............................................
ছোটবেলায় ঈদের সময়, শবেবরাতের সময় পাড়ার ছেলেরা পটকা ফুটাতো। আমার মামাতো ভাইও শখ করে পটকা কিনে এর ওর বাড়ির ভিতর পটকা ফুটিয়ে শব্দ করে লোকজন ক্ষ্যাপাতো। আমাদের বাড়ির এরিয়ার ভিতরও অবশ্য এগুলো করতো ছেলেরা। ও সবসময়ই খুব মজা করতো তাই আমি ওর সাথে থাকতাম সবসময়।
একবার আমার বড়বোনের শখ হলো সেও পটকা ফুটাবে।
তাই আমি যেহেতু আহসান ভাইয়ার সাথে থাকতাম পটকা ফুটানোর সময় তাই ও মনে করলো আমি সব জানি কোথায় কি পাওয়া যায়। তখন আবার আমাদের বাসাতে একটা বিয়ে ছিল, ও পটকা ফুটিয়ে হৈ হুল্লোর করবে, এরকম বেকুবী টাইপ কোনো প্লান করেছিল হয়তো। তাই ও আমাকে আর আমার বয়সী দুইটা ভাগ্নেকে ডেকে টাকা দিয়ে বলল, যা দোকান থেকে পটকা কিনে নিয়ে আয়। ওরা পটকাকে পটকাই বলতো। কিন্তু আমরা বলতাম বোমা।
পটকা পাওয়া যেত আমাদের এখানকার পুলিশফাড়ির আশেপাশের দোকানগুলোতে। পুলিশ ফাড়িটা যে কোথায় তা আমি চিনতাম না। আর পটকাগুলোই যে কোথায় পাওয়া যায় তাও জানতাম না।
আমরা প্রথমে এক পরিচিত দোকানে গেলাম আর বললাম, মামা, বোমা আছে? বোমা?
সেই দোকানদার মামা আবার একটু বোকা টাইপ ছিল (আমাদের চোখে বোকা আরকি!)। সে খুব ভয় পাচ্ছে এরকম ভাব দেখিয়ে বলল, বোমা! বোমা দিয়ে তোমরা কি করবা?
আমরা সেই মামার ভাব দেখে হেসেই কুল পাইনা, তারপর ভাব মেরে বললাম, বোমা মেরে সব উড়িয়ে দিবো!
উনি বললেন, তাই নাকি! না মামা আমার কাছে বোমা নাই।
এভাবে পরপর ৩/৪টা দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, বোমা আছে নাকি। সবার একই প্রশ্ন তোমরা বোমা দিয়ে কি করবা! আর আমরাও দাম বাড়ানো কথা বলতে লাগলাম।
এরপর একটা লম্বা স্বাস্থ্যভালো লোক আমার আর আমার একটা ভাগ্নের হাত শক্ত করে ধরে বলে, এই এরা বোমা মারতে চায়, পুলিশ ডাকো তো…… আমাদের তখন অলরেডি কাজ হয়ে গেছে, ভয়ে পুরা শেষ। আমার আরেক ভাগ্নে ভয়ের চোটে দৌড়ে পালালো, ওর অবশ্য হাত কেউ চেপে ধরেনি। একটা লোক ওর পালানো দেখে বললো, এই ধর, ধর...ধর তো ওইটাকে ধর।
……..সব লোকগুলো এমন ভাব করতে লাগলো যে সত্যি সত্যিই পুলিশ ডাকছে। তারা বলতে লাগলো, দুইটা সন্ত্রাশী ধরা পড়েছে। তারা বোমা মারতে গেছিলো.....................হঠাত করে ঐ লোকটা হাত আলগা করলো আর আমি দৌড় দিলাম। তারপর বাসায় গিয়ে সব খুলে বললাম সবাইকে। আর আমার ঐ ভাগ্নেটা ওখানেই থেকে গেলো।
কিছুক্ষণ পর বাসা থেকে বড় একজন এসে ওকে নিয়ে আসল। সে চোখ মুছতে মুছতে বাসায় আসছিল। তার ধারণা ছিল সত্যি সত্যিই তাকে পুলিশে দিতো, তখন অবশ্য আমিও তাই ভাবতাম। যাই হোক আমরা বেঁচে গেলেও ওইটা বাজারের লোকজনের কাছে ভালোই ডলা খেয়েছিল।
আর আমার বোন স্বীকারই করলো না যে সে আমাদের পটকা কিনতে পাঠিয়েছিল বরং বিভিন্নভাবে অন্যান্য সদস্যদের সাথে টিটকারী মারতে লাগলো, পটকাকে বলিস বোমা, হুহাহাহা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।