আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড়ো সাহেব



পাড়ার লোকজনের এখন আলাপের বিষয় বস্তু হয়ে গেছে করিমুল্লা। চাকরি করে পিয়নের। তাও আবার বেসরকারী একটি অফিসে। বেতনও যৎসামান্য। প্রায়ই দু'এক বেলা না খেয়ে থাকে বৌ-ছেলেমেয়ে।

লোকটার আর হুঁশ হলো না মোটেই। প্রচন্ড অভাবের সংসারে এমনসব দামি জিনিস নিয়ে আসার শানেনুযুল বুঝতে পারছে না কেউ। এসব জিনিস আমদানির উদ্দেশ্য ও বিধেয় বিশ্লেষণেই বিশেষ করে ব্যস্ত সময় কাটছে পাড়ার লোকজনের। পাড়ার লোকজনের কানাকানিতে কিন্তু করিমুল্লা কোনো ভ্রুপেই করছে না। আমলে নিচ্ছে না বৌ-ছেলেমেয়েদের ুধার জ্বালার নির্মম যন্ত্রণাসঙ্গীতকে।

কিছুণ আগেও ঘাড়ে করে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে এলেন একটি আস্ত এয়ারকন্ডিশনার যন্ত্র। সাথে দুজন ইলেক্ট্রিশিয়ান। ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে উৎসুক জনতা উঁকি মেরে দেখছেন করিমুল্লার কারিশমা। লোকজন বলাবলি করছে অনেককিছু। কেউ কেউ বলছে অলৌকিকভাবে করিমুল্লা পেয়েছে স্বর্ণমুদ্রার পাত্র।

কেউ বলছে বড় ধরনের চুরিটুরি করেছে হয়তো। চুরির কথা উঠতেই কয়েকজন নিজেদের মধ্যেই চিল্লাচিল্লি শুরু করলো। তারাই সিদ্ধান্তে এলো করিমুল্লা আর যা-ই করুক না-কেনো চুরি করার মতো লোক নয়। না খেয়ে থাকে তবু কারো কাছে কোনোদিন হাত পাতে নি। অফিসের বড় কর্মকর্তারা অকারণে গালে ঠাস করে চড় মেরে পাঁচ আঙুলের দাগ তুলে দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো কটু গল্প করে নি কারো কাছে।

বড় কর্মকর্তার ঘরে টুম্পা ম্যাডাম প্রায়ই সময় কাটায়। বাহির থেকেও অনেক সুন্দরী আসে বসের রুমে। তারও তাকে আনন্দ দেয়। অফিসের অনেকেই এসব নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু পাড়ার লোকজন যদি করিমুল্লাকে যদি এ বিষয়ে প্রশ্ন করে সে নরম কণ্ঠে বলে, কি জানি বাপু।

যতোসব উড়ো কথা। বৌয়ের চেঁচামেচি সহ্য করতে না পেরে করিমুল্লা বাজার থেকে দু’কেজি চাল কিনে আনলো। সাথে এক কেজি আলু। এরপর বসে বসে আগ্রহসহকারে দেখতে লাগলো এয়ারকন্ডিশনারে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। বেড়ার ঘরে এয়ারকন্ডিশন।

যন্ত্রটির পেছন দিকটা বেড়ার বাইরে কিছুটা বের করে দিয়ে সেটাকে রাখা হয়েছে নড়বড়ে একটা টেবিলের উপর। ঠান্ডা বাতাস যাতে ঘর থেকে বের হতে না পারে সে জন্য পুরো ঘরে লাগানো হচ্ছে পলিথিন। সত্যিই হাসির বিষয়। অনেককের কাছে চিন্তারও বিষয়। দুদিন হলো বেতন পেয়েছে সে।

এক সাথে পাঁচ মাসের বেতন। কিন্তু দুদিনে খাবার কেনায় একটাকাও খরচ করেনি। তার বৌ-ছেলেমেয়েরা এটা-সেটা খেয়ে না-খেয়ে চুপ করে থেকেছে। না খেয়ে থাকার অভ্যাস আছে ওদের। ভাত রান্না করছে করিমুল্লার বৌ।

তার ছেলে-মেয়েরা চৌকিতে রাখা চব্বিশ ইঞ্চি রঙ্গীন টিভি দেখছে। টিভি দেখতে লাগলে ওদের ুধা আর থাকে না। টিভিটা নিয়ে এসেছে গতকাল। গত পরশু নিয়ে এসেছে রেফ্রিজারেটর আর দুটো সংযোগবিহীন টেলিফোন যন্ত্র। বৌ রান্না করছে আর পাশে বসে মিটিমিটি হাসছে করিমুল্লা।

বৌ তাকে বিরক্তি প্রকাশ করে জিজ্ঞেস করলো, এইসব কি করতাছো? তুমি কি ফাগল অইয়া গেলা? মাইনষে কতো কি কইতাছে। - বাদ দাও তো কুলসুমের মা। আমার সারাজনমের সাধ মিটাইতে দাও না। - প্যাডে ভাত নাই, আর তুমি সক মিডাও। আইচ্চা এইসব কি কিইন্যা আনছো? - আরে নাহ, ভাড়া কইরা আনছি পাঁচ দিনের লাইগা।

আবার দিয়া আসমু। - চাকরিও তো বেশিদিন আর নাই। টাহা শ্যাষ কইরা খাইবা কি? - চুপো তো। মাইয়া মানুষ খালি প্যাচাল পাড়ে। - আল্লায় জানে কি করতাছো।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে করিমুল্লার বৌ। কিছুণ পর করিমুল্লার বাড়িতে এলো এক ভ্যান পুলিশ। পাড়ার লোকজন বলাবলি করতে লাগলো, করিমুল্লাহকে ভালা মানুষ ভাবতাম। কিন্তু ব্যাডায় মিনক্যা শয়তান। মনে লয় বড় কোনো চুরি করছেই করছে।

অনেক লোক এলো করিমুল্লার বাড়ির সামনে। পুলিশ দেখে আহাজারি করে ডুকরে কাঁদতে লাগলো করিমুল্লার বৌ। করিমুল্লাহ পুলিশ দেখেও একেবারেই নিরুদ্বেগ। মুখে এক চিলতে হাসি। ছোট মেয়েকে ডেকে বললো, এই তৃণা দারোগা সাবরে বসার টুলডা দে।

দারোগা বললেন, বসতে আসি নাই। থানায় চলেন। এতোসব পাইলেন কিভাবে, অ্যাঁ? করিমুল্লাহ মুচকি হাসি দিয়ে বললো, বসেন না স্যার! পেতাছেন ক্যান? লোকজনের ভীড়ের মধ্যে থেকে একজন বললো, হ, পেবো নাতো তরে চুম্মা দিবো। করিমুল্লার মুখে হাসি অমলিন। ঘরের মধ্যে গিয়ে একটা ভাঙ্গা স্যুটকেস থেকে কয়েকটি কাগজ নিয়ে এসে দারোগার হাতে ধরিয়ে দিলেন।

ওগুলো পাঁচদিনের জন্য ভাড়া করা দামি জিনিসের রশিদ। ভাড়ার রশিদ দেখে দারোগা সাহেব অদ্ভূত দৃষ্টিতে কিছুণ তাকিয়ে থাকলো করিমুল্লার দিকে। এরপর কপালের চামড়া ভাঁজ করে প্রশ্ন করলো, এইসব দিয়া কি হইবো? - ওইসব ধুইয়া পানি খামু। - কি? - হ, পানি খামু। খাইবেন নাকি এক গেলাস? কোনো কথা না বলে চলে গেলো পুলিশের ভ্যান।

উৎসুক জনতার কিছু চোখ তাকিয়ে থাকলো পুলিশ ভ্যানের দিকে আর কিছু চোখ হাস্যোজ্বল করিমুল্লার দিকে। করিমুল্লাহ সাধারণত কারো সাথে ইয়ার্কি, ঠাট্টা করেন না। কিন্তু গত দুদিন ধরে যেনো মনে রঙের বন্যা বইছে। সে ‘থ’ মেরে যাওয়া জনতার দিকে তাকিয়ে বললো, কি মিয়ারা খাইবা নাকি এক গেলাস পানি। পাড়ার লোকজনও যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।

তারাও কোনো কথা না বলে চলে গেলো যার যার বাড়ি। আর কান্ড দেখার জন্য কিছু লোক করিমুল্লার বেড়ার ফাঁকে চোখ লাগিয়ে কার্মকান্ড দেখতে থাকলো। পাড়ার লোকজনের ঘুম হারাম হওয়ার যোগাড়। সবার একটাই প্রশ্ন, হচ্ছেটা কি? পুলিশকে কি এমন কাগজ দেখালো তারা মুখ ভোঁতা করে চলে গেলো? করিমুল্লাহ অফিস থেকে পাঁচ দিনেরই ছুটি নিয়েছে। চাকরি জীবনে এতোদীর্ঘ ছুটি আর নেয় নি সে।

বৌকে বলে রাখলো পঞ্চমদিন অর্থাৎ সোমবারে তাকে ডিসটার্ব করতে দেয়া যাবে না। ওই দিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ঘরে বৌসহ ছেলেমেয়েকে ঢুকতে নিষেধ করেছে সে। বৌ, ছেলেমেয়ে তো চিন্তায় অস্থির। কি হয়, কে জানে? আজ পঞ্চম দিন। এয়ারকন্ডিশনার চালু করা হয়েছে।

চলছে ফ্রিজ। ফ্রিজে কয়েক বোতল কোমল পানীয়। টেলিভিশনে দেয়া হয়েছে ডিশ সংযোগ। গত রাতেই সুদৃশ্য একটি টেবিল আর রাজকীয় একটি চেয়ার এনে ঘরে বসানো হয়েছে। টেবিলের উপর সংযোগবিহীন দুটি ঝকঝকে টেলিফোন আর একটি টিস্যু বক্স।

মোট কথা করিমুল্লার বেড়ার আজ ঘর হয়ে গেছে আস্ত একটা অফিস প্রধানের চেম্বার। নয়টা বাজতে পাঁচ মিনিট বাঁকি। একটা সাদা ঝকঝকে কারগাড়ী এসে থামলো করিমুল্লার বাড়ির সামনে। দামী গাড়ী দেখে উৎসুক লোকজন আবারো ভীড় করতে লাগলো। ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে স্যার সম্বোধন করে কারের দরজা খুলে দিলো।

সবাইকে ভড়কে দিয়ে গাড়ী থেকে নামলো এক অন্য করিমুল্লা। তাকে চেনার যেনো কোনো উপায়ই নেই। স্যুট-কোট গায়ে, দামী জুতো পায়ে, হাতে ঝুলছে একটি ব্রিফকেস আর চোখে কালো সানগ্লাস। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা স্বয়ং করিমুল্লার বৌ তো কিংকর্তব্যবিমুঢ়। তার ছেলেমেয়ে বললো, আম্মাজান, ওই সাহেব ব্যাডা আবার ক্যাডা? - মনে লয় তর জন্মদাতা আব্বাজান।

খবরদার ওদিকে যাবি না। এইহানে বইয়া বইয়া সার্কাস দ্যাখ। তার ঘরের সামনের টুলে পিয়নের পোষাকে বসে থাকা একজন উঠে স্যালুট দিয়ে দরজা খুলে দিলো। খুব ভাব নিয়ে ঢুকে পড়লো সে রুমেÑ যেনো কোন্ এক বিশাল অফিসার। পাড়াল লোকজন বেড়ার ফুটো দিয়ে ভেতরের কান্ড দেখার চেষ্টা করতে লাগলো।

কিন্তু নীল পলিথিন দিয়ে সম্পূর্ণ ঘরের দেয়াল মুড়িয়ে ফেলায় কেউ কিছু দেখতে পাচ্ছে না। তবু বেড়ায় চোখ ঠেকিয়ে প্রাণান্তপণে কৌতুহল নিবারণের চেষ্টা অব্যাহত রাখলো। রুমের মধ্যে ঢুকেই করিমুল্লা চেয়ারে বসলো একবারে নিখাদ খানদানি কায়দায়। টেবিলের উপর রাখা ল্যাপটপে আবোলতাবল কি যেনো টেপাটেপি করলো। একটা বেনসন ধরালো স্টাইলিশ ভঙ্গিতে।

বেনসন সিগারেট তো দূরের কথা, গোল্ডলিফ-ই খেয়েছে জীবনে একবার। এবার কলিং বেলের সুইচে চাপ দিলো। ছুটে এলো বাইরে পিয়নের পোষাকে বসে থাকা লোকটি। তাকে মিনিট পাঁচেক গালিগালাজ করলো। লোকটি বাইরে এসে বসার পর করিমুল্লা তার পায়ের উপর পা তুলে খুব করে দুলাতে লাগলো।

পা দুলাচ্ছিলো আর খুব আগ্রহভরে নিজেই দেখছিলো। মাঝে মাঝে মৃদু হাসছিলো। তার অফিসের বড় বস যখন পায়ের উপর পা তুলে কথা বলেন তখন খুব সুন্দর লাগে। পিয়নের চাকরি তারও খুব লোভ হয় অমন করে পা দুলানোর। মাগার সাহস হয় না।

দারিদ্রের চরম কষাঘাতে শীর্ণ শরীর বেয়ে নেমে গেছে রুগ্ন দুটি পা। এই পা নিয়ে বড় কর্মকর্তার চেম্বারে ঢুকতে পারে এটাই বা কম কিসে। করিমুল্লা নিজের পায়ের নাচন দেখছিলো আর নিজেই অভিভূত হচ্ছিলো। আধাঘন্টা ধরে অবিরাম সেকি পা দুলানো! নিজেকে কেমন যেনো বড়ো সাহেব বড়ো সাহেব লাগছিলো তার। সুখে তার বুক ভরে উঠছিলো।

এয়ারকন্ডিশনারের বাতাসে তার শরীর হীম হয়ে আসছিলো। কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। রেফ্রিজারেটর থেকে এক বোতল বিদেশী হুইস্কি বের করে মেরে দিলো চার পেগ। খাওয়ার সময় তার মুখ হয়ে যাচ্ছিলো বাংলা সংখ্যা ‘পাঁচ’-এর মতো। হবেই তো ওসব খাওয়ার অভ্যেস তার ছিলো না কোনোকালেই।

আজ সে বড়ো অফিসার সেজেছে বড়ো সখ করে। আজ তো খেতেই হবে। দুদিন পরে তো পটল তুলতে হবে। তার আগে কিছু পয়সা খরচ করে বড়োসাহেবী অনুভূতির অভিজ্ঞতা নিয়ে পটল তুললে তার আত্মা শান্তিই পাবে। তরল খেয়ে যখন মাথা বিগড়ে গেলো তখন সংযোগবিহীন ফোনটা তুলে নিয়ে কয়েকজনের গোষ্ঠী উদ্ধার করলেন।

যেভাবে তার অফিসের বড়ো কর্মকর্তা করেন। এদিকে এলাকায় এই অদ্ভূত ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে করিমুল্লার বাড়ির চারপাশ। নাওয়াÑখাওয়া ছেড়ে ঠায় দাড়িয়ে আছে কয়েক হাজার লোক। কিছুণ আগে এসেছে দুই ভ্যান পুলিশ। করিমুল্লার স্ত্রীর অনুরোধে পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করেনি এখনো।

কয়েকজন সাংবাদিকও এখানে ঘুর ঘুর করছে অনেকণ ধরে। একটু পরে কলিং বেলের আওয়াজ হলো। দরজার সামনে ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন ব্যক্তি করিমুল্লার ঘরে প্রবেশ করলো। করিমুল্লা ফাইলগুলো উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখলো। এবার অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বললো, তোমাদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না।

বসে বসে শুধু কোম্পানীর বারোটা বাজাচ্ছো তোমরা। সময় মতো ডেলিভারি রেডি আমি আমেরিকান কোম্পানীকে কি জবাব দেবো? মদ খাওয়ার পর তার কথা গুলো হয়ে গেছে একেবারেই সাহেবী ধাঁচের। কথা শেষ করেই ফাইলদুটো ছুঁড়ে দিলো দুই জনের মুখে। দুজন স্যার স্যার করতে করতে করিমুল্লার ঘর থেকে বের হয়ে এলো। পুলিশ এসে ওই দুজনকে জিজ্ঞেস করলো, ঘটনাটা কি? কোনো উত্তর না দিয়ে ওরা অদ্ভূত ভঙ্গিমায় চলে গেলো ওখান থেকে।

পাঁচটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাঁকি। অনেকণ থেকে করিমুল্লার কোনো সারাশব্দ নেই। তার বৌ দুরু বুকে প্রবেশ করলো ঘরে। ওরে বাবা কি ঠান্ডা ঘর। যেনো মাঘ মাসের শীত।

গিয়ে দেখে করিমুল্লা তার রাজকীয় চেয়ার উল্টে পড়ে আছে মেঝেতে। ওর বৌ চিক্কর দিয়ে বাইরে এলো। এবার পাড়ার কয়েকজন লোকসহ পুলিশ করিমুল্লাকে বাইরে নিয়ে এলো। একজন ওর বুকে মাথা রেখে বললো, বাঁইচ্যা আছে। জ্বরে তার পুরো শরীর পুড়ে যাচ্ছিলো।

পুলিশ ভ্যানে করে যখন তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিলো তখন ভ্যানের পাটাতনে শুয়েই এক পায়ের উপর আরেক পা অনেক কষ্ট করে উঠায়। এরপর ধীরে ধীরে দোলায় আর দেখে, দেখে আর মিটি মিটি হাসে। হাসপাতালেই চলে এলেন অচেনা কয়েকজন ভদ্রলোক। করিমুল্লা তখন শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। সর্বনাশী জ্বর নামছে না কিছুতেই।

তার বেডের পাশে বসে কাঁদছে বৌ ছেলেমেয়ে। লোকগুলো করিমুল্লাকে দেখতে পেয়ে বললো, এই সেই লোক। পাইসি। বলেই বেডের কাছে এলেন। কর্তব্যরত একজন নার্স এসে জিজ্ঞেস করলেন, কে আপনারা? কি চান।

ওনাদের মধ্যে একজন করিমুল্লাকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, এই ব্যাডা কিডনী চাই? - কেনো? - এই ব্যাডা আমাদের কাছে কিডনি বিক্রি করেছে পঞ্চাশ হাজার টাকায়। এইতো কয়েকদিন আগের ঘটনা। নার্স একটু অবাক হয়ে বলে, ‘তাই নাকি? কিন্তু উনার অবস্থা খুব খারাপ। মারাও যেতে পারেন। ’ নার্সের মুখে মারা যাওয়ার কথা শুনে আরো জোরে হুহু করে কেঁদে উঠলো করিমুল্লার বৌ ও এক ছেলে এক মেয়ে।

ভদ্রলোকগুলো ওদের দিকে তাকিয়ে নাক সিটকিয়ে নিলো। একজন ভদ্রলোক নার্সকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, মারা যাওয়ার কতোণের মধ্যে কিডনি নিতে হয়, জানা আছে? নার্স বললো, ছয় ঘন্টার মধ্যে নিলে ভালো হয়। কেনো বলুন তো? - কেনো আবার, কিডনী নিতে হবে না? ওর সই করা কিডনি বিক্রি এগ্রিমেন্টের সব কাগজপত্র আমাদের সাথেই আছে। পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে নার্সের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভদ্রলোকটি বললেন, করিমুল্লা মারা গেলে সাথে সাথে আমাকে একটু মোবাইল করে জানাবেন, প্লিজ। গটগট করে চলে গেলেন ভদ্রলোকেরা।

তাদের কথা শুনে করিমুল্লার বৌয়ের কান্না থেমে গেলো, তার চোখে-মুখে ফুটে উঠলো অদ্ভুত কষ্টের অজানা রেখা। #

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।