম মুবারকাবাদের শাসনকর্তা ছিলেন এই খাজা জাহান এবং ঢাকার এই অংশ ছিল তাঁর শাসন কেন্দ্র।
সুতরাং শিলালিপি দুটি থেকে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা যায় ঢাকার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে পনের শতকের মাঝামাঝি সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে মসজিদ তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে এই দৃষ্টান্ত সুলতানি যুগে ঢাকা নগরের বিকাশমান অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে। উল্লেখ্য, শহরতলি হিসাবে ঢাকার উত্তরাঞ্চলেও সুলতানি যুগে মুসলিম বসতি গড়ে উঠেছিল।
মিরপুরে শাহ আলী বোগদাদীর (রা.) সমাধি সংলগ্ন একটি সুলতানি মসজিদ এর প্রমাণ। যদিও আধুনিকায়নের দাপটে বর্তমানে তা অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে।
প্রাক-মুঘল যুগে ঢাকার নাগরিক জীবনের পে আরও তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। ১৫৫০ সালে অঙ্কিত মানচিত্রে জোয়াও দ্য ব্যারস ঢাকাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। ইসলাম খান ঢাকায় এসে ‘ঢাকা দুর্গ’ নামের এক স্থানে নিজের আবাস তৈরি করেছিলেন।
অনুমান করা হয় মুঘলরা ঢাকায় আসার আগেই বর্তমান কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় এই দুর্গটি অবস্থিত ছিল। এসব বিচারে বলা যায় প্রাক-মুঘল যুগের নাগরিক জীবনের অস্তিত্বই মুঘলদের ঢাকায় অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেছিল। নয়তো শীতল্যা নদীতে বারোভূঁইয়াদের দমন করতে ফজল গাজীর জমিদারি গাজীপুরকেই বেছে নিত তারা।
এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাপিডিয়ায় মধ্যযুগের বাংলার অনন্যসাধারণ বিশেষজ্ঞ আবদুল করিমের লেখা ঢাকা ভুক্তিতে স্পষ্টতই উল্লেখ করেছেন সুলতানি আমলে ঢাকা একটি নগর কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছিল। অর্থাৎ ঢাকা নগরীর জন্ম হয়েছে সুলতানি আমলে।
অথচ বিস্ময়ের সঙ্গে জানা গেল ইতিহাস চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র খোদ এশিয়াটিক সোসাইটিই ঢাকা নগরীর চারশ বছর পূর্তির অন্যতম আয়োজক। এ বছর ২২ জানুয়ারি অনেক খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ও বিদগ্ধজনের উপস্থিতিতে দুবছরব্যাপী ঢাকা নগরীর ৪০০ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হিসাবে এশিয়াটিক সোসাইটি ‘নিমতলী গেট’ উদ্বোধন করেছে।
ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে এই অসঙ্গতি স্বাভাবিকভাবেই আমাকে পীড়া দিয়েছিল। মনে হয়েছে এই বিকৃতি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অন্ধকার করে দেবে ঢাকা নগরীর কয়েকশ বছরের ঐতিহ্য। আমরা গৌরবের ইতিহাস বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব।
এ কারণে আমি প্রকৃত ইতিহাসের তথ্য উপস্থাপন করে দুটো প্রবন্ধ লিখি। তা যথাক্রমে প্রকাশিত হয় দৈনিক জনকন্ঠ ও ভোরের কাগজ পত্রিকায়। আমি মনে করি না আমার মতো ুদ্র মানুষের লেখা সংশ্লিষ্টজনদের মনযোগ আকৃষ্ট করতে পারে। তবে যেভাবেই হোক এশিয়াটিক সোসাইটি তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এখন উৎসব আয়োজন হচ্ছে ‘রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছরের’ ব্যানারে।
মুঘল রাজধানী
কতটুকু গৌরবের কতটুকু পরাধীনতার
রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তি উৎসব যে যুক্তিহীন সেভাবে বলা যাবে না। যদিও ঢাকা একটি খণ্ডিত কালপরিসরে মুঘলদের প্রাদেশিক রাজধানী হিসাবে টিকেছিল তবে সে সময়টিতে নাগরিক জীবনের প্রভূত বিকাশ ঘটে। অবশ্য মানতে হবে বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারাবাহিকতায় একটি ছন্দপতনও ঘটেছিল। বাংলার দুশো বছরের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট হুমায়ুন। কিন্তু তখনি বাংলাকে মুঘল প্রদেশে পরিণত করতে পারেননি তিনি।
বিহারের জায়গিরদার শেরখান হুমায়ুনকে বিতাড়িত করেছিলেন। আফগান শাসনাধিকারে কিছু কালপর্ব অতিবাহিত করে বাংলা। এরপর মুঘল সম্রাট আকবর চেষ্টা করেন বাংলাকে দিল্লির অধিকারভুক্ত করার। আকবর ১৫৭৬ সালে আফগানদের পরাজিত করে বাংলার একাংশ দখল করেন। কিন্তু পূর্ববাংলা অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ দখল করা তাঁর পে সম্ভব হয়নি।
পূর্ববাংলার স্বাধীনতা বড় বড় জমিদাররা ঐক্যবদ্ধভাবে আগলে রেখেছিলেন। বারোভূঁইয়া নামে তাঁরা ইতিহাসে খ্যাত। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন বারোভূঁইয়ারা। মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে স্বাধীনতা রা করতে চেয়েছেন। অবশেষে সতের শতকের প্রথম দশকেই শীতল্যার শেষ যুদ্ধে বারোভূঁইয়াদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার অবসান ঘটে।
সমগ্র বাংলা দিল্লির মুঘল সাম্রাজ্যের প্রদেশ বা সুবায় পরিণত হয়। ১৬১০ সালে সুবাদার ইসলাম খান ঢাকায় মুঘল রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা যেমন ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসকদের অধীনে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশে’র রাজধানী হয় তেমন ধারার প্রাদেশিক রাজধানীই ছিল ১৬১০ সালের ঢাকা। এ ইতিহাস নিশ্চয় বিস্মৃত হওয়ার নয় যে সোনারগাঁওয়ে স্বাধীন বাংলার যে রাজধানীর উদ্বোধন হয়েছিল ১৩৩৮ সালে তার ধারাবাহিক বিকাশের প্রতিফলনে পত্তন ঘটে ঢাকা নগরীর। হয়তো স্থান নামে পরিবর্তন এসেছে কিন্তু বুড়িগঙ্গার তীরের এই ভৌগোলিক অবস্থানটির তো রূপান্তর হয়নি।
তাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার রাজধানীর উৎস খুঁজতে গেলে যাত্রা শুরু সোনারগাঁও থেকেই করতে হবে। ঢাকাকে খুঁজতে হবে এই পথ ধরেই। মুঘলদের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীর উৎস হবে কেমন করে!
ঐতিহ্যের উৎস হারানোর শঙ্কা
রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তি উৎসব এবং নানা আয়োজন আমাদের ঐতিহ্য চর্চাকে সমৃদ্ধ করবে এতে সন্দেহ নেই। পূর্তি উৎসবকে সামনে রেখে নগরকেন্দ্রিক মানুষের মধ্যে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে তা ইতিহাসমনস্ক হতে আমাদের সাহায্য করবে। কিন্তু শঙ্কা দেখা দেবে ঐতিহ্যের উৎস হারিয়ে ফেলার।
মধ্যযুগের বাংলার সুলতানি ও মুঘল পর্বের মধ্যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বেশ ফারাক রয়েছে। সুলতানি পর্বে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শিল্পকলা, সমাজ ও অর্থনীতির বিকাশে বাঙালির নিজস্ব কৃতির প্রকাশ ছিল। মুঘল যুগে তার অনেকটাই ভেঙে যায়। দিল্লির মুঘল ঘরানার সামাজিক সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা চাপিয়ে দেওয়া হয় বাঙালির জীবনে। রাজধানী হওয়ার সুবাদে ঢাকার জনজীবনে এই বিজাতীয় ধ্যান-ধারণা সবচেয়ে বেশি চেপে বসে।
বিভ্রান্ত আমরা যাকে আমাদের ঐতিহ্য ভেবে বসে আছি।
আজ রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তির পরবর্তী বিরূপ প্রতিক্রিয়া ইতিহাস সচেতন অনেককে শঙ্কিত করবে। আমরা যেভাবে ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে পড়ছি তাতে উৎসবপ্রিয় মানুষ উৎসবের ডামাডোলে ১৬১০ সালকে যদি ঢাকার ঐতিহ্যের প্রান্তসীমা বিবেচনা করি তবে বড় তি হয়ে যাবে ইতিহাসের। ৪০০ বছরের বন্ধনীর মধ্যে আটকে দিয়ে সে তির সম্ভাবনাই যেন স্পষ্ট করা হচ্ছে। উৎসে না পৌঁছে মাঝপথ থেকে ঐতিহ্য অনুসন্ধানের যাত্রা ক’টি সভ্য দেশে হয়েছে আমার জানা নেই।
পৃথিবীর সকল সভ্য দেশের মানুষই তাঁর উজ্জ্বল অতীত খুঁজে অহংকারী হতে চায়। যত বেশি প্রাচীন ঐতিহ্য ধারণ করে তত বেশি অহংকারী হয়। অথচ হাতে পাওয়া লক্ষ্মী ঠেলে ফেলতে চাচ্ছি আমরা। উৎসবের কাল পরিসরের সূচনা যেহেতু ১৬১০ তাই ওখানেই যতি চিহ্ন পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। দেয়ালের আড়ালে পেছনের উজ্জ্বল অতীত ক্রমে ধুলো পড়ে বিবর্ণ হয়ে যাবে।
ভাবতে ইচ্ছে হয় রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তিতে আটকে না থেকে ৮০০ বছরের শহর ঢাকার অনুসন্ধানে আমরা কেন নিজেদের ছড়িয়ে দিচ্ছি না!
আজ ঢাকার প্রাচীনত্ব ৪০০ বছর ভেবে প্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন শহর বলে গর্ব করতে চাই। অনুসন্ধানে ৮০০ বছরের ঢাকা শহর যদি সত্যিই উন্মোচিত হয় তবে তো আমরা গর্ব করে বলতে পারব আমাদের একালের ঢাকা শহর বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহরের অহংকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।