কথায় বলে, ফরাসি হলো প্রেমের ভাষা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গতকাল শনিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এমন ঢংয়ে বক্তব্য দিয়েছেন যে তা শুনে অনেকের মনে হয়েছে তিনি ফ্রান্সকে প্রেম নিবেদন করছেন। রয়টার্স বলছে, কেরি তাঁর ফরাসি ভাষার দক্ষতার মকশো করলেন।
যে কয়েকটি পশ্চিমা রাষ্ট্র সিরিয়ায় মার্কিন হামলার সমর্থক, ফ্রান্স তাদের অন্যতম। তাই এ রাষ্ট্রটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সখ্যের বিষয়টি আরও জমিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন থেকেই হয়তো কেরি এ কাজটি করেছেন।
ফরাসিদের কাছে তাদের ভাষা খুবই অহংকারের বিষয়। আর এ অনুভূতিটিকে কাজে লাগাতে চাইছেন কেরি।
গত ২৯ আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সিরিয়া আক্রমণের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। অথচ গত কয়েক দশকে বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়েছে, সব স্থানেই ব্রিটেন তাকে সঙ্গ দিয়েছে। ব্রিটেনের প্রত্যাখ্যানে যুক্তরাষ্ট্র নিঃসন্দেহে মন খারাপ করেছে, কিন্তু ফ্রান্সের সমর্থন নতুন করে আশা জুগিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সিরিয়ার সরকার তার জনগণের ওপরে বিষাক্ত সারিন গ্যাস প্রয়োগ করে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এই অজুহাতে সিরিয়া আক্রমণ করতে ভীষণ জোরাজুরি করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর বেশির ভাগই তাতে সায় দেয়নি।
কাই দ্যওরসে নামে পরিচিত ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অভিজাত কক্ষে কেরি গতকাল যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স সম্পর্ক নিয়ে ঝাড়া ১০ মিনিটের বক্তব্য দিয়েছেন। সেই ফরাসি বিপ্লবের সময় থেকে আজ পর্যন্ত ইতিহাসের বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরোতে গিয়ে দুই দেশ কীভাবে একসঙ্গে থেকেছে, তার বর্ণনা দেন কেরি।
কেরি বলেন, ‘আজ থেকে ৫০ বছরেরও বেশি আগে প্রেসিডেন্ট কেনেডি যখন প্যারিসে জেনারেল দ্য গলের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “পুরো বিশ্বে স্বাধীনতা রক্ষার্থে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ”’
তিনি বলেন, আজ যখন সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের বর্বর হামলা চালানো হচ্ছে, তখন প্রেসিডেন্ট কেনেডি বর্ণিত সম্পর্ক আরও প্রাসঙ্গিক হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্স ফ্যাবিয়াসও কম যান না। তিনি সিন নদীর ধারে অবস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে শত বছরের প্রথা ভেঙে বিদেশি ভাষা ইংরেজিতে বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ একসময় তিনিই ওই মন্ত্রণালয়ে ইংরেজিভাষী এক রিপোর্টারকে বলেছিলেন, ‘জনাব, আমরা এখানে ফরাসিতে কথা বলি।
’
এদিকে ফ্রান্স জনমত জরিপের (আইএফওপি) পরিচালিত এক জরিপ বলছে, ফ্রান্সের শতকরা ৬৮ জনই সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের বিরোধী।
এর আগে ২০০৩ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে বিপুল ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্রের’ মজুত আছে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাক আক্রমণ ও ধ্বংস করেছিল, তখন ফ্রান্স তার সঙ্গ দিয়েছিল। সে সময় অবশ্য ফ্রান্স সরকার বেশ একটু নাটক করে বলেছিল, তারা যুদ্ধবিরোধী, কিন্তু বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের লিবিয়া আক্রমণের সময় ফ্রান্স আর কোনো রাখঢাক করেনি। আপত্তি না জানিয়ে মুয়াম্মার গাদ্দিফিকে সরিয়ে লিবিয়ার খনিজ সম্পদ দখলের যুদ্ধে সবার আগে হামলা চালিয়েছিল লিবিয়ায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।