যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
কিছুটা পরিষ্কার করা গেল বটে, কিন্তু এখনও বের হয়ে আছে কয়েকটা শব্দ নির্লজ্জের মত, সামরিক শাসন, মানি না। গতরাতে সচিবালয়ের সাদা দেয়ালে কালো কালিতে লিখে রেখেছে কেউ। মোসাদ্দেক আর জব্বার মিলে ঘন্টাখানেক ধরে ওঠাবার চেষ্টা করছে বিভিন্ন কৌশলে, পানি দিয়ে ঘসেছে কিছুক্ষণ, তারপরে সিরিজ কাগজ দিয়ে। কোনভাবেই উঠছে না। নিরূপায় হয়ে মোসাদ্দেক একটা বিড়ি ধরিয়ে ফুটপথে বসে পড়ে।
জব্বার ক্যালকেলিয়ে হাসে, উঠবো না, সালারা মনে হয় জান দিয়ে লিখেছে। আচ্ছা ভাইজান, কি লেখা আছে এখানে!
মোসাদ্দেকের মাথায় ঘুরছে রঙের চিন্তা, নতুন করে রঙ না করলে এটা বোধহয় যাবে না। বয়সে ছোট জব্বারের প্রশ্নে সে বিব্রত হয়, সেও জানে না কি লেখা, তবে মনে হয় কিছু খারাপই লেখা আছে, নইলে আর্মির বড় অফিসার তাকে গুলিস্থান থেকে দরদাম না করেই তুলে আনবে কেন!
জব্বার এখনও সামরিক শব্দটি ওঠাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্য সব উঠে গেছে ইতিমধ্যে। আর্মির গাড়ীটি অদূরেই দাড়িয়ে আছে।
জলপাই রঙের মানুষগুলো রাস্তা দেখছে খুটিয়ে খুটিয়ে।
মোসাদ্দেক বিড়িতে কষে একটা টান দিয়ে বলে, দাড়া, বুদ্ধি বের করেছি, গিয়ে সাবদের বলি, রঙ কেনার পয়সা দিতে, সাদা রঙ মেরে দিলে লেখাটা আর দেখা যাবে না।
জব্বার একটু ভাবিত হয়। ক'মাস আগে কয়েকটা কাঠাল নিয়ে ফুটপথে বিক্রি করতে বসলে একজন উর্দিওয়ালা এসে তাকে টেনে-হিচড়ে গাড়ীতে উঠিয়েছিল। তিনদিন পরে যখন সে ছাড়া পেল, কাঠালের চিন্থটি সেখানে পড়ে থাকার কথা নয়, তারপরেও সে গিয়েছিল আশায় যদি পাওয়া যায়।
মোসাদ্দেকের থেকে তিনশটাকা ধার করে কাঠাল কিনেছিল। তারপরে সাতদিন কাজ করে অর্ধেক মজুরী পরিশোধ করে ঋণ শুধেছে। জব্বারের পাছায় কয়েক ঘাও পড়েছিল সেদিন। এখন পুলিশ আর্মি দেখলে খাওয়ার কথা ভুলে যায়, কাজের কথা ভুলে যায়। তার মনে হয় কাজ করাও পাপ, নিষেধ, অনুচিত।
মোসাদ্দেক আর্মির গাড়ীটির দিকে হাঁটা শুরু করতেই জব্বার দেয়ালের সামরিক আরো জোরে জোরে ঘসতে থাকে, মনে হয় এখনই এটা না উঠিয়ে ফেলতে পারলে আবার তাকে জেলে যেতে হতে পারে।
মোসাদ্দেক তরুন আর্মির ক্যাপ্টেনকে বলে রঙ করার কথা। ক্যাপ্টেনকে তার ভয়ংকর মনে হয় না। সে আরেকজন উর্দিকে বলে দেয়ালটা দেখে আসতে। সেপাই গোছের আর্মি দেয়ালের কাছে এসে দেখে জব্বারের প্রানন্ত প্রচেষ্টা সামরিক উচ্ছেদের।
কিন্তু অক্ষরের রঙ লেপটে আছে অনেকটা জায়গা জুরে। একটু একটু উঠছে কিন্তু রূপটা ঠিকই বোঝা যাচ্ছে। আর্মি এসে জব্বারের হাত থেকে ব্রাশটা নেয়। তারপরে নিজে লেগে পড়ে সামরিক অপসারণের জন্য। কিন্তু বেহায়া শব্দটি উপড়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না।
যত দেয়ালে ঘসা হচ্ছে তত শব্দটি দেবে যাচ্ছে আরো ভিতরে। এখন মনে হচ্ছে সিমেন্টের আস্তরণ ভেদ করে সেটা লেখা হয়ে যাচ্ছে ইটের গায়ে।
বিরক্ত হয়ে ওঠে সেপাই আর্মি। তরুণ ক্যাপ্টেনের কাছে গিয়ে বলে বেহায়া সামরিক উপস্থিতির কথা। ক্যাপ্টেন এবার হাতের ওয়ার্লেসটা পকেটে ঢুকিয়ে দেয়ালের পাশে এসে দাড়ায়।
কিছুক্ষন দেখে। আশেপাশের লেখা উঠে গেছে কিন্তু সামরিক শব্দে কালো কালির বেশি প্রয়োগ হওয়াতে সেটি ছড়িয়েছে বেশি জায়গা জুরে। ক্যাপ্টেনকে দেখে জব্বারের হাত চলতে থাকে আরো দ্রুত। সে দাড়িয়ে বসে, বহুত কসরতে ঘসতে থাকে। মনে কাঠালের ছবি ভেসে ওঠে।
সচিবালয়ের ফুটপথে আরো সংকুচিত হয়ে দেয়ালের সাথে মিশে ঘসতে থাকে সামরিক। একসময় ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেককে নিয়ে গিয়ে গাড়ীতে ওঠে। রঙ আনতে যাবে।
রাস্তার মোড় থেকে গাড়ীটা অপসারিত হবার পরে জব্বারের চেহারায় স্বস্তি ফিরে আসে। একটা শিরশিরে অনুভূতি মেরুদন্ড বেয়ে নেমে যেতে মুত্রথলীর চাপ বাড়তে থাকে।
এদিক সেদিক দেখে লুংগি উচিয়ে দেয়ালের দিকে তাক করে তার যন্ত্রখানি। তারপরে ঠিক সামরিক শব্দটি টার্গেট করে নিক্ষেপ করতে থাকে মুত্র।
জব্বারের মুত্রতে কিছু একটা ছিল বিষ্ময়কর, ক্যপটেন যখন মোসাদ্দেককে সাথে করে রঙ নিয়ে ফিরলো, তখন দেখলো সামরিক উচ্ছেদ হয়ে গেছে। জব্বার মনের সুখে বিড়ি টানছে।
পুনঃপ্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।