চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
"শেষ ভাল কাজটি কখন করেছেন?"
প্রশ্ন কর্তার দিকে তাকালাম আমি।
এক চিলতে হাসি ঝুলে আছে তার ঠোটের কোণে।
লাইভ একটি টিভি শো'র চৌকশ এই উপস্থাপকের দেশজুড়া খ্যাতি।
আমায় এই লাইভ শোটিতে অনেকটা ধরে বেধেই আনা হয়েছে। অফিসের এক কলিগের কুকীর্তি এটি।
অন্যায় আবদারটি সইতে হল ঐ কলিগের সাথে অনকেদিনের সম্পর্কের কথা বিবেচনায় এনে।
"আপনার একটি ভাল কাজ সারা দেশকে বদলে দিতে পারে। "
কিছু না বুঝে উপস্থাপকের মুখের দিকে তাকালাম আরেকবার।
ভদ্রলোককে আমি চিনলেও উনি আমায় চেনেন না। একই পাড়াতে থাকি আমরা।
উনার মত বিখ্যাত একজনকে সবারই চেনার কথা কিন্তু আমার মত সাধারনকে উনার চেনার কথা নয়।
"যেমনটি ধরুন শুধুমাত্র ঢাকা শহরটিতেই যদি আমরা প্রতিদিন একটিমাত্র ভাল কাজ করি তাহলে একদিনেই শুধু এক কোটিরও উপর ভাল কাজ জড়ো হবে। "
আমি কিছু বোঝা কিংবা বলার আগেই তিনি আবার কথা বলা শুরু করলেন।
উনি কেবলই বলে যাচ্ছিলেন আর আমি শুধু হ্যা সূচক অর্থে মাথা নাড়ছিলাম।
"সহনশীল হওয়াটাও একটি ভাল কাজ।
রাস্তাঘাটে কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে সহনশীল হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে আমাদের, যা আমাদের সমাজকে সুন্দর করে তুলতে পারে। "
আমি জানি মিথ্যে বলছেন এই উপস্থাপক ভদ্রলোক।
ব্যক্তিগত জীবনে মোটেও সহনশীল নন তিনি। শুনেছি একবার এক ভিখীরি তার কলিংবেলটি দ্বিতীয়বার বাজালে রেগে চড় মেরেছিলেন ঐ অসহায় গরীব লোকটিকে।
আরেকবার ত আমার নিজের চোখে দেখা।
গলির মোড়ে বেরুনোর পথে তার গাড়িটির রাস্তা আটকে দিয়েছিল একটি রিক্সা। রেগেমেগে নেমে ধাক্কা দিয়ে ফেলেই দিয়েছিলেন সৎ এবং পরিশ্রমী ঐ রিক্সাওয়ালা মধ্যবয়সী লোকটিকে।
এবার তিনি উপস্থাপকের আসন ছেড়ে উঠে দাড়ালেন, তারপর নাটকীয় ভংগীতে এগিয়ে এলেন আমার চেয়ারের দিকে।
"নিশ্চয় চা সিগারেটের কোন একটাতে প্রতিদিন কিছু না কিছু পয়সা নষ্ট করা হয়। "
কোনটাতেই না।
সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে কোন উদ্ধৃতই থাকেনা আমার।
কিন্তু উনি আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার কথার রেলগাড়ি ছোটালেন।
"আপনার ঐসব বাজে খরচ কমিয়ে দিয়ে ভাল অনেক কিছুতেই টাকাগুলোর সদ্বব্যবহার করা যেতে পারে। যেমনটি ধরুন একটি গরীব শিশুর লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করা, সবাই কিছু টাকা যোগাড় করে পাড়ায় একটি পাঠাগার গড়ে তোলা ইত্যাদি ইত্যাদি। "
আবার ভদ্রলোক মিথ্যে কথা বলছেন।
একজন অসুস্থ গরীব লোকের জীবন বাচাতে উদ্যোগী হয়েছিল পাড়ার ছেলেরা। চিকিৎসা করানোর মত টাকা ছিলনা লোকটির।
এই উপস্থাপক ভদ্রলোকের কাছে ছেলেগুলো সাহায্যের আকুতি জানালে তিনি কি বলেছিলেন জানেন।
বলেছিলেন, এইসব অকর্মণ্য অশিক্ষিত লোকগুলো মরে গেলেই বা ক্ষতি কি।
এরা মরলে দেশ সমাজ দুটোই বেচে যায়।
অথচ কয়দিন আগে ছেলের জন্মদিন পালন করতে গিয়ে এলাহী কান্ড করে বসলেন এই লোক খাবার দাবার ছাড়া গান বাজনার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
লাইভ শোটিকে তিনি একাই এগিয়ে নিয়ে চললেন। দেশজাতি কিংবা সমাজের কথা টেনে এনে কখনো বা তিনি আবেগে থর থর করে কেপে উঠছিলেন তিনি। কখনোবা তার চোখ ছলছল করে উঠছিল। কখনোবা আবেগে তার গলা জড়িয়ে আসছিল।
দেশবাসী দেখছিল একজন দেশ ও জাতির জন্য অন্তপ্রান একজন মানুষকে আর আমি দেখছিলাম একজন মিথ্যেবাদিকে।
এভাবে লোকটি দেশ ও জাতির সামনে একটি পর একটি মিথ্যে কথা বলে গেলেন আমি আমার ক্রোধ চেপে গিয়ে শুনে গেলাম সুবোধ বালকের মত।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে আবার নাটকীয় ভংগীতে এসে এগিয়ে এলেন তিনি আমার দিকে। ঝাপটে ধরলেন আমায় তিনি। তারপর আবেগ জড়ানো স্বরে বললেন,
"আজ এখনই আমার সাথে প্রতিজ্ঞা করুন প্রতিদিন অত্যন্ত একটি ভাল কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করবেন আপনি।
যেকোন ভাল কাজ দিয়ে শুরু হোক আপনার জীবন। "
আর সহ্য হোল না, ধৈর্যের বাধ ভেংগে গেল আমার। সজোড়ে একটি চড় বসিয়ে দিলাম মিথ্যুক এই লোকটির গালে।
অত্যন্ত ভাল একটি কাজ দিয়ে শুরু হল আমার নতুন একটি জীবনের।
-- রিপোস্ট--
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।