আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাম-চেতনা, ছদ্মনাম, নিক ও ড. জেকিল অ্যান্ড মি. হাইড সমস্যা

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

রাইসু ভাইয়ের নাম অভিযান দেইখা নিজেরে জিগাইলাম, এ বিষয়ে তোমার কী মত? মন কইলো, এ বিষয়ে আমার কোনো মত নাই। হোয়াট আই হ্যাভ... দ্যাট... ইউ মে কল সামথিং লাইক ফিলিং। আমি সেই ফিলিংয়ের কথা কিছু বইলা রাখি। আমি লেখক মানুষ।

যতটা না লেখক বাস্তবে, তার চেয়ে বেশি বিশ্বাসে। আমার নিকটবন্ধুদের অধিকাংশই লেখক। আড্ডা দেই লেখকদের লগে। ভাবি লেখকদের নিয়া। একটা লেখক জীবন মহাশয় আমারে সারাক্ষণ ঘিরা রাখে।

এই লেখকস্পর্শী জীবন থিকা আমি জানি লেখকরা খুব নাম সচেতন। তারা নাম কামায়, নাম বেচে, নাম ছাপায়, নাম দেখে, নাম উজ্জ্বল করে, স্বর্ণাক্ষরে নাম অংকন করে। সাহিত্যের ইতিহাসে নাম লেখায়। নামই লেখকের লোগো, নামই তার কোম্পানি, নামই তার বিজ্ঞাপন। ফলে, নামের ব্যাপারে তারা খুবই স্পর্শকাতর।

কী নামে লিখবে একজন লেখককে এইটা লেখক জীবনের শুরুতে ডিসাইড করতে হয়। যারা বয়স গেলেও নাম ঠিক করতে পারেন না তাদের জীবন বড় দুঃখের। তাদের লোগো দাঁড়ায় না। সাহিত্যের ইতিহাসে অনেক কিছু মেলে, কিন্তু নাম? আধুনিক সাহিত্যের ইতিহাসে এক নামে দুই লেখক পাওয়া ভার। রবীন্দ্রনাথের পর কারো নাম রবীন্দ্রনাথ হইলে উনি আর যাই হোন লেখক হইতে পারবেন না।

অবশ্য মধ্যযুগে এক নামে নাকি বহু লেখক আছিলেন। যারা বাংলা সাহিত্য পড়েন তারা বাংলা সাহিত্যে চণ্ঢীদাস সমস্যা আলোচনা না কইরা ফার্স্ট ইয়ার পার করতে পারেন না। বাংলা সাহিত্যে নতুন সাহিত্যিক মাত্রই নাম নিয়া চিন্তায় থাকেন। হুমায়ুন আজাদ সাক্ষাৎকার বইতে শওকত ওসমান প্রসঙ্গে নাম নিয়া কিছু কথা কইছিলেন। বাঙালি মুসলমান লেখকদের আনস্মার্ট নাম থেকে শওকত ওসমান কীভাবে স্মার্ট নামের সূচনা করলের সেইটার একটা ইতিবৃত্ত ওই বইয়ে পাওয়া যাবে।

আমারও মনে হইছে কথা ঠিক। শওকত ওসমানের পর থিকা বাঙালি মুসলমানের মধ্যে স্মার্ট নামের প্রচলন হইছে। ওই বই পড়ার পর ছাত্রজীবনে আমার মধ্যেও নাম-চেতনা দানা বাঁধে। আমি নিজের নাম নিয়া বিস্তর গবেষণা করি। বিপুল গবেষণায় বাইর হয়, আমার বাবা ধন্যবাদার্হ।

কারণ উনি আমার নামটা স্মার্ট আকারে রাখছেন। কিছু বাংলা শব্দ বসায়া দেখলাম না তার চেয়ে আমার এই পিতৃদত্ত নামটাই ভাল। নিরিবিলি। স্লিম। কিছুটা কমন।

কিন্তু আমার প্রতিভার ওপর বিশ্বাস থিকা আমার এই সিদ্ধান্ত যে, কমনতা থিকা এই নামরে উজ্জ্বল করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আমি স্বনামে লিখতেছি যখন তখন আমার বন্ধুদের মধ্যে নাম বদলানোর হিড়িক পড়লো। বন্ধু বললে ওনারা গোস্বা করেন। বলতে হবে, গুরু। একেকজন একেকটা মহানাম গ্রহণ করলেন শীঘ্রই।

এবং নিজের নাম ফোটানোর কাজে ব্যস্ত হয়া থাকলেন। আমাকেও বললেন, তুমিও বদলাও। আমি স্টিক্টলি কইলাম, না। তখন এক বন্ধু কইলো, নিদেন পক্ষে মোর্শেদ মাহবুব হয়া যাও। সেইটাও আমি রাখলাম না।

ফলে, বকমধ্যে হংসযথা হয়া থাকলাম। তবে নিজে না বদলাইলেও আমি এইটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, লেখকের একটা উপযুক্ত নাম থাকা উচিত। সেই নামটা মেইনটেইন করাও উচিত। কেউ যদি বাপের দেওয়া নাম চেঞ্জ করে, এবং তিনি যদি লেখক হন তাইলে সেইটা তার অধিকার ও কর্তব্য, দুইটাই। ব্লগে আইসা দেখলাম, ছদ্মনাম কতপ্রকার ও কী কী? জানলাম এইটারে নিক কয়।

বুঝলাম, লেখকের নামকেন্দ্রিক লোগোর যুগ শেষ হইতে যাইতেছে। ব্লগে নাম গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হইলো, পাবলিক এক্সপ্রেশন অথবা ফ্রি এক্সপ্রেশন। ফলে, এযুগের এক্সপ্রেশন নামের আড়ালে আশ্রয় নিয়া আরেকজনকে ওয়েবে পাঠাইলো, যে তার হয়া কথা বলবে। এক্সপ্রেস করবে।

বেশ। সমাজে পরিচয় তৈরি করার বাতিক হয়তো তাদের মধ্যে নাই। নিজের পরিচয় ফুটানোর ইচ্ছাও নাই। নিজেকে যে কোনো প্রক্রিয়ায় হয়তো নিরাপদ রাখতে চান তারা। হয়তো নিজের মত নিয়া তারা কিছুটা শঙ্কিত ও বিব্রত।

নিজেকে পর্দার আড়ালে রাইখা বিচার করতে চান। হয়তো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু কইতে চান। হয়তো ক্ষমতাধরকে কোনো বিপদে ফেলতে চান। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা গেল, এই অনামী ব্যক্তিরা এসব কিছু কইরা বা না কইরা মূলত যে কাজটা করতেছেন সেইটা হইলো অন্যরে ইরিটেট করা। ঠিক যে, অনেকেই ছদ্মনামে ভাল লিখছেন।

ভাল কাজ করছেন। ছদ্মনামের আড়াল ঘুচায়া বাইরে বারাইছেন। দেখা দিছেন। তথাপি নিকের একটা বড় কাজ হইলো ইরিটেট করা। এবং দায়িত্ব না নেয়া।

ব্রাত্য রাইসু ছদ্মনাম বটে। কিন্তু ওই নামেই তিনি চলাফিরা করেন। বাড়িভাড়া থাকেন। লেখেন, লোকজনকে দেখা দেন। ফলে সেইনামের দায় তাকে নিতে হয়।

কিন্তু ধরাযাক লাভারবয় যিনি তিনি তো লাভারবয় নামে জীবনযাপন করেন না। তিনি ফখরুদ্দীন সরকারের বিরুদ্ধে লিখলে, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কথা কইলে তারে তো কেউ ধরতে যাইতে পারবো না। কথাটা তিনি কইছেন এইটা আমরা মানলাম। কিন্তু তার কথার রহস্য কী, কোন ইন্টারেস্ট থিকা তিনি কইলেন সেইটা তো আমরা জানলাম না। ফলে, ছদ্মনামের আড়াল থিকা বলা লাভারবয়ের সাহসী কথা ঠিক সাহসী না।

তার ছদ্মবেশটাই আসল। এই কথা সমাজে কোনো গুরুত্ব তৈয়ার করতে পারে না। কিন্তু নিজের যাপন করা নামে, নিজে হাজির নাজির থাইকা কোনো কথা কইলে সেইটা গুরুত্ব কী সেইটা আমরা সবাই জানি। আর এই গুরুত্ব থিকা এটাও জানি যে দেশে থাইকা, সাহস দেখাইলে তাসনিম খলিলের কী হইতে পারে? আর অমুক, তমুক লাভারবয় কী কইতেছে এইটা নিয়া কেউ ভাবেও না। যাপিত নাম মানে বাসার ঠিকানা, কই যায় কী খায় তা জানা।

কে কার ভাই-ব্রাদার তার খবর রাখা। নিকের বিরুদ্ধে আমিও কিছু কথা কইছি অতীতে। নিক-অ্যাবিউজ নিয়া সামহয়ার কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি। তারপরও ভাবছি, নিক জিনিশটা থাকুক। এমনও তো সময় আসতে পারে, যখন নিজের নামে কথা বলা যাইতেছে না।

তখন? সমহয়ারে আইজ পর্যন্ত আমি কোনো লেখা পড়লাম না যা নিজের যাপিত নামে না লিখলে লেখকরে পুলিশ ধইরা নিয়া যাইতো। নিক একটা অপশন। কিন্তু নিক মূলপ্রবণতা হইলে তো অসুবিধা। আসলে নিক নিয়া আমরা করতেছিটা কী? কেউ যদি লেখক হইতে চান তাইলে তিনি নিজের নামটাকেই কেন এক্সপ্রেশনের উপায় হিসাবে বাইছা নিবেন না? আমি আসলেই বুঝি না। কীসের সংশয়, কীসের ভয়, কীসের জন্য কার আড়াল? তারপরও জানি নিক বা ছদ্মনাম আরও স্পষ্ট কইরা কইলে জীবনে অযাপিত ছদ্মনামের বিরুদ্ধে অভিযান আমার সমর্থন পাবে না।

কারণ, জীবনের পদ্ধতিতে আমি অপশন রাখায় বিশ্বাসী। কোনো রাস্তাই বন্ধ রাখতে চাই না। কিন্তু তারপরও একটা কথা থাইকা গেল। ৩০ এপ্রিলের আবদুল জলিলের ষড়যন্ত্র ফাঁস হইয়া গেলে খালেদা জিয়া যেমন শিউরে উঠেছিলেন তেমনি সেদিন ব্লগারদের একটা কাহিনী শুইনা আমি শিউরে উঠলাম। জানলাম, ব্লগের কিছু কুখ্যাত নিক আসলে ব্লগেরই কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিরই কাজ।

এইটার নাম দেওয়া যায় ড. জেকিল অ্যান্ড মি. হাইড সমস্যা। এক ব্যক্তি হয়তো খুব গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতেছেন নিজের নামে। কিন্তু কুখ্যাত নিক দিয়া তিনি আবার পুরা জিনিশটাই ধ্বংস কইরা দিতে উদ্যত। ক্রিয়েটিভ মানুষ বইলা তারা নিজের মনে মাধুরী মিশায় একটা চরিত্র তৈরি করেন। সেই চরিত্র ভক্ত তৈয়ার করে।

পরে ভক্তদল সহকারে সংঘর্ষ বাঁধায়। লাভটা নেতা তুলেন। নিজের নামে তোলেন আবার কুখ্যাত নিকেও তুলেন। সামহয়ার গণহারে নিক বানচাল করবে এইটা আমরা চাই না। যার যা খুশী নামে লিখুক।

কেউ নিজের নামে লিখবে না তো লিখবে না। কিচ্ছু করার নাই। কিন্তু এই ড. জেকিল অ্যান্ড মি. হাইডদের বিরুদ্ধে তারা কিছু করবে কি না সেইটা একটু জানা দরকার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।